শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩১ দফা পৌঁছে দিতে ছাত্রদলের ভিন্নধর্মী প্রচারণা
সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ‘রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। যুগপৎ আন্দোলনের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই এ কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে ‘সংস্কার’ শব্দটি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকারও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করার ঘোষণা দিয়েছে। এরই মধ্যে বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, সংবিধানসহ বিভিন্ন বিষয় সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি কমিশন গঠন করেছে।
তবে বিএনপির আশা দ্রুত সময়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শেষে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দেবে অন্তর্বর্তী সরকার। পরবর্তীতে জনগণের নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় গেলে অন্যান্য সংস্কার সম্পন্ন করবে। এরই ধারাবাহিকতায় ফের পূর্ব ঘোষিত ‘রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফা’ কর্মসূচির প্রচারণায় জোর দিয়েছে দলটি। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিএনপির ভ্যান গার্ডখ্যাত সহযোগী অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল।
ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, সংগঠনটির প্রশিক্ষিত পারদর্শী নেতাদের নিয়ে গঠিত ৩৮টি টিম রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফার প্রচারণায় সারাদেশ চষে বেড়াচ্ছে। এরই মধ্যে দেশের ৬৪ জেলায় তাদের ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। এর সাথে জনসম্পৃক্তি বাড়াতে এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সামষ্টিক আকাঙ্ক্ষা, শিক্ষাঙ্গনে কেমন ছাত্ররাজনীতি তারা প্রত্যাশা করে, শিক্ষার পরিবেশ ও দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের মূল্যায়ন ও প্রস্তাবনা, শিক্ষাঙ্গনে কাঠামোগত নিপীড়ন, নারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রতিবন্ধকতাসহ সামগ্রিক বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় এবং তাদের মতামত অনুযায়ী কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে নিয়মিত দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিয়ে দিনব্যাপী ক্যাম্পেইন কর্মসূচির আয়োজন করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩১ দফার বুকলেট, ছাত্রদলের গৌরবোজ্জ্বল অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে গঠিত ১টা বুকলেট এবং শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকের ১টি লিফলেট, খেলা সরঞ্জাম বিতরণ করা হচ্ছে। ছাত্রদল নেতারা বলছেন, ক্যাম্পেইনে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের কাছে ব্যাপক সাড়া মিলছে। ছাত্রদল এই কর্মসূচি চলমান রাখবে, এছাড়া বাংলাদেশের প্রত্যেকটি শিক্ষাঙ্গনে এই কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ এবং জেলা ও মহানগর শাখার অধীনস্থ সকল কলেজ ও মাদ্রাসাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক এই টিম গঠন করা হয়েছে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের একজন সহসভাপতি এবং দুইজন যুগ্ম সম্পাদক নিয়ে প্রতিটি টিম গঠিত হয়েছে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির গঠিত টিমের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব পালন করছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে স্থানীয় নেতারাও নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের কাছে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফার কর্মশালা নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছাকাছি ছুটে যাচ্ছেন।
এরইমধ্যে টিমগুলোর সদস্যরা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ বিভাগের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ শহরের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
এদিকে সারাদেশ চষে বেড়ানো ছাত্রদলের গঠিত টিমের সদস্যদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গঠিত টিমের সদস্যদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নিয়মিত বৈঠক করেন তিনি। এ সময় টিমের সদস্যদের বিভিন্ন দিক নির্দেশ দেন তিনি।
দুই মাস ধরে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা, ময়মনসিংহ মহানগর ও জামালপুর জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রতিটি উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ৩১ দফার প্রচারণায় বিভিন্ন ক্যাম্পেইন করছে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি শাকির আহমেদের নেতৃত্বে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর সানি ও রিসালাত ইসলাম সজীবের টিম। তারা ইতিমধ্যে ৭৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের ক্যাম্পেইন সম্পন্ন করেছেন।
শাকির আহমেদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশের যে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট, সেই প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীরা কেমন ক্যাম্পাস দেখতে চায়, বাংলাদেশের শিক্ষার পরিবেশ এবং শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তাদের যে ভাবনা রয়েছে সে বিষয়ে আমরা তাদের সাথে মতবিনিময় করেছি। আগামীর শিক্ষাঙ্গন নিয়ে আমাদের যে পরিকল্পনা রয়েছে সেটা আলোচনা করেছি।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি কাঠামোকে স্বৈরাচার হাসিনা দুর্নীতির মাধ্যমে ধ্বংস করেছে, সেই কাঠামোগুলোকে মেরামতের জন্য তারেক রহমান যে ৩১ দফা দিয়েছেন সেই ৩১দফা নিয়ে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করেছি। দফাগুলো নিয়ে তাদের মতামত শুনেছি।
চট্টগ্রাম বিভাগের বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ সমূহে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মো. কাজী জিয়া উদ্দিন বাসেতের নেতৃত্বে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুম বিল্লাহ ও রাজু আহমেদের টিম। তারা চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এনিম্যাল সাইন্স বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, বিজিসি ট্রাস্ট আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ৩১ দফার ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিম প্রধান মো. কাজী জিয়া উদ্দিন বাসেত বলেন, কোনোরকম শোডাউন ছাড়া সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে আমরা ক্যাম্পাসগুলোতে প্রবেশ করার চেষ্টা করি। ক্যাম্পেইনে তিনজন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করা হয়। শিক্ষার্থীদের মতামত জানতে চাই। তাদের মাঝে তারেক রহমানের ৩১ দফার রূপরেখা তুলে ধরেছি। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বিগত আওয়ামী লীগের সময়ের মতো আতঙ্কের ছাত্ররাজনীতি পরিহার করা হলে, ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির চর্চা থাকলে তারাও রাজনীতিতে যোগ দিবেন।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটি ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে আমাদের এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। ৩১ দফা সহ আগামীর শিক্ষাঙ্গন নিয়ে তাদের চিন্তা, ভাবনা আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন।
ময়মনসিংহ বিভাগের বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ সমূহে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান সোহানের নেতৃত্বে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাকিবুল ইসলাম চৌধুরী ও আবদুর রহিম রনির টিম। তারা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট, বঙ্গমাতা শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (জামালপুর), নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়, ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (কিশোরগঞ্জ), শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় (জামালপুর), দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (ভৈরব কিশোরগঞ্জ), ময়মনসিংহ কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ৩১ দফার ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছেন।
হাফিজুর রহমান সোহান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ছাত্র-জনতার আকাঙ্খাকে ধারণ করে ছাত্ররাজনীতির গুণগত ও কাঠামোগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা, ছাত্রদলের গৌরবোজ্জল অতীত, সংগ্রামী বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও ছাত্ররাজনীতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত বাংলাদেশ চাই যেখানে গণআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে, নির্বাচিত ও জবাবদিহিমূলক সরকার নিশ্চিত করবে জনগণের মালিকানা ও অংশীদারত্ব। রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফায় এই প্রত্যাশা পূরণের অঙ্গীকার রয়েছে যা সারাদেশে শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করছে ছাত্রদল।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বার্তা২৪.কম-কে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের কর্মতৎপরতা বাড়াতে সারাদেশে ছাত্রদলের ৩৮টা টিম কাজ করে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনে তরুণদের অংশীদারিত্ব কিভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়ে আমাদের এসব টিম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করছে। নির্বাচন, গণতন্ত্র নিয়ে তরুণরা কি ভাবছে তা আমরা তৃণমূল থেকে জানতে চাই। যদি বিএনপি ক্ষমতায় যায় তাহলে ৩১ দফার বাস্তবায়নের মাধ্যমে কিভাবে একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা হবে তারেক রহমানের এমন চিন্তা ভাবনা ও দর্শন তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তরুণদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মানসিকতা তৈরিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে ধানের শীষ তুলে দিচ্ছি। তবে আমাদের বার্তা হচ্ছে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা। তরুণরা যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দেবে, এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সারা দেশের ২ হাজারের অধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের টিম তাদের কাজ সম্পন্ন করেছে। ধাপে ধাপে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩১ দফার বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে।
গঠিত ৩৮ টিমকে মনিটরিং করছেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়া, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আমানউল্লাহ আমান।