মওদুদের উত্তরসূরি হতে চান স্ত্রীসহ ৭ জন
কবিরহাট-কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে নোয়াখালী-৫ আসন। এই আসন ভিআইপি আসন হিসেবেও পরিচিত। জীবদ্দশায় বিএনপির নেতৃত্বে নিজের আসনসহ নোয়াখালীতে সর্বময় ছিলেন প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী, উপ-রাষ্ট্রপতি এবং বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মৃত্যুর পর আলোচনা চলছে। এ আসনে ওবায়দুল কাদের বা আ.লীগের বিপক্ষে বিএনপির হয়ে কে নেতৃত্ব দিবেন। এই আসনে মওদুদের উত্তরসূরি হয়ে বিএনপির হাল ধরতে চান তার সহধর্মীনি হাসনা জসীম উদদীন মওদুদসহ ৭জন। নিরবে নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা চালাচ্ছে নানা মুখী কর্মকাণ্ড।
করোনা সংক্রমণের কারণে স্থানীয় বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্তিমিত রয়েছে। তবে সীমিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যেও স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মূল আলোচনার বিষয় হচ্ছে মওদুদের স্থলে বিএনপির রাজনৈতিক সাংগঠনিক কার্যক্রমের উত্তরসূরি হচ্ছে কে। কার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকবে। নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের মধ্যে দলের ত্যাগী-পরিক্ষিত নেতা যেমন আছে, তেমনি আছেন নব্য বিএনপিরাও। এ পরিস্থিতিতে যে কোনো মুহূর্তে আসতে পারে নতুন নেতৃত্বের ঘোষণা। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কথায় এমন আভাস পাওয়া গেছে।
নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছে, প্রয়াত ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদের সহধর্মীনি সাবেক সংসদ সদস্য হাসনা জসীম উদদীন মওদুদ। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফোরকান ই আলম, ২০ দলীয় জোট সমর্থিত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শিল্পপতি ফখরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট পারভীন কাউছার মুন্নি।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, বিএনপির সাংগঠনিক নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত মওদুদ আহমদের সহধর্মীনি হাসনা জসীম উদদীন মওদুদ এগিয়ে রয়েছে।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানায়, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ ও মাঠ পর্যায়ের পরিক্ষিত নেতাদের আস্থার জায়গায় রয়েছেন।
কবিরহাট পৌরসভা বিএনপির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্জু বলেন, মওদুদ আহমদের মত পাহাড় সম যোগ্যতার অধিকারী রাজনীতিবিদের নেতৃত্বে নোয়াখালী-৫ আসনের বিএনপি ছিলো। আগামী দিনের রাজনীতিতে মরহুম ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধের ওপর নির্ভর করবে দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা। এইটা ভুলে গেলে চলবে না।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহবায়ক মেহেদী হাসান টিপু বলেন,শিল্পপতি ফখরুল ইসলাম মাঠ পর্যায়ের বিএনপির নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে পাশে রয়েছেন। দলকে সু-সংগঠিত করতে তাকে দলের নেতৃত্বে সুযোগ দেওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
হাসনা জসীম উদদীন মওদুদ বলেন, এটা এখনো অনেক অপরিপক্ক বিষয়। আমি এখনো শোকে আছি। তবে আমাদের পার্টি থেকে যখন যে সিদ্ধান্ত আসবে, সে হিসেবে আমি মুভ করব এবং সেটাই পালন করব। তবে এলাকার মানুষ চাইলে আমি বিষয়টি প্রাধান্য দেব।
অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন বলেন, মওদুদ সাহেব যখন জাতীয় পার্টিতে যায় তখন এখানে বলতে গেলে বিএনপির অস্তিই ছিলনা। তখন সদর-কোম্পানীগঞ্জে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থাটা আমি তৈরি করেছি। আমি বাংলাদেশ ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলাম। ১৯৯১ সালে এই আসন থেকে আমি বিএনপির প্রাথী হিসেবে সংসদ নির্বাচন করি। এ হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমিই প্রাপ্য।
জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, এ বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে অনীহা প্রকাশ করেন।
বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ বলেন, মওদুদ সাহেবই এলাকার রাজনীতিতে আমাকে উৎসাহিত করেন। আমি চাচ্ছিনা, মওদুদ সাহেবের মৃত্যুর পর-পরই এ বিষয় নিয়ে কথা বলতে। বরং আমি চাচ্ছি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই এলাকার রাজনীতির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড দেখ ভালের জন্য দায়িত্ব দিবেন। দলকে ভালোবেসে দলের দায়িত্ব নিতে আমার আগ্রহ থাকাটা স্বাভাবিক। তবে দলের হাই কমান্ড যে সিদ্ধান্ত নিবে তা মেনেই আমরা রাজনীতি করব।
ফোরকান ই আলম বলেন, দল যদি আমাকে দায়িত্ব দেয় আমি দায়িত্ব পালনে আগ্রহী।
ফখরুল ইসলাম বলেন, এখন অনেককে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। দল কাকে দিবে এটা দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।
অ্যাডভোকেট পারভীন কাউছার মুন্নি বলেন, আমি ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম। বিভিন্ন ভাবে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দলের কাছে আমার বক্তব্য তুলে ধরব। দল যে সিদ্ধান্ত দিবে আমরা তা মেনে দলের জন্য কাজ করব।
এ বিষয়ে বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম বলেন, যারা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে দলের কাজ করবে তারাই নতুন নেতৃত্বে উঠে আসবেন।
স্থানীয়দের ধারণা, এ আসনটিতে যে প্রার্থী জয় পান, তার দল সরকার গঠন করে। ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের সময় থেকেই এ আসনে লড়ে আসছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও মওদুদ আহমদ। যেবার মওদুদ জিতেছেন, সেবার বিএনপি সরকার গঠন করেছে, যেবার ওবায়দুল কাদের জিতেছেন, সেবার আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে।
উল্লেখ্য, গত (১৬ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ১৯৪০ সালের ২৪ মে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মানিকপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং মা বেগম আম্বিয়া খাতুন। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে মওদুদ আহমেদ চতুর্থ।