৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সুনামি তৈরি করবে বিএনপি: আমীর খসরু
এক দফা দাবিতে আগামী ৫ অক্টোবর বিএনপির রোডমার্চ সুনামি তৈরি করবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বিএনপির রোডমার্চের মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে এক দফা দাবি, অর্থাৎ শেখ হাসিনার পদত্যাগ। এটা নিয়ে আমরা রাস্তায় নেমেছি। দাবি না মানা পর্যন্ত বাড়ি ফিরে যাব না কেউ। ভোট চোরদের বিদায় করতে ৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সুনামি তৈরি করতে হবে।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নগরীর কাজির দেউরীর নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির বিভাগীয় প্রস্তুতি সভায় এসব কথা বলেন তিনি। সরকারের পদত্যাগ ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির একদফা দাবিতে আগামী ৫ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে ফেনী, মিরসরাই হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোড়মার্চ কর্মসূচী সফল করতে এই সভার আয়োজন করা হয়।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিভাগীয় দলনেতা মোহাম্মদ শাহজাহানের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীমের পরিচালনায় সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন।
আমীর খসরু বলেন, রোডমার্চে কুমিল্লায় ও চট্টগ্রামে বড় জনসভা হবে। মাঝখানে যেগুলো হবে সেগুলো পথসভা। আমাদের পথসভাগুলো জনসভার মতই। আমরা বগুড়া থেকে যখন যাচ্ছিলাম পথসভাগুলো জনসভায় রুপ নিয়েছিল। রাস্তাঘাট সব বন্ধ হয়ে গেছে। আশেপাশে দোকান পাট, মানুষের বাড়িঘর এমন অবস্থা যা জনসভা থেকে বেশি হয়ে গেছে। আগামীকাল থেকে চট্টগ্রামে ঝড় তুলতে হবে। ৫ অক্টোবর হবে সুনামি। চট্টগ্রাম আগেও ঝড় তুলেছে। এবারও ঝড় তুলতে পারবে।
বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা বিচারে জেলে নিয়ে এখন বাড়িতে আটকে রেখেছে বলে দাবি করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। উনাকে বিনা বিচারে, মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দিয়ে ভোট চুরি প্রকল্পের অংশ হিসেবে জেলে নিয়ে গিয়েছিল। এখন বাড়িতে আটকে রেখেছে। উনার অসুস্থতার কারণ সম্বন্ধে অনেক সন্দেহ আছে। বাংলাদেশের জেলখানায় বর্তমানে কী হচ্ছে সে ব্যাপারে জনগণের সন্দেহ জেগেছে। বেগম খালেদা জিয়ার শরীর কী পর্যায়ে এসেছে এটা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। অনেকেই জেলখানায় মারা যাচ্ছে। অনেকে জেলখানা থেকে বের হয়ে মারা যাচ্ছে। তাহলে বাংলাদেশের জেলের ভেতরে কী হচ্ছে? এই প্রশ্নগুলো জনমনে এসেছে আজ।
সভায় প্রধান বক্তা আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, বাংলাদেশের জনগণের মুখে এখন একটাই স্লোগান। 'এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি'। এই স্লোগান এখন প্রত্যেক ঘরে ঘরে। আমাদের এক দফার আন্দোলন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ও তারেক জিয়ার নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা আন্দোলনে এগিয়ে যাব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, সরকার বিদ্যুৎ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পিটিয়েছে। কিন্তু আজকে সারাদেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত। বাংলাদেশ এখন চরম সংকটে পতিত হয়েছে। এ সংকট থেকে উদ্ধার করতে হলে অবৈধ ফ্যাসিষ্ট সরকারকে পতন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের অস্তিত্বের সংকট চলছে। ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। স্বাধীনতার মূল চেতনা ধ্বংস করেছে। প্রতিনিয়ত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নষ্ট করছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলেছে। জনগণ নির্বাচন বিমুখ হয়ে গেছে।
দুই পক্ষে মারামারি: এদিকে সভা চলার সময় কার্যালয়ের নিচে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে বিএনপির দুটি পক্ষ। এতে আটজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। মারামারির সময় কার্যালয়জুড়ে আতঙ্ক তৈরি হয়। পরে জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে দুই পক্ষ শান্ত হয়।
বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম এবং সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান পক্ষের মধ্যে এই মারামারির ঘটনা ঘটেছে। কমিটি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। এই দ্বন্দ্বের রেশ ধরেই এই মারামারির ঘটনা ঘটেছে।
মহানগর বিএনপির সাবেক সহ দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী বলেন, রোডমার্চকে সামনে রেখে বিভাগীয় প্রস্তুতি সভা হচ্ছিল। এর মধ্যেই কার্যালয়ের নিচে দুই পক্ষ মারামারিতে জড়ায়। তবে এ কারণে সভায় কোনো বিঘ্ন ঘটেনি।