আওয়ামী লীগ চৌদ্দগ্রামে বিগত ১৫ বছর ধরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। তারা চৌদ্দগ্রামে কি পরিমাণ অন্যায়-অত্যাচার ও জুলুম করেছে উপস্থিত জনতা তার জ্বলন্ত স্বাক্ষী। এর বেশি কিছু আমি বলবো না। কারো নাম ধরে আমি সমালোচনা করতে চাইনা। আপনারা নিশ্চয়ই সবই বুঝেন-জানেন। ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লবের সময় ছাত্র জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে রুখে দিতে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার দেশের মানুষকে লাশের মিছিল উপহার দিয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহর ইচ্ছায় এবং ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে ফ্যাসিস্ট সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো স্বৈরাচারের ফিরে আসার নজির নেই।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে চৌদ্দগ্রাম এইচ জে সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে যুব সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের এসব কথা বলেন।
চৌদ্দগ্রামের শহীদ শিবির নেতা সাহাব উদ্দিন পাটোয়ারীর স্মৃতির কথা স্মরণ করে এবং তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে অশ্রুসিক্ত নয়নে ডা. তাহের আরও বলেন, আজ শহীদ সাহাব উদ্দিন পাটোয়ারী বেঁচে থাকলে এ বিশাল প্রোগ্রামে স্বেচ্ছাসেবকের ড্রেস পড়ে আমার সামনে হাঁটাহাঁটি করতো। আজ আমি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এটা মিস করছি। শুধু সাহাব উদ্দিন নয়, চৌদ্দগ্রামের আপামর জনসাধারণের উপর কী অমানবিক অবিচার হয়েছে আপনারা তার স্বাক্ষী। আওয়ামী হেলমেট বাহিনী শুধু চৌদ্দগ্রামে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি করেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা এ চৌদ্দগ্রামে মাদকের আখড়া বসিয়েছিলো। যুব সমাজকে ধ্বংসের ধারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিলো। আজ সময় এসেছে, সম্মিলিতভাবে সকলে মাদককে না বলুন। মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদক চোরাচালানকারীদের সাথে যাদের সম্পৃক্ততা আছে, তাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে সামাজিকভাবে বয়কট করুন। তাদের বিরুদ্ধে জনমত ও তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, বিগত দিনে পৌরসভা প্রতিষ্ঠা, ৫০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ, উপজেলায় ৮৫ ভাগ বিদ্যুতায়ন (৩৫০ কিলোওয়াট), বড় বড় রাস্তাগুলো নির্মাণ অসংখ্য ছোট রাস্তা নির্মাণ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সহ চৌদ্দগ্রামের কিছু মৌলিক কাজ করেছি। আল্লাহ যদি হায়াত দান করেন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চৌদ্দগ্রামের মানুষের ভোটে আমি আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই, এই চৌদ্দগ্রামে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। চৌদ্দগামে কোনোরূপ অন্যায়-অত্যাচার, খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি ও কোন প্রকার জুলুম-নির্যাতন থাকবে না। এ চৌদ্দগ্রাম হবে সমতার চৌদ্দগ্রাম। এখানে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সহ সকল ধর্মের লোকজন নিরাপদে থাকবে। দলমত নির্বিশেষে সকলকে সাথে নিয়ে আপনাদের সহযোগিতায় এ চৌদ্দগ্রামকে একটি শান্তির জনপদে রূপান্তর করবো ইনশাআল্লাহ।
এসময়, সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী মাওলানা রফিকুল ইসলাম খাঁন, মাওলানা আবুল হাসানাত আব্দুল হালিম, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মু. জাহিদুর রহমান, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর আব্দুর সাত্তার, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর এডভোকেট মুহাম্মদ শাহজাহান। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী মু. বেলাল হোসাইনের সঞ্চালনায় এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের পুত্র ব্যারিস্টার সৈয়দ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ্ তাজবীহ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, সেক্রেটারী ড. এ কে এম সরোয়ার উদ্দীন সিদ্দিকী, কুমিল্লা মহানগর সেক্রেটারী মাওলানা মাহবুবুর রহমান, সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ সালেহ আহাম্মেদ, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর ভিপি মু. সাহাব উদ্দীন, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা জামায়াতের আমীর মাওলানা মোহাম্মদ ইব্রাহীম, কুমিল্লা পূর্ব জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি মো. নাজমুল হাসান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কর্ম পরিষদের সদস্য আইউব আলী ফরায়েজী, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুব বিভাগের সভাপতি জয়নাল আবেদীন, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মোশারফ হোসেন ওপেল, সহকারী সেক্রেটারী আব্দুর রহিম, কাজী ইয়াছিন মজুমদার, কর্মপরিষদ সদস্য জয়নাল আবেদীন পাটোয়ারী। অনুষ্ঠানে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা এম কে রহমান। এ সময় চৌদ্দগ্রাম উপজেলা, পৌরসভা সহ বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত জামায়াত, যুববিভাগ ও ইসলামী ছাত্রশিবির সহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ২৫ হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।