আ.লীগের সবাই প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা, রণাঙ্গনের নয়: গয়েশ্বর
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘আমাদের দেশের স্বাধীনতা শুধু কথার মধ্যে দিয়ে আসেনি। এসেছে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে। পাকিস্তানের কর্নেল জানজুয়া জিয়াউর রহমানের হাতে নিহত হয়েছেন। শেখ হাসিনাকে বলব, আপনার আশেপাশে আছে, এমন কাউকে বের করেন তো, যে যুদ্ধে গুলি ছুঁড়েছে। আপনার দলে মুক্তিযোদ্ধা নেই, এ অপবাদ আমি দেব না। আছে, কিন্তু সবাই প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা, রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা নয়।’
বুধবার (২৯ মে) বিকেলে নগরীর কাজীর দেউরীস্থ ভিআইপি ব্যাঙ্কুয়েট হলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৩ তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির উদ্যোগে "শিল্প, বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে শহীদ জিয়ার ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভায়" প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে দুপুর ১২টায় একই স্থানে জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে বই মেলা ও বই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার, ভিপি হারুনুর রশীদ, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।
গয়েশ্বর রায় বলেন, জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যারা ছিলেন সবাই রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা। আপনারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি, বিপক্ষের শক্তি নিয়ে আলোচনা করেন। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল কেন? স্বাধীন, সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য। আজ এ যে গণতন্ত্রহীন রাষ্ট্রে সার্বভৌমত্ব আছে কিনা বলতে সন্দেহ লাগে। শুধু একটি পতাকা উড়লেই দেশকে স্বাধীন বলা যায় না। জাতীয় সংগীত শুনলেই বোঝার কোনো উপায় নেই যে দেশে স্বাধীনতা আছে। সে কারণে আজ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি মানেই তারা, যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে।
জিয়াউর রহমানের ছবি পাহারা দিতে পুলিশ লাগে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশের মঙ্গল যারা চাইনি, তারাই জিয়াউর রহমানকে সেদিন চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে নির্মমভাবে খুন করেছে। জিয়ার জীবনের শুরুই এ চট্টগ্রামে, শেষও এ চট্টগ্রামে। তিনি বলতেন স্লোগানে মুক্তি আসবে না। আমাদের উৎপাদনমূখী হতে হবে। কর্মমুখী হতে হবে। প্রত্যেকটি মানুষের হাতে কাজ পৌঁছে দিতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের হৃদয়ে জিয়ার নাম লেখা আছে। এ নাম লেখা যায়, মুছা যায় না। জিয়ার ছবি পাহারা দেওয়ার জন্য পুলিশ লাগে না। আর মাঝে মাঝে কিছু মামলা হয় অমুকের ছবি ছিঁড়েছে। নাম বললাম না। জিয়ার ছবি ছেঁড়ার জন্য কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে হয়নি। কারণ জিয়ার ছবিতে হাত দিতে কেউ সাহস করে না।
গয়েশ্বর রায় বলেন, খালেদা জিয়াকে বন্দী করে শেখ হাসিনা জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দমিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি পারেননি। দেশনায়ক তারেক রহমান সেখানে উপস্থিত হয়ে গেছেন। তারেক রহমানের আওয়াজ শুনলেই শেখ হাসিনার ঘুম হারাম হয়ে যায়। তারেক রহমান যখন দেশে ফিরবেন তখন শেখ হাসিনা লন্ডনে থাকবে কিনা অন্য দেশে থাকবেন আমার জানা নেই।
তিনি বলেন, ২৫ শে মার্চ কালো অন্ধকারে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা যখন বাংলাদেশের মানুষের উপর বর্বর হামলা করে তখন জিয়াউর রহমান তাদের বর্বরতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সাধারণ মেজর। তার অধিনায়ক ছিলেন আবদুর রশিদ জানজুয়া। সে অধিনায়কসহ পাকিস্তানের কিছু জওয়ানকে জিম্মি করে বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি কর্মকর্তাদের নিয়ে তিনি ষোলশহরে সেদিনই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি শুধু যুদ্ধের আহ্বান করেননি, পাকিস্তানি বাহিনীদের এদেশ থেকে বিতাড়িত করার জন্য যুদ্ধে স্বাধীন হওয়ার ডাকও দিয়েছিলেন।
উপজেলা নির্বাচনে টাকা দিয়েও আওয়ামী লীগ ভোটকেন্দ্রে মানুষ নিয়ে যেতে পারছে না দাবি করে তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে ৭ শতাংশ মানুষও ভোট দিতে যায়নি। মানুষের ভোট চুরি করে ৪২ শতাংশ ভোট কাস্ট দেখানো হয়েছে। আজ উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। টাকা দিয়েও সেখানে মানুষ নিয়ে যেতে পারছে না। ভোটকেন্দ্রগুলোও শূন্য। বিএনপির ইশারায় যদি মানুষ ভোট দিতে না যায়, তাহলে শেখ হাসিনা ভেবে দেখেন আমাদের আরেক ইশারায় আপনার কি হবে? ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কখনও ক্ষমতায় ঠিকে থাকা যাবে না।
দেশে আরেকটা ১৯৭৪ সালের মতো দুর্ভিক্ষ হতে যাচ্ছে দাবি করে গয়েশ্বর রায় বলেন, করুণ অবস্থায় আজ দেশের অর্থনীতি। কোন যুবক আজ দেশে থাকতে চায় না। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের চেয়েও বড় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। হয়তো অনেকে বুঝতে পারছে না। রিজার্ভ আছে এখন মাত্র সাড়ে ১০ বিলিয়ন ডলার। অথচ আমাদের প্রয়োজন ৩৫ বিলিয়ন ডলার। ব্যাংকিং খাতের কি অবস্থা সেটা তো দেশের মানুষ দেখছেই। দুইদিন পর ব্যাংকের লকারেও কোনো টাকা থাকবে না। যদি দেশের এ অবস্থা চলে তাহলে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষকেও হার মানাবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, চট্টগ্রাম ও জিয়াউর রহমান অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, আবার চট্টগ্রামের মাটিতে শাহাদাত বরণ করেছেন। আজকে ইতিহাস থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু এটা কোনোদিন সম্ভব হবে না। কারণ শহীদ জিয়া, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া আর সবাই জিরো। জিয়া পরিবারের নেতৃত্বেই আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাবো।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে জাতি যখন নেতৃত্বশূন্য দিশেহারা তখনই জিয়াউর রহমান উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন। এমনি এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ষোলশহর বিপ্লব উদ্যানে তিনি পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে "উই রিভোল্ট" বলে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তিনি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিলেন। তার মেধা ও সামর্থ্যের কারণে তিনি দুইটা সেক্টরের দায়িত্ব পালন করেছেন। বীর উত্তম জিয়াউর রহমান ছিলেন জেড ফোর্সের অধিনায়ক। তাই শহীদ জিয়াকে বাদ দিয়ে এদেশে কোন ইতিহাস রচিত হতে পারে না। জিয়া আছেন কোটি কোটি মানুষের অন্তরে।
এতে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, উত্তর জেলা বিএনপির সি. যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হালিম, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, এড. আবদুস সাত্তার, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মো. শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, উত্তর জেলার নুরুল আমিন, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এরশাদ উল্লাহ, জয়নাল আবেদীন জিয়া, হারুন জামান, মাহবুব আলম, নিয়াজ মো. খান, এস এম আবুল ফয়েজ, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, আবুল হাশেম, আনোয়ার হোসেন লিপু, গাজী মো. সিরাজ উল্লাহ, মো. কামরুল ইসলাম, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, জেলা ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. তমিজ উদ্দিন আহমেদ মানিক, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এড. আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক, মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান প্রমুখ।