১০ কোটির লোনে ৫ কোটি টাকা ঘুষ দিতে হয়: ফখরুল

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

১০ কোটি টাকা লোন নিলে ৫ কোটি টাকা ঘুষ দিতে হয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, সরকার আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা একেবারে ফোকলা করে দিয়েছে। পুরোপুরিভাবে লুট করে নিয়ে গেছে। প্রতিটি ব্যাংক আজকে বিপদগ্রস্ত হয়ে আছে। আপনি ব্যাংকারদের সাথে কথা বললে দেখবেন তারা বলবে ভাই সব শেষ। আমার এক বন্ধু আছে নাম বলবো না, তিনি ব্যাংক সেক্টরে বড় একটি দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বলেছেন যারা ব্যাংকে টাকা রাখেন তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রতিটা ব্যাংকই প্রায় ব্যাংকক্রাফট হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৩ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম এ্যাডভোকেট আফসার আহমদ সিদ্দিকী’র ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, ব্যাংক থেকে আওয়ামী লীগের লোকেরা ছাড়া কেউ লোন পায় না। ব্যাংকগুলোর ডিরেক্টরও ওই আওয়ামী লীগের লোকেরা। ১০ কোটি টাকা লোন নিলে তাদের পাঁচ কোটি টাকা ঘুষ দিতে হয়। আর বাকি পাঁচ কোটি টাকা ফেরত দিতে হয় না। কারণ আওয়ামী লীগের হুকুমে হয়েছে। ওই লোন ফেরত না দিলেও চলবে। এই হলমার্কসহ যতকিছু দেখছেন প্রত্যেকটাতে চরমভাবে লুণ্ঠন চলছে। কারণ স্বয়ং সরকার প্রধান বলছেন যে যা পারো খেয়ে ফেল।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটা বর্গীর মতো অবস্থা। বর্গীরা যখন আসে এবং সব সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়ে যায়, এই সরকার সে রকম একটা অবস্থা তৈরি করেছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমানে আমরা একটি ভয়ঙ্কর দুঃসময় অতিক্রম করছি। এত বড় দুঃসময় এদেশে কখনো এসেছে কিনা আমার জানা নাই। এখানে আমরা যারা আছি তারা অনেকেই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সাথে ছিলাম, আমরা যুদ্ধ করেছি। তখনো এত দুঃসময় ছিল না। তখন আমরা চিনতাম আমাদের শত্রুকে। কাদের সাথে লড়াই করে আমাদের জয়লাভ করতে হবে। তখন আমরা সবাই এক হয়ে গিয়েছিলাম। যারা ঐ পাড়ে গিয়েছিল তারাও আর ভেতরে যারা ছিল তারাও সব এক হয়ে গিয়েছিল। একটি লক্ষ্য ছিল আমাদের পাকিস্তানিদেরকে সরাতে হবে, জিততে হবে।

তিনি বলেন, আজকে যাদের যুদ্ধে যাওয়ার সময়, সংগ্রাম করার সময়, যারা এই দুঃসময়কে দূর করবে, যারা এই অন্ধকারকে দূর করে আলো নিয়ে আসবে তারা কোথায়? সেই যুবক কোথায়? সেই তরুণ কোথায়? তাদেরতো সমানে আসতে হবে। তাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। প্রতিটি সংগ্রামে অবশ্যই তাদের নেতৃত্ব দিতে হবে। আমি অনেক দিন যাবত জোর দিয়ে বলছি এটা ছাড়া কোন উপায় নাই।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার দেশের যে অবস্থা করেছে সেটা বারবার বলতে আর ভালো লাগে না। শেষ করে দিয়েছে, কোনো কিছু অবশিষ্ট রাখেনি। কোথাও কোনো কিছু নেই যেখানে আপনারা একটু আস্থা নিতে পারবেন, একটু প্রাণ খুলে শ্বাস নিতে পারবেন। সেই অবস্থা তারা দেশের মধ্যে রাখেনি। শ্বাসরুদ্ধকর একটা পরিবেশ তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, দেশে কেউ নিরাপদ নয়। প্রতিদিন আমরা খবরের কাগজ খুললেই দেখবেন হত্যা, খুন, জখম, ধর্ষণ, ছিনতাই, দুর্নীতির খবর বের হচ্ছে। এখন নতুন করে বের হচ্ছে ই-কমার্সের লুণ্ঠন। ই-কমার্সে যারা লুণ্ঠন করছে তারা কারা? কাদের আশ্রয়ে তারা লুণ্ঠন করছে? কারা তাদেরকে প্রটেকশনটা দিচ্ছে? দেখবেন এই আওয়ামী লীগের লোকেরাই এর সাথে জড়িত।

আফসার আহমদ সিদ্দিকী’র কথা স্মরণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে নিঃসন্দেহে একজন ব্যতিক্রমী রাজনীতিবিদ ছিলেন আফসার উদ্দিন আহমেদ। সম্ভবত তাদের ওই সময়টাই ছিল যারা রাজনীতি করতেন তারা সমাজ পরিবর্তনের চিন্তা করতেন। এদেশের কৃষক শ্রমিক মজুর সেই মানুষগুলো যারা সব সময় নিচের দিকে থাকেন তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের চিন্তা করতেন।, কিভাবে তাদের খাওয়া-পরা ও তাদের সন্তানদের লেখাপড়া, স্বাস্থ্য উন্নত করা যায় সেই চিন্তা করতেন। মরহুম আফসার আহমেদ সিদ্দিকী সাহেব সেই সময়কার সেই ঘরানার একজন রাজনীতিবিদ। আজকাল যেটা সহজে দেখা যায় না। আজকাল রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনাটাই বদলে গেছে।

তিনি বলেন, এখন যুগ পাল্টে গেছে। পৃথিবীতে এমন একটা সময় এসেছে আমার মাঝে মাঝে মনে হয় একটা নষ্ট সময় চলছে। এই খারাপ সময়টাতে শুধু বাংলাদেশে নয়, পুরো পৃথিবীতে খারাপ লোকেরা উপরে উঠে আসছে আর যারা ভালো চিন্তা করে, ভালো কাজ করে তারা নিচে নেমে যাচ্ছে। বলা যেতে পারে সামাজিক একটা পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এখন রাজনীতি হচ্ছে পদ চাই,পদবী চাই আর বাড়ি-গাড়ি চাই। টাকা পয়সা কিভাবে অর্জন করব সেগুলো দরকার। এ দিয়ে কোন পরিবর্তন হয় না। পরিবর্তন আনতে হলে আফসার আহমেদ সিদ্দিকির মতো ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। যাদের জন্ম অত্যন্ত সচ্ছল পরিবারে কিন্তু মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য তারা নিজে ত্যাগ স্বীকার করেছেন।

এ সময় তিনি বলেন, যারা ভোগ বিলাশ করে তারা পরিবর্তন আনতে পারে না। ইতিহাস বলে যারা বিলিয়ে দিতে জানে তাদের হাত ধরেই সমাজের পরিবর্তন আসে।