গাছেই শুকিয়ে যাচ্ছে ফুলচাষির স্বপ্ন
ফুল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে সাভারের বিরুলিয়ার অনেক ফুল চাষি। উদ্বুদ্ধ হয়ে সচ্ছল জীবনে ফেরার আশায় অনেকেই মূল পেশা ছেড়ে দিয়ে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিল গোলাপ চাষ। ভাল ফলন হলেও বিক্রি অভাবে গাছেই শুকিয়ে যাচ্ছে তাদের স্বপ্ন। করোনার কারণে সকল অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা বন্ধ হওয়ায় হচ্ছে না ফুল বিক্রি। ফলে অসচ্ছল হয়ে নিদারুণ কষ্টে দিন যাপন করছেন তারা।
করোনার প্রভাবে থমকে থাকা দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সীমিত পরিসরে খোলা হয়েছে সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ গণপরিবহন। কিন্তু তাতেও ভাগ্য খুলছে না বিরুলিয়ার ফুল চাষিদের।
শুক্রবার (৩ জুলাই) দুপুরে সাভারের বিরুলিয়ার সাদুল্লাপুর, বাগনিবাড়ি, শ্যামপুরসহ বিভিন্ন এলাকার গোলাপ গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, আগের মতো দর্শনার্থীদের আনাগোনা নেই এখানে। মানব শুন্য প্রায় প্রতিটি বাগান। প্রায় সকল বাগানেই ফোটা ফুল শুকিয়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে এখানকার সব গোলাপের পাইকারি হাট। বিক্রির অভাবে বাগান থেকে তোলা হচ্ছে না টুকটুকে লাল গোলাপ। বাগানে দিন মজুর শ্রমিকদেরও কমে গেছে কাজ।
সাভার উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, সাভারের বিরুলিয়ায় প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে ১৫ শতাধিক চাষি গোলাপের চাষ করেন। প্রতি দিন প্রায় ৩০ লাখ টাকার ফুল বিক্রি হতো এখানে। প্রতিদিন চাষিরা প্রায় ২ হাজার টাকার গোলাপ বিক্রি করতেন। কিন্তু করোনার কারণে প্রায় দেড় হাজার চাষি দিনে ৩০ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
শ্যামপুরের গোলাপ চাষি সবুজ বলেন, আমাদের দেশের কয়েকটি দিবস লক্ষ্য করে গোটা গোলাপ গ্রামের বাগান পরিচর্যা করে ফুল চাষিরা। এবার করোনার কারণে পহেলা বৈশাখ, ঈদুল ফিতরসহ কয়েকটি দিবসের আনুষ্ঠানিকতা বন্ধ হলে কোন রকম ফুল বিক্রি করতে পারে নি কেউ। এতো কষ্ট, এতো শ্রম দিয়ে পরিচর্যা করে ভাল উৎপাদন হলেও লোকসানের মুখে ফুল চাষিরা।
অপর গোলাপ চাষি মনির বলেন, করোনাভাইরাস আমাদের মুখের খাবার কেড়ে নিয়েছে। প্রায় দেড় একর জমিতে আমি গোলাপের চাষ করেছি। আমার বাগানে ঢুকলে মনে হতো আমি ফুলের রাজ্যে প্রবেশ করেছি। বাগানে ঢুকতেই মনটা ভরে উঠতো। এখন বাগানে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে গাছে গাছে শুকিয়ে রয়েছে ফুটন্ত তাজা গোলাপগুলো। দেখলেই চোখে জল চলে আসে। একদিকে বাগানের করুণ অবস্থা অন্যদিকে বিক্রি অভাবে অসচ্ছলতা বাসা বেঁধেছে সংসারে। এখন তো খুবই কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আজ ফুল শুকিয়ে যাচ্ছে কাল পরিচর্যার খরচের যোগান অভাবে গাছ শুকিয়ে যাবে। খুবই খারাপ অবস্থায় আছি।
শ্যামপুরের পাইকারি হাটের ব্যবসায়ী আহসান বলেন, এখন গোলাপের চাহিদা নাই তাই আমের ব্যবসা করছি। আগে প্রতিদিন গোলাপ কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতাম। কিন্তু সব ধরনের অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা বন্ধ হওয়ায় ফুলের আর চাহিদা নাই। বসে থেকে সংসারও চলে না। এজন্য আড়ত থেকে আম কিনে ভ্যানে করে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করছি। করোনা চলে গেলে আবার ফুলের ব্যবসা করবো।
এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সচেতনতার দিকটি খেয়াল রেখে কেউ নিজে থেকেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে না। তাছাড়া সব ধরনের অনুষ্ঠানই অল্পসংখ্যক লোক নিয়ে আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই করা হচ্ছে। এজন্য ফুলের চাহিদা নাই। এবছরে ফুলচাষিরা লোকসানে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা করা হয়েছে। তালিকাটি কৃষি অধিদপ্তরে পাঠানো হবে। এছাড়া তাদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।