১০ শতাংশ কমিশন খুঁজছেন ইউএনও, অভিযোগ আ.লীগ সভাপতির

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

প্রকাশ্যে জনসভায় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খোরশেদ আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন বেদন।

শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) নৌকা প্রতীকে তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হওয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতাকে সংবর্ধনা দেয় উপজেলা আওয়ামী লীগ। এই সভায় সভাপতির বক্তব্যে দিতে গিয়ে ইউএনওকে আক্রমণ করে অন্তত ১০ মিনিট ধরে বক্তব্য দেন বেদন। তখন সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা মঞ্চে ছিলেন। উপজেলা কমপ্লেক্স মাঠে এই সভার আয়োজন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

সেই সভার একটি বক্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। আলাউদ্দিন বেদন বলেন, ‘আজ সন্দ্বীপসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আবারও সরকার গঠন করেছে। কিন্তু আমরা সন্দ্বীপে কি দেখতে পাই। যেখানে প্রতিটা উদ্যোগ নিয়ে আমাদের এমপি মহোদয়, আমাদের জনপ্রতিনিধিরা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে সন্দ্বীপের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে, সন্দ্বীপের সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্ট করবে, সেখানে সন্দ্বীপের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। কারণ যিনি নির্বাহী কর্মকর্তা, আমরা শুনতে পাচ্ছি উনি আমাদের জন প্রতিনিধি, চেয়ারম্যানদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। তিনি প্রশিক্ষণে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের উস্কানি দিচ্ছেন কীভাবে চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে অনাস্থা দিতে হয়। এটা কিসের লক্ষণ!’

ঠিকাদারদের বিল দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগ করে আলাউদ্দিন বেদন ইউএনও এর উদ্দেশ্যে আরও বলেন, ‘আজকে আমরা দেখি ঠিকাদারদের বিল দেওয়া হচ্ছে না। আজকে টেন পার্সেন্ট খোঁজ করা হচ্ছে। আমি মাননীয় এমপি মহোদয়ের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই এটা কিসের নমুনা। আজকে আমি দেখছি একজন ব্যাংক ম্যানেজার যিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের ক্যাডার ছিলেন তিনি ১০টা বাজলেই উপজেলা ভবনে আসেন, বিভিন্ন অফিসারদের সঙ্গে তার দহরম মহরম। এটা কিসের লক্ষণ।’

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনের সময়ও প্রশাসন বিরূপ আচরণ করেছেন অভিযোগ তোলে আলাউদ্দিন বেদন বলেন, ‘একটি কুচক্রী মহল প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে যেভাবে কর্মকাণ্ড চালিয়েছে নির্বাচন চলাকালীন আমাদের মনে হয়েছে আমরা জামায়াত জোট সরকারের লোক। সেই আচরণ প্রশাসন আমাদের সঙ্গে করেছেন। আমাদের একজন নেতা ইঞ্জিনিয়ার রবিউল আলম মগদারা ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতি চড়াতে তাঁকে অস্ত্র দিয়ে চালান দেওয়া হয়েছে। আমাকেও ডেকে থ্রেট করা হয়েছে, আমি নাকি টাকা দিয়ে ভোট কিনি। তখন আমি বললাম টাকা দিয়ে তো ভোট কেনা যায় না। টাকা দিয়ে হয়তো জাল ভোট দেওয়া যায়।’

উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও আওয়ামী লীগের নেতাদের দাওয়াত দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ তোলেন আলাউদ্দিন বেদন। বলেন, ‘কয়েকদিন আগে সারাদেশের ন্যায় সন্দ্বীপেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাচ্চাদের নিয়ে খেলাধুলার আয়োজন করা হয়েছিল।সেই অনুষ্ঠানে সাধারণত আমাদের জনপ্রতিনিধিরা এবং আমি আওয়ামী লীগের সভাপতি অথবা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সবসময় দাওয়াত পেয়ে এসেছি। কিন্তু আজকে আমার মোবাইলে একটি ছবির স্ক্রিনশট নিয়ে রেখেছি, যেখানে জামায়াত জোটের দুজন লোক সেই মঞ্চে, অথচ আমরা দাওয়াত পাইনি।’

এমপিকে উদ্দেশ্য করে আলাউদ্দিন বেদন আরও বলেন, ‘আমার এমপি মহোদয়ের কাছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে বলতে চাই প্রশাসনের অনিয়ম নিয়ে। সন্দ্বীপের ইতিহাসে প্রথম তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা ইউএনওর মিটিং বয়কট করেছেন। এটা মোটেই ভালো লক্ষণ নয়। এরাই (চেয়ারম্যান) হচ্ছে সন্দ্বীপের উন্নয়নের কারিগর। এরাই তৃণমূলের কারিগর। এদের পাশ কাটিয়ে উন্নয়ন সম্ভব নয়। সন্দ্বীপের উন্নয়ন ও মানুষের স্বার্থে আপনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে পারেন।’

বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে আলাউদ্দিন বেদন ফোন ধরেননি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বক্তব্যটি আমি শুনিনি। বিষয়টি আমি দেখব।’