নোটিশ দেখে ফিরে গেলেন শ্রমিকরা
সারা দুনিয়া জুড়ে মানুষ যখন করোনাভাইরাসের ভয়ে গৃহবন্দী, ঠিক তখন কর্মস্থলে যোগ দিতে পিকআপ ভ্যানে গ্রাম থেকে সাভারে আসেন শ্রমিকরা। পরে অবশ্য বিজিএমইএ'র অনুরোধে সাড়া দিয়ে আবার কারখানা বন্ধের মেয়াদ বাড়িয়ে নোটিশ টানানো হলে ফিরে যান তারা। তবে আগেভাগেই নোটিশ না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
এ ভাইরাসের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতেই দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেলা, হাট-বাজারসহ সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে বন্ধ ঘোষণা করা হয় শিল্প প্রতিষ্ঠানও। সাভারে প্রায় ৯৮ শতাংশ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সামাজিক দূরুত্ব নিশ্চিত করতে ও শ্রমিকদের ঘরে থাকার জন্য এ ছুটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ছুটি পেয়ে বেশিরভাগ শ্রমিক ঝুঁকি নিয়ে চলে যান গ্রামে। কর্মস্থলে যোগ দিতে আবার করোনা ঝুঁকি নিয়েই ফেরেন সাভারে। এতে করে শিল্পাঞ্চল সাভারে করোনা ঝুঁকি বেড়েছে বলে ধারণা করছে সচেতন মহল।
রোববার (৫ এপ্রিল) সকালে বিভিন্ন কারখানার সামনে গিয়ে দেখা যায়, করোনা ঝুঁকি নিয়ে কাজে যোগ দিতে এসে গেটে সমবেত হয়েছেন অনেক শ্রমিক। আতঙ্কে রয়েছেন স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা ভেবে গ্রামে না যাওয়া শ্রমিকরা। তারা ছুটির ক'দিন বাসা থেকে বের না হয়েও একই রকম ঝুঁকিতে রয়েছেন। গ্রাম ফেরত শ্রমিকদের সাথেই তারা সমবেত হয়েছেন।
গ্রামে না যাওয়া সচেতন শ্রমিক মারুফ। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি এতো দিন ছুটি পেয়েও বাড়ি গেলাম না। ভাবলাম ঢাকা থেকে বাড়ি যাওয়া পরিবারের জন্য নিরাপদ নয়। পরিবার ও নিজের কথা চিন্তা করে সাভারেই রয়ে গেলাম। কিন্তু লাভ কি হলো, শুধু শুধু কষ্ট করলাম। এতো দিন কষ্ট হলেও বাসা থেকে বের হইনি। আর এখন সব শ্রমিক গ্রাম থেকে এসে একই বাসায় উঠেছেন। একই বাথরুম ব্যবহার করছেন। আর এক সাথেই সকালে কারখানার উদ্দেশে রওনা হলাম। কারখানায় এসে দেখি বন্ধের সময় ৪ এপ্রিল থেকে বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। এটা যদি আগেই জানিয়ে দিত, তাহলে সাভার এতো ঝুঁকিতে পড়ত না। শ্রমিকরাও গ্রাম থেকে আসতেন না।
ক্ষোভ প্রকাশ করে অপর শ্রমিক রকি বলেন, ছুটি পাওয়া মাত্র আতঙ্কে বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। যাওয়ার সময় গাড়ি ছিল না, খুব কষ্টে গেলাম। আসার সময়ও ঝুঁকি নিয়ে পিকআপ ভ্যানে এলাম। আসার পর আবার পড়লাম ঝামেলায়। বাড়িওয়ালার সাফ কথা, বাসায় ঢুকতে দেবেন না। পরে বাইরে থেকে বিভিন্ন জীবাণুনাশক দিয়ে হাত-পা ধুয়ে বাড়িতে ঢুকলাম। কত কষ্ট সয়ে সকালে যখন কারখানায় এলাম, তখন দেখি গেট বন্ধ। নোটিশ টানিয়েছে চলতি মাসের ১১ তারিখ পর্যন্ত ছুটি। এটা আগেই জানিয়ে দেওয়া উচিত ছিল।
কারখানায় কাজে যোগ দেওয়ার জন্য এসেছিলেন মর্জিনা। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের কারখানা খোলার কথা শুনে কাল গ্রাম থেকে এসেছি। ভেবেছিলাম বেতন পাব। কিন্তু কারখানায় তো ঢুকতেই পারলাম না। কারখানা বন্ধের মেয়াদ আরো বাড়িয়েছে। এটা যদি এক দিন আগে জানিয়ে দিত, তাহলে এত কষ্ট করে ভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে আমরা তো আসতাম না। এখানে থাকলে খাব কী, সব দোকান বন্ধ। আমরা তো প্রতি মাসে দোকানে বাকিতে বাজার করি। দোকান বন্ধ থাকলে খাব কী? কারখানা বন্ধের সাথে সাথে দোকানদারও তো বাড়ি চলে গেছে। আমার মনে হয়, আবার বাড়িতেই যেতে হবে।
এ ব্যাপারে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, বিজিএমইএ যদি আগেই এ অনুরোধ করত, তাহলে শ্রমিকরা ঝুঁকি নিয়ে গ্রাম থেকে আসতেন না। তাদের ঝুঁকি আরো বেড়ে গেছে। পোশাক খাতের দিকে সরকারের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। করোনা পোশাক শ্রমিকদের মাঝে ছড়িয়ে গেলে নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন হয়ে যাবে। তাই করোনা রোধে পোশাক কারখানা বন্ধ রাখা উচিত।