জাপা প্রার্থীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা
জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। কেন্দ্র থেকে আর্থিক সহায়তা না পেলে অনেক প্রার্থীই বসে যাওয়ার কথা ভাবছেন বলে জানা গেছে।
পার্টির নির্বাচন মনিটরিং কমিটির সঙ্গে যারাই যোগাযোগ করছেন, তাদের কমন নির্বাচনী তহবিল দেওয়া হবে কিনা। নির্বাচনী তহবিল দেওয়া না হলে সরে যাওয়ার কথাও জানাচ্ছেন অনেকেই। তাদের বক্তব্য হচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে ২৬টি আসন নিয়েছে জাতীয় পার্টি। সমঝোতার সময় তাদের কথা চিন্তা করা হয়নি, এখন তারা নিজের গাঁটের টাকা খরচ করতে যাবেন কেনো। অনেকেই আর দু’চার দিন পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নিতে চান। ইতিমধ্যেই কয়েকটি আসন থেকে প্রার্থীরা সরে দাঁড়ানোর তথ্য পাওয়া গেছে।
২৩ ডিসেম্বর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জাকির হোসেন। তিনি জাতীয় পার্টির রায়গঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাঠে ছিলাম বেশ কয়েকটি নির্বাচনী অফিস করা হয়েছিল। নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু ১৭ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার পর থেকে সব শেষ হয়ে গেছে। অর্থাৎ ১৭ ডিসেম্বর শেষ মুহুর্তে ২৬ আসনের সমঝোতার কথা ইঙ্গিত করেছেন।
অন্যদিকে ২১ ডিসেম্বর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনের প্রার্থী আলাউদ্দিন মৃধা। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি ও নাটোরের অন্যান্য আসনে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে নতুনদের মনোনয়ন দেওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে অসন্তোষের কথা জানান তিনি।
নির্বাচন মনিটরিং কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, বেশিরভাগ ফোন আসছে নির্বাচনী খরচের টাকা দেওয়া হবে কিনা সে বিষয়ে জানার জন্য। অনেকেই ক্ষুব্ধ ২৬ আসনে সমঝোতার খবরে। নির্বাচনী তহবিল না পেলে সরে যাওয়ার কথাও জানাচ্ছেন। আমরা তাদেরকে বলেছি, এখনও তহবিল বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। পার্টি ফান্ড দেবে এটাও সিদ্ধান্ত হয়নি, আবার দেবে না এমন সিদ্ধান্তও হয়নি। কয়েকজন প্রার্থী আমাকে বলেছে, তহবিল না পেলে তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন। সর্বোচ্চ ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য বেলাল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, নির্বাচন পরিচালনা কমিটি থেকে প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। অনেক সময় প্রার্থীরাও নানা বিষয়ে যোগাযোগ করছেন। কিছু জায়গা থেকে সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাদের বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আমাদের প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে হামলা হয়েছে স্থানীয় যুবলীগ সভাপতির নেতৃত্বে। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি তারা যেনো দ্রুত পদক্ষেপ নেন। ওই আসনের মোগড়াপাড়া ইউনিয়নটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। নির্বাচনী পরিবেশ রক্ষায় ইসি উদ্যোগী হবে বলে আমরা আশা করি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু কিংবা কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনী প্রচরণায় বিভিন্ন আসনে যাবেন কিনা সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। চেয়ারম্যান ও মহাসচিব তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন। ঢাকায় ফিরলে তারপর আলোচনা হবে এসব বিষয়ে।
অনেক প্রার্থী সরে যাওয়ার গুঞ্জন প্রসঙ্গে বেলাল হোসেন বলেন, আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। এখন পর্যন্ত শুধু নাটোর-৪ আসনের প্রার্থী সরে যাওয়ার কথা অফিসিয়ালি জেনেছি।
জাতীয় পার্টি মনোনয়ন দেওয়া ছাড়া এখন পর্যন্ত দলীয় প্রার্থীদের কোনো দিক নির্দেশনা দেয়নি। এ নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা বাড়ছে। পার্টির চেয়ারম্যান ২২ ডিসেম্বর নিজ নির্বাচনী এলাকা রংপুর-৩ (সদর) আসনে গেলেও আর কোন এলাকায় যাওয়ার কর্মসূচি রাখা হয়নি। এমনকি তার আসনের সীমানা ঘেষা রংপুর-১, ২, ৪ ও ৫ আসনেও যাচ্ছেন না। আপন ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ারের রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনটি কয়েক মিনিটের দূরত্ব হলেও সেখানেও যাচ্ছেন না। সোমবার সকালে তার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। পার্টির চেয়ারম্যানের এই আচরণে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না স্থানীয় নেতারা। তারা অনেকেই ভেবেছিলেন জিএম কাদের রংপুর গেলে অন্তত আশপাশের কয়েকটি আসন ঘুরে আসবেন।
নানা নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে জাতীয় পার্টি। ছেলে সাদ এরশাদের আসন নিয়ে টান দেওয়া এবং অনুসারীদের মনোনয়ন নিশ্চিত না হওয়ায় গত ২৯ নভেম্বর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। দলটি ২৯৪ আসনে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দিলেও ৬ জন প্রার্থী শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। নির্বাচন কমিশন বাছাই শেষে ২৭২ আসনে জাপার প্রার্থীদের বৈধ ঘোষণা করে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে (১৭ ডিসেম্বর) কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। শেষ পর্যন্ত ২৬৫ আসনে প্রার্থী প্রতীক বরাদ্দ পান বলে জাপা সূত্র জানিয়েছে।
১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চলে নাটকীয়তা। শেষ মুহূর্তে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেয় জাপা। একই সময়ে আওয়ামী লীগ পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে জাপাকে ২৬ আসন ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে। সিনিয়র নেতা এবং বর্তমান কয়েকজন এমপি সমঝোতার তালিকায় না থাকা, বিপরীতে জিএম কাদেরের সহধর্মিনীর ঢাকা-১৮ আসন পাওয়া নিয়ে সন্দেহ ও অবিশ্বাস বেড়েছে। আবার ২৬ আসনের বাইরে থাকা অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে।