ফ্যাসিবাদের পতন এবং গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্যই একদফা দাবি ছিলো জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আমাদের দাবির একটা পূরণ হয়েছে, আরেকটা যত দ্রুত পূরণ হয় সেজন্যই আমরা সবাই কথা বলি।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সঙ্গে বিএনপির লিয়াঁজু কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা গত ১৬ বছর ধরেই পতীত স্বৈরাশাসকদের বিরুদ্ধে অব্যাহত লড়াই চালিয়ে আসছি। কখনো ২০ দল হিসেবে, কখনো যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে। আমাদের মধ্যে সুসম্পর্ক এবং ঐক্য বরাবর বহাল ছিলো। সেই এক সাথে চলার প্রক্রিয়া হিসেবে আজকে আমরা বসেছি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক যে পরিস্থিতি এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যেহেতু আমরা রাজনৈতিক আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম সেহেতু আমাদের পার্থক্য তেমন একটা নাই। আমরা মুটামুটি এক ধরণের মতবাদই প্রকাশ করি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর, যে লড়াইয়ে মানুষ খুন হয়েছে, গুম হয়েছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ হয়েছে নির্যাতিত হয়েছে নানা জুলুমের স্বীকার হয়েছে। এই লড়াইয়ের এক চূড়ান্ত পর্যায়ে গত জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। কিন্তু আমাদের যে এক দফা, পরবর্তী পর্যায়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের যে এক দফা সেটা মূলত ছিলো ফ্যাসিবাদের পতন এবং গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা। একটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা। আমাদের দাবির একটা পূরণ হয়েছে, আরেকটা যত দ্রুত পূরণ হয় সেজন্যই কিন্তু আমরা সবাই কথা বলি। আলোচনা করি, সভা সমাবেশ করি।
সেটা কি নির্বাচন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই। কারণ সেটাই তো বাকি আছে। ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে কিন্তু গণতন্ত্রের পুনপ্রতিষ্ঠা হয়নি। সেটা পুনপ্রতিষ্ঠা হবে যখন জনগণ অবাধে নির্বিঘ্নে, শান্তিতে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে এই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব তার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিতে পারবেন। সেটা হলেই গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠা হবে।
নির্বাচন কতদিনের মধ্যে চান এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা ঐ নিয়েও আলোচনা করেছি কিন্তু কোন সিদ্ধান্তে আমরা এইভাবে করি নাই। আমরা মনে করি সমমনা জোট তাদের নিজেদের মধ্যেও আরও আলোচনা হওয়া দরকার এবং বিএনপিতেও আমরা আলোচনা করবো। এখন আবার আরেকটা দলের সঙ্গে আমরা বসবো। এইভাবে সবার সঙ্গে আলোচনা করে যেটা দাঁড়াবে তার ভিত্তিতেই আমরা আলটিমেটলি সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিবো।
তার আগেই নির্বাচন হওয়া সম্ভব কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যা বলেছে, তার প্রেস সেক্রেটারি যা বলেছে, মিললো এটা? যেটা মিললো না এটা নিয়ে মন্তব্য করার কি আছে? একটা স্পষ্ট কথা শুনলে ভাল হবে তাহলে মন্তব্য করবো।
সমমনা জোটের পক্ষ থেকে এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ সাংবাদিকদের বলেন, দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ ১৫ বছর আন্দোলন করেছি। পরবর্তীতে একপর্যায়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি। দেশের সকল সমস্যার সমাধান হবে যদি জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে কোন লাভ হবেনা, তাই গণতন্ত্র রক্ষার জন্য জরুরীভাবে নির্বাচন প্রয়োজন। আমরা চাই সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ না করে সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী রোড ম্যাপ ঘোষণা করবে সরকার।