বেনাপোল কাস্টমসে ১১ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৩ হাজার ৭০ কোটি ১২ লাখ টাকা

  • আজিজুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বেনাপোল (যশোর)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

করোনার প্রাদুর্ভাবে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) ১১ মাসে (জুলাই- মে) রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৭০ কোটি ১২ লাখ টাকা ঘাটতি হয়েছে। তবে অর্থবছরের শুরুতেই রাজস্ব আয়ে পিছিয়ে ছিল এ কাস্টমস হাউস। এরপর করোনার  ধাক্কায় এ পথে ভারতের সাথে টানা আড়াই মাস আমদানি বন্ধ থাকায় রাজস্ব আহরণ নেমে আসে অর্ধেকে।

কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর ৬ হাজার ২৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় বেনাপোল কাস্টমস হাউসকে। চলতি এ অর্থবছরে প্রথম ১১ মাসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বেধে দেওয়া হয় ৫ হাজার ৬০৬ কোটি ৭৫ লাখ  টাকা। এসময় লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আদায় করে মাত্র ২ হাজার ৫৩৬ কোটি ৬৩ লাখ  টাকা। এখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৭০ কোটি  ১২ লাখ টাকা।ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৮ মে.টন।

বিজ্ঞাপন

এর আগেও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে ১ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি ছিল। এসময় লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল ৫ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা।

এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। সেবারও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, যেভাবে শুরু থেকেই ঘাটতি হয়ে আসছে তাতে চলতি অর্থবছর শেষে বিপুল পরিমাণে ঘাটতি দাঁড়াবে। বার বার রাজস্ব ঘাটতির কারণ হিসাবে তারা মনে করছেন,  চাহিদা অনুপাতে বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়া এবং উচ্চ শুল্ক হারের পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

বেনাপোল ট্যান্সপোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দীন গাজী বলেন, পণ্য ছাড়করণের ক্ষেত্রে বৈধ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না হওয়া আমদানি কমে যাওয়ার একটি কারণ। এতে দিন দিন রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে।

বেনাপোল আমদানি, রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, আড়াই মাস এ পথে আমদানি বন্ধ ছিল। এতে রাজস্ব ঘাটতি আরো বেশি হয়েছে। এপথে রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন বাড়াতে হবে। এছাড়া বন্দরে বার বার রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে অনেক ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন। বন্দর তাদের কোন ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় তারা এ বন্দর ছেড়েছেন।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু আমদানিকারক জানান, বেশি লাভজনক হওয়ায় সম্প্রতি বেনাপোল বন্দরে বৈধ পণ্যের সাথে বিভিন্ন কৌশলে ভায়াগ্রার মত মাদক ঢুকছে। দু-একটা চালান আটক করলেও অধিকাংশ চালান থাকছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার হোসেন রাজস্ব ঘাটতির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, করোনার কারণে প্রথমত আড়াই মাস ধরে আমদানি বন্ধ ছিল। এছাড়া পণ্য খালাসে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বেড়ে যাওয়ায় কিছু ব্যবসায়ী এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমিয়েছেন। এতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। তবে কাস্টমস কর্মকর্তারা লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

জানা যায়, রাজস্ব আয়ের দিক থেকে চট্রগ্রাম বন্দরের পরেই বেনাপোল বন্দরের অবস্থান। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। যা থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসতো। এ পথে আমদানি পণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শিল্পকারখানার কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল, অক্সিজেন বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য জাতীয় পণ্য।