ফের নৌকা প্রতীকেই নির্বাচনে জাসদ: যা জানালেন হাসানুল হক ইনু

  • আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ১৪ দল সৃষ্টির অভিন্ন লক্ষ্যের যা কিছু বাকী আছে তা বাস্তবায়নে আবারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েই নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাসদ। বার্তা২৪.কম-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন তিনি।

নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ১৪ দলীয় জোট সরকার গঠন করতে পারলে বিদ্যমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সামাজিক বৈষম্য হ্রাস করা এবং সংবিধানসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির ছাপ মুছে ফেলাই হবে পরবর্তী ৫ বছরের অগ্রাধিকার, জানালেন হাসানুল হক ইনু। কথা বলেছেন পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম

বিজ্ঞাপন

বার্তা২৪.কম: গেল নির্বাচনের মতো এবারও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) আওয়ামীলীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নৌকা প্রতীকেই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। ঠিক কি ভাবনা থেকে আবারও এই সিদ্ধান্ত?

হাসানুল হক ইনু: সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী জামায়াত-রাজাকার চক্র ও তাদের মিত্রদের ক্ষমতার বাইরে রাখার জন্য,রাজনীতি থেকে বিদায় জানানোর জন্য ১৪ দলের জন্ম হয়েছিল। সেইসঙ্গে বাংলাদেশকে আবার একাত্তরের রাজনীতি তথা সংবিধানের চার নীতির ভিত্তিতে দেশটাকে পরিচালনার করার একটা কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ এবং দেশটাকে বিদেশ নির্ভরতা থেকে বের করে এনে সাবলম্বী করা। এই লক্ষ্যগুলো অর্জন করার জন্যই একটি আদর্শিক কর্মসূচিভিত্তিক জোট হয়, তার ভিত্তিতে আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে প্রায় একসঙ্গে কাজ করছি। আমরা সাম্প্রদায়িক জঙ্গীবাদী জামায়াত-বিএনপি চক্রকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে সক্ষম হয়েছি, কোণঠাঁসা হয়েছে কিন্তু তাদেরকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে বিদায় জানাতে পারিনি, এরকম একটি অবস্থায় যে রাজনৈতিক যুদ্ধটা তারা (বিএনপি-জামায়াত) চালাচ্ছে, এই যুদ্ধের ভেতরেই নির্বাচনটা আসছে। আমরা মনে করি যে যেখানে আমাদের রাজনৈতিক লক্ষ্যটা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি, সেটাকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে নির্বাচনে ঐক্যটা দরকার। সুতরাং বিএনপি আসুক বা না আসুক আমরা ১৪ দল জোটগতভাবে নির্বাচন করব এবং নির্বাচনের পরেও ঐক্যটা বজায় রাখব।

বিজ্ঞাপন

বার্তা২৪.কম: এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য পরিষ্কার কিন্তু আমরা যদি ঐতিহাসিকভাবে দেখি আপনার দল জাসদের সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র নীতিগত আদর্শিক অবস্থান ছিল। আপনি কি মনে করেন না, একই প্রতীকে নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে আপনার দল সেই স্বাতন্ত্রটি কোনোভাবে হারাচ্ছে?

হাসানুল হক ইনু: সাম্প্রদায়িক জঙ্গীচক্রকে ধ্বংস করা জাসদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যটা অর্জন করার লক্ষ্যে আমরা ১৪ দলীয় জোট করেছি, যাতে এই অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করবে। ইতিমধ্যে আমরা ১৭ বছরে কিছু সাফল্য অর্জন করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সংবিধানের চার নীতি সন্নিবেশিত করার মধ্য দিয়ে আমরা আংশিক সফল হয়েছি। বাকী কাজটা বাকী আছে। সুতরাং জাসদের লক্ষ্য..সমাজতন্ত্রের সংগ্রামে বড় শত্রু হচ্ছে সাম্প্রদায়িক জঙ্গীবাদী পাকিস্তানপন্থা। সেই শত্রুর সঙ্গে যে আপোষহীন লড়াইটা করি সেখানে অনেকে আপোষহীন লড়াইটা করে না। আমরা সেই লক্ষ্যটার ধারাবাহিকভাবে তদবির করে দেনদরবার করে ঐক্যটা করেছি। এবং ঐক্যটা বজায় রেখেছি। আমরা সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদীদের ২০০৬ সাল থেকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে সক্ষম হয়েছি এখন পর্যন্ত এবং জঙ্গিবাদী চক্রকে দমন করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি। এবং পাকিস্তানপন্থার রাজনীতিটাকে কোণঠাঁসা করতে সফল হয়েছি কিন্তু এখনও আমাদের লক্ষ্য অর্জন হয়নি বলে আমরা ঐক্যটাকে বজায় রাখছি । সুতরাং সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম, বৈষম্য মুক্তির সংগ্রাম, আরও গণতন্ত্রের সংগ্রামের সঙ্গে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মোকাবেলা করার সংগ্রামটাকে হাতে রেখে চলেছি। সেই হিসাবে আমরা এই কাজটা করেছি। কিন্তু জাসদের লক্ষ্যের সঙ্গে কোন বিরোধ নাই।

বার্তা২৪.কম: ঠিক এই প্রসঙ্গে যদি আমি আপনার থেকে এভাবে জানতে চাই, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কিংবা প্রগতিশীল বাংলাদেশের যে লক্ষ্য সেটি অর্জন করবার ক্ষেত্রে আপনি কি মনে করে কেবলমাত্র বিএনপি-জামায়াতই বড় অন্তরায়? আর রাজনীতি কি ধর্মভিত্তিক রাজনীতির মোড়ক থেকে সম্পূর্ণভাবে বেরুতে পেরেছে আদৌ?

হাসানুল হক ইনু: এখানে পচাত্তরের পরে যে সাম্প্রদায়িক ও সামরিক শাসনের পদচিহ্নগুলো আছে, যে ছাপগুলো সমাজের বিভিন্ন স্তরে ঘটেছে তার আংশিক আমরা মুছে ফেলতে সক্ষম হয়েছি। বাকীটা মোছার অপেক্ষায় আছি। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সংবিধান, একাত্তরের চেতনা এবং অসাম্প্রদায়িকতা এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতির সবচাইতে বড় শত্রু হচ্ছে সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী জামায়ত-বিএনপি চক্র। তারা মোটেও বদলায়নি। তারা একাত্তরের মিমাংসিত বিষয়গুলিকে তারা স্বীকার করে না। এবং সুযোগ পেলেই তারা অস্বীকার করার চেষ্টা করে। তারা এখন পর্যন্ত ভুল স্বীকার করেনি। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের.. যদি আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাপকাঠিতে বাংলাদেশকে সাজাতে চাই তারা এখনো অস্বাভাবিক সরকারের পক্ষে, সামরিক শাসনের পক্ষে, সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে প্রকাশ্যে উকালতি করে। এই অবস্থায় আমি মনে করি যে তাদেরকে ক্ষমতার বাইরে রাখা হচ্ছে প্রথম কর্তব্য, দ্বিতীয় কর্তব্য হচ্ছে তাদের কোণঠাসা করা, তৃতীয় কর্তব্য রাজনীতির মঞ্চ থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় জানানো। চতুর্থ কর্তব্য হচ্ছে সামরিক এবং সাম্প্রদায়িক ছাপগুলো রাজনীতিতে, সংস্কৃতিতে, অর্থনীতিতে যা রয়েছে সেগুলো একটা একটা করে অপসারণ করা। এই কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে।

বার্তা২৪.কম: কিন্তু আপনি কি মনে করেন, বাহাত্তরের যে সংবিধানের বড় স্তম্ভ হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রেখে কি সেই চেতনাকে সমুন্নত রাখা সম্ভব?

হাসানুল হক ইনু: এগুলো সামরিক শাসনের পদচিহ্ন। আংশিক সংশোধন করা সম্ভব হয়েছে, ধর্মনিরপেক্ষতা চার নীতিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়ে গেছে বাকীটা ভবিষ্যতের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে সংশোধন করব। সুতরাং ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির ওপর দাঁড়িয়ে লড়ছি আমরা। সেইদিক থেকে বিএনপির সঙ্গে আমাদের আকাশ-পাতাল পার্থক্য। তারা নীতিগতভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা মুছে দিয়েছিল। সুতরাং হাতের এপিঠ-ওপিঠ ধরলে হবে না। উত্তর মেরু-দক্ষিণ মেরুর অবস্থান আমাদের। সেখানে আমরা ছাপগুলো একটার পর একটা মুছছি। এখনো সাম্প্রদায়িকতার ছাপ থেকে সংবিধান মুক্ত হয়নি।

বার্তা২৪.কম: আমরা যদি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আপনার বক্তব্য লক্ষ্য করি সেখানে আমরা দেখছি আপনি রাজনীতিতে ‘তেতুল হুজুরের’ আবির্ভাবের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছেন। কিন্তু আমরা সরকারকেও হেফাজতের সঙ্গে আপোষ করতে দেখেছি। এটি কি আপনাদের অবস্থানের সঙ্গে কোন বৈপরিত্য বহন করে?

হাসানুল হক ইনু: তেতুল হুজুরের রাজনীতিকে ১৪ দলীয় জোট আজ পর্যন্ত স্বীকার করেনি, স্বীকৃতি দেয়নি। তেতুল হুজুর বলতে হেফাজতের শফি সাহেবকেই শুধু বলা হয়নি, এটা প্রতীকী অর্থে, তিনি শুধুমাত্র একজন নেতা। কিন্তু তাবড় সাম্প্রদায়িক জামায়াত চক্র যারা নারীকে তেতুলের সঙ্গে সম্পর্কিত করে নারীর বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখে। সুতরাং শফি সাহেব একা নন, জামায়াতের প্রত্যেকটা নেতা তেতুল হুজুর, সকল সাম্প্রদায়িক শক্তি তেতুল হুজুর- যারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করেন, নারী-পুরুষের সমতাকে অস্বীকার করেন, ধর্মনিরপেক্ষতাকে অস্বীকার করেন এই তাবড় গোষ্ঠী তেতুল হুজুর চক্র। সুতরাং তেতুল হুজুর চক্রকে ১৪ দল আজ পর্যন্ত স্বীকারও করেনি। এবং তাদের রাজনীতিকে স্বীকৃতিও দেয়নি। বর্তমান পরিস্থিতির ভেতরে যতোটুকু সম্ভব দমনই করেছি আমরা। মামলা দিয়ে আটকই করেছি। আদর্শিকভাবে কোন আপোষ হয়নি।

বার্তা২৪.কম: বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে পশ্চিমা শক্তি বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হন্তক্ষেপ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। জাসদ এটাকে কিভাবে মূল্যায়ন করছে?

হাসানুল হক ইনু: আমরা ইতিমধ্যে বিবৃতির মধ্য দিয়ে বলেছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরিবর্তিত রাজনৈতিক আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। চীন, মধ্যপ্রাচ্য একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিরোধিতা করেছিল, তারা ধীরে ধীরে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের সকল রাষ্ট্র, মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে আমরা এখন বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করি। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে বাংলাদেশের নির্বাচনকে নিয়ে মন্তব্য ও বিবৃতি দিয়েছে সেটা অনাকাঙ্খিত এবং শিষ্টাচার বহির্ভূত। কুটনৈতিক চর্চার বাইরে তারা পা রেখেছেন। আমরা তাদের সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। আমরা মনে করি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের উসিলা নিয়ে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করারই পদক্ষেপ নিয়েছে। এটা আমরা সঠিক মনে করি না। আমরা আশাকরি, বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে তারা এ থেকে নিবৃত্ত হবেন এবং এভাবে তারা ভূমিকা রাখবেন না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের উসিলায় শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর অনেক দেশে নগ্ন হস্তক্ষেপ বা অন্য কিছু পায়তারা করেন। সবকিছু মিলিয়ে আমরা মনে করি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে...এখানে কিন্তু দিনের শেষে যদি বিচার করি তাহলে দেখব যে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নাই। অর্থাৎ নির্বাচনী আইনকানুন অথবা নির্বাচন করার জন্য প্রাতিষ্ঠনিক ব্যাপারে কোন রকম প্রস্তাব নাই। সেই দিক থেকে আমি মনে করেছি, নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যে বক্তৃতা বা বিবৃতি এটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এটা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ভাবার দরকার নাই। আশা করি এ সময়ের ভিতরে তারা তাদের বন্ধুত্ব বজায় রাখবে এবং সকল কিছু স্বাভাবিক থাকবে।

বার্তা২৪.কম: কিন্তু আমরা অতীতে দেখেছি অতীতে যেসব দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি বা প্রত্যাশার বিপরীতে দাঁড়িয়েছে, তাদের ওপর খড়গ নেমে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এখনকার যে অবস্থান বাংলাদেশ বিষয়ে, তা কোন পরিণতিতে গিয়ে গড়াতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

হাসানুল হক ইনু: বিভিন্ন রাষ্ট্র এগুলো মোকাবেলা করে আসছে, বাংলাদেশের এখন যে অবস্থা তাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি কোন নেতিবাচক পদক্ষেপ নেয় তাহলে আমরা (বাংলাদেশ) রাজনৈতিকভাবে, রাষ্ট্রীয়ভাবে তা মোকাবেলা করার সক্ষমতা রাখি। সুতরাং এটা নিয়ে আগাম ভাবার কোন চিন্তা নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি প্যালেস্টাইন নিয়ে যে নীতি গ্রহণ করেছে, এটার নিন্দা করি আমি এবং ইসরায়েলকে নির্লজ্জের মতো সমর্থন জানানো আন্তর্জাতিক সব রীতি-নীতি লংঘন করে গাজাতে যে গণহত্যাকে সমর্থন করছে। আশা করি যুক্তরাষ্ট্র এই নিন্দনীয় কাজ থেকে সরে আসবে।

বার্তা২৪.কম: কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কিছু নির্ভরতা রয়েছে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পে। বাংলাদেশ বিকল্প কিছু ভাবতে পারে সেক্ষেত্রে?

হাসানুল হক ইনু: বাংলাদেশের স্বাধীনতার ওপরে যদি কেউ হস্তক্ষেপই করে তাহলে যতো কষ্টই হোক আমরা সেটা মোকাবেলা করব। এটা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না। উত্তর কোরিয়া তো মোকাবেলা করছে। রাশিয়া তো মোকাবেলা করছে। আমার স্বাধীনতা নিয়ে যদি টান মারে তাইলে তো আমরা এখানে তাঁবেদার সরকার চালাতে পারব না। আমার স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও স্বাবলম্বিতা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ওপর ভিত্তি করেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোলাকুলির সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের বাইরে যদি তারা চলে যায় তখন পরিস্থিতির দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

বার্তা২৪.কম: তফশিল ঘোষণার পরও বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে। সার্বিকভাবে নির্বাচন নিয়ে কোন বড় রকম সংকট দেখতে পান কিনা?

হাসানুল হক ইনু: প্রথম কথা হচ্ছে-বিএনপির নির্বাচনে না আসার সিদ্ধান্তটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত। দ্বিতীয়তঃ বিএনপি-জামায়াত ও তাদের শরিকরা বর্জন সিদ্ধান্ত কার্যকরী করার জন্য যে হরতাল-অবরোধের নামে যে কর্মসূচি চালাচ্ছে এটা কার্যতঃ আন্দোলনের নামে নাশকতা, আগুন-সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। সুতরাং আন্দোলনের যে ধারা এখন তাদের এটা জেলা-উপজেলা কিংবা গ্রামে কোন ছাপ পড়ছে না। গ্রামের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক আছে। সাময়িকভাবে আতঙ্কের কারণে গাড়ি চলাচলে কিছু সমস্যা হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটেছে যা গ্রামীণ জনজীবনে কোন প্রভাব বিস্তার করছে না। সেই অবস্থায় আমি মনে করি তারা যদি এই রকম সন্ত্রাসী নাশকতা.. ছিটেফোটা-ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত এটাই যদি অব্যাহত রাখে তাহলে গ্রামের জীবনযাত্রায় বা উপজেলায় কোন প্রভাব নাই সেহেতু নির্বাচনে কোন প্রভাব বিস্তার করবে না। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে। জনগণও ভূমিকা রাখবে। দলগুলিও ভূমিকা রাখবে। জনগণও নিরাপদ থাকবে। ভোট কেন্দ্রও নিরাপদ থাকবে। সেই দিক থেকে আমি বলতে পারি, নির্বাচন আটকানোর আন্দোলন আসলে তারা করছেন না। সহিংসতা-আগুন সন্ত্রাস পরিহার করে তাদের নির্বাচনে আসান উচিত। এরপরও যদি তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে তাদের জায়গা রাজনীতির ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে।

বার্তা২৪.কম: যেখানে তৃণমূল পর্যায়েও বিএনপির জনসমর্থন রয়েছে সেখানে বিএনপিবিহীন আরও একটি নির্বাচন বাংলাদেশে সম্পন্ন হয় সেক্ষেত্রে কোন রকমের রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবে কিনা...

হাসানুল হক ইনু: বিএনপির কিছু ভোটার আছেন। কিন্তু তারা যে আন্দোলন করছে সেখানে ভোটাররা বিএনপির আন্দোলনে শরিক হচ্ছেন না। সুতরাং এটা বিশ্লেষণ করার বিষয় রয়েছে, তাদের আন্দোলনের পরিণতি কি হবে? দ্বিতীয় হচ্ছে, যখন এই আন্দোলনটা হচ্ছে তখন তাদের নির্বাচনটা ভালো করার কোন প্রস্তাব নেই। আন্দোলনটা উসিলা, তারা সরকার উৎখাত করছে চাইছে। সুতরাং সরকার উৎখাতের যে যুদ্ধ সেই যুদ্ধের ভেতরে দেশবাসীর প্রথম বিবেচ্য হচ্ছে সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখা এবং সেটা রাখতে গুরুত্ব দেব যথাসময়ে ভোটটা করার ব্যাপারে। সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে। যাতে সরকার অদল-অবদলের অস্বাভাবিক ঘটনা না ঘটে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে নির্বাচনে বিএনপি আসলো কি আসলো না সেটা বিবেচ্য বিষয় না। এই মুহূর্তে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখা, যথাসময়ে ৭ তারিখে ভোটটা করে ফেলা। বিএনপি না আসলে ভবিষ্যত রাজনীতি ঠিক করে দেবে বিএনপির ভাগ্য কি হবে। আমি ভবিষ্যত বাণী করতে চাই না। আমি গণকও নই। আমি আমার জাসদীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলতে পারি, বিএনপি যদি জামায়াত-জঙ্গি নাশকতা- এদের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখে একাত্তরের মিমাংসিত বিষয়গুলিকে অস্বীকার করে রাজনীতি করে তাহলে বাংলাদেশে আজ হোক কাল হোক বিএনপিকে বিদায় নিতে হবে।

বার্তা২৪.কম: যদি আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন জোট এই নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে তবে আপনাদের প্রাধিকারগুলো কি থাকবে...

হাসানুল হক ইনু: আমরা যদি বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের সুযোগ পাই প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দ্রব্যমূল্য, দুর্নীতি-লুটপাট মোকাবেলা করার প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি গ্রহণ করা। দ্বিতীয়তঃ বৈষম্যমুক্ত সমাজগঠন। সম্বৃদ্ধি এসেছে কিন্তু বৈষম্যের মাত্রাটা কমাতে হবে। শেষ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে-দলবাজি, ক্ষমতাবাজি-এটাকে আটকানোর জন্য সুশাসনের শক্ত পাটাতন সেটা তৈরি করা। আর সাম্প্রদায়িক যে সাংস্কৃতিক ছাপটা বিভিন্ন স্তরে আছে সংবিধান ও সমাজের রাজনীতিতে যা আছে সেটা আগামী পাঁচ বছরে মুছে ফেলার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা।