আওয়ামী লীগের সম্মেলন, প্রস্তুত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান



রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
সম্মেলনের মূল মঞ্চ, ছবি: সুমন শেখ

সম্মেলনের মূল মঞ্চ, ছবি: সুমন শেখ

  • Font increase
  • Font Decrease

রাত পোহালেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে দলটির প্রথম অধিবেশনস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সাজে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে দলের সাত দশকের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। নবীনদের জন্য সেখানে থাকছে সম্ভাবনাময় আগামীর বার্তা।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবারের সম্মেলন তেমন জাঁকজমকপূর্ণ হবে না বলে দলীয় নেতারা জানালেও ২১তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এখন সাজ সাজ রব।

সম্মেলনস্থলের নজরকাড়া সাজসজ্জা ও আলোর ঝলকানি, বিশাল বিশাল বিলবোর্ড, এলইডি বোর্ড, ব্যানার ফেস্টুন, বেলুনের সাজসজ্জাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা যে কারো নজর কাড়বে।

চলছে ফিনিশিং টাচ, ছবি: সুমন শেখ

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, সম্মেলনের প্রস্তুতি ঘিরে ব্যস্ত সংশ্লিষ্ট সবাই। চলছে ফিনিশিং টাচ। কোনো দিকে তাকানোর ফুরসৎ নেই। কয়েকশ’ শ্রমিক টানা তিন সপ্তাহ ধরে মঞ্চ ও মাঠ সাজাচ্ছেন। কেউ ব্যস্ত বিশাল প্যান্ডেলের নিচে কয়েক হাজার চেয়ার বসাতে, কারো ব্যস্ততা লাইট ফ্যান চেক করাতে, কেউ বা ব্যস্ত রং তুলি নিয়ে।

নৌকার আদলে তৈরি মূল মঞ্চের সামনের বিশাল প্যান্ডেলের কার্নিশ সাজানো হয়েছে বিশ্ব রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন অর্জনের চিত্র দিয়ে। মূল মঞ্চের ডান পাশে সামনে একটি ছোট মঞ্চ করা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হবে।

বিশাল এ কর্মযজ্ঞের তদারকিতে আছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। দফায় দফায় তাদের পরিদর্শন, দিক নির্দেশনা ও পরামর্শে সাজানো হয়েছে উদ্যান।

মঞ্চ ও সাজসজ্জা কমিটির আহ্বায়ক এবং দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বার্তা২৪.কমকে বলেন, আশা করি, এবারের সম্মেলনে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জমায়েত হবে। তাই আমরাও চেষ্টা করেছি সাধ্যমত আয়োজন করতে। সাজসজ্জায় আওয়ামী লীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও আমাদের নেত্রীর অর্জনগুলো ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। সম্মেলনে আসা কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের জন্য শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের ব্যবস্থাও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে মূল মঞ্চ, ছবি: সুমন শেখ

পাল তোলা নৌকায় মূল মঞ্চ

এবারের সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ মূল মঞ্চ। ১০২ ফুট দীর্ঘ, ৪০ ফুট প্রশস্ত মঞ্চটি নৌকার আদলে তৈরি। মঞ্চের পেছনের ‘জায়ান্ট ব্যানারে’ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ছবি ছাড়াও ঠাঁই পেয়েছে জাতীয় চার নেতা- তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এম এ মনসুর আলী এবং এএইচ এম কামারুজ্জামানের ছবি। এছাড়া আছে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম চার নেতা- মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের ছবি।

মঞ্চের সামনে রয়েছে বাঙালির গৌরব ও অহংকার পদ্মাসেতুর রেপ্লিকা। তাতে রয়েছে খরস্রোতা পদ্মার বুকে ৪০টি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সেতুটির সামনের বিশাল জলরাশিতে ভেসে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট নৌকা। এক পাশে জেগে ওঠা চরে রাখা হয়েছে কাশবন। এর মধ্যে নোঙর করে রাখা হয়েছে বিশালাকার একটি পাল তোলা নৌকা। তাতে আবার জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতি।

সম্মেলন মঞ্চে রয়েছে পদ্মা সেতুর রেপ্লিকা, ছবি: সুমন শেখ

৮১ সদস্যের মধ্যে চারটি পদ শূন্য থাকায় মূল মঞ্চে চেয়ার থাকবে ৭৭টি। মঞ্চের সামনে নেতাকর্মীদের জন্য চেয়ার থাকবে ৩০ হাজার। এছাড়া সম্প্রসারিত মঞ্চে ১৫ হাজার চেয়ার দেওয়া হবে। ২৮টি এলইডি পর্দায় দেখানো হবে সম্মেলনের পুরো অনুষ্ঠান।

প্যান্ডেলের সামনে বাম পাশে রয়েছে আরেকটি নৌকা। অপেক্ষাকৃত ছোট সে নৌকায় দাঁড়িয়ে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা

সম্মেলনকে ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশের এলাকা নিরাপত্তার চাদরে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এরই মধ্যেই কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ভেন্যুতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। মূল মঞ্চ ও এর আশেপাশের নিরাপত্তা তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া সম্মেলনের দিন ভেন্যুতে আওয়ামী লীগের কয়েকশ’ নেতাকর্মী শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকবেন।

নেতাকর্মীদের প্রবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাঁচটি গেট থাকবে। শিখা চিরন্তনী গেটটি ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।

সম্মেলনস্থল প্রস্তুত করতে তদারকি করছেন নেতারা, ছবি: সুমন শেখ

সিআরআইয়ের ভিন্ন আয়োজন

আওয়ামী লীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিভিন্ন নিদর্শন নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের হাজির হয়েছে আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)।

স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগের দীর্ঘ পথ চলার বিভিন্ন ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে ১০টি স্থাপনা প্রদর্শন করছে তারা। যা সম্মেলনের জৌলুস আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

১০টি স্থাপনা হলো-‘ওয়াক উইথ দ্যা লিডার’, ‘রোড টু টোয়েন্টিফার্স্ট কাউন্সিল’, ‘লাইট আফটার ডার্কনেস’, ‘ফেইস অফ এএলবিডি’, ‘এএলবিডি রিজিওনাল ফুটপ্রিন্টস’, ‘এলবিডি-ইনফ্রন্ট অফ আ মিরর’, ‘কুওটস ফর ফিউচার লিডারশিপ’, ‘আ নিউ ইরা-পার্ট ওয়ান’ এবং ‘আ নিউ ইরা-পার্ট টু’।

এছাড়া ‘তারুণ্যের ভাবনায় বাংলাদেশের রাজনীতি’ নামে একটি মতবিনিময় অনুষ্ঠানও আয়োজন করা হবে সিআরআইয়ের পক্ষ থেকে। ২৫০ জন তরুণ-তরুণীর অংশগ্রহণে কাউন্সিলের প্রথম দিন অনুষ্ঠানটি সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত চলবে।

চলছে ফিনিশিং টাচ, ছবি: সুমন শেখ

থাকছেন না কোনো বিদেশি অতিথি

সামনে মুজিববর্ষ। তখন অনেক বিদেশিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এজন্য আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলনে বিদেশি কোনো অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ অন্যসব পেশার বিশিষ্টজনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে অতিথিদের তালিকা তৈরি করে সম্মেলনের কার্ড পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত গণমাধ্যম ও সিনিয়র সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানোর তথ্য নিশ্চিত করা যায়নি।

দলটির সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য এবং অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাসিম জানান, বিমানবন্দর, বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশনসহ ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে বিলবোর্ড ও ব্যানারের মাধ্যমে অতিথি ও কাউন্সিলরদের স্বাগত জানানো হবে। সম্মেলনের আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছে দাওয়াতপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

পাটের ব্যাগে উপহার

সম্মেলনে আগত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের পাটের ব্যাগে উপহার দেওয়া হবে। এতে থাকবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেসব উন্নয়ন হয়েছে, তার তালিকা সম্বলিত একটি কার্ড থাকবে। একই সঙ্গে থাকবে দু’টি সিডি। একটিতে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন এবং অন্যটিতে বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র, একটি প্যাড ও একটি কলম থাকবে পাটের ব্যাগে।

সম্মেলনের প্রতিনিধিদের মধ্যে ২৫ হাজার পাটের ব্যাগ বিতরণ করা হবে জানিয়ে দলের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, প্রতিটি ব্যাগে আওয়ামী লীগের ইতিহাস সম্বলিত স্মরণিকা, শোকপ্রস্তাব, দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ভাষণ এবং গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র থাকবে। এছাড়া সভানেত্রী শেখ হাসিনার দেড়শ’ আলোকচিত্র সম্বলিত একটি অ্যালবামও দেওয়া হবে।

এছাড়া ২১তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ওয়েব পেজ উদ্বোধন করেছে প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটি। ওয়েব পেজের ভিডিও অংশে সম্মেলন লাইভ দেখানো হবে।

চলছে ফিনিশিং টাচ, ছবি: সুমন শেখ

নৃত্য পরিবেশনায় শিবলী-নীপা

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবে দেশ বরেণ্য শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ সময় নাচ পরিবেশন করবেন শিবলী মোহাম্মদ ও শামীম আরা নীপা।

সাংস্কৃতিক পর্বে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা গান গাইবেন। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কোনো ‘থিম সং’ থাকছে না। আধা ঘণ্টার মতো হতে পারে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

মোরগ-পোলাও দিয়ে আপ্যায়ন

সম্মেলনের প্রথম দিন ২০ ডিসেম্বর ৫০ হাজার নেতাকর্মীর দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। খাবারের ব্যাগে থাকবে মোরগ-পোলাওয়ের সঙ্গে একটি করে ডিম, ফিরনি ও একটি পানির বোতল। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগতভাবেও খাবারের আয়োজন থাকবে।

সম্মেলন উপলক্ষে ১০০ চিকিৎসক নিয়ে ১২টির মতো প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র প্রস্তুত করছে স্বাস্থ্য উপকমিটি।

   

আরও ৫৫ নেতাকে বহিষ্কার করল বিএনপি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের আরও ৫৫ জন নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) চার জন ও বুধবার (১৫ মে) ৫১ জনকে বহিষ্কার করা হয়।

বৃহস্পতিবার দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

গত ৮ মে থেকে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু হয়। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নেতাকর্মীরা। এ কারণে প্রথমে তাদের শোকজ এবং পরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বহিষ্কার করছে দলটি। তবে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে ফিরে আসায় কয়েকজনের বহিষ্কারাদেশ তুলেও নেওয়া হয়েছে।

প্রথম পর্বে ৮০ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ মিলিয়ে অন্তত ১৪৯ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করে দলটি। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২০৪ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

;

সর্বস্ব খুইয়ে স্বদেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা ও একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন



রুহুল আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
সর্বস্ব খুইয়ে স্বদেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা ও একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন

সর্বস্ব খুইয়ে স্বদেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা ও একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন

  • Font increase
  • Font Decrease

সেদিন ছিল কালবৈশাখীর তাণ্ডব। সকাল থেকেই প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি, আছে সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা। তবে সব কিছু উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে বিকাল সাড়ে চারটায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে নিয়ে কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে অবতরণ করে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ৭০৭ বোয়িং বিমানটি।

মুষলধারার বৃষ্টি-বাদলা উপেক্ষা করে গণতন্ত্রকামী লাখ লাখ মানুষের মিছিল এসে থামে বিমানবন্দরের সামনে। মানুষের স্রোতে ভেঙে পড়ে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রানওয়ের দুই পাশে লাখ লাখ মানুষ, তার মাঝে পদ্ম হয়ে নেমে আসলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

বঙ্গবন্ধুকন্যা যখন নেমে আসেন বিমান থেকে, তার চোখে পানি, সে পানি মুছে দিচ্ছে বৃষ্টি হয়ে নেমে আসা আকাশের কান্না। সেই সাথে 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে চারপাশ। কালো ডোরাকাটা তাঁতের মোটা শাড়ি পরা শেখ হাসিনা দীর্ঘ নির্বাসন জীবন কাটিয়ে আবারও পা রাখেন দেশের মাটিতে। নেমে এসে মিশে গেলেন মানুষের স্রোতে।

সর্বস্ব হারিয়ে মেয়ে পুতুলকে নিয়ে সেদিন দেশে ফিরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তবে বাবা-মা, ভাইদের হারালেও তিনি যে একা নন বরং পুরো দেশই তার পরিবার, সে কথা মনে করিয়ে দিতে ভুল করেনি উপস্থিত জনতা। সেদিনের সে জনতা ‘পিতৃহত্যার বদলা নিতে/লক্ষ ভাই বেঁচে আছে, শেখ হাসিনার ভয় নাই/রাজপথ ছাড়ি নাই' এমনই নানা স্লোগানে শেখ হাসিনাকে বরণ করে নেন একজন বোন হিসেবে, একজন পরিবারের পরম আপনজন হিসেবে।

একদিকে কালবৈশাখীর চোখরাঙানি অন্যদিকে লক্ষ জনতার একবার বঙ্গবন্ধুরকন্যাকে দেখার তৃষ্ণা। এর মধ্য দিয়ে সেদিনের ঢাকা শহর হয়ে উঠে এক স্তব্ধ নগরী। যে কারণে বিমানবন্দর থেকে বনানী হয়ে শেরে বাংলা নগরে আসতে সময় লেগে যায় সাড়ে তিন ঘণ্টারও বেশি। কিছু দুষ্কৃতিকারীর হাতে পরিবারের সবাইকে হারালেও প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে ওঠেননি তিনি। বরং হাঁটলেন পিতার দেখানো পথে। তাই তো সংবর্ধনা মঞ্চে দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশ্যে কন্যা তার বাপের মত করেই বললেন, 'পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই।’

আপ্লুত শেখ হাসিনা সেদিন আরও বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছু নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী কর্মী হিসেবে আপনাদের পাশে থাকতে চাই। জীবনের ঝুঁকি নিতেই হয়, মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।’

সেই যে প্রতিজ্ঞা, পিতার দেখানো স্বপ্ন পূরণের প্রতিজ্ঞা, সে প্রতিজ্ঞা পূরণে দেশে ফিরেই হাল ধরেন আওয়ামী লীগের। নানা লড়াই, সংগ্রাম ও প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে শক্তিশালী করেন দলকে। শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে আস্থা ফিরিয়ে আনেন নেতাকর্মীদের মাঝে। সে আস্থার সুফল পান ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। বিজয়ী হয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

ক্ষমতায় এসেই মনোযোগী হন দেশ গঠনে, বাবার স্বপ্ন পূরণে। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মাত্র পাঁচ বছরে খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত করেন। করেন গঙ্গা চুক্তি। কোন তৃতীয় পক্ষ ছাড়ায় অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনতে করেন শান্তি চুক্তি। এছাড়াও বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব জায়গায়, জনগণের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে গ্রহণ করেন নানা কার্যক্রম।

তবে ২০০১ সালের নির্বাচনে আবারও ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। এরপর আবারও ঘটে ১৯৭৫ সালের মত আরেকটি নিকৃষ্ট ঘটনা। তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে হয় গ্রেনেড হামলা। তবে তার সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ান নেতাকর্মীরা। প্রাণে বেঁচে যান তিনি। তবে নিহত হন দলটির ২৪ জন নেতাকর্মী।

তবে এসব কিছুতেও দমে যাননি জাতির পিতার কন্যা। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় পিছপা হননি এক পাও। তাই তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে 'মাইনাস-টু ফর্মুলা'ও টলাতে পারেনি তাকে। সব ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আবারও বিপুল ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়ে দ্বিতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তারপর থেকে টানা ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে জাতির পিতার কন্যার নেতৃত্বে দেশ চালানোর দায়িত্বে আছে আওয়ামী লীগ।

এই সময়ের মধ্যে তার নেতৃত্বের কারণেই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের। বাংলাদেশ শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসাসেবা, তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি, অবকাঠামো, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রেই উন্নতি লাভ করেছে। হয়েছে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরে সব বাধা অতিক্রম করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যথার্থ বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলছেন তিনি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের মতো মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। মহাকাশে উড়িয়েছেন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট- যা ছিল এক সময় কল্পনারও অতীত। স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ গড়ার।

;

আওয়ামী লীগ কারও দয়ায় ক্ষমতায় আসেনি: নানক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪. কম, ঢাকা
আওয়ামী লীগ কারো দয়ায় ক্ষমতায় আসেনি: নানক

আওয়ামী লীগ কারো দয়ায় ক্ষমতায় আসেনি: নানক

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কোনোদিন কারও দয়ায় ক্ষমতায় আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

সেমিনারের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম। 

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কোনোদিনও কারো দয়ায় ক্ষমতায় আসেনি। আওয়ামী লীগ ৭০ এর নির্বাচনে পাকিস্তানি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, জেনারেল আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে লড়াই করে জনতার জয়ের মধ্য দিয়ে ৭০’র নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জেনারেল জিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে নিরবিচ্ছিন্ন লড়াই করেছে।

তিনি আরও বলেন, হাজার হাজার সামরিক অফিসারকে আপনাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান হত্যা করেছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আপনারা ক্ষমতায় থাকাকালীন গঙ্গা পানির চুক্তি সমাধান করেননি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৪৪ হাজার কিউসেক পানি অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধুর রক্ত যার ধমনীতে আছে, সেই রক্তের উত্তরাধিকার শেখ হাসিনা স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে কারো সঙ্গে কোনো আতাত করে না।

বিএনপির লজ্জা নেই এমন মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ওরা বেহায়া, ওদের লজ্জা নেই। মির্জা ফখরুল আপনারা যা বলবেন বুঝে শুনে বলবেন। ইট মারলে পাটকেল খাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবেন।

বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সভাপতি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া, দৈনিক বাংলা ও নিউজবাংলা২৪ এর নির্বাহী পরিচালক এবং বঙ্গবন্ধু গবেষক মো. আফিজুর রহমান, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী প্রমুখ।

;

শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের খাবার বিতরণ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এতিমখানায় খাবার বিতরণ করেছে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ-কমিটি।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) তেজগাঁওয়ের রহমতে আলম ইসলাম মিশন এতিমখানায় সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে এসব খাবার বিতরণ করে দলটি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এসময় অতিথিরা বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছিলো দুষ্কৃতকারীরা। তবে সে সময় জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসেছিলেন। তিনি ফিরে এসেছিলেন বলেই আজকে দেশের এতো উন্নয়ন। শৃঙ্খল মুক্ত গণতন্ত্র। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন। তিনি ফিরে এসেছেন বলেই আজকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর হবার স্বপ্ন দেখছি।

আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রমুখ।

;