নারীদের মর্যাদা সমুন্নত রেখে ধর্মে-বর্ণে হানাহানি ভুলে যেতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত এবং সামাজিক সুবিচার ও মানবিক সমাজ গড়তে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। হিংসার রাজনীতি থেকে বের হয়ে মানুষকে মর্যাদা দিতে হবে। দেশ ও মানুষের কাছে দায়বদ্ধ শাসন ব্যবস্থা সম্পন্ন দেশ গড়তে পারলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে।
রোববার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে এক বিশাল কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে ৪১ সাল পর্যন্ত লীজ দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সেনাবাহিনী ও বিডিআর এর মত শক্তিশালী দুটি বাহিনীকে ধ্বংস করে দিয়েছে। যারা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, তারা কখনো দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় না। কিন্তু আওয়ামী লীগ দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে গেছে।
জেলা জামায়াত এর আমীর মাও. মুহাম্মদ বদরুদ্দীন এর সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য রাখেন জামায়াত এর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল জনাব এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অধ্যাপক আব্দুত তাওয়াব, জেলা জামায়াত এর সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুল ওহাব, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ এর ছেলে আলী আহমাদ মাবরুর প্রমুখ।
আমীরে জামায়াত আরও বলেন, বিগত ১৬ বছর জগদ্দল পাথরের মতো পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার এ দেশের জনমানুষের ওপর চেপে বসেছিল। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের লগি বৈঠার তান্ডবে পথ হারিয়েছিল বাংলাদেশ। পিলখানার ৫৭ জন চৌকশ সেনা অফিসার হত্যার মাধ্যমে এ দেশের সামরিক বাহিনী ও তৎকালীন বিডিআরকে ধ্বংসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে তারা। জামায়াতের শীর্ষ ৫ নেতাকে বিচারিক হত্যার মাধ্যমে জামায়াতকে নেতৃত্ব শূন্য করার চেষ্টা করেছিল। দেশের মানুষের অংশগ্রহণ ছাড়াই ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা ভোটে ১৫৪ জন এমপি নির্বাচিত হয়েছিল। সেদিনের সেই ভোটে জনগণের পরিবর্তে নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে কুকুরের আনাগোনা দেখা গিয়েছিল। ২০১৮ এর নির্বাচনে কৌশল পরিবর্তন করে দিনের বদলে আগের রাতেই ভোট নিয়ে নিয়েছিল তারা। এরপর ২০২৪ সালে ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচন এর মাধ্যমে ২০৪১ সাল পর্যন্ত রাজত্ব বহাল রাখার স্বপ্ন দেখেছিল। তারা বলতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়লে এদেশে ৫ লক্ষ লোককে হত্যা করা হবে। কিন্তু তা হয়নি।
আওয়ামী লীগ দায়িত্ব জ্ঞানহীন হলেও এ দেশের মানুষ দায়িত্বহীন নয়। তাই তাদের সেই আশঙ্কা মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়েছে। বিগত ১৫ বছর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওপর সবচেয়ে বেশি জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা ও জেলে ঢুকিয়েছে। এমনকি অনেকের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সকল হত্যা ও নির্যাতনের বিচার চাই।
উন্নয়নের নামে লুটপাট করে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। প্রতিবাদ জানালে হত্যা নির্যাতন চালিয়েছে তারা। বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো আমাদের সন্তানদের ইতিহাস কখনো ভুলে যাবো না।
তিনি বলেন, আমরা এমন একটি রাষ্ট্র চাই যেখানে সবার অধিকার সমান হবে। আমাদের কলিজার টুকরো ছেলে মেয়েরা চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াবে না। বরং একটি মানবিক ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে তাদেরকে চাকরির সুব্যবস্থা করা হবে। ধর্মে-বর্ণে হানাহানি থাকবে না, কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে পাহারা দিতে হবেনা।
কিছু লোক বলে জামায়াত ক্ষমতায় আসলে মহিলাদেরকে জোর করে বোরখা পরানো হবে। আমরা এটা বলি না। তিনি জামায়াত কর্মীদেরকে নৈতিক মান ও জাগতিক মান উন্নতির আহ্বান জানান।
তার আগমন উপলক্ষে ফরিদপুরবাসীর যাতায়াতের কষ্ট হওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমরা শুধু আল্লাহর জন্যই পরস্পরকে ভালোবাসি। তিনি ফরিদপুরবাসীর নিকট দোয়া প্রার্থনা করেন এবং ফরিদপুরবাসীর জন্যও দোয়া করেন।
এদিকে সকাল থেকে বিভিন্নস্থান থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে সম্মেলনস্থলে জড়ো হয়। এক পর্যায়ে রাজেন্দ্র কলেজের মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বেলা ৩ টার দিকে আমীরে জামায়াত মঞ্চে এসে হাত নাড়িয়ে সকলকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানান। এ সময় গোটা এলাকা শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের কথা বলে গণতন্ত্রের টুটি চেপে ধরেছে। মানবাধিকারের কথা বলে মানবাধিকারের চরমতম লঙ্ঘন করেছে গত সাড়ে পনেরো বছরে। মানুষ গুম হয়েছে, আয়না ঘরে থেকেছে, পাখির মত বিনা বিচারে মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষকে গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে।
রোববার (১ ডিসেম্বর) চন্দ্রিমা উদ্যানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দলের ২৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে জিয়াউর রহমান এর মাজার জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে তিনি এ কথা বলেন।
জাহিদ বলেন, আজকে মনে রাখতে হবে স্বাধীনতার ৫৪ বছর বাংলাদেশে আইনের শাসন বলেন, আর সত্যিকারের অর্থে মানবাধিকার বলেন প্রতিটি জিনিসই যে কারণে মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ সালে অস্ত্র হাতে রনাঙ্গনে যুদ্ধ করেছিলেন সেই কারণে মুক্তিযোদ্ধারা অনেকে দেখে যেতে পারেন নি। এবং বিগত সাড়ে ১৫ বছরে পতিত এবং পলায়নকৃত স্বৈরাচার মুক্তিযুদ্ধের সকল চেতনাকে ভুলুণ্ঠিত করেছে।
১৫ বছরে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার করেছে এই চোরের দল। যারা গণতন্ত্র, উন্নয়নের বুলি আউড়েছে, বাংলাদেশ কে উন্নয়নের রোল মডেল বানাবে বলে গল্প শুনিয়েছে তারা এখন কোন অবস্থায়? বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছিলেন উনি আর টাকা ছাপাবে না। দেশের অর্থনীতি ফোকলা করে দিয়েছে মহা চোরের দল। কাজেই মনে রাখতে হবে তারা দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে সেটিই শুধু না দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান, আইন শৃঙ্খলা থেকে শুরু করে আইন আদালত সব ধ্বংস করে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, তারা মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তারেক রহমানকে সাজা দিয়েছিল। আজকে সেই মামলার রায় বেড়িয়েছে। হাইকোর্ট সে সমস্ত রায় খারিজ করে দিয়েছে। আইন যখন তার নিজস্ব গতিতে চলে তখন সত্যিকারের অর্থে মানুষ আইনের সেবা পায়, আদালতের আশ্রয় পায়। আর আইন যখন কোন একটি নির্দিষ্ট টার্গেট নিয়ে চলতে থাকে যেমনটি চালিয়েছে বিগত পলায়নকৃত স্বৈরাচার। তারা সত্যিকারের অর্থে কে দোষী সেটা ধরার চেষ্টা করে নি, তারা চিন্তা করেছে রাজনৈতিকভাবে কাকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে কাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যায়, কাকে শাস্তি দেওয়া যায়। একুশে আগস্ট এর মত আনফর্চুনেট ঘটনা আমরাও চাই না এক্ষেত্রে যারা দোষী তাদের বিচার হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তারা সাপলিমেন্টারি চার্ট সিট হায়ার এর মধ্য দিয়ে তারা চেয়েছে বিএনপিকে ধ্বংস করতে। কিন্তু আল্লাহ যাকে রক্ষা করতে চায় তাকে কি আর মানুষ ধ্বংস করতে পারে। সেটিই হয়েছে আজকে।
মাজার জিয়ারতের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বি এনপি নেতা আব্দুস সালাম, জাতীয়তাবাদী দলের যুগ্ম মহাসচিব নুরুন্নবী খান সোহেল, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবিন্দ।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব আসামি খালাস পাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় লন্ডন থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ স্বস্তি প্রকাশ করেন তিনি। এই বিবৃতির কথা জানিয়েছেন, বিএনপির মিডিয়া সেল সদস্য শায়রুল কবির খান।
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, মহান আল্লাহর দরবারে আমি শুকরিয়া আদায় করছি। বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে আজ বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করায়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই রায়ে প্রমাণ হলো আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এই মামলাতে তারেক রহমানকে অভিযুক্ত করেছিল। তার বিরুদ্ধে আনা মামলার অভিযোগ থেকে তিনি আইনগতভাবে মোকাবিলা করে উচ্চ আদালত থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন।
ঐতিহাসিক রায়ের মধ্যে দিয়ে আবারও প্রমাণিত হলো যে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আনা সব মামলাই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলক ছিল- বলে বিবৃতি শেষ করেন মির্জা ফখরুল।
জাতীয় পার্টি মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করতে নির্বাচনের বিকল্প নেই। দেশের মানুষ একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়।
রোববার (১ ডিসেম্বর) জাতীয় পার্টি বনানী কার্যালয়ে পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।
জাপা মহাসচিব আরও বলেন, আমরা আশা করছি, অন্তরবর্তী সরকার দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে সমর্থ হবে। জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জনে সমর্থ হবে।
তিনি দলকে আরো শক্তিশালী করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত মহাসচিব এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, লিয়াকত হোসেন খোকা, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক, মনিরুল ইসলাম মিলন এবং অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি এইচএম শাহরিয়ার আসিফ, সাধারণ সম্পাদক আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির আহ্বায়ক আলমগীর সিকদার লোটন, সদস্য সচিব মোঃ হেলাল উদ্দিন, কৃষক পার্টির আহ্বায়ক এবিএম লিয়াকত হোসেন চাকলাদার, যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী জামাল উদ্দিন, হুমায়ুন কবির শাওন, এম এ কুদ্দুস মানিক, তরুণ পার্টির আহ্বায়ক মোঃ জাকির হোসেন মৃধা, সদস্য সচিব মোড়ল জিয়া উর রহমান, শ্রমিক পার্টির আহ্বায়ক কাজী মেফতাহ উদ্দিন জসিম, ওলামা পার্টির সহ-সভাপতি ডঃ মাওঃ মোঃ গোলাম কিবরিয়া, জাতীয় সমাজের আহ্বায়ক মারুফ ইসলাম তালুকদার প্রিন্স, সদস্য সচিব আরিফ আলী, মটর শ্রমিক পার্টির আহ্বায়ক মেহেদী হাসান শিপন, সদস্য সচিব মোঃ আঃ রহিম।
উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোঃ জহিরুল ইসলাম জহির, মোঃ আরিফুর রহমান খান, দফতর সম্পাদক-২ এম এ রাজ্জাক খান, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন।