জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে বাদ দিলে দেশের ৫০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী দলকে জাতীয় ঐক্যের ডাকের বাইরে রাখা হয়েছে। ৫০ শতাংশ মানুষের দলকে সংলাপের বাইরে রাখায় জাতিগতভাবে অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) জাপার বনানী কার্যালয়ে আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২৩০টি আসন। তাদের ভোটের হার ছিল ৪৮.০৪ শতাংশ, বিএনপি পেয়েছিল ৩০টি আসন। তাদের ভোটের হার ছিল ৩২.০৫ শতাংশ। জাতীয় পার্টি পেয়েছিল ২৭টি আসন। ভোটের হার ছিল ৭.০৭ শতাংশ। দেশে একটা অবিশ্বাস ও সংঘাতময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। ৫০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী দলকে বাদ দিয়ে সুন্দর দেশ গড়া বাস্তবসম্মত নয়।
তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল মিটিং করা সাংবিধানিক অধিকার। তা আমাদের দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের পার্টি অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে সেল্ফসেন্সরশীপ চলছে। সাংবাদিকরা ভয়ভীতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। আমাদের পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে না। পাসপোর্ট পাওয়া আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। নির্বিচারে আমাদের লোকদের মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে কিন্তু জামিন দেওয়া হচ্ছে না। আমরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছি।
বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার কি সবার মতামতের ভিত্তিতে সংস্কার করছে? এখন দেখা যাচ্ছে ঐক্যের চেয়ে প্রতিশোধের বিষয়টি সামনে আসছে। কেউ অপরাধ করলে বিচার করতে হবে, সরকার প্রতিশোধ পরায়ণ হলে বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। আইনে বলা আছে ১০টি অপরাধী ছাড়া পেলেও যেন একজন নিরপরাধ শাস্তি না পায়। আপনারা সেটা ফলো করছেন? হত্যা মামলায় লাখ লাখ মানুষকে আসামী করা হচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগ হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। তারা হচ্ছে সরকারের শক্তির উৎস্য। শক্তিশালী হাতকে লুলা করে দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, শরিয়া আইনে আছে মানুষের বিচার করতে হবে তার নিয়ত দেখে, তার কাজ দেখে নয়। পুলিশের কিছু সদস্য চাকরী করে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য। তারা রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে সরকারের নির্দেশনা মানতে বাধ্য। ইচ্ছা করে সবাই শেখ হাসিনার অপকর্মে জড়িত হয়নি। সবাইকে ঢালাও করে অপরাধী করলেন, শত্রু বানালেন, বাদ দিলেন... এরমধ্যেই শূন্যস্থানগুলোতে পুলিশ ও প্রশাসনে দলীয়করণ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, শক্তিশালী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অন্তবর্তীকালীন সরকার জিম্মি হয়ে পড়েছে। মনে হচ্ছে অন্তবর্তীকালীন সরকার যা করতে চায়, তা করতে পারছে না। দেশের ব্যবসায়ীসহ সকল পেশাজীবীরা চিন্তিত ও দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর উপরও হাত দিয়েছে, আমরা সরকারকে সমর্থন দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে ছিলাম। কিন্তু সরকার সেই সমর্থন পদদলিত করেছে। সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছিলাম। ওনাদের সাথে কথা বলে আমরা সেটি হস্তান্তর করতে চেয়েছিলাম। তারা কর্মচারী দিয়ে সেই প্রস্তাবনা গ্রহণ করেছে এমনকি ছবি তুলতেও নিষেধ ছিল তাতে। তারা সময় দিয়েও আমাদের কাছ থেকে প্রস্তাবনা গ্রহণ করতে চায়নি। আমরা এতো ঘৃণ্য হয়ে গেলাম? আমরা এতো নীচ হয়ে গেলাম।
আমাদের হাত থেকে প্রস্তাবনা নিতে ঘৃণা হয়? ঘৃণা সবসময় ঘৃণার জন্ম দেয়। আমরা জানি, আপনারা সবাই ভালো মানুষ। কিন্তু কাজ করার জন্য যে শক্তি দরকার আপনারা তা হারিয়ে ফেলেছেন। মানুষকে পথেঘাটে নির্যাতন করা হচ্ছে। এভাবে রাষ্ট্র সংস্কার, জাতীয় ঐক্য বা নির্বাচন সম্ভব হবে? অন্তবর্তীকালীন সরকারের মধ্য থেকেই রাজনৈতিক দল গঠন করার চেষ্টা চলছে। পুলিশ ও প্রশাসন এখন কার কথায় চলছে? এমন বাস্তবতায় আমাদের লোকজন ভোট দিতে পারবে? আমাদের নেতাকর্মীরা নির্বাচনের মাঠে দাড়াতে পারবে? আওয়ামী লীগের মতো কয়েকটি দল নিয়ে একতরফা নির্বাচন করে সব পাশ করিয়ে দিলেন, সেটা কি টেকসই হবে? এমন সংস্কারে কি রাষ্ট্র এগিয়ে যাবে? অস্থিরতা কি থামবে? দেশের ৫০ শতাংশ মানুষ নির্বাচন ও রাষ্ট্র সংস্কারের বাইরে রাখলে তারা কি বসে থাকবে? দেশে অরাজকতা ও অস্থিরিতার বীজ বপন হয়েছে। একতরফা নির্বাচনে জন্য শেখ হাসিনাকে নিন্দা করা হয়, আপনারা কি একই জিনিস করবেন? নির্বাচন হতে হবে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করা উচিৎ হবে না। আওয়ামী লীগের যারা দোষ করেছে তাদের তদন্তের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করুন। আন্তাজে মামলা দিয়ে কাউকেই শাস্তি দেয়া ঠিক নয়। একটি সংগঠনের সবাই কি অপরাধী? যদি তাই ভাবেন তাহলে শেখ হাসিনার সাথে আপনাদের তফাৎ কী? শেখ হাসিনা মনে করতো বিএনপি ও জামায়াত করলেই অপরাধী, এখন তো আপনারা সেটাই করছেন। আমরা চাই আগামী নির্বাচনে সকল দল অংশ নিক। যাদের নিবন্ধন দিয়েছেন তাদের কেন নির্বাচনে আসতে দেবেন না?
সংবিধান সংরক্ষণ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পার্টির মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাড. মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। উপস্থিত ছিলেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য নাজমা আখতার, আলমগীর সিকদার লোটন, লিয়াকত হোসেন খোকা, শেরীফা কাদের, মাসরুর মওলা, উপদেষ্টা ড. নুরুল আজহার শামীম, এ্যাড. নুরুল ইসলাম তালুকদার, নোমান মিয়া, এ্যাড. লাকী বেগম, ইঞ্জিনিয়ার মনির আহমেদ, প্রিন্সিপাল গোলাম মোস্তফা, মোঃ খলিলুর রহমান খলিল প্রমুখ।