জাতীয় পার্টির কদর কি কমেছে!

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

আওয়ামী লীগের কাছে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ নির্বাচনের সঙ্গী জাতীয় পার্টির কদর কি কমে গেছে। বিশ্বস্ত সঙ্গী রওশন এরশাদও নাকি আর তেমন সাড়া পাচ্ছেন না সরকারের পক্ষ থেকে।

টানা কয়েকদিনের ঘটনা প্রবাহে নিয়ে এমন আলোচনাই কানাঘুষা হচ্ছে জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে। তারা জানিয়েছেন, কয়েকদিন ধরেই প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের সময় চেয়ে আসলেও সিডিউল পাচ্ছেন না রওশন এরশাদ। সাক্ষাৎ ইস্যুর পাশাপাশি আসন সমঝোতা নিয়েও নাকি সরকারের দিক থেকে খুব একটা আগ্রহ দৃশ্যমান নয়। এ কারণে নির্বাচন প্রশ্নে আগের অবস্থান থেকে অনেকেই সরতে শুরু করেছেন। তারা ধারণা করছেন, বিএনপির জোট থেকে বেরিয়ে আসাদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

সিনিয়র নেতারা অনেকেই আসন নিশ্চিত না হয়ে নির্বাচনে যাওয়ার কোন অর্থ খুঁজে পাচ্ছেন না। নির্বাচন থেকে সরে যেতে চাপ বাড়ছে জিএম কাদেরের ওপর। ২০১৪ সালের মতো হঠাৎ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা এলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে অনেকেই মনে করছেন।

টানা দুই সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার আসনে থাকা রওশন এরশাদ সরকারের সব ইস্যুতেই সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে গেছেন। এমনকি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির সিদ্ধান্তের বাইরে হেঁটেছেন রওশন। পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের বিপক্ষে ছিলেন তখনও রওশন ছিলেন বিপরীত দিকে। সে কারণে তার প্রত্যাশার পারদও অনেকটা চড়া।

বিজ্ঞাপন

রওশন শিবিরের ধারণা ছিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো রওশনের হাতেই থাকবেমূল চাবিকাঠি। ওই দুই নির্বাচনে রওশন এরশাদের আর্শীবাদপুষ্টরা এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এমপি হতে গেলে এবারও রওশনের আর্শীবাদ জরুরি। যে কারণে জিএম কাদেরের সঙ্গে থাকা অনেক সিনিয়র নেতাও গোপনে রওশনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।

রওশন অনুসারীদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, পার্টির নেতৃত্ব প্রশ্নে চেয়ারম্যান জিএম কাদের কঠোর কোন পদক্ষেপ নিতে গেলেও সুবিধা করতে পারবে না। যার উদারহণ দেখা গেছে বিরোধীদলীয় নেতার ইস্যু প্রসঙ্গে। যে কারণে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন ও আগামী নির্বাচন নিয়ে নির্ভার থেকেছেন রওশনের অনুসারীরা। কিন্তু রওশন এরশাদের অনুসারীদের মনোনয়ন থেকে দূরে রাখায় হতাশা ভর করতে শুরু করেছে।

তারা কয়েকদিন ধরেই দৌড় ঝাঁপ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের চেষ্টার পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন এজেন্সির সঙ্গে কথা চালিয়ে যাচ্ছেন, কোথাও থেকে খুব একটা সাড়া মিলছে না। তাদের ভাবনা ছিল, জিএম কাদের হার্ডলাইনে গেলে তারা পৃথক পার্টি ঘোষণা দেবেন। তাদের পৃথক পার্টি গঠনের মনোবাসনাও এখন মাঠে মারা যেতে শুরু করেছে। তবে এখনও হাল ছাড়তে নারাজ। আশায় আছেন মিরাকল কিছু ঘটবে, জাতীয় পার্টি রওশনের নেতৃত্বে নির্বাচনে যাবে। আর রওশন মনোনীত প্রার্থীরা সরকারের গ্রিন সিগন্যালে এমপি নির্বাচিত হবেন। যদিও তাদের কাউকেই মনোনয়ন দেয়নি জাতীয় পার্টি।

জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙা এমপি মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) বলেছেন, জাতীয় পার্টিতে মিরাকল কিছু ঘটতে পারে। অন্যদিকে রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ্ বলেছেন, ম্যাডাম (রওশন এরশাদ) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তার সঙ্গে কথা বলে তারপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রয়োজন হলে নির্বাচনের বাইরে থাকার কথা ভাবছেন রওশন এরশাদ।

শুধু রওশন শিবির নয় জিএম কাদের শিবিরেও হতাশা বাড়ছে বলে জানা গেছে। তফসিল ঘোষণার আগে নানাভাবে নির্বাচনে যেতে চাপ ছিল তাদের ওপর। কথিত রয়েছে জিএম কাদেরের পক্ষ থেকে ৬০টি আসন চাওয়া হয়, আর আওয়ামী লীগ ৪০টি আসন দিতে সম্মত হয়। হঠাৎ করেই সেই আলোচনাতেও ভাটার টান দেখতে পাচ্ছেন অনেকেই। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ২৯৮ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছেন। সিনিয়র নেতারা অনেকেই ভেবেছিলেন, ২০১৪ কিংবা ২০১৮ সালের মতো আওয়ামী লীগ তাদের আসন ছেড়ে দেবে। আর বিএনপিহীন ফাঁকা মাঠে সহজেই বিজয়ী হয়ে সংসদে যাবেন। এখন তারা আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে লড়তে ভয় পাচ্ছেন।

সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, কো-চেয়ারম্যান, সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপিসহ অনেকেই নেতাই এখন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার সূর ধরেছেন। তারা কেউ কেউ চেয়ারম্যানকে বলছেন পাতানো নির্বাচন হবে এখানে যাওয়ার কোন মানে হয় না। আমাদের প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে টিকতে পারবে না।

সূত্র জানিয়েছে, আসন সমঝোতা প্রশ্নে জিএম কাদেরের ৬০টি আসনের প্রস্তাবের পাশাপাশি রওশনও পৃথক প্রস্তাবনা দিয়ে রেখেছেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সম্ভাব্য ৩৫ সংসদ সদস্যের তালিকা জমা দেন রওশন এরশাদ। তবে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নাকি সম্মিলিত তালিকার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

আসন সমঝোতার গুঞ্জন প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গত সপ্তাহে বলেছিলেন, বিষয়টি পুরোপুরি সত্য না, আবার মিথ্যাও না।

রওশন এরশাদ এমপির ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনসহ ১১ আসন শূন্য রেখে ২৭ নভেম্ববর জাতীয় পার্টির প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ছেলে সাদ এরশাদ এমপির রংপুর-৩ আসনে জিএম কাদের মনোনয়ন নেওয়ায় বেজায় চটেছেন রওশন এরশাদ।

দলীয় কোন্দলের পাশাপাশি সরকারের ওপর জাতীয় পার্টির নেতাদের প্রবল আস্থার সংকট রয়েছে। জাতীয় পার্টি মনে করে ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে কোন প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করেনি আওয়ামী লীগ। নানাভাবে তাদের সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে। উপনির্বাচন, উপজেলা পরিষদ থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত কোথাও ছাড় দেওয়া হয়নি। অনেক সময় জোর করে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে জাপার প্রার্থীদের। সে কারণে এবারের প্রতিশ্রুতি কতটা রক্ষা করবে সে সম্পর্কে তাদের মনে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যে কারণে জাতীয় পার্টি আগে ভাগেই নিশ্চিত হয়ে তারপর সিদ্ধান্ত দিতে চায়। তারা এমন কোন মাধ্যমে নিশ্চিত হতে চান যাতে, আওয়ামী লীগ আর প্রতিশ্রুতি ভাঙতে না পারে। অন্যদিকে জিএম কাদেরকেও সরকার পুরোপুরি আস্থায় নিতে পারছে না বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।