নৌকা সরলেও চিন্তায় আসিফ, রবি, রেজাউল ও সোহেল

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

নৌকা সরে গেলেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পাশাপাশি নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে আতঙ্কিত জাতীয় পার্টির অনেক প্রার্থী। এরমধ্যে চারটি আসনে নিজ দলের হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পথের কাঁটা হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।

নিজ দলের স্বতন্ত্রদের নিয়ে শঙ্কায় থাকা আসনগুলো হচ্ছে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া), পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) ও নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসন। এসব আসনে জাতীয় পার্টির বর্তমান এবং সাবেক সংসদ সদস্যরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।

বিজ্ঞাপন

রংপুর-১ আসন থেকে দলীয় প্রার্থী সরিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এখানে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন যুব সংহতির সভাপতি জিএম কাদেরের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে ওই আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

আসনটিতে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন জাতীয় সংসদের বর্তমান বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙা। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ওই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। তার আরেকটি পরিচয় রয়েছে তিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি।

বিজ্ঞাপন

সংসদ সদস্যের পাশাপাশি বিগত সংসদে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী ছিলেন রাঙা। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এলাকার উন্নয়নে অনেক ভূমিকা পালন করেন। যে কারণে এখানে তার নিজস্ব একটি ভোট বলয় তৈরি হয়েছে। যেই জিতুক রাঙার সঙ্গেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন অনেকেই। রংপুরের এই আসনটিতে দীর্ঘদিন ধরে বাইরে থেকে নেতা এসে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন। এতে করে এক শ্রেণির ভোটারদের মধ্যে স্থানীয় প্রার্থী চাওয়া বাড়ছে। দুই প্রার্থীর কেউই গঙ্গাচড়ার স্থানীয় বাসিন্দা নন। দু’জনের রংপর সদরের বাসিন্দা, সে বিষয়টিও ভোটের মাঠে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে।

পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনটিও জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীকে মনোনয়ন দেয়নি জাপা। জনপ্রিয় নেতা ফরাজী চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। পেশায় ডাক্তার ফরাজী প্রথম ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর প্রত্যেকটি নির্বাচনে মূল ফ্যাক্টর হিসেবে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শুধু আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। এছাড়া প্রত্যেকবারেই নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ফেরেন সংসদে। আর ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টির হয়ে সংসদে জায়গা করে নেন তিনি। রওশনপন্থী বলে পরিচিত এই নেতাকে এবার মনোনয়ন দেয়নি জাতীয় পার্টি। মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে মোশরেকুল আলম রবিকে। প্রতিদ্বন্দ্বিতার দৌড়ে রুস্তম আলী ফরাজীকেই এগিয়ে রাখছেন অনেকেই। এলাকার উন্নয়নে তার রয়েছে ব্যাপক অবদান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনটি ২০০৮ সাল থেকে জাপাকে ছেড়ে দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। এবারও আসনটি থেকে নৌকা প্রতীক সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ২০০৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাপা নেতা জিয়াউল হক মৃধা বিজয়ী হন। ২০১৪ সালেও তিনি নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন দৌড়ে জামাই প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাড. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়ার কাছে হেরে যান শ্বশুর জিয়াউল হক মৃধা।

পার্টি রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে মনোনয়ন দেন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন শ্বশুর জিয়াউল হক মৃধা। এতে বিএনপির প্রার্থীর কাছে ধরাশায়ী হন জিয়াউল হক মৃধা। আর লাঙল প্রতীকে রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া মাত্র ২৭৯ ভোট পান। এবারও প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে মনোনয়ন দিয়েছে জাপা। আর শ্বশুর জিয়াউল হক মৃধা আগের মতোই স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন।

আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেওয়া ২৬ আসনের তালিকায় রয়েছে নীলফামারী-৩ আসনও। ওই আসনে জাতীয় পার্টি মনোনয়ন দিয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেলকে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন জাপার সাবেক নেতা কাজী ফারুক কাদের। তিনি ২০০৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জামায়াত নেতা আজিজুল ইসলামকে প্রায় লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন। তিনি ২০১৪ সালেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন।

রওশন এরশাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই ওই ৪ নেতার মনোনয়ন না পাওয়ার অন্যতম কারণ বলে বিবেচনা করা হয়। এসব নেতার মনোনয়ন নিশ্চিত না হওয়ায় নির্বাচন থেকেও দূরে সরে যান রওশন। জনশ্রুতি রয়েছে রওশন এরশাদও নাকি ওইসব স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ী হিসেবে দেখতে চান। খোদ প্রধানমন্ত্রীর কাছেও সমর্থন কামনা করেছেন। এসব কারণে আসনগুলো থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সরিয়ে নিলেও চিন্তামুক্ত হতে পারছে না জাপা নেতারা। তাদের কপালে চিন্তার ভাজ দেখা গেছে। অনেকেই জয়-পরাজয় ফিফটি ফিফটি হিসেবে দেখছেন।