বাংলাদেশ এক্সপ্রেস নাহিদ রানা!
বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে বল হাতে আলোচনায় ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার জয়ডেন সিলস। ১৫.৫ ওভারের মধ্যে তার ১০ ওভারই ছিল মেডেন। মাত্র ৫ রান খরচা করেন। শিকার করেন ৪ উইকেট। সেই পিচে খানিকবাদে বল হাতে আরো বড় আলোচনার ঝড় তুললেন নাহিদ রানা। এই বাংলাদেশি পেসারের গতি আর বাউন্সে দিশেহারা পুরো ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। তৃতীয়দিনের সকালের শুরুতে থেকে শেষ পর্যন্ত জ্যামাইকা টেস্টে ধারাভাষ্যকার থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শক সবারই মুখে কেবল একটাই নাম, একটাই উচ্চারণ- নাহিদ রানা!
টিভি ধারাভাষ্যকার তো তার নতুন নামও দিয়ে দিলেন- ‘বাংলাদেশ এক্সপ্রেস!’ নিয়মিত ভাবেই তিনি ওভারে ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করেন। তার গতি, বাউন্স, সুইং এবং স্লোয়ারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা হার মানেন। যে স্লোয়ার ফুলটসে আলঝেরি জোসেফকে আউট করেন তাতেই স্পষ্ঠ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা তাতে ঠিক মতো বুঝে উঠতেই পারছে না!
বল হাতে গতির ঝড় তুলে নাহিদ রানা ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংস আটকে দিলেন মাত্র ১৪৬ রানে। বাংলাদেশের চেয়ে ১৮ রানে পিছিয়ে থাকলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে। দ্বিতীয় ইনিংসে মেরে কেটে ব্যাট চালিয়ে বাংলাদেশ তুলেছে ৫ উইকেটে ১৯৩ রান। ম্যাচে লিড এখন বাংলাদেশের ২১১ রানের। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪৬ রানে আটকে রাখার কৃতিত্বের দিনে নাহিদ রানা শিকার করলেন ৫ উইকেট। ৬১ রানে ৫ উইকেট। টেস্টে এটাই তার ইনিংসে পাঁচ উইকেট অর্জন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেও প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই কৃতিত্বের কারিগর তিনি।
সিরিজের প্রথম টেস্টে নাহিদ রানা একাদশে জায়গা পাননি। জ্যামাইকায় খেলছেন শরিফুল ইসলামের জায়গায়। এই টেস্টে তৃতীয়দিনের নায়ক নাহিদ রানা দিন শেষে উইকেট এবং নিজের সাফল্য প্রসঙ্গে বলছিলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে এই উইকেটে বেশিকিছু ট্রাই না করে উইকেট টু উইকেট বোলিং করলেই সাফল্য মিলবে। ব্যাটসম্যান যাতে খেলার জন্য তেমন রুম না পায় সেটা নজরে রাখতে হবে। ব্যাটসম্যানরা এমন উইকেটে রান পাওয়ার জন্য অনেককিছু ট্রাই করবে। তখন তাদের সেই দুর্বলতাকে কাজে লাগাতে হবে।’
২১১ রানের লিডে এখন বাংলাদেশ। এখনো হাতে জমা ৫ উইকেট। মুমিনুল হক এখনো ব্যাট হাতে নামেননি। স্যাবেইনা পার্কে শেষ ইনিংসে রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ২১১ রানের। বাংলাদেশ চতুর্থদিন সকালে এই স্কোরের সঙ্গে আরো কিছু রান যোগ করবে নিশ্চয়ই। নিশ্চিতভাবেই এই টেস্ট ম্যাচে এখন বাংলাদেশ চালকের আসনে। সেই প্রসঙ্গে নাহিদ রানা বলছিলেন, আমরা এখন ভালো অবস্থানে আছি। লিড যদি আমরা আড়াই’শ রানের ওপর নিতে পারি তাহলে আরো ভালো হবে। চতুর্থদিনে এখানে ব্যাটিং করা একটু কঠিন হবে। উইকেটে আনইভেন বাউন্স থাকবে। স্পিনেও টার্ন থাকবে। আশা করছি চতুর্থদিন থেকে আমরা ভালো কিছু পাবো।’
ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট পাওয়ার আনন্দ প্রসঙ্গে এই বোলার বলছিলেন, ‘প্রথমে শুকরিয়া আদায় করছি, আলহামদুল্লিাহ। আমি বেশিকিছু ট্রাই করিনি। শুধু চেষ্টা ছিল ব্যাটসম্যানকে খেলার জন্য তেমন রুম না দিয়ে বল করার চেষ্টা করেছি। পরিস্থিতি বুঝে উঠে সেই অনুযায়ী বোলিং করেছি।’
জ্যামাইকা টেস্টের পরিস্থিতি বলছে বাংলাদেশ এখন শক্তিশালী অবস্থানে। এই ম্যাচে জয় এবং টেস্ট সিরিজ ড্র’য়ের একটা স্বপ্ন নিয়েই চতুর্থদিন শুরু করবে বাংলাদেশ।