করোনায় দেশের সহস্রাধিক আমদানিকারক পথে বসার উপক্রম
করোনাভাইরাসের মধ্যে পণ্য সরবরাহ সচল রাখতে বিশেষ ব্যবস্থায় বেনাপোল বন্দর স্বল্প পরিসরে খোলা থাকলেও ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের কার্যক্রম টানা একমাস ধরে বন্ধ হয়ে পড়ায় আটকে থাকা ট্রাকে প্রতিদিন গুনতে হচ্ছে কোটি টাকা। বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় আটকা পড়েছে তাদের প্রায় ৫ হাজার পণ্য বোঝায় ট্রাক। এসব পণ্যের মধ্যে অধিকাংশ রয়েছে শিল্ক কারখানার কাঁচামাল, কেমিক্যাল সামগ্রী ও খাদ্যদ্রব্য। কবে নাগাদ সচল হবে তা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এসব পণ্য দ্রুত ছাড় করাতে না পারলে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। স্থবির হয়ে পড়বে শিল্পকারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়া। এতে লোকসানের শিকার হয়ে পথে বসবেন এপথে ভারত থেকে পণ্য আমদানি করা দেশের সহস্রাধিক ব্যবসায়ীরা। সরকারি উদ্যোগে যদি এসব পণ্য ছাড় করানো যায় তবে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবেন তারা। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, তারা আটকে থাকা পণ্য চালান প্রবেশ করানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ভারত অংশে প্রশাসন ও বাণিজ্যিক সংশিষ্টরা সাড়া না দেওয়ায় সুফল আসছে না।
জানা যায়, বাণিজ্যের দিক দিয়ে দেশে চট্রগ্রাম বন্দরের পর বেনাপোল বন্দরের অবস্থান। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় দুই দেশের ব্যবসায়ীদের প্রথম থেকেই এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ বেশি। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয়ে থাকে। যা থেকে সরকারের রাজস্ব আসে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি মহামারি করোনা বাংলাদেশ ও তার প্রতিবেশী দেশ ভারতে ছড়িয়ে পড়ায় সংক্রমণ রোধে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ২৬ মার্চ থেকে বেনাপোল বন্দরের সাথে সব ধরনের পণ্যের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। এতে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা প্রায় ৫ হাজার ট্রাক পণ্য নিয়ে পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় আটকা পড়ে। বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ইতোমধ্যে এসব পণ্য ছেড়ে দেওয়ার তিনবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখেনি তারা। ফলে অনিশ্চয়তায় বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কায় পড়েছেন আমদানিকারকরা।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আটকে থাকা পণ্যের মধ্যে অধিকাংশ রয়েছে শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল, কেমিক্যাল ও খাদ্যদ্রব্য । বেশিদিন আটকে থাকলে এসব পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হয়ে তা ব্যবহারের অনুযোগী হয়ে পড়বে। অনেক ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে আমদানি করেছেন। আটকে থাকা পণ্যের সব লোকসান আমদানিকারকদের বহন করতে হবে।
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, চট্রগ্রামসহ অন্যান্য বন্দর আস্তে আস্তে সচলের দিকে গেলেও বেনাপোল-পেট্রাপোলের মধ্যে বাণিজ্য সচলের কোনো সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে আংশিক বাণিজ্য সচলে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। ভয়কে জয় করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এভাবে বসে থাকলে আগামী বছর সব ধরনের উৎপাদন কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়বে।
বেনাপোল ট্রাক ট্রান্সপোর্ট ইউনিয়নের সেক্রেটারি আজিম উদ্দীন গাজী বলেন, জরুরি আমদানি পণ্য পরিবহনের জন্য বন্দর এলাকায় ট্রাক চালকরা অপেক্ষা করছে। কিন্তু ভারতে আটকে থাকা পণ্য না দেওয়ায় পণ্য পরিবহন করতে না পেরে তারাও দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলোচনা করে আটকে থাকা পণ্য ছাড় করানোর ব্যবস্থা করা হয় তবে কিছুটা হলেও ব্যবসায়ীরা লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, পেট্রাপোল বন্দরে আটকে থাকা জরুরি পণ্য বোঝায় ট্রাকগুলো ছাড় করাতে বারবার ভারতীয় অংশের সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়েছে । আমরা ট্রাক চালকদের নিরাপত্তার সব ধরনের ব্যবস্থা রেখেছিলাম । তারা পণ্য দেওয়ার কয়েকবার আশ্বাস দিয়েও কথা রাখেনি।