কৃত্রিম মঙ্গলগ্রহে বছর কাটিয়ে ফিরে এলেন নাসার ৪ নভোচারী
নাসার তৈরি কৃত্রিম মঙ্গলগ্রহে এক বছর সময় কাটিয়ে পৃথিবীর বুকে নেমে সবাইকে ‘হ্যালো’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন নাসার চার নভোচারী।
মঙ্গলে সীমিত খাদ্যে সুস্থ থাকা, সবজি উৎপাদন এবং নিজেদের তৈরি বর্জ্য পুনর্ব্যহারযোগ্য করার এক জটিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে এই চার নভোচারী কৃত্রিম মঙ্গলগ্রহে ৩শ ৭৮ দিন কাটান।
২০২৩ সালের ২৫ জুন তারা কৃত্রিমভাবে তৈরি মঙ্গলগ্রহের আবহে প্রবেশ করেন। এসময় তারা পৃথিবী, পরিবারের সদস্য থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেন এবং ৬ জুলাই কৃত্রিম আবহ থেকে মু্ক্ত করার আগে ২২ মিনিট পৃথিবীর সঙ্গে তাদের সবরকম যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়।
এক বছরের মিশন শেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শনিবার বিকেল ৫টায় তাদের কৃত্রিম মঙ্গলগ্রহের দরজা খুলে দেওয়া হয়।
এসময় নভোচারী কেলি হাসটন হাউসটন জনসন স্পেস সেন্টারের অন্যান্য নভোচারীদের সামনে প্রথম বেরিয়ে সবাইকে ‘হ্যালো’ বলেন।
মঙ্গল গ্রহের কৃত্রিম আবহে থাকা নভোচারী ৪ জন হলেন- কেলি হাসটন, আনকা সেলারাইউ, রস ব্রকওয়েল এবং নাথান জোনস। এই ৪ নভোচারী ‘ক্রু হেলথ অ্যান্ড পারফরম্যান্স এক্সপ্লোরেশন অ্যানালগ প্রজেক্ট’ (সিএইচএপিইএ) মিশনের অংশ হিসেবে একবছর সময় কাটান। এ বিষয়ে নভোচারী কেলি হাসটন উপস্থিত নভোচারীদের উদ্দেশে বলেন, সবাইকে ‘হ্যালো’ বলাটি ছিল ভীষণরকম আনন্দের।
চার নভোচারীর একজন নাথান জোনস এই মিশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং পেশায় একজন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করেন। জোনস বলেন, এই ৩শ ৭৮ দিন খুব তাড়াতাড়ি পার হয়ে গেছে।
কৃত্রিম এই মঙ্গলগ্রহটির আকার ১৭ হাজার ফুট (১ হাজার ৫শ ৭৯ স্কয়ার মিটার)। সিএইচএপিইএ মিশনের উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, মঙ্গলগ্রহে বিচরণ বা ‘মার্সওয়াকস’। এই মিশনের একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, মঙ্গলগ্রহের আবহে সবজি চাষ করা, সেখানে আবাসিক হিসেবে অভ্যস্ত হওয়া এবং সেখানে যেসব যন্ত্রপাতি থাকবে, তার সংরক্ষণ করা।
এই কৃত্রিম মঙ্গলগ্রহে সত্যিকারে মঙ্গলগ্রহের আবহ তৈরি করা হয় এবং ৩শ ৭৮ দিন চার নভোচারীকে পৃথিবীর সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয় এবং তাদের কৃত্রিম মঙ্গলগ্রহ থেকে মুক্ত করার আগে ২২ মিনিট নাসার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। যদিও তাদের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হয় নাসার পক্ষ থেকে।
নাসা থেকে জানানো হয়, এই ৪ নভোচারীর দুইজন ফের এই মিশনে ফিরে যাবেন এবং মঙ্গলগ্রহের আবহে শারীরিক ও মানসিক এবং আচরণে এর প্রভাব কী হয়, তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।
নাসার জনসন স্পেস সেন্টারের উপপরিচালক স্টিভ কয়েরনার বলেন, এই মিশনে তাদের নজর ছিল নভোচারীদের পুষ্টিগত দিক এবং তার প্রভাব খতিয়ে দেখা। এটি ছিল বিজ্ঞানের জন্য জটিল একটি অধ্যায় যে, সত্যিকারভাবে মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার জন্য নভোচারীদের প্রস্তুত করা।
এ বিষয়ে ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার ব্লকওয়েল বলেন, এ মিশন আমাকে দেখিয়েছে, পৃথিবীর মানুষের স্বার্থে কীভাবে বসবাস করা যায়, তার গুরুত্ব উপলব্ধি করা।
ব্লকওয়েল বলেন, আমাকে এ ধরনের চ্যালেঞ্জিং মিশনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ায় আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এবং আগামী ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমি খুবই উৎফুল্ল অনুভব করছি।