জাপায় নিয়ম রক্ষার গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটি

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জাতীয় পার্টির লোগো

জাতীয় পার্টির লোগো

জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। তবে কাউন্সিল উপলক্ষে নিয়ম রক্ষার জন্য গঠনতন্ত্র সংশোধনে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিটি প্রধান ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়।

গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির আহ্বায়ক সুনীল শুভরায় বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, 'সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠনের দুদিন হয়েছে (২ নভেম্বর)। তিন সদস্যের এই কমিটিতে রয়েছেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম পাটোয়ারী, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাড. রেজাউল ইসলাম ভূইয়া। আমরা এখনো বসতে পারিনি। বসে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত গঠনতন্ত্রে তেমন কোনো সংশোধনের প্রস্তাব কিংবা দাবি নেই।'

দলের একজন নেতার একটি পদের দাবি রয়েছে। এ বিষয়ে গঠনতন্ত্রে কোনো সংশোধনী আনার পরিকল্পনা আছে কিনা? জানতে চাইলে সুনীল ‍শুভরায় বলেন, 'এ বিষয়টি আসলে জটিল। অনেক প্রেসিডিয়াম সদস্যই তাদের স্ব-স্ব জেলার সভাপতির পদে রয়েছেন। পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যানও একটি জেলার সভাপতি পদে রয়েছেন।'

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, 'এ বিষয়টি গঠনতন্ত্রে সংযোজন করার প্রয়োজন নেই। আমার মনে হয় এটা নীতিগতভাবে মেনে চললেই হয়। পুরোপুরি না মেনে চলা গেলেও সর্বোচ্চ চেষ্টার নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেই চলে।'

কমিটি গঠনের চিঠিতে বলা হয়েছে, কমিটি প্রয়োজনবোধে গঠনতন্ত্র সংশোধনীর প্রস্তাব প্রণয়ন করে চেয়ারম্যান বরাবরে পেশ করবে। যা জাতীয় কাউন্সিলে উপস্থাপনের জন্য প্রেসিডিয়াম সভায় অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হবে। গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটি যে সুপারিশ দেবে সেটি প্রেসিডিয়ামের সভায় অনুমোদিত হওয়ার পর, কাউন্সিল অধিবেশনে উত্থাপন করার রেওয়াজ রয়েছে।

জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে বেশিরভাগ ধারার তেমন কোনো প্রয়োগ দেখা যায় না। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ২০/১/ক ধারা। ২০১৬ সালে সংশোধনীর পূর্বে এই ধারাটি ৩৯ ধারার অন্তর্ভুক্ত ছিল। যে ধারায় পার্টির চেয়ারম্যানকে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

ধারায় বলা হয়েছে, 'চেয়ারম্যান প্রয়োজনবোধে প্রতিটি স্তরের কমিটি গঠন, পুনর্গঠন, বাতিল ও বিলোপ করতে পারবেন। চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির প্রতিটি পদে যেকোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ, যেকোনো পদ হতে অপসারণ ও যেকোনো ব্যক্তিকে তাহার স্থলাভিষিক্ত করতে পারবেন। এ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পার্টির পার্লামেন্টারি বোর্ডের দায়িত্ব গ্রহণ ও পালন করতে পারবেন। তবে শর্ত থাকে, উপরোক্ত ক্ষমতাসমূহ প্রয়োগের সময় তিনি প্রেসিডিয়ামের সঙ্গে আলোচনা করবেন।'

সর্বশেষ ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে দলের গঠনতন্ত্রের দু'টি বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়। নতুন করে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যান পদ সংযোজন করা হয়। এছাড়া পার্টির চেয়ারম্যানকে পদাধিকার বলে সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে অনুমোদন করা হয়। যদিও এই ধারার অপব্যবহার দেখা গেছে এরশাদের মৃত্যুর পর। ধারা অনুসরণ করা হলে বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার কথা ছিল জিএম কাদেরের।

কিন্তু রওশন এরশাদ হয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা। জিএম কাদের বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার জন্য চিঠিও দিয়েছিলেন স্পিকারকে। কিন্তু রওশন এরশাদ বেঁকে বসায় তা আর হয়ে ওঠেনি। জিএম কাদেরকে করা হয়েছে বিরোধীদলীয় উপনেতা।

তবে কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, কো-চেয়ারম্যান পদ দু'টি থেকে কমিয়ে একটি করা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। মূলত একটি কো-চেয়ারম্যান পদই করতে চেয়েছিলেন প্রয়াত এরশাদ। বয়সে ছোট জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করার পর রওশন বেঁকে বসলে বাধ্য হয়ে তাকেও সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান করেন। যা পরে ২০১৬ সালের কাউন্সিলে গঠনতন্ত্রে যুক্ত করা হয়।

এরশাদের মৃত্যুর পরে জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান হলে এখন পর্যন্ত কো-চেয়ারম্যান পদ ফাঁকাই রয়েছে। এখন যেহেতু পূর্বের সে প্রেক্ষাপট নেই। আবার সেই পদে বসানোর মতো পরিবার থেকে কেউ দাবিদারও নেই, বলা চলে আপাতত কাউকে সমকক্ষও দেখা যাচ্ছে না। সে কারণে এই পদটি বিলুপ্ত করার সম্ভাবনা দেখছেন কেউ কেউ।

যদিও সুনীল শুভরায় দাবি করেছেন, 'এ পদ বিলুপ্ত করার বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা ও সম্ভাবনার কথা তার জানা নেই।'