১৬ বছরের ত্যাগে পুড়ে বিএনপি খাঁটি সোনা হয়েছে: আমীর খসরু
অন্তর্বর্তী সরকারেরকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা ১৫/১৬ বছরে ত্যাগের মাধ্যমে জ্বলে পুড়ে খাঁটি সোনা তৈরি হয়েছে। ত্যাগের মাধ্যমে নতুন বিএনপির সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে 'টেইক ব্যাক বাংলাদেশ: নাগরিক ভাবনা' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি একথা বলেন। গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে ভয়েস ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ভোটার রাইটস।
তিনি বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে যারা রাস্তায় রক্ত দিয়েছি তারা ৩১ দফা সংস্কার করতে জনগণের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা সবাই মিলে তা বাস্তবায়ন করবো। আমাদের সে অধিকারও আছে কারণ আমরা ত্যাগ করেছি। বিএনপির নেতাকর্মীরা ১৫/১৬ বছরে ত্যাগের মাধ্যমে জ্বলে পুড়ে খাঁটি সোনায় তৈরি হয়েছে। ত্যাগের মাধ্যমে নতুন বিএনপির সৃষ্টি হয়েছে।
আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, অনির্বাচিত সরকারের সেভাবে সংস্কার করার কোন সুযোগ নেই। যে সব বিষয়ে সবার ঐক্যমত আছে সেটা তারা সংস্কার করতে পারে। একমাত্র সে কয়টি সংস্কার যার মাধ্যমে আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরতে পারি জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে। আমাদের বিএনপির পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে সেভাবে কোন আপত্তিও নেই।
বাকি সংস্কারের জন্য দেশের জনগণের কাছে ভোটের জন্য যেতে হবে উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, দলগুলো তাদের নিজস্ব প্রস্তাব নিয়ে জনগণের কাছে যাবে। জনগণ সিদ্ধান্ত দিবে, আগামী সংসদে সেগুলো পাশ করবে, কোন সমস্যা নেই। কিন্তু জনগণকে বাইরে রেখে যে বয়ান তৈরি করা হচ্ছে সে বয়ান জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব উনার একটা বয়ান তৈরি করেছিলো বাংলাদেশ কিভাবে চলবে। আবার স্বৈরাচারের একটা বয়ান ছিলো। ফ্যাসিস্ট সরকার শেখ হাসিনার আরেকটা বয়ান ছিলো যে উন্নয়ন গণতন্ত্রের ঊর্ধ্বে চলে গেছ। উন্নয়ন আর গণতন্ত্র যে হাত ধরে চলে সেটা সে বিশ্বাস করে নাই। গণতন্ত্রের মাধ্যমে উন্নয়ন হবে। উন্নয়নের মাধ্যমে গণতন্ত্র হয় না। ফ্যাসিস্টরা সবসময় উন্নয়নের কথা ব্যবহার করে।
আওয়ামী লীগ একটা বয়ান দিয়ে ১৬ বছর এই দেশ শাসন করেছে উল্লেখ করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সেই বয়ানের মাধ্যমে জনগণের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে । জনগণকে বাইরে রেখে সে তার একটা বয়ান তৈরি করছে। এখন আমরা আশা করি, নতুন কোন বয়ান আমাদের আর শুনতে হবে না। একমাত্র বয়ান হচ্ছে নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। এই বয়ানের বাইরে যারা বিভিন্ন সময় দেশ শাসন করেছে তাদের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিবে, বাংলাদেশ কোন পথে যাবে।
তারেক রহমান (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) সাহেব সংহতিকে ভালভাবে ধরেছেন। তিনি কোন দলকে চিন্তা করছেন না, পুরোদেশকে চিন্তা করছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির জন্য সংস্কার কোন নতুন বিষয় না। ৬ বছর আগে খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেছেন। ১ বছর আগে তারেক রহমান ৩১ দফা সংস্কার ঘোষণা করেছেন। এটা বিএনপি একা করেনি। আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যারা ছিল তাদের সবাইকে নিয়ে করেছেন। বিএনপি একা তো বাংলাদেশ না, সবাইকে নিয়েই বাংলাদেশ। এটার বাহিরে ছিল শুধু আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা।
বিএনপির এই নেতা বলেন, তারেক রহমান সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবয়নের চিন্তা করে বলেছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জাতি যদি আমাদের নির্বাচিতন করে তাহলে আমরা সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করব। বিএনপি কিন্তু একা না বরং এটা সবাইকে নিয়ে বাস্তবায়ন করার কথা বলেছে। দেশের সংস্কার নিয়ে চিন্তা করতে হলে সবার ঐক্যবদ্ধভাবেই করতে হয়।
ভয়েস ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ভোটার রাইটসের আহ্বায়ক মোস্তফা কামাল মজুমদার এর সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী অধ্যাপক ড. এম মুজিবুর রহমান।