‘রাজনীতিবিদরা লোভের চোরাবালিতে নিমজ্জিত হলে জনগণের স্বপ্ন ছিনতাই হয়’
রাজনীতি হলো একটি মহান ব্রত। রাজনীতির শেষ কথা হলো জনকল্যাণ। যারা বলে রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই তারা মূলমন্ত্র থেকে সরে গিয়ে লুটপাটের সংস্কৃতি গড়ে তোলে। রাজনীতি হলো জনগণের স্বার্থ রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী। আর সেই রাজনীতির সংস্কৃতি নষ্ট হলে কিংবা রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা লোভের চোরাবালিতে নিমজ্জিত হলে জনগণের স্বপ্ন ছিনতাই হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দলীয় কার্যালয়ে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ‘স্বেচ্ছাশ্রমে বাংলাদেশ: বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ভাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি একথা বলেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগ আয়োজিত আলোচনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেব বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম আফজালুর রহমান বাবু।
ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনীতি হলো একটি স্বেচ্ছাসেবক, স্বেচ্ছাশ্রম। সত্যিকার রাজনীতিকরা লোভের বশবর্তী হয়ে রাজনীতিতে আসেন না। কোনো মহান লক্ষ্য চেতনা মূল্যবোধকে সামনে রেখে রাজনীতিতে আসেন।
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, একটি পট, এমন একটি অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে যে এই অপকৌশলের মধ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে কিছু সময়ের জন্য সক্ষম হয়েছে। সেদিন যারা বঙ্গবন্ধুর খুনি খোন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভায় শপথ নিয়েছিল নিশ্চয় তারা তাদের আদর্শের প্রতি, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাদের প্রতিজ্ঞার প্রতি যে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, বিশ্বাস ছিল সেটার অভাব ছিল। অনেকেই সেদিন বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে। এটি হাজারো মানুষের কাছে বিরাট প্রশ্ন কেন তারা সেদিন শপথ নিয়েছিল? জাতি এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চায়।
তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের পর তথাকথিত রাজনীতিবিদরা বলার চেষ্টা করেছে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশে কোনো প্রতিবাদ, প্রতিরোধ হয়নি। কেন প্রতিরোধ হয়নি কেন তারা তখন প্রতিবাদ করেনি এর দায় তাদের নিতে হবে।
তিনি বলেন, অনেক ষড়যন্ত্রকারী এখনো দেশে বিদ্যমান আছে। সেদিন হত্যাকারীদের মূল উদ্দেশ্যে ছিল বঙ্গবন্ধুকে এবং তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং যে লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সেই লক্ষ্যে যেন বাংলাদেশ পৌঁছতে না পারে। সেই লক্ষ্য যাতে ব্যর্থ হয়, সে কারণেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। দেশ স্বাধীন করার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যখন সবকিছু স্থিতিশীল ছিল যখন বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল তখনই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে, বিশ্বাস রাখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেকে শক্তিশালী করতে হবে।
তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নেই। নানাবিধ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তথাকথিত লে. জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী, ব্রাউনিয়া, সাহেদ করিম, পাপিয়া বা ক্যাসিনো অধিপতিদের ঘিরে একটি ধূম্রজাল সৃষ্টির পায়তারা করা হচ্ছে। নানাবিধ অপতৎপরতা চালাচ্ছে। যখনই আগস্ট মাস আসে কুচক্রীরা নানা ধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়, ধূম্রজালের সৃষ্টি করে।
প্যারোলে মুক্তির পর ঈদুল আজহার দিন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেছেন দেশে কিছু একটা হতে যাচ্ছে। তার সেই বক্তব্যের রেশ ধরে নাছিম বলেন, কি হতে যাচ্ছে? এটা কিসের ইঙ্গিত? চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী সেনাবাহিনীর পোশাক পরে কনক সারোয়ার, মনিরুজ্জামান আর তারেক রহমান লন্ডনে বসে অপপ্রচার করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। আমাদের অনেক বেশি সজাগ থাকতে হবে। অনেক কিছুতে অনেক বেশি দৃষ্টি রাখতে হবে।
তিনি ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করার জন্য একটি তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন। এই তদন্ত কমিশন গঠন করে সেদিন খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যারা ছিল তাদের ভূমিকা কি ছিল এসব বিষয় জাতির সামনে মুখোশ উন্মোচন করার দাবি জানিয়েছেন।