'পাট শিল্পের মত ধ্বংস করা হচ্ছে ট্যানারি শিল্প'
যেভাবে পাট শিল্প ধ্বংস করা হয়েছে, ঠিক সেই পথেই ধ্বংস করা হচ্ছে বাংলাদেশের ট্যানারি শিল্প। চামড়া শিল্প ধ্বংস হলে গরিব, দুঃখী ও এতিমদের হক নষ্ট হয়। সরকারের ভেতরের একটি মহল সিন্ডিকেট করে কওমি মাদরাসাকে ধ্বংস করতে এবং চামড়া শিল্পকে ধ্বংস করে নিজেরা ফায়দা লুটতে চায়।
শুক্রবার (৩১ জুলাই) ভিডিও কনফারেন্স এসব কথা বলেন বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, সরকার গত বছরের মতোই আওয়ামী লীগের চামড়া সিন্ডিকেটের স্বার্থ রক্ষায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নানা অজুহাতে এ বছর চামড়ার দাম কমানো হয়েছে গত বছরের তুলনায় প্রায় ২৯% কম। গত বছর কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য দাম না পেয়ে নীরব প্রতিবাদ হিসাবে সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি না করে লক্ষাধিক পিস চামড়া ধ্বংস করেছিলেন অনেকে। যার বেশির ভাগ মাটিচাপা কিংবা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়।
চামড়ার মূল্য না থাকায় স্মরণকালের ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়ে দেশের চামড়ার বাজার। দামে ধ্বস নামায় প্রায় হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। পাশাপাশি এই টাকা থেকে বঞ্চিত হয় গরিব ও এতিম জনগোষ্ঠী। করোনার কারণে চামড়া নিয়ে এবারো সেই সঙ্কট আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। লুটপাটের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে চরম অর্থ সঙ্কট চলছে। এ কারণে এবারও ট্যানারি মালিকরা ব্যাংক থেকে কোনো টাকা পাবে কিনা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
রিজভী বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনার সঙ্গে ভয়াবহ বন্যার কারণে দিশেহারা দেশের ৩১টি জেলার অর্ধ কোটির বেশি মানুষ। ঘরে ঘরে অভুক্ত মানুষের হাহাকার। বানভাসি মানুষের ঘরে নেই ঈদের আনন্দ। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে বানভাসিদের ঈদ। করোনার কষাঘাত আর সর্বগ্রাসী বন্যার করাল গ্রাসে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে মানুষকে। বানভাসিদের ঈদের আনন্দ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। করোনা এবং বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষকে বাঁচাতে সরকারের কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই। সরকারের মন্ত্রী-নেতারা করোনা মোকাবিলার মতো বন্যা মোকাবিলায় ‘কথা মালার’ মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছেন।
বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ৩১টি জেলাগুলোকে ডুবিয়ে ১৬ বছর পর বন্যার পানি প্রবেশ করছে রাজধানীতে। ডুবে গেছে সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বেরাইদ, সাঁতারকুল, গোড়ান, বনশ্রী, বাসাবো ও আফতাবনগরের নিচু এলাকা। এ ছাড়া ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও ডিএনডি বাঁধ এলাকায়ও বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করেছে। রাজধানীর আশপাশের বালু, তুরাগ ও টঙ্গী খালের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ১০ দিন ধরে পানিবন্দি ঢাকার পূর্বাঞ্চলের মানুষ। পানি বাড়ছে প্রতিদিনই, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্ভোগ। বালু নদের পানি উপচে ঢুকে পড়েছে উত্তর ও দক্ষিণ সিটির বেশ কয়েকটি এলাকায়। বেরাইদের ফকিরখালীর প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ঢুকেছে বানের পানি। সুপেয় পানির সংকটে এই অঞ্চলের অসংখ্য পরিবার। লুটপাট আর দুর্নীতির কারণে ডেমরা থেকে টঙ্গী বেড়িবাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে মানুষের কষ্ট লাঘব হচ্ছে না। বালু নদের পাড় দিয়ে বন্যা প্রতিরোধের একটা বাঁধ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এই সরকার প্রতিটি সেক্টরকে আকণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবিয়ে দিয়েছে বন্যার পানির মতো।
তিনি আরো বলেন, আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে মনে করি এই ভয়াবহ অবস্থা মোকাবেলা করা আওয়ামী লীগের ভঙ্গুর আর দুর্নীতিবাজ প্রশাসন দিয়ে সম্ভব না। এই জন্য প্রয়োজনে জাতীয়ভাবে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। একগুঁয়েমি বাদ দিয়ে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নেয়া। এসময় তিনি বন্যা দুর্গতদের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা প্রদানসহ আরো কয়েকটি দাবি করেন।