বাজেটে সরকার স্বাস্থ্য খাতকে অবমূল্যায়ন করছে: ফখরুল

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকার স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় অসহায়ত্ব এখন চরম সীমানায় গিয়ে ঠেকেছে। বর্তমানে অক্সিজেন সংকট চলছে সব হাসপাতাল। অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই। কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে। এদিকে প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন হলো সরকার নীরব কেন? সরকারের ভূমিকা কী? তদুপরি আগামী বাজেটে সরকার স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ মুহূর্তে মানুষের জীবন বাঁচানোই সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়ার কথা। সরকার সেই স্বাস্থ্য খাতকেই অবমূল্যায়ন করছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৯ জুন) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

ফখরুল বলেন, করােনা শনাক্তের তৃতীয় মাসে এসে ঊর্ধ্বমুখী করােনা সংক্রমণের কারণে অনিশ্চিত এক বিভীষিকাময় শঙ্কায় নিমজ্জিত হয়েছে জাতি। করােনা সংক্রমণ রােধ করতে না পারলে কোনোভাবেই অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য খাতে এহেন ঝুঁকি থাকলে অর্থনীতির স্বস্তির কোনো অবকাশ নেই। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে আমরা মনে করি ৩ বছর মেয়াদি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার আলােকে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে মধ্য মেয়াদি বাজেট কাঠামােয় মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির সমন্বয়ে নতুন ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। অর্থনীতির ক্রমহ্রাসমান সংকোচন রােধে কর্মসংস্থান ধরে রাখতে হবে, আয় সংকোচন রােধ করতে হবে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, এই সংকটে মানুষের সার্বজনীন মৌলিক প্রয়ােজনীয়তা যেমন - খাদ্য, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, বাসস্থান ইত্যাদি প্রদানে সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়েছে। পুনরুদ্ধার প্যাকেজ ও মুদ্রানীতি সহজ করাসহ কিছু নীতি পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। ‘সামাজিক নিরাপত্তা জাল’ নামে কিছু কর্মসূচি থাকলেও তা নিতান্তই অপ্রতুল। উপরন্তু এই কর্মসূচিটি উলঙ্গভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। জনসেবার খাতগুলােতে বরাদ্দ দিন দিন কমেছে। কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের দুর্বলতাও করােনাকালে উন্মোচিত হয়েছে।

করােনার প্রভাবে ভােগ, চাহিদা, সরকারি ব্যয়, আমদানি ও রফতানির সূচক দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে। ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যেতে বাধ্য। কর্মহীন মানুষের আয় কমে যাওয়ায় কেনাকাটা কমে গেছে। সঞ্চয় হ্রাস পাচ্ছে, ফলে বিনিয়ােগও কমে যাবে। করােনার কারণে মার্চ মাসে প্রবাসী আয় ১২ শতাংশ কমেছে। দেশের ভেতরে ও বাইরে এভাবে আয় কমে যাওয়ায় ভােগ-ব্যয়ও অনেক কমে যাবে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর প্রভাব প্রকটভাবে দেখা দেবে। আমাদের দেশে ব্যক্তিখাতের ভােগ-ব্যয় জিডিপির ৭০ শতাংশ। এদিকে ৬ মাসে রফতানি আয় কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। গণপরিবহন সংকটে কৃষকও পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। ফলে পরবর্তী মৌসুমে এরা উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। বিভিন্ন খুদে ব্যবসায়, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প, পর্যটন ও সেবা খাতসহ সকল প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কার্যক্রম অচল হয়ে আছে। সঞ্চয়হীন মানুষ ও মন্দাক্রান্ত সেক্টরকে সরকারকেই অর্থ প্রদান করতে হয়। যেহেতু মন্দাকালীন বিনিয়ােগ, ভােগব্যয় ও রফতানি কমে যায়, সরকারকে সামষ্টিক চাহিদা বাড়াতে সরকারি বিনিয়ােগ বাড়াতে হবে। সরকারি বিনিয়ােগ বাড়ালে মােট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা মনে করি আগামী বছর বাজেট প্রণয়নে- আমরা বিগত ৪ এপ্রিল জরুরি ভিত্তিতে নগদ সহায়তা প্রদান, তৈরি খাদ্য ও নিত্যপ্রয়ােজনীয় পণ্য সামগ্রী বিতরণ, ছিন্নমূলদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খােলা, গার্মেন্টস ও রফতানিমুখী শিল্প, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্প, এসএমই খাত, কৃষি খাত, খাদ্য সংগ্রহ এবং প্রবাসীদের জন্য আর্থিক সহায়তা সাপাের্ট প্রদান, স্বাস্থ্য খাতের জরুরি উন্নয়ন ও অপ্রত্যাশিত খাত ইত্যাদি ক্ষেত্রে ৮৭ হাজার কোটি টাকার যে জরুরি আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ প্রস্তাব করেছিলাম সেটিকে আগামী বাজেট প্রণয়নের প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচনায় নিতে হবে।

এ সংকটকালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে জোর না দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষা ও জীবিকার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে বলেও জোর দাবি জানান তিনি।