ত্রাণ না পেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস, যুবককে মারধরের পর মামলা
ত্রাণ না পেয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ জানিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ায় রাজশাহীর পবা উপজেলায় বোরহানুল ইসলাম মিলন (২৬) নামে এক যুবককে মারধর করে ‘গুজব’ ছড়ানোর মামলা দায়ের করেছেন চেয়ারম্যান। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে যুবক ও তার ভাইকেও থানা হাজতে রেখেছে পুলিশ।
শনিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার দর্শনপাড়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর স্থানীয় শতাধিক বাসিন্দা ত্রাণ না পাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে বিক্ষোভ করলেও পুলিশ ভয় দেখিয়ে তাদেরকে সরিয়ে দেয়।
সন্ধ্যার দিকে আটক যুবকের মেজ ভাই বাবু মুন্না থানায় পুলিশ হেফাজতে থাকাকালে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেয়া ত্রাণ সহায়তা একই ব্যক্তি বারবার পাচ্ছেন। তারা কষ্টে দিন কাটালেও ত্রাণ পাচ্ছেন না। বিষয়টি এলাকার সকলে জানে। কিন্তু কেউ ভয়ে মুখ খুলছে না। তবে তার ছোট ভাই বোরহানুল ইসলাম মিলন শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।
সেসময় তিনি বলেন, ‘স্ট্যাটাস দেওয়ায় আমার ভাই মিলনকে শনিবার বেলা ১১টার দিকে মোবাইলে কল করে ইউনিয়ন পরিষদে যেতে বলেন চেয়ারম্যান কামরুল হাসান রাজ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর হাসান। সেখানে গেলে কেন স্ট্যাটাস দিয়েছে- তা জানতে চেয়ে তাকে মারধর করে চেয়ারম্যান ও মেম্বার। পরে তার বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ করে কর্ণহার থানা পুলিশে দেয় তারা।’
ভুক্তভোগীর ভাই বাবু আরও বলেন, ‘বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ত্রাণ না পাওয়া সকলে জড়ো হয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চত্ত্বরে এবং পরে থানার সামনে গিয়ে বিক্ষোভও করে। সেসময় আমিও সেখানে ছিলাম। আমি বলি- আমার ভাই কোনো দোষ করেনি, তাকে ছেড়ে দেন। এতে পুলিশ আমাকে থানার ভেতরে নিয়ে আটকে রেখেছে।’
৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম, আজিফা ও সোনিয়া বেগম জানান, চেয়ারম্যান ও মেম্বররা পছন্দের লোকজনকে বারবার চাল দিচ্ছে। যারা না খেয়ে মরছে, তাদেরকে দিচ্ছে না। পুলিশ কিংবা উপর মহলে বিষয়টি জানাতে গেলে চেয়ারম্যান ও মেম্বরের লোকেরা হুমকি দিচ্ছে। ফলে তারা খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
জানতে চাইলে দর্শনপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে সরকারি যে সহায়তা এসেছিল, তা সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করেছি। কিন্তু বোরহানুল ইসলাম মিলন নামে এক যুবক মিথ্যা ও ভুলভাল তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়েছে। সেটা জিজ্ঞেস করতে তাকে ডেকেছিলাম। কিন্তু সে যা লিখেছে, তার প্রমাণ দিতে না পারায় থানায় অভিযোগ করে তাকে সোপর্দ করেছি।’ তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
জানতে চাইলে শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কর্ণহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার আলী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘ত্রাণ বিতরণ নিয়ে ফেসবুকে মিথ্যা গুজব ছড়ানোর অভিযোগে চেয়ারম্যান তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় মিলন ও তার ভাই বাবু মুন্নাকে আসামি করা হয়েছে। তাদের দু’জনকে আটক করে থানাহাজতে রাখা হয়েছে। রোববার তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হবে।