কোনো কিছুতেই ঠেকানো গেল না দেলোয়ার-সাদিয়ার বিয়ে
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে এলিট ফোর্স র্যাবের অভিযান। বর আর কনে পক্ষকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা। মহামারি করোনা সংকটের মধ্যে এসব কোনো উদ্যোগই ঠেকাতে পারেনি সাভারে দেলোয়ার-সাদিয়ার বিয়ে।
র্যাবের অভিযান, এলাকাবাসীর আপত্তি সবকিছুকে উপেক্ষা করেই কনেকে নিয়ে ঘরে তুলেছেন দেলোয়ার।
এলাকাবাসী জানায়, র্যাবের অভিযানে বিয়ে বন্ধের খবর যখন পত্রিকায় ছাপা অক্ষরে প্রকাশ হচ্ছিলো, তখন বাসর রাত অতিবাহিত করছিলেন এই দম্পতি । এলাকার প্রভাবশালী দুই আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান এর উপস্থিতিতে গত শুক্রবার (১০ এপ্রিল) বিয়ের আসর বসিয়েছিলেন দুই পরিবারের সদস্যরা।
অতিথি আপ্যায়নে ছিলো বাদশাহী পোলাও, কোরমা, খাসির রেজালা, চিকেন ঝাল ফ্রাই, গরুর ঝাল ফ্রাই, চিংড়ি ও মুরগির রোস্ট, ইলিশ ভাজা, কাবাব, ডিম, জর্দা, বোরহানি, দই, ফিরনি, সালাদের মতো হরেক রকম মুখরোচক খাবার।
বিয়ের উদ্যোগ মূলত নিয়েছিলেন বনগাঁ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম।
তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ছোট ভাই নগরকোন্ডা গ্রামের হাসান আলীর ছেলে দেলোয়ার আহমেদের জন্যে পাত্রী খুঁজছিলেন তিনি।
‘ভাইটা আমার বুড়ো হয়ে যাচ্ছিল। কোথাও কোনো মেয়ে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। শেষমেষ করোনাভাইরাসের মধ্যে কনের সন্ধান পেলাম। তাই আর বিয়ের আয়োজন করতে বিলম্ব করিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য, র্যাবের অভিযানে বিয়েটা লন্ডভন্ড হয়ে গেল। ভাইটাকে আর বিয়ে দিতে পারব কিনা এটাই সন্দেহ।’
শুক্রবার রাতে সাইফুল ইসলাম যখন গণমাধ্যমের সাথে এমনটাই বলছিলেন ততক্ষণে চুপিসারে আয়োজন চলছিল বরের বাড়িতে কনে বরণের।
তাহলে এই যে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে মুচলেকা দিলেন করোনাভাইরাসের মধ্যে এই বিয়ে হবে না! নগদ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা গুনলেন।
তাহলে এই হলো কি করে আর কনে বরের বাড়িতে এলো কি করে?
এমন প্রশ্ন শুনে আকাশ থেকে পড়েন বনগাঁ ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম। প্রশ্নই উঠে না। এটা আমার প্রতিপক্ষ পার্টির কাজ। মেয়ে মেয়ের বাড়িতেই আছে। তবু বললেন যখন দাঁড়ান একটু খবর নিয়ে আপনাকে জানাই বলেই ফোন কেটে দেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ বীরের বেশে কনে নিয়ে গ্রামে প্রত্যাবর্তন করেন দেলোয়ার। তাদের কে বরণ করে নেন বরপক্ষের স্বজনরা। তখন থেকেই শুরু হয় কানাঘুষা।
শনিবার (১১ এপ্রিল) দুপুর নাগাদ এ তথ্য গণমাধ্যমের কাছে পৌঁছালে কনেকে আবার বাবার বাড়ি পৌঁছানোর তোড়জোড় শুরু করে দেলোয়ার।
প্রতিবেশীরা জানায়, চেয়ারম্যানের ভাই বলে বীর দর্পে করোনার সময় কনে নিয়ে গ্রামে ফিরেছেন দেলোয়ার। আত্মীয়-স্বজনকে গলা উঁচিয়ে বলছেন, আমাদের ক্ষমতাও কম না।
যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমানকে।
তবে দেলোয়ার হোসেন জানান, ভাই আমাদের বিয়ে নিয়ে আর ঘাটাঘাটি কইরেন না। দাওয়াত করেও মানুষ র্যাবকে আনতে পারে না। আমাদের বিয়েতে দুই ইউনিয়নের দুই চেয়ারম্যান ছাড়াও উপস্থিত ছিল সাংবাদিক, র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সহ অনেকে।
এই বিয়া যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে, পয়সা খরচা করে হেলিকপ্টার ভাড়া নিয়ে বিয়ে করতে গেলেও এত কভারেজ পাওয়া যাইত না।
জরিমানা যখন দিছি তখন বউ নিয়ে থাকতে সমস্যা কি? যোগ করেন দেলোয়ার হোসেন।
আরও পড়ুন: করোনা আতঙ্কের মধ্যেই বিয়ে, খাওয়া হলো না ২ চেয়ারম্যানের