নিজেকে বৌদ্ধ ভিক্ষু পরিচয় দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন রকি বড়ুয়া
নিজেকে বৌদ্ধ ভিক্ষু সাজিয়ে অভিনব প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন রকি বড়ুয়া নামে একজন যুবক। এই পরিচয় দিয়ে তিনি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে বিশেষ সুবিধা নিতেও ভুল করেননি। তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় সম্প্রীতি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। আসলে সে ভিক্ষু দাবি করলেও প্রকৃত অর্থে তিনি ভিক্ষু না। বৌদ্ধ ধর্মে ভিক্ষু হতে হলে কতগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয়, সেটি না করেই ভিক্ষু সাজিয়ে বিভিন্ন প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন রকি বড়ুয়া।
বৌদ্ধ ভিক্ষু পরিচয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তারেও অভিযোগ রয়েছে রকি বড়ুয়ার বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে তার এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিকট লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এই দুই মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নিতে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে।
রকি বড়ুয়ার সাথে যুদ্ধাপরাধী সাঈদী পুত্র মাসুদ সাঈদী ও মাওলানা তারেক মনোয়ারের সখ্যতার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে এলাকাবাসী বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে রকি বড়ুয়ার গ্রেফতার দাবি করেছেন। রকি বড়ুয়া কখনো সংসদ সদস্য কখনো দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশার ছবি নিজের ফেসবুক পেজে ব্যবহার করতেন। এইসব ছবিকে কাজে লাগিয়ে দেশের এবং দেশের বাইরেও তার প্রতারণার জাল বিস্তার করেন।
তার বিরুদ্ধে লোহাগাড়ার বিবিবিলা শান্তি বৌদ্ধ বিহারে হামলা ও বুদ্ধমূর্তি ভাঙচুরে তাকে প্রধান আসামি করা হলেও তিনি দিব্বি ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন। এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে দুই মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দাখিল করে প্রতারণা থেকে রেহাই পেতে আবেদন করেন। অভিযোগে বলা হয়-শীলহীন এই শীল রক্ষিত ভিক্ষু রকি বড়ুয়ার প্রতারণা হতে বৌদ্ধ সমাজকে রক্ষা করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও তার বিচারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
রকি বড়ুয়ার বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে ২০১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। উপ সচিব মল্লিকা খাতুন স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়-চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানাধীন বিবিরভিলা গ্রামের রকি বড়ুয়া কর্তৃক নিজেকে বৌদ্ধ ভিক্ষু দাবি করে এলাকায় প্রভাব বিস্তার ও সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিবেদন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবকে ইস্যু করে ওই প্রজ্ঞাপনে বর্ণিত বিষয়ে প্রাপ্ত প্রতিবেদনে উল্লিখিত সুপারিশের সংশ্লিষ্টতা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়।
এরপর ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রের পরিপ্রেক্ষিতে জননিরাপত্তা বিভাগের বিশেষ প্রতিবেদনের ছায়ালিপি এতদসংগে প্রেরণ করা হলো। উক্ত প্রতিবেদন উল্লেখিত পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো। চিঠিটি ইস্যু করা হয় সচিব, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টে। প্রসঙ্গত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের কপি বার্তা২৪.কম এর কাছে রয়েছে।
এরপরও রকি বড়ুয়ার প্রতারণা থামেনি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাকে বড় পদ পাইয়ে দেওয়ার নামে টাকাও হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রকি বড়ুয়ার বিরুদ্ধে। দেশের বাইরেও তার গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় রাজনৈতিক দল ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদ পদবীর লোভ দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
প্রতারক এই রকি বড়ুয়ার খুঁটির জোর আসলে কোথায়? এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অনেকেই ভয়ে নাম পরিচয় দিতে রাজি হননি। তাদের অভিযোগ এই প্রতারককে গ্রেফতার বা আইনের আওতায় না আনলে সাম্প্রদায়িক সংঘাত ঘটাতে পারে। তার এলাকায় বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, বিক্ষোভ হচ্ছে গ্রেফতারের দাবিতে।