নয়াপল্টন কার্যালয় এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের আতঙ্ক
গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকেই কড়া নিরাপত্তায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। প্রতিদিনই কার্যালয়ের সামনে মোতায়েন থাকছে অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) সকালেও অর্ধশতাধিক পুলিশের অবস্থান দেখা গেছে কার্যালয়টির সামনে।
সংঘর্ষের পর গত ২৮ অক্টোবর রাতে পুলিশ ক্রাইম সিন ঘোষণা করে কার্যালয়টি। এখন ক্রাইম সিন ফিতা খুলে নেওয়া হলেও সেখানে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। মহাসমাবেশের ৫ দিন অতিবাহিত হলেও কার্যালয়টিতে আসতে পারছেন না নেতাকর্মীরা। ফলে দলীয় কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ বিএনপির নেতাকর্মীদের। তাদের প্রশ্ন, কবে শেষ হবে বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশের তৎপরতা।
বিএনপির মহাসমাবেশ, হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অভিযান চলমান আছে। ইতিমধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ বেশকিছু শীর্ষ নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। এছাড়া গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে আছেন অন্য শীর্ষ নেতারাও।
পুলিশ বলছে, পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করতেই মোতায়েন রাখা হয়েছে পুলিশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মী অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির কর্মী জানলেই কারণ ছাড়াই গ্রেফতার করছে পুলিশ। কার্যালয়ের সামনে যাওয়া এখন তাদের কাছে একটি আতঙ্ক ছাড়া কিছু না। তাই ভয়ে পল্টন এলাকায় যাচ্ছেন না তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিঝিল জোনের ডিসি হায়াতুল ইসলাম খান জানান, বিএনপি কার্যালয়ে সারা বছর বিশেষ নিরাপত্তা থাকে। তবে ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় কিছু পলাতক আসামি আছে তাদের গ্রেফতার ও ওই এলাকার বিশেষ নিরাপত্তা জন্য কার্যালয়ের সামনে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
এদিকে, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দাবি করেছেন, গত ছয় দিনে ৪ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ, ২৯ অক্টোবর বিএনপির শান্তিপূর্ণ হরতাল এবং ৩১ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ অবরোধকে কেন্দ্র করে মোট ২২৮০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের গুলিতে এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় ৭ জন নেতাকর্মী মারা গেছে। এছাড়া ৩৩৫০ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
সূত্র জানায়, মহাসমাবেশ, হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও সব অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতারা ঘরছাড়া। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে ফিরে পুলিশি হয়রানি থেকে বাঁচতে, মামলা ও গ্রেফতার এড়াতে কেউ আর বাড়িতে থাকছেন না। আর কোনো নেতাকর্মীকে দেখা যাচ্ছে না চলমান কর্মসূচিতেও।
বিএনপির উপজেলা পর্যায়ের এক সদস্য সচিব বলেন, ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে ফিরে পুলিশি হয়রানি থেকে বাঁচতে, মামলা ও গ্রেফতার এড়াতে প্রায় সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এখন পর্যন্ত বাড়িতে থাকতে পারছেন না। সরকার আমাদের যতই হয়রানি করুক না কেন আমরা রাজপথে ছিলাম, এখনো আছি। এই ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরে যাব না। চলমান অবরোধে আপনাদের কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মীকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, আমরা মাঠেই আছি।
বিএনপির ডাকা সমাবেশ ও পরবর্তী সময়ে ঘটা প্রতিটি ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।