আব্বুকে মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা হয়নি: হারিছ কন্যা

  • স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

হারিছ চৌধুরীর কন্যা সামিরা তানজিন চৌধুরী

হারিছ চৌধুরীর কন্যা সামিরা তানজিন চৌধুরী

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীকে মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তার মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী।

সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক বিভাগ ডিএনএ নমুনা দেওয়া শেষে তিনি এ কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

সামিরা তানজিন চৌধুরী বলেন, সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ আমার রক্তের নমুনা নিয়েছে আজকে। আমার বাবা মরহুম আব্দুল হারিছ চৌধুরীর মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। মরদেহ এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। গত ১৬ অক্টোবর আমার বাবা মরদেহ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এরপর সিআইডি আজকে আমাকে ডেকেছে, আমার নমুনা সংগ্রহ করার জন্য। এখন আব্বুর ডিএনএ'র ম্যাপিং চলছে। আমার ডিএনএ'র নমুনার সঙ্গে আব্বুর ডিএনএ'র নমুনা মেলাবে। এরপর সিআইডি এই নমুনা মেলানোর ফলাফল দিবে। সিআইডি আমাকে বলেছে- এই প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ হতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ লাগবে। তবে প্রক্রিয়াটা জটিল, তারা আমাকে বলেছে- যত দ্রুত সম্ভব তারা এটা সম্পন্ন করবে।

এই মুহূর্তে ডিএনএ নমুনা দেওয়ার কী প্রয়োজন রয়েছে- প্রশ্ন করা হলে বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর মেয়ে বলেন, আমি বলেছি আমার বাবা মারা গেছে, কিন্তু গত সরকার এটা মেনে নেয়নি। তাহলে কি আমার বাবাকে আমি জীবিত রেখে দিব, তা না হলে কাউকে আমার বাবাকে খুঁজে দিতে হবে। আমার বাবা তো নিরুদ্দেশ থাকতে পারেন না। কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলে এটার একটি সার্টিফিকেট লাগবে। সে তো যেমন তেমন মানুষ ছিল না, তার মৃত্যুর বিষয়টা তো প্রমাণিত হতে হবে। যেকোনো মানুষেরও মানবিক অধিকার থাকে। আমার আব্বুর মানবিক অধিকার রক্ষা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

ওই সময় হারিছ চৌধুরীর মরদেহকে এইভাবে কেন মাটি দেওয়া হয়েছিল প্রশ্ন করা হলে বিএনপির এই নেতার মেয়ে বলেন, আমার আব্বুর মরদেহ আমি আমার দাদুর বাড়িতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। আমি দেখলাম গণমাধ্যম অহরহ রিপোর্ট করছে- মাহমুদুর রহমান নামে হারিছ চৌধুরীর দাফন। এটা আসলে সঠিক নয়। আমার প্রশ্ন, কে মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করেছে। আমি তো শুধু জানি আমি আমার বাবার মরদেহ নিয়ে গিয়েছি সেখানে দাফন হয়েছে। ওখানে যারা দাফন করেছেন তাদের সঙ্গে আমার কখনো কথা হয়নি। ওইখানের হুজুর মহিলা মানুষের সঙ্গে কথা বলেন না, সেটা আমাকে বলা হয়েছিল। আমি তখন সদ্য মৃত বাবার মরদেহ বুকে করে নিয়ে যাওয়া মেয়ে। সে সময় আমি তো কাউকে কিছু বলিনি।

তিনি বলেন, যখন বিষয়টি সবার সামনে আসে, তখন দুইজন সাংবাদিক আমার কাছে বিষয়টি জানতে চান। তখন আমি এ বিষয়ে কথা বলি। আমি তো ওইভাবে কাউকে চিনি না। আমি যখন তাদের সঙ্গে কথা বলি, তখন আমি তাদেরকে বলেছি- হ্যাঁ আব্বু মারা গিয়েছেন। আব্বুর দাফন হয়েছে, আপনারা যা শুনছেন তা সত্যি। আগের সরকারের প্রতিহিংসার পাত্র ছিল আমার আব্বু। তখনকার সময়ে বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক মামলা হয়েছে। আমার আব্বু গত সরকারের আমলে নির্যাতিত হওয়ার মধ্যে অন্যতম একজন। এ কারণে সে আত্মগোপনে ছিল, কিন্তু সে দেশ ছেড়ে চলে যায়নি। তখন ওই সরকারের পক্ষ থেকে অপপ্রচার চালানো হয় যে, হারিছ চৌধুরী লন্ডনে মারা গেছে, আবার কেউ কেউ বলে যে সে মারা যায়নি। তারার মিথ্যা কথা বলছে, যাতে করে ইন্টারপোল থেকে নাম সরানো যায়। যা ইচ্ছা তাই খবর ছড়ানো হল আব্বুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে।

আপনি আপনার বাবাকে দাফন করেছেন, তারপরও এখন ডিএনএ নমুনা দিতে হচ্ছে। এই বিড়ম্বনার পিছনে কারা দায়ী- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এই বিড়ম্বনার জন্য গত সরকার দায়ী। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত প্রশাসন এর জন্য দায়ী। প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি এবং স্বৈরাচারমূলক আচরণের কারণে আমাকে এই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।

সোমবার বেলা ১২টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী সিআইডিতে আসেন। তার বাবা হারিছ চৌধুরীর মরদেহ শনাক্তের জন্য আদালতের নির্দেশে তিনি সিআইডিতে ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনা দিতে আসেন।

এর আগে ঢাকা জেলার আদালতের নির্দেশে গত ১৬ অক্টোবর হারিছ চৌধুরীর লাশ উত্তোলন করে নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে গেছে, ২০২১ সালে ঢাকার সাভারে মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা লাশটি বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর কি না, তা নিশ্চিত হতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। হারিছ চৌধুরীর মেয়ের এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশে লাশটি উত্তোলন করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা।

ডিএনএ পরীক্ষার পর মরদেহটি হারিছ চৌধুরীর কি না, সেটি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি যেহেতু বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাই তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার প্রদান করাসহ তাকে দাফনের বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে সংরক্ষণ করা হয়েছে।