করোনা: অর্ধাহারে-অনাহারে রয়েছেন বিধবাপল্লীর বীরাঙ্গনারা
মরণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে শেরপুরেও। মহামারির আতঙ্কে স্থবির হয়ে আছে এখানকার জনজীবন। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন জেলার বেশিরভাগ কর্মজীবী মানুষ। অনেকেই নিম্ন আয়ের কর্মহীনদের খোঁজ নিলেও এখনো কোনো সহায়তা পৌঁছায়নি জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে নালিতাবাড়ীর সোহাগপুর বিধবাপল্লীতে। কর্মজীবী স্বজনদের এই সংকট মুহূর্তে অর্ধাহারে-অনাহারে রয়েছেন ৭১-এর যুদ্ধে অংশ নেওয়া এখানকার বীরাঙ্গনা বিধবারা।
১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই পাকবাহিনী হামলা চালায় এই সোহাগপুরে। ক্ষেতে-খামারে, ঘরে ঘরে ঢুকে নির্মমভাবে হত্যা করে নিরীহ কৃষক-শ্রমিক, মেহনতি মানুষদের। পাশবিক নির্যাতন চলে নারীদের ওপর। দোসরদের সহায়তায় ছয় ঘণ্টার তাণ্ডব চালিয়ে, গুলি করে-বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ১৮৭ জন পুরুষকে হত্যা করে পাকবাহিনী। ঘটনার মধ্য দিয়ে বিধবা হন গ্রামের ৬২ জন নারী। সেই থেকে গ্রামটির নাম পাল্টে হয়ে যায় ‘বিধবাপল্লী’। ২০০৭/৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৯ পদাতিক ডিভিশনের তালিকা অনুযায়ী বর্তমানে বেঁচে আছেন ২৭ জন বিধবা। সরকারের সব ধরনের সুযোগ পেলেও করোনাভাইরাসের প্রভাবে এখন স্থবির তাদের জীবন।
করোনা প্রতিরোধে জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে অঘোষিত লকডাউন। এতে কর্মজীবী স্বজনদের কাজ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন এখানকার বীরাঙ্গনা বিধবারা। এই পল্লীতে এখনো সরকারি, বেসরকারি বা এনজিও, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো খাদ্যসামগ্রী পৌঁছায়নি। এতে অনেকেই অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
সোহাগপুর বিধবাপল্লীর বাসিন্দা শহীদ শুকুর মামুদের স্ত্রী ফরিদা বেওয়া বলেন, ‘আমরা খাওনের জন্য মরতাছি, আমাদের এখানে কেউই আসে না। ঘরে চাল, ডাল কিছুই নাই। আমরা পাশের বাড়িতে হাওলাদ করে খাচ্ছি।’
একই এলাকার শহীদ ইব্রাহিমের স্ত্রী হাবিজা বেগম ও সিরাজ আলীর স্ত্রী শমলা বেওয়া বলেন, কত কত জায়গায় শুনতাছি, টিভিতেও দেখতাছি সরকার চাল, ডাল, সাবান, তেলসহ অনেক কিছু দিচ্ছে কিন্তু আমাদের এখানে কেউ আসে নাই। আমরা খুব কষ্টে আছি। আমরা খুব অসহায় হয়ে আছি বর্তমানে।
বিধবাপল্লীর বাসিন্দা রহমত আলী, সোহাগ মিয়া বলেন, আমরা খুব হতাশ। কারণ, সরকার এই বিধবাদের জন্য কি না করেছে। এরইমধ্যে প্রতিজনের জন্য একটি করে বিল্ডিং ঘর স্থাপন করে দিয়েছি। ভাতাও পাচ্ছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে কেউ ঘর থেকে বের হতে না পারায় ও তাদের সন্তানরা কর্মহীন হয়ে পড়ায় এই পল্লীর বিধবারা খুব কষ্টেই আছে। এখানে কেউ কোন সহযোগিতা করে নাই। আমরা আপনাদের মাধ্যমে অনুরোধ করব, দ্রুত সময়ের মধ্যে এই বিধবাপল্লীতে খাদ্যসামগ্রী যেন আসে।
সোহাগপুর বিধবাপল্লীর শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতির সভাপতি জালাল উদ্দিন বলেন, ‘এই সংকট মুহূর্তে সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে বিধবাপল্লীতে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করার জন্য আমি অনুরোধ করব। তারা আসলেই খুব কষ্টে আছে।’
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, ‘আগামী দু-তিনদের মধ্যে শহীদ জায়া ও বীরাঙ্গনাদের কাছে সরকারি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে।’