পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে কৌশলী আওয়ামী লীগ!

  • রুহুল আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় প্রতীক

ছবি: সংগৃহীত, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় প্রতীক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় ৬ মাস পর আবারও রাজপথ দখলে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

বিএনপি তার চেয়ারপারসনের মুক্তি ও সরকারের দুর্নীতিকে সামনে রেখে সমাবেশের ডাক দিচ্ছে। বিপরীতে আওয়ামী লীগ বলছে, ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বছরব্যাপী অনুষ্ঠান করবে তারাও।

বিজ্ঞাপন

দুই প্রধান বিরোধীদলের কর্মসূচির উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও মিলে যাচ্ছে দিন, তারিখ ও সময়। তবে এনিয়ে কৌশলী আওয়ামী লীগ। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির অপবাদ ঘোচাতে তাই বছরব্যাপী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের ঘোষণা আগেই দিয়ে রেখেছে দলটি।

দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপিকে শূন্য রাজপথ ছেড়ে দিতে নারাজ হাইকমান্ড। সে কারণে বিএনপির সরকারবিরোধী কর্মসূচিকে চ্যালেঞ্জ করে রাজপথে থাকবে আওয়ামী লীগও। তবে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির ‘তকমা’ যেন না লাগে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবে এবার।

বিজ্ঞাপন

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির বিষয়টি মানতে নারাজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মসূচিকে অনেক ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় পাল্টাপাল্টি উল্লেখ করায় এর কড়া সমালোচনাও করেন তিনি।

২৯ জুন (শনিবার) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় সাংবাদিকদের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম বছরব্যাপী উদযাপন করবো। সেখানে খবর হয়, আমরা নাকি পাল্টাপাল্টি করছি! গতকাল আমরা সাইকেল র‌্যালি করেছি; বিএনপির কি কিছু ছিল! তাহলে কেন এই অপবাদ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দিচ্ছেন'!

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ছবি- সংগৃহীত


এসময় তিনি অগ্রিম সমাবেশেরও ঘোষণা দিয়ে রাখেন। ওবায়দুল কাদের বলেন বলেন, ‘আমরা সারাবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করবো। আমাদের কেন্দ্র থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত এই কর্মসূচি উদযাপন করা হবে। আগস্ট মাসের পরে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ হবে। সে সমাবেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখবেন’।

এর আগে, সর্বশেষ চলতি বছরের মহান মে দিবসে রাজধানীতে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করে দুই দল। ওইদিন বিএনপি তার সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের ব্যানারে সমাবেশ করে। অপরদিকে, আওয়ামী লীগও তার সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের ব্যানারে সমাবেশ করে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২৭ জানুয়ারি বিএনপির কালো পতাকা মিছিল করে। এরপর এটাই ছিল দলটির বড় কোনো কর্মসূচি।

এরও আগে ২০২২ সালের জুলাই মাস থেকে বিএনপি তার মিত্রদের সঙ্গে যুগপৎভাবে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করে। তখন থেকে সরকারি দল আওয়ামী লীগও রাজপথ দখলে রাখার ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে আসছিল। সে সময় বিএনপি ও তার মিত্রদের সরকার পতনের ‘এক দফা’ আন্দোলনের বিপরীতে আওয়ামী লীগ ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ সমাবেশ করে।

বিএনপির বিপরীতে দেওয়া আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নিয়ে তখন ব্যাপক সমালোচনা হয়। বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে আওয়ামী লীগ সহিংসতাকে উস্কে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন কেউ কেউ। এত সমালোচনার পরেও রাজপথ ছাড়েনি আওয়ামী লীগ। বরং বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচির বিপরীতে আওয়ামী লীগও তার কর্মসূচি অব্যাহত রাখে।

২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশের ডাক দিলে আওয়ামী লীগও বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। সেদিন বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক নাশকতা-সন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও হয়। সহিংসতায় মারা যান একজন পুলিশ কনস্টেবলও। এমন চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে পণ্ড হয়ে যায় বিএনপির মহাসমাবেশ।

এরপর থেকে নির্বাচন পর্যন্ত কয়েক দফা হরতাল-অবরোধের ডাক দিলেও মাঠে নামতে পারেনি বিএনপি। ব্যাপক ধরপাকড়, মামলা ও নেতাকর্মী গ্রেফতারের কারণে বিপর্যস্ত ছিল দলটি। ফলে, কোনো বাধা ছাড়াই হয়ে যায় নির্বাচন। টানা চতুর্থ বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

তবে সে অবস্থা থেকে আবারও রাজপথে আন্দোলন জোরালো করতে চায় বিএনপি। বিপরীতে শূন্য রাজপথ ছেড়ে না দিয়ে মাঠে থাকতে চায় আওয়ামী লীগও। তবে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির তকমা ঘোচাতে এবার কৌশলী আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন ও আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপি ও তার মিত্ররা। এখন নির্বাচিত সরকার ও দেশকে অস্থিতিশীল করতে নতুন করে মাঠে নামতে চায় দলটি। সে কারণে বিএনপির সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীরাও মাঠে থাকবেন।

আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের দেওয়া হয়েছে কড়া নির্দেশনা। দলের যে কোনো কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসমাগম নিশ্চিত করতে সবাইকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

এছাড়াও দলের ঢাকা মহানগরীর এমপি ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদেরও দলের কর্মসূচিতে সর্বাত্মক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পাল্টাপাল্টি সমাবেশ নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ থেকে আমরা আগেই বছরব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। ঐতিহ্যবাহী সাফল্য ও গৌরব গাথার দল আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সর্ববৃহৎ এই দলটি তার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বছরব্যাপী উৎসব উদযাপন করছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ছবি- সংগৃহীত


নাছিম বলেন, এখন আকস্মিকভাবে বিএনপির সঙ্গে যদি কোনো কর্মসূচি একই দিনে হয়ে যায়, তাহলে কি শুধু পাল্টাপাল্টি হবে! এটা তো এমন কোনো সমাবেশ ডাকা হয়নি যে, বিএনপি ডেকেছে বলে আমরা ডেকেছি।

বিএনপি-জামাতের কোনো সেমিনার হল বা আলোচনার অডিটরিয়ামে গিয়ে কোনো সভা ডেকেছি, এমন তো না। এরকম ঢাকা শহরে একাধিক দলের একাধিক সভা অতীতেও হয়েছে। তাতে কোনো সংঘাত বা উচ্ছৃঙ্খলা, মারামারি-খুনোখুনি এমন কিছু হয়নি।

বিএনপির সভা থেকে আওয়ামী লীগের সভা অনেক দূরে উল্লেখ করে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এটা নিয়ে অহেতুক দ্বন্দ্ব বা সংঘাত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একটি নির্বাচন হয়েছে, নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনা করছে, ছয় মাসও হয়নি। এখন এই সরকারকে উৎখাতের কথা যারা বলে, তারা ব্যর্থ! সে ব্যর্থতার দায় অন্যভাবে আওয়ামী লীগকে দেওয়ার জন্য বিএনপি কৌশল নিচ্ছে। এই কৌশলকে আমরা পাত্তা দেই না।