নেতাকর্মীদের মাঠে রাখতে না পারাই ব্যর্থতা মনে করছে আ. লীগ

  • রুহুল আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগ

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ঘটে যাওয়া সহিংসতায় দলীয় নেতাকর্মীদের মাঠে রাখতে না পারাকে ব্যর্থতা বলে মানছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতেও যে সব নেতাকর্মীকে মাঠে নামানো যায়নি তাদের তালিকা করার নির্দেশনা দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড।

কোটা সংস্কার আন্দোলনটা শুরু হয় মূলত হাইকোর্টের দেয়া একটি রায়কে কেন্দ্র করে। চলতি বছরের ৫ জুন দেয়া সেই রায়ে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকারের ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে। এরপর থেকেই স্থায়ীভাবে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের কথা বলে আসছিলো শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে তারা আল্টিমেটাম দিয়ে ১ জুলাই থেকে শাহবাগ মোড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা শুরু করে।

বিজ্ঞাপন

এরপর ধীরে ধীরে আন্দোলনের সঙ্গে বাড়তে থাকে সহিংসতা। এর সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতায় যা মহীরুহ হয়ে উঠে। আগুন জ্বলে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায়। এমতাবস্থায় গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাত থেকে কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হয় সরকারকে।

তবে পরিস্থিতি এমন জটিল হবার আগেই বুধবার (১৭ জুলাই) আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হবার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ‘তুমি কে, আমি কে রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগানকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছিলেন। একই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অপব্যাখ্যা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্রদল-ছাত্রশিবির। আমাদের অস্তিত্বের প্রতি হামলা এসেছে, হুমকি এসেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা আমাদের করতেই হবে। কাজেই আপনারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত হয়ে যান।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এমন হুঁশিয়ারির পরেও দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে কোন বিকার দেখা যায়নি। বরং আন্দোলনের সামনে কোন প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেনি দলটি। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের ঢাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ড, থানাসহ কেন্দ্রীয় কমিটি থাকলেও মাঠে দেখা মেলেনি তাদের অনেককেই।

রাজনৈতিকভাবে আন্দোলনকে মোকাবিলা করতে না পারা ও সহিংসতার এমন চূড়ান্ত রূপ ধারণকেই আওয়ামী লীগ দল হিসেবে তার সাংগঠনিক ব্যর্থতা মনে করছে। ক্ষমতাসীন দলটি তাই এই সাংগঠনিক দুর্বলতার পিছনে কারা দায়ী এবং কারা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও মাঠে ছিলেন না তাদের তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) বিকেলে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক বৈঠকে বসে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির ঢাকা মহানগর কমিটি ও বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।

বৈঠকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলীয় সভাপতির বিভিন্ন নির্দেশনার কথা জানান দলটির নেতাকর্মীদের। তিনি দলীয় সভাপতির নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে নেতাকর্মীদের ছয়টি নির্দেশনা মেনে চলার কথা বলেন। সেগুলো হলো- কারফিউ আইন ভঙ্গ না করে নেতাকর্মীদের অলিগলিতে অবস্থান নেওয়া, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে থানায় তালিকা দেওয়া, আহত ও নিহত নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরি করা, গুজব প্রতিরোধে মসজিদভিত্তিক কাজ করা, অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রাখা এবং নিজ নিজ পাড়া-মহল্লায় সমন্বয় সভা করা।

বৈঠক সূত্রে আরও জানা যায়, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে মাঠে না থাকাকে সাংগঠনিক দুর্বলতা হিসেবে দেখছে হাইকমান্ড। সেজন্য দল ও সহযোগী সংগঠনের কোথায় কি সাংগঠনিক দুর্বলতা আছে এবং কেন তারা মাঠে নামেনি তা চিহ্নিত করা ও দায়িত্বশীল পদে থেকেও যারা এ সময়ে মাঠে ছিলেন না বরং আত্মগোপনে চলে গেছেন, তাদের তালিকা তৈরিতে সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার কথা জানানো হয়।

এই ব্যর্থতার পিছনে সমন্বয়হীনতাও একটি বড় কারণ বলে মনে করছে দলটি। সেজন্য সমন্বয়হীনতা কাটিয়ে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করতে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে দলের সিনিয়র নেতা, দলীয় সংসদ-সদস্য, কাউন্সিলর এবং সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিষয়টি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে সব বিষয় দলীয় প্রধানের নজরে এসেছে তা নিয়ে সাধারণ সম্পাদক নির্দেশনা দিয়েছেন। যেখানে সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠা ও নিষ্ক্রিয় কর্মীদের তালিকা প্রণয়নের বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিএনপি-জামায়াত যে ভিতরে ভিতরে এত সংগঠিত হয়েছে সেটি আমরা খেয়ালই করিনি। আমরা সরকারি দল হওয়ার কারণে আলস্য ভর করেছে। সেখান থেকে আমাদের উঠে দাঁড়াতে হবে। সংগঠনগুলোকে আরও সংগঠিত করতে হবে। চারদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।