হাপরের ফোঁসফাঁস ও হাতুড়িপেটার শব্দে মুখর কামারপট্টি

  • ঊর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা: হাপর দিয়ে কয়লার আগুনে লোহা পুড়িয়ে লাল করে, ছোট-বড় নানা আকারের হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তৈরি করা হচ্ছে- ছুরি, বটি, দা, চাপাতি ইত্যাদি। নতুন অস্ত্র বানানোর পাশাপাশি পুরনো অস্ত্র শান দেওয়ার কাজও করতে হচ্ছে সমানতালে। ক্লান্তিহীনভাবে চলছে কাজ, কথা বলার একদম ফুরসত নেই।

এভাবে গরমে ঘেমে-নেয়ে একাকার কামার পট্টির কারিগররা। শহুরে ভাষায় যাদের লৌহ শিল্পী বলা হয়। কিন্তু কামার বাড়ি শব্দটি বেশি পরিচিত। কামার বাড়ির লোহা-লক্করের আওয়াজ, হাপরের ফোঁসফাঁস আর হাতুড়িপেটার টুং টাং শব্দ এই সময়ের সবেচেয়ে প্রিয় শব্দ, এ শব্দ আনন্দের, এ শব্দ উৎসবের।

বিজ্ঞাপন

কারণ, সামনে যে কোরবানির ঈদ! কোরবানির দিন যতোই এগিয়ে আসছে, কামারদের ব্যস্ততা ততোই বাড়ছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/16/1534399823947.jpg

ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র পাঁচদিন। তাই কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে ছুরি, বটি, দা, চাপাতি ইত্যাদির বিশাল চাহিদা। এই চাহিদাকে সামনে রেখেই ইতোমধ্যেই প্রস্তুত কামারের দোকানগুলো।

রাজধানীর কাওরানবাজারে বেশ কিছু কামারের দোকান রয়েছে। এসব দোকান ঘুরে দেখা গেলো, দোকানগুলোতে থরে থরে সাজানো রয়েছে জবাই করার ছুরি, গোশত কাটার চাপাতি, বটি, দা ও চামড়া ছাড়ানোর কামেলা ছুরিসহ নানা ধরনের লোহার তৈরি পণ্য।

তন্মধ্যে জবাই করার ছুরির দাম সাড়ে তিনশ’ টাকা থেকে শুরু দেড় হাজার টাকার মধ্যে। চাপাতির দাম পড়বে ৩শ’ টাকা থেকে ৬শ’ টাকা। বটি ও দা কিনতে হলে ক্রেতাদের খরচ করতে হবে ৩শ’ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা।

ঈদের সময়টাতে কামার শ্রমিকদের মুখের হাসি কিছুটা চওড়া হয়। তাতে হয়তো ভাগ্যের পরিবর্তন খুব একটা হয় না, কিন্তু আয় বেশি হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কিছুটা ভালো সময় কাটান তারা।

কঠোর পরিশ্রমের কাজে সারাদিন ব্যস্ততা সত্ত্বেও এখন হাসিমুখ কাওরানবাজারের কামার আবু তাহেরের।

আবু তাহের বার্তা২৪.কমকে বলেন, সারাবছর যে পরিমাণ জিনিসপত্র বিক্রি হয়, ওই পরিমাণ বিক্রি হয় শুধু কোরবানির ঈদে। আর কাজ বেশি থাকলে মজুরিও বেশি পাই। পরিবারের সবার জন্য একটু কেনাকাটা করতে পারি। তাই কষ্ট যতোই হোক কোরবানি ঈদ মানে আমাদের জন্য আনন্দের সময়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/16/1534399841783.jpg

তবে অন্যবারের তুলনায় এবার ক্রেতার উপস্থিতি এখন পর্যন্ত কম। ঈদের দুই একদিন আগে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় হবে বলে আশা করছেন কাওরানবাজারে ছুরি, দা, বটির দোকানের মালিক শামসুদ্দিনের।

বার্তা২৪.কমকে বলেন, অন্যবার কোরবানির ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকেই মানুষ কেনাকাটা শুরু করেন। কিন্তু এবার এখনও তেমন কোনো ক্রেতা আসছেন না। তবে ঈদের দুই এক দিন আগে ক্রেতাদের সমাগম বাড়বে বলে আশা করছি।
অন্যদিকে কোরবানি ঈদ এলে এসব লোহার জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায় বলে দাবি করেছেন ক্রেতারা।

মোহাম্মদ বেলাল নামের এক ক্রেতা বলেন, সাধারণত আমরা যে বটি নেই ২শ’ টাকা দিয়ে কিনি, এখন সেই বটির দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা ৩শ’ টাকা। এভাবে সবকিছুর দামই বেড়ে গেছে। এর ফলে কিন্তু আমরা ক্রেতারা হয়রানির শিকার হই।

কোরবানিতে প্রয়োজনীয় লোহার নতুন জিনিষপত্রের চাহিদার পাশাপাশি বেড়েছে পুরানো ছুরি, দা বটির শান দেওয়ার কাজের ব্যস্ততাও। রাজধানীর কামারপট্টিতে দেখা যায় গ্রাহকরা তাদের পুরানো ছুরি, চাপাতি, বটি শান দেওয়াচ্ছেন কোরবানির কাজে ব্যবহারের জন্য। এসব ছুরি, দা-বটি শান দিতে আকার ভেদে ৫০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দিতে হচ্ছে কামারশালায়।

ছবি: সুমন শেখ