পটুয়াখালীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১ কোটি ১১ লাখ টাকা হরিলুট!

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পটুয়াখালী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কলপাড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন

কলপাড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক আশ্রয়ণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ১০টি কমিউনিটি সেন্টার এবং ৬টি পুকুর ঘাট নির্মাণ না করেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের’ ১ কোটি ১১ লাখ ৭৫ হাজার ৩৩৫ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার (২২ জুলাই) দুপুরে কলপাড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

অনুসন্ধানে জানা যায়, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সারিকা ট্রেডার্স ৭ এপ্রিল গলাচিপাস্থ সোনালী ব্যাংকের হিসাব নম্বরে (চলতি- ৪৩১০২০০০০১৫০৫) কলাপাড়া হিসাব রক্ষণ অফিসের ব্যয় বরাদ্দ বিলের ভাউচারের মাধ্যমে এ টাকা হস্তান্তর হয়েছে। যদিও এ সকল বিল ভাউচারের সাত নম্বর কলামে চেক ইস্যু করার জন্য আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প, কলাপাড়া উপজেলা, চলতি হিসাব নম্বর-৫০৭০৯০১০০১১৩৬, পূবালী ব্যাংক লি. কলাপাড়া শাখার কথা কম্পোজ করে উল্লেখ করা রয়েছে। কিন্তু ওই লাইনটি কেটে মেসার্স সারিকা এন্টারপ্রাইজের গলাচিপা শাখার সোনালী ব্যাংকের উপরোক্ত হিসাব নম্বরে বিল করে সরাসরি কলাপাড়া থেকে সমুদয় টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সিল-সই সবই রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প তেজগাঁও ঢাকা এর স্মারক নম্বর-০৩.০২.০০০০.৭০১.০২.০৯৬.১৯.১৩১৪ তারিখ- ৩১ ডিসেম্বর-২০১৯ চিঠিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ ব্যয় নির্বাহের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ করা হয়। যেখানে কলাপাড়ায় খাজুরা, চালিতাবুনিয়া, গোড়া আমখোলা, ছোট বালিয়াতলী, ফতেপুর, লক্ষ্মীবাজার, নিশানবাড়িয়া, গামুরিবুনিয়া, নীলগঞ্জ ও নিজশিববাড়িয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য প্রত্যেকটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হয় নয় লাখ ৮০ হাজার ১১৩ টাকা। এছাড়া নিশানবাড়িয়া ও গামুরি বুনিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের দু’টি ঘাটলা নির্মাণ ব্যয় চার লাখ ৫৮ হাজার ৮৩৫ টাকা। নীলগঞ্জ ও গোড়াআমখোলা পাড়া আশ্রয়ণের দু’টি ঘাটলা নির্মাণ ব্যয় চার লাখ ৫৮ হাজার ৮৩৫ টাকা এবং খাজুরা ও ফাসিপাড়া দু’টি ঘাটলা নির্মাণ ব্যয় বরাদ্দ দেয়া হয় চার লাখ ৫৮ হাজার ৮৩৫ টাকা। বাস্তবে এ ১০টি কমিউনিটি সেন্টার ও ছয়টি ঘাটলার কোন কাজ করা হয়নি। সেখানে সকল বিল বাবদ মোট এক কোটি ১১ লাখ ৭৫ হাজার ৩৩৫ টাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সারিকা এন্টারপ্রাইজ তুলে নিয়েছে। এসব বিলে মার্চ মাসের ২২ তারিখে বদলী হওয়া কলাপাড়ার ইউএনও মো. মুনিবুর রহমান এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষ এর সই রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ইউএনও মুনিবুর রহমান জানান, আমার যেসব সই দেখানো আছে তা জাল। কারণ কলাপাড়ায় চাকরিকালীন সই-স্বাক্ষর অফিসে রক্ষিত রয়েছে। আর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো চিঠিপত্র তিনি কলাপাড়ায় থাকাকালীন রিসিভ করেননি। কাজকর্ম তো দূরের কথা। এ ধরনের কোনো ফাইল চালু তথা এ প্রকল্পের কোনো ব্যাংক হিসাব পর্যন্ত খোলা হয়নি। পূবালী ব্যাংকের যে অ্যাকাউন্ট খোলা তার সম্পর্কে তার কিছুই জানা নেই। তার সকল স্বাক্ষর জাল করে হিসাব রক্ষণ অফিসে বিল তাও কর্মস্থল ত্যাগ করার ১৫ দিন পরে ব্যাংক হিসাব ছাড়া সরাসরি ঠিকাদারের হিসাবে ট্রান্সফার করার বিষয়টি কীভাবে সম্ভব হলো। গোটা কাজটি ইউএনওর দফতরের করার কথা, এমনকি অবহিত পর্যন্ত করা হয়নি। বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে কলাপাড়ায় তোলপাড় চলছে।

চম্পাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিন্টু তালুকদার এবং লতাচাপলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা জানান, তার ইউনিয়নে কমিউনিটি সেন্টার ও ঘাটলার কাজ করার জন্য কোনো বরাদ্দ আছে তা তাদের জানা নেই। আর এ ধরনের কোনো কাজ করা হয়নি। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে যেসব চিঠি ইস্যু দেখানো হয়েছে তার সব মেমো উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের। কবে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে, কীভাবে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে এবং একইদিনে ব্যাংক হিসাব ব্যতিরেকে বিলের সমুদয় টাকা ঠিকাদারের হিসাবে সরাসরি গেল এ নিয়ে জটিল রহস্য দেখা দিয়েছে।

কলাপাড়ার বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, বিষয়টি জেনে আমি মাঠ পর্যায়ে গিয়ে নিশ্চিত হয়েছি। ১০টি কমিউনিটি সেন্টার এবং ছয়টি ঘাটলা নির্মাণের কোনো কাজ হয়নি। গোটা বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। শুধু তাই নয় পূবালী ব্যাংকের হিসাব খোলার বিষয়টিও একটি অনিয়মের মধ্য দিয়ে খোলা হয়েছে। যেখানে যৌথ হিসাব সেখানে শুধু প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সই থাকলেও ইউএনওর কোনো সই নেই। অথচ ওই অ্যাকাউন্টে সরকারি টাকা জমা হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষ জানান, তিনিও বিষয়টি জেনে অবাক হয়েছেন। ওই ফাইলটিও তার অফিসে নেই বলে জানান। তার সই-স্বাক্ষরও জাল করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। বর্তমানে তিনি এলাকার বাইরে রয়েছেন। এসে সবকিছু ঠিকভাবে জানাতে পারবেন।

ঠিকাদার মো. শামীম জানান, আমাকে কলাপাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে ফোন করে বিল রেডি করার কথা বলা হয়েছে। আমি গিয়ে টাকা তুলেছি। তবে করোনার কারণে কোনো কাজ করতে পারেন নি বলে জানান। পরে করে দিবেন বলেও জানান।

কলাপাড়া হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ের অডিটর মংখেলা জানান, তারা যথাযথভাবে কাজ করেছেন। কোনো অনিয়ম করেননি।