মায়ের কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন নাসিম
রাজনীতির এক বীর যোদ্ধার বিদায়। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, ১৪ দলের মুখপাত্র ও সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিম তার মা আমেনা মনসুরের কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন।
বাবার দেখানো পথেই মানুষের জন্য রাজনীতি করে গেছেন তিনি। রোববার (১৪ জুন) ধানমন্ডির সোবহানবাগ মসজিদে তার প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজা শেষে গার্ড অব অনার দেওয়ার মাধ্যমে তাকে চিরবিদায় জানানো হয়। এরপর সেখানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর বনানী কবরস্থানের পাশে জামে মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে বাবা এম মনসুর আলীর কবরের পাশে মা আমেনা মনসুরের কবরে মোহাম্মদ নাসিমকে সমাহিত করা হয়।
এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণে এক অকুতভয় বীরের চিরবিদায় হলো। রাজপথের সাহসী সৈনিক আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কান্ডারী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত সহকর্মীর চিরবিদায়।
আরো পড়ুন: সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আর নেই
মৃত্যুর পর যেন মায়ের কোলেই আবার আশ্রয় নিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তার মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রোববার (১৪ জুন) সংসদে তার মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব আনা হবে এবং সেখানে সহযোদ্ধারা তার স্মৃতিচারণ করবেন।প্রসঙ্গত, গত ১ জুন নিউমোনিয়াজনিত সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করা হলে ফলাফল পজেটিভ আসে। তবে সম্প্রতি মোহাম্মদ নাসিমের পরপর তিনটি করোনা টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৫ জুন শুক্রবার ভোরে তার স্ট্রোক হয়। সেদিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রাজিউল হকের নেতৃত্বে অস্ত্রোপচার হয়। এর আগেও তার একবার স্ট্রোক হয়েছিল।
এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (১৩ জুন) সকাল ১১টা ১০ মিনিটে তার চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের বোর্ড তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মোহাম্মদ নাসিম ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং মা আমেনা মনসুর।
করোনা ভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে এ বর্ষীয়ান নেতার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর সুযোগ্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের জানাজায় উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ নাসিমের দুই ছেলে তানভীর শাকিল জয় এবং তন্ময়। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল মতিন খসরু, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনসহ ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি জাসদ, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্র পার্টিসহ বিভিন্ন দলের প্রতিনিধি ও নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জানাজায় শরিক হন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ ছাত্রলীগসহ অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। মরহুমের পরিবারের পক্ষে নামাজে জানাজায় পিতার জন্য দোয়া কামনা করেন মোহাম্মদ নাসিমের বড় ছেলে তানভীর শাকিল জয়।
নামাজে জানাজার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নাসিমকে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি চৌকষ দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। এরপর তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয়। প্রথমে রাষ্ট্রপতির পক্ষে সামরিক সচিব মরহুমের কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, এরপর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সামরিক সচিব শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কেন্দ্রীয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর একে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণ সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ঢাকা সিটি উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।