৬৭৫০ মণ আম নিয়ে প্রতিদিন ঢাকা আসবে ‘ম্যাংগো স্পেশাল’
![ফাইল ছবি।](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2020/Jun/04/1591253034145.jpg)
ফাইল ছবি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী-ঢাকা রুটে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’ চালু হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার (৫ জুন)। করোনাকালে মূলত রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম পরিবহনে চলাচল করবে ট্রেনটি। সঙ্গে বিভিন্ন স্টেশন থেকে ঢাকায় শাক-সবজি, ফলমূল, ডিম, কৃষিপণ্য, বাড়ির ফার্নিচার ও রেলওয়ে আইনে বৈধ পার্সেলও বহন করবে ট্রেনটি।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পাকশী) ফুয়াদ হোসেন আনন্দ জানিয়েছেন, প্রতিদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী হয়ে ঢাকায় ছুটবে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন-১’। আর ঢাকা থেকে রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ফেরার সময়ে ট্রেনটির নাম হবে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন-২’।
তিনি বলেন, ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনটি ছয়টি ওয়াগন নিয়ে ছুটবে। প্রতিটি ওয়াগনে ৪৫ হাজার কেজি আম বহন করা যাবে। সেই হিসেবে প্রতিদিন রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২ লাখ ৭০ হাজার কেজি (৬ হাজার ৭৫০ মণ) আম নিয়ে ঢাকা যাবে ‘ম্যাংগো স্পেশাল’।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’ চালুর বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্মকর্তাদের সংবাদ সম্মেলন।
সেখানে পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ফুয়াদ হোসেন আনন্দ জানান, ট্রেনটি প্রতিদিন চলাচল করবে। কোনো বন্ধের দিন নেই। প্রতিদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিকেল ৪টায় ছেড়ে আসবে। রাজশাহী স্টেশনে পৌঁছাবে ৫টা ২০ মিনিটে। রাজশাহীতে ৩০ মিনিট বিরতি নিয়ে ৫টা ৫০ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে।
তিনি আরও জানান, ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ১টায়। ঢাকা থেকে ফের চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে রাত ২টা ১৫ মিনিটে। রাজশাহী পৌঁছাবে সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে। রাজশাহী স্টেশনে ২০ মিনিট থেমে ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। পৌঁছাবে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে এসে ট্রেনটি আমনূরা বাইপাস, কাঁকনহাট, রাজশাহী, সরদহ, আড়ানী ও নাটোরের আব্দুলপুর বাইপাস স্টেশনে থামবে। এসব স্থানে আমসহ পার্সেল পণ্য ট্রেনে তোলা হবে।
সেখান থেকে ছেড়ে এসে পথে টাঙ্গাইল, মির্জাপুর, কালিয়াকৈর, জয়দেবপুর, টঙ্গি, বিমানবন্দর, ক্যান্টনমেন্ট, তেজগাঁও এবং কমলাপুর স্টেশনে ট্রেনটি থামবে। কমলাপুর থেকে ছেড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফেরার পথে ট্রেনটি তেজগাঁও, টঙ্গি, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, চাটমোহর এবং রাজশাহী স্টেশনে থামবে। তবে যাত্রাপথে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে’ কোনো সাধারণ যাত্রী তোলা হবে না।
আম পাঠাতে খরচ:
রাজশাহী থেকে ঢাকায় এক কেজি আম বহনে সাধারণ কুরিয়ার সার্ভিসগুলো নেয় ১০ থেকে ১৫ টাকা। অর্থাৎ কুরিয়ারে এক মণ আম রাজশাহী থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে খরচ পড়ে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কুরিয়ার খরচ আরও একটু বেশি।
কিন্তু চালু হতে যাওয়া ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে এক মণ আম রাজশাহী থেকে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছাতে খচর পড়বে ৪৭ টাকা ২০ পয়সা। অর্থাৎ কেজি প্রতি ১ টাকা ১৮ পয়সা। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশন থেকে ঢাকায় আম পাঠাতে প্রতি কেজিতে খরচ পড়বে ১ টাকা ৩০ পয়সা। অর্থাৎ এক মণে মাত্র ৫২ টাকা।
ট্রেনে আম তুলতে কুলি খরচ:
১ থেকে ২৮ কেজি আমের কার্টন, ক্যারেট বা ঝুঁড়ি বহনে কুলি খরচ পড়বে ২৫ টাকা। তবে ২৮ কেজির বেশি হলে আরও ২৫ টাকা খরচ ধরা হবে।
১ থেকে ৩৭ কেজি আমের কার্টন, ক্যারেট বা ঝুঁড়ি বহনে কুলি খরচ পড়বে ৪০ টাকা। আর ১ থেকে ৫৬ কেজির আমের কার্টন, ক্যারেট বা ঝুঁড়ি বহনে কুলি খরচ পড়বে ৫০ টাকা।
কুলির মাধ্যমে ট্রলিতে বহন করতে চাইলে পুরো ট্রলি ভাড়া পড়বে ৫০ টাকা। তবে ট্রলি ভাড়া নিয়ে নিজে চালিয়ে নিলে খরচ পড়বে ৩০ টাকা।
কুলির মাধ্যমে হুইল চেয়ার বা ট্রেচারে আম নিতে চাইলে পুরো ট্রেচার ভাড়া ৫০ টাকা। আর নিজে চালিয়ে নিলে ৩০ টাকা।
যেভাবে বুকিং:
রাজশাহী স্টেশন থেকে কেউ আম পাঠাতে চাইলে তাকে প্রথমে পার্সেল বুকিং করতে হবে। রাজশাহী স্টেশন ঘেঁষা পুরোনো স্টেশনে (রেলওয়ে হাসপাতালের সামনে) পণ্য বুকিং কাউন্টার রয়েছে।
সেখানে গিয়ে বুকিং শেষে স্লিপ নিয়ে স্টেশনে যেতে হবে। কুলির মাধ্যমে পণ্য ট্রেনে তুলে দিলে পৌঁছে যাবে গন্তব্যে। এক্ষেত্রে কুলির খরচ নিজেকে বহন করতে হবে। আম কার্টুন ও ঝুড়ি করার খরচও নিজেকে বহন করতে হবে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মেহের কান্তি গুহ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগকালে চাষিদের পাশে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী থেকে এবারই প্রথম এ ধরনের ট্রেন চালু করা হচ্ছে। ট্রেনটি চালু করতে বৃহস্পতিবারই সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। তবে আমের মৌসুম শেষ হলে এটি চালানো সম্ভব হবে না।’