মেঘ পাহাড়ের মেঘালয়



এটিএম মোসলেহ উদ্দিন জাবেদ
মেঘ পাহাড়ের মেঘালয়

মেঘ পাহাড়ের মেঘালয়

  • Font increase
  • Font Decrease

বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা বলেছিলেন, ভ্রমণ প্রথমে তোমাকে নির্বাক করে দেবে তারপর তোমাকে গল্প বলতে বাধ্য করবে। ভ্রমণ প্রিয় মানুষ আমি, সময় সুযোগ পেলে বেরিয়ে পড়ি পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে ও অজানাকে জানতে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২০ এবং ২১ তারিখ শুক্র ও শনিবার দুই দিনে আমি আমার স্কুল জীবনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু (পিপলু) ও তার একজন সহকর্মী (আজাদ) মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম মেঘালয় ঘুরতে যাবো। যেহেতু আমাদের তিন জনেরই আগে থেকেই ইন্ডিয়ান ভিসায় ডাউকি পোর্ট এড করা ছিলো। তাই মাত্র এক সপ্তাহের সিদ্ধান্ত আমরা ট্রাভেল টেক্স, ডলার এনডোর্সমেন্ট করাসহ প্রয়োজনীয় কাজকর্ম শেষ করে ভ্রমণের প্রস্তুতি নিয়েছি। এখানে উল্লেখ্য যে, আমরা আমাদের এই ভ্রমণের রির্টান পরিবহন ব্যবস্থাপনা বিশেষ করে সিলেট থেকে তামাবিল বর্ডার যাওয়া-আসার মাইক্রোবাস ও ডাউকি বর্ডার থেকে মেঘালয়ে দুই দিন বেড়ানোর প্রাইভেটকার আগে থেকেই আমাদের স্কুল জীবনের আরেক বন্ধু ও সিলেটের বাসিন্দা জুলহাসের মাধ্যমে ঠিক করে রেখেছিলাম।

পরিকল্পনামত আমরা ১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৫০ মিনিটে এনা পরিবহনের ভলবো বাসে রওনা করলাম মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে। পিপলু যেহেতু উত্তরা থাকে তাই সে উঠলো উত্তরা থেকে। আর পিপলুর সহকর্মী আজাদ অফিসের কাজে আশুগঞ্জ ছিলেন বিধায়, উনি বৃহস্পতিবার বিকেলেই সিলেট গিয়ে রাতে হোটেলে ছিলেন। আমরা ভোর ছ’টায় পৌঁছে গেলাম সিলেট বাস টার্মিনালে। সেখান থেকে একটা সিএনজিচালিত অটো যোগে আমরা চলে আসলাম নুরজাহান হোটেলে যেখানে আজাদ উঠেছে। আজাদ আগে থেকেই হোটেলে থাকায় আমার আর পিপলুর জন্য ভালোই হয়েছে, এসে ভালোভাবে ফ্রেশ হতে পারলাম। এর মধ্যে মাইক্রোবাসের ড্রাইভার সাহেব হোটেলের সামনে এসে ফোন দিয়ে জানালো তিনি হাজির। এই ড্রাইভার সাহেব আমাদের আজ তামাবিল বর্ডারে নিয়ে যাবে এবং আগামীকাল বিকেলে তামাবিল থেকে সিলেটে ফিরিয়ে আনবে। আমরা হোটেল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে সকালের নাস্তা করার জন্য চলে আসলাম সিলেটের বিখ্যাত পানসী রেস্টুরেন্টে। এই সকালে পানসীতে কানায় কানায় পূর্ণ মানুষজন। বেশির ভাগই হচ্ছে সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটক। নাস্তা সেরে আমরা রওনা করলাম তামাবিল বর্ডারের উদ্দেশ্যে। সিলেট শহর থেকে ৫৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তামাবিল বর্ডার। পথে চলতে চলতে ভোরের কোমল প্রকৃতি, চা বাগান, কাজে বের হওয়া মানষের আনাগোনা দেখতে দেখতে আমরা সোয়া নয়টার সময় পৌঁছে গেলাম তামাবিল স্থলবন্দরে। পৌঁছে দেখি মেঘালয়গামী অনেক বাংলাদেশি টুরিস্ট। এখানে উল্লেখ্য তামাবিল ও ডাউকি বর্ডারে ইমিগ্রেশন কর্ম চলে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

মেঘালয়

গাড়ি থেকে নেমে ফরম সংগ্রহ করে ইমিগ্রেশনের জন্য লাইনে দাঁড়ালাম। মিনিট পনেরোর মধ্যে ইমিগ্রেশন শেষ করে কাস্টমস ক্লিয়ারেসের জন্য আবার লাইনে দাঁড়ালাম। তামাবিল স্থলবন্দরে কাস্টমসের কার্যক্রম ম্যানুয়াল, লাইন খুব ধীরে এগুচ্ছিলো। এর মধ্যে মেঘালয়ের ড্রাইভার আলিম মজুমদার হোয়াটসঅ্যাপে কল করে জানালো সে ডাউকি ইমিগ্রেশন অফিসের পাশে গাড়ি পার্কিং করে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা কাস্টমস শেষে বিজিবি চেক শেষে পায়ে হেঁটে ডাউকি প্রবেশ করে প্রথমে বিএসএফ চেক সেরে চলে গেলাম ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিসে। সেখানকার কার্যক্রমও ম্যানুয়াল। বেশ সময় নিয়ে ইমিগ্রেশন শেষ করে আমাদের নির্ধারিত গাড়িতে উঠে রওনা করলাম। ড্রাইভার আলিম মজুমদার খুব আন্তরিক ও চমৎকার মানুষ। তার বাসা শিলং শহরে, সে বাংলা, হিন্দি, খাসিয়া, আসামীয়, ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে পারে। সে আমাদেরকে সব বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতো এবং পুরো দুদিন আন্তরিকতা ও আনন্দের সাথে ঘুরালো। আমি তার ফোন নম্বর (+৯১৯৪৮৫১৬৪৯৩৯) দিয়ে দিলাম। এখানে উল্লেখ্য, যারা শেয়ার জিপে করে ঘুরতে যান তাদের ডাউকি বর্ডার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পায়ে হেঁটে এসে জিপস্ট্যান্ড থেকে গাড়িতে উঠতে হয়।

মেঘের রাজ্য মেঘালয়। বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি প্রদেশ। এই রাজ্যের উত্তর ও পূর্ব দিকে আসাম রাজ্য এবং দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র অবস্থিত। মেঘালয় উত্তর-পূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টার রাজ্যগুলির অন্যতম। শিলং হচ্ছে তার রাজধানী। শিলংকে বলা হয় প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৪৯০৮ ফুট উচ্চতায় শিলংয়ের অবস্থান। খাসিয়া এবং গারো প্রধানত এই দুই জনগোষ্ঠীর বসবাস এই রাজ্যে। মেঘালয় ভারতের তিনটি খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যের মধ্যে একটি। রাজ্যের ৭৫% মানুষ খ্রিস্টধর্মের অনুগামী। বেশিরভাগ খ্রিস্টান হওয়ায় তারা গরু শূকর সবই খায়। খাসিয়া ভাষা ও গারো ভাষা এই রাজ্যের প্রধান দুই প্রচলিত ভাষা। তবে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ইংরেজির প্রচলনও রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল এলাকা চেরাপুঞ্জির অবস্থান এই রাজ্যে। রয়েছে এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম মাওলিননং। মেঘালয়ে অনেক নদী রয়েছে, এদের অধিকাংশই বৃষ্টি নির্ভর ও মৌসুমী। মেঘালয়ের মোট জেলার সংখ্যা ১১টি। পুরো মেঘালয় রাজ্যজুড়ে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যা ভ্রমণ পিপাসুদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। পর্বত সংকুল হওয়ায় এই রাজ্যে কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম গড়ে উঠেছে।

ডাউকি বাজারে এসে গাড়ি থামলো। ডাউকি বাজার সীমন্তবর্তী একটি ছোট বাজার, বিভিন্ন দোকানে মোটামুটি সব জিনিসের সমাগম আছে। মানি এক্সচেঞ্জ সংখ্যায় কম এবং সাধারণ মুদি দোকানেও এক্সচেঞ্জ করা যায়, এখানে বাংলা টাকার রেট ডলারের চেয়ে ভালো। আমরা দরাদরি করে টাকা এক্সচেঞ্জ করে নিয়ে কিছু প্যাকেটজাত খাবার, জুস কিনে নিয়ে রওনা হলাম। কিছুদূর এগোতেই আমরা চলে আসলাম ডাউকি ব্রিজের ধারে। যেটা আমরা জাফলং থেকে দেখতে পাই। নিচে প্রবাহমান ডাউকি নদীর স্বচ্ছ পানির উপর দুই পাহাড়ের সংযোগ স্থাপনকারী ব্রিজটি দেখতে ভালোই লাগে। এই ব্রিজ পার হয়েই সকল গাড়ি শিলং-চেরাপুঞ্জি অভিমুখে যায়। ড্রাইভার আলিম ভালো ছবি তুলতে পারে। তাকে দিয়েই আমাদের ছবি তোলার কাজ সারলাম। পাহাড়ের নিচে নদীর দুই ধারে খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন বড়শি দিয়ে মাছ ধরছে, অনেকে আবার নৌকায় করে পর্যটকদের নদীতে ঘুরাচ্ছে। কিছুক্ষণ ওখানে সময় কাটিয়ে আমরা রওনা করলাম পরবর্তী গন্তব্যে উমক্রেম ফলসের দিকে।

পাহাড়ি রাজ্য মেঘালয়

পাহাড়ি রাজ্য মেঘালয় জুড়ে দেখা মেলে অজস্র ঝর্ণা। উমক্রেম ফলস, বোরহিল ফলস, ক্রাংসুরি ফলস, নোকালিকাই ফলস, সেভেন সির্স্টাস ফলস, এলিফেন্ট ফলস, সুইট ফলস, রেংথিয়াম ফলস, স্প্রেড ঈগল ফলস, বিশপ ফলস ও বিডেন ফলস সহ অসংখ্য ঝর্ণা রয়েছে। চলতি পথে নাম না জানা অনেক ঝর্ণা চোখে পড়বে। সবগুলো ঝর্ণা দেখতে গেলে কয়েকদিন সময় লেগে যাবে। আমরা এখন পর্যায়ক্রমে এই দুই ঝর্ণা দেখতে যাবো, এই দুটির অবস্থান একই পথে। বেশ কিছু পথ পাড়ি দিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম উমক্রেম ফলসের ধারে। পাহাড়ি স্বচ্ছ জলরাশির নয়নাভিরাম একটি ঝর্ণা। কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করে ছবি তুলে এবার রওনা করলাম বোরহিল অভিমুখে। এই পুরো পথটাই বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড়ের ভাঁজে। একপাশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যেও পাহাড় অন্যপাশে বাংলাদেশের সমতলভূমি, মাঝে মাঝে কাঁটাতারের বেড়া, কিছুদূর পরপর বিএসএফ সীমান্ত ফাঁড়ি পাড়ি দিয়ে এগিয়ে চলছে আমাদের বহনকারী টাটা অল্টো মিনি কার। বেশি কিছু সময় পর আমরা এসে পড়েছি বোরহিল ফলসের কাছে, যেটা বাংলাদেশের পাংতুমাই গ্রাম থেকে দেখা যায়। গাড়ি থেকে নেমে ঝর্ণার দিকে তাকাতেই আমাদের চোখ ছানাবড়া। বিশাল বিশাল কালচে রঙের পাথরের উপর বেয়ে পড়ছে পাহাড়ি সাদা জলারাশি। দেখে মনে হচ্ছে এযেনো দুগ্ধ ধারা বেয়ে পড়ছে। একটি বেইলি ব্রিজের নিচ দিয়ে গড়িয়ে জলধারা এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের দিকে। অসাধারণ সুন্দর একটি ঝর্ণা দেখে মনে প্রশান্তি এলো। কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করে ছবি তুলে আবার আমাদের যাত্রা শুরু হলো। এবারের গন্তব্য লিভিং রুট ব্রিজ ও এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম মাওলিননং।

কিছু পথ এগিয়ে আমাদের গাড়ি বাঁক নিয়ে উঠে গেলো পাহাড়ি রাস্তা ধরে ভিতরের দিকে। দীর্ঘ পথ চলতে চলতে একসময় চোখে ঘুম এসে গেলো। ঘুম ভাঙার পর দেখি উঁচু-নিচু ছায়াঘেরা পথ ধরে এগিয়ে চলছে আমাদের বাহন। দুপাশে বৃক্ষরাজি আর পাখ-পাখালির ডাক। মাঝে মাঝে দেখা মেলে পাহাড়ি লোকালয়ের ঘরবাড়ি আর মানুষজন, স্থানীয়দের বাজার, দোকান। খুব ভালো লাগা একই বিষয় লক্ষ্য করলাম কিছু দূর পরপর রাস্তার ধারে ও মোড়ে মোড়ে দেখা মেলে বাঁশের তৈরি ময়লার ঝুঁড়ি বা ডাস্টবিন। পুরো মেঘালয় জুড়ে রাস্তার পাশে কোথাও কোনো চিপসের প্যাকেট, পানি-জুসের বোতল, ছেঁড়া কাগজ বা দৃশ্যদূষণ সৃষ্টিকারী কোনো ময়লা আবর্জনা দেখিনি। যেতে যেতে কথা হচ্ছিলো ড্রাইভার আলিম মজুমদারের সাথে জানালো, তার বাড়ি আসাম। স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকেন শিলংয়ে। তারা স্ত্রী শিলংয়ে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। বাংলাদেশের সিলেটে তাদের আত্মীয়-স্বজন আছে। তাদের সাথে যোগাযোগ ও নিয়মিত আসা-যাওয়া রয়েছে। আমাদের বন্ধু জুলহাসের সাথে কিভাবে সম্পর্ক জিজ্ঞাসা করতেই জানালো, জুলহাস ভাই অনেকবার শিলং এসেছেন, প্রথমবার পরিচয় থেকেই প্রতিবারই উনি আসলে আমাকে আগেই ফোন দিয়ে জানায়। আমি ডাউকি বর্ডারে এসে উনাকে নিয়ে ঘুরাই, যে কদিনই থাকেন সবসময় উনার সাথে আমাকে রাখেন। অন্যরকম একটা আন্তরিকতার সম্পর্ক যা আত্মীয়তার চেয়ে বেশি। জুলহাস ভাই কিছু বললে আমি ফেলতে পারি না। উনার পরিচিত যে কেউ আসলেই আমাকে আগেই ফোন করে জানিয়ে দেন। উনার কথামত আমি সবাইকে সেবা দিয়ে যাই।

পাহাড়ি পথ

গল্প করতে করতে দীর্ঘ পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম রিওয়াই গ্রামে। লিভিং রুট ব্রিজ নামে পরিচিত সেতুটি দেখার জন্য ছবির মত সাজানো গোছানো রিওয়াই গ্রামের রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে হবে। শিলং থেকে প্রায় ৯০ কিলোমটার দূরে রিওয়াই গ্রাম। গ্রামের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে রাস্তা ধরে হাঁটলেই পেয়ে যাবেন সাইনবোর্ডে লেখা নির্দেশনা। সেই অনুযায়ী হেঁটে যেতে যেতে পাহাড়ি সিঁড়ি খুঁজে পাবেন। সেই সিঁড়ি ধরে বেশ কিছু দূর ট্রেকিং করে নামার পরই চোখ আটকে যাবে আশ্চর্য এই সেতুতে। এখানকার এন্ট্রি ফি ৪০ রুপি। গ্রামের পাহাড়ি নদী থাইলং এর উপরে প্রাকৃতিক ভাবে গাছের শেকড়ে তৈরি সাঁকোটি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমান অসংখ্য পর্যটক। বিশাল দুটি গাছের শেকড় জড়াজড়ি করে আছে ঝিরির উপরে। একটু একটু করে বেড়ে প্রাকৃতিক সেতু তৈরি করেছে গাছ দুটি। সেই সেতুর উপর দিয়ে অনায়াসে পার হয়ে যেতে পারবেন। ঝিরির পাশে থাকা বিশাল পাথরের উপর বসে গাছের সঙ্গে গাছের শেকড় দিয়ে তৈরি অভূতপূর্ব এই সেতু। ব্রিজে উপর দাঁড়াতে দেওয়া হয় না এটির যথাযথ সংরক্ষণের খাতিরে। সেতুর নিচ দিয়ে কুলকুল শব্দে বয়ে চলেছে পাহাড়ি নদী থাইলং। ব্রিজের উপর দাঁড়াতে না পারলেও নদীর পাড়ে বসে কিংবা পাহাড়ের উপর থেকে এর সৌন্দর্য দেখতে পারবেন ইচ্ছেমতো। লিভিং রুট ব্রিজের নিচের পাহাড়ি নদীর হিমশীতল পানিতে পা ভিজিয়ে বেশ কিছু সময় কাটিয়ে ফিরে আসার সময় পথের পাশের স্থানীয়দের দোকান থেকে তাজা পাহাড়ি সুস্বাদু ফল আনারস, জাম্বুরা, পেঁপে কিনে তিনজনে মিলে খেলাম। এই গ্রামটি পরিষ্কার গুছানো ও সুন্দর। এখানকার সব গ্রামেই পর্যটকদের জন্য রয়েছে হোমস্টে ব্যবস্থা, কয়েক জায়গায় দেখলাম বড় বড় গাছের ডালে বাঁশ-কাঠ দিয়ে মাচাং টাইপের ঘর বানিয়ে পর্যটকদের থাকার জন্য আকৃষ্ট করা হয়, সেগুলোতে উঠার জন্যও তারা বাঁশ-কাঠ দিয়ে সিঁড়ি বানিয়ে রাখা হয়েছে। সহজ কথায় বলা যায় পরিবেশ বান্ধব পর্যটন। সেখানে ঘুরেফিরে গাড়িতে উঠলাম, এবার আমাদের মাওলিননং গ্রামে যাবার পালা।

মিনিট পাঁচেক গাড়ি চালিয়েই আমার পৌঁছে গেলাম এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন গ্রাম মাওলিননং। ৫০ রুপি জনপ্রতি এন্ট্রি ফি দিয়ে টিকেট করলাম। প্রথম দর্শনেই গ্রামটি আমাদের খুবই ভালো লেগে যায়। সবুজে সবুজে আচ্ছাদিত চারপাশ। কোথাও লতাবৃক্ষ, কোথাও পাতাবাহার, কোথাও রঙিন ফুলের গাছ। ঝকঝক করছে রাস্তাঘাট। একবিন্দু ময়লা পড়ে নেই কোথাও। এতই পরিচ্ছন্ন এখানকার রাস্তায় জুতা পায়ে হাঁটতেও মায়া লাগে। বলছিলাম এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন গ্রাম মাওলিননং এর কথা। শিলং শহর থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে খাসিয়া সম্প্রদায়ের নিবাস মাওলিননং গ্রামটি। পূর্ব খাসি পাহাড়ের এ মাওলিননং গ্রামকে বলা হয়, ‘সৃষ্টিকর্তার নিজস্ব বাগান’। ২০০৩ সালে এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করা হয় মাওলিননংকে। গ্রামের মানুষেরাই সমিতির মাধ্যমে এটিকে অনুকরনীয় গ্রামে পরিণত করেছেন, যেখানে পরিবেশবান্ধব পর্যটনের ব্যবস্থা রয়েছে। সকলের চেষ্টায় ছবির মতো গ্রামটি তৈরি সম্ভব হয়েছে। এখানকার সব বাড়িই ঘিরে রেখেছে সবুজ। কোথাও কোথাও পর্যটকদের জন্য বসেছে ছোট দোকান। এখানে স্থানীয় অধিবাসীদের হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যায়। গ্রামে পাহাড়ি শিলাখন্ডও চোখে পড়ে, যেগুলো একটির ওপর আরেকটি গায়ে গায়ে লেগে আছে। গ্রামটি পাহাড়ের ওপর থেকে ঢাল বেয়ে বেয়ে নিচে নেমে গেছে। গ্রামের পথ পাহাড় বেয়ে ওঠা-নামা করেছে। পথের ধারে বাঁশের তৈরি ডাস্টবিন রয়েছে। পাহাড় বেয়ে ওঠা-নামার সময় বাঁশের মাচায় একটু জিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। সেখানে চা’য়ে চুমুক দেওয়া যায়। সঙ্গে বিস্কুট বা হালকা নাস্তাও জুটবে। এ গ্রামে শিক্ষার হার শতভাগ। সর্বত্র রয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা। আর পর্যটকদের সেবা দিতে অভিজ্ঞ ছেলে-যুবক-বৃদ্ধ সকলেই কাজ চালিয়ে যাওয়ার মতো ইংরেজিতেও দক্ষ। আমাদের গাড়ির ড্রাইভার জানালেন, এই গ্রামে প্রতিদিনই আসেন অসংখ্য পর্যটক। মাওলিননংয়ে পর্যটকদের জন্য রয়েছে হোমস্টে সুবিধাও। সাধারণত ইউরোপীয়ানরা এখানে এসে বেশ কিছু দিন থাকে। হয়তো নিরিবিলি এ সবুজ প্রকৃতিতে একটুখানি শান্তি ও নিজেকে খুঁজে পেতে। গ্রামের একটা হোটেলে লাঞ্চ সারলাম। এবার আমাদের গন্তব্য শিলং।

মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকা

মেঘালয় ভ্রমণের অন্যতম আনন্দময় অভিজ্ঞতা হলো এখানকার সড়কপথে ভ্রমণ। মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকায় প্রবেশের সাথে সাথেই আবহাওয়ারও পরিবর্তনও লক্ষ্য করলাম। এই গরমেও তখন শীত লাগে। ঠান্ডা শীতল আবহাওয়া চলার পথের ক্লান্তি দূর করে দেয়। মেঘ আচ্ছাদিত পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ ধরে চলতে চলতে যাওয়া যায় একস্থান থেকে অন্য স্থানে। হুট করে ছুটে আসা মেঘ কখন যে জড়িয়ে ধরে টেরই পাওয়া যায় না। আবার এক হাত দূরেই গেলেই মনে হয় মেঘের লেশমাত্র নেই। চলতি পথে দেখা মেলে অসংখ্য ঝর্ণা। মেঘালয়ের পাহাড়গুলো যেনো এক একটা ঝরনার খনি। পাহাড়ের আনাচে কানাচে লুকিয়ে থাকে উন্মাতাল সব ঝর্ণা। আবার বৃষ্টির কারণেও অনেক সময় অস্থায়ী সব ঝরনার জন্ম হয় এখানে। মেঘালয়ের বিশাল সব পাহাড়ের সৌন্দর্য তো রয়েছেই। পুরো মেঘালয়টা যেন সারিসারি পাইন গাছের স্বর্গ বাগান। চলতি পথের সৌন্দর্যের কারণে আনমনে মেঘালয়কে ভালোবাসে ফেলা যায়। সে এক অন্য রকম অনুভূতি। শিলং শহরে প্রবেশের কিছু আগে রয়েছে ভারতীয় বিমান বহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সদর দফতর ও ক্যান্টনমেন্ট এরিয়া।

শেষ বিকেলে আমরা শিলং এসে পৌঁছালাম। শিলং এসে প্রথমে হোটেল ঠিক করলাম। আমাদের হোটেলের নাম হোটেল ইডেন রেসিডেন্সি, তিনটি সিঙ্গেল বেডের একটা রুমের ভাড়া চাইলো ৩০০০ রুপি ব্রেকফাস্টসহ। ওরা ব্রেকফাস্ট পরিবেশন করে সকাল ৮টার সময়, আইটেম হচ্ছে পরোটা ডিম ডাল। যেহেতু আমরা সকাল ৭টার আগেই হোটেল থেকে চেকআউট করবো তাই দরদাম করে ব্রেকফাস্ট ছাড়া ২০০০ রুপিতে ঠিক করলাম। শিলং সেন্টার পয়েন্টের ঠিক পিছনে ৫/৬টা বিল্ডিং পরে এর অবস্থান। ভালো মানের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সুন্দর পরিপাটি রুম। রুমে রয়েছে তিনজনের জন্য তিনটা টাওয়েল, ক্যাবল টিভি, ইলেক্ট্রিক কেটলি, টি-ব্যাগ, বাথরুমে গিজার, সাবান। ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। তারপর একটু ঘুরাঘুরি, কিছু শপিং ও রাতের খাবার খাওয়ার জন্য বের হলাম। কারণ রাত ৯টার মধ্যে মোটামুটি ৯৯% দোকান বন্ধ হয়ে যাবে। রাতে বেশ ঠান্ডা পড়ে এখানে। আমরা পুলিশ বাজার ঘুরে কিছু কেনাকাটা করে চলে আসলাম পুলিশ বাজার মসজিদ সংলগ্ন সাভেরা হোটেলে, এটি মূলত একটি মুসলিম রেস্টুরেন্ট। রাতের খাবার খেয়ে আরও কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে আমরা পৌনে দশটার দিকে হোটেলে ফিরলাম। কিছুক্ষণ আড্ডা-গল্প করে ঘুমিয়ে পড়লাম এগারোটার দিকে, কারণ আমাদেরকে সকাল ৬টার মধ্যে উঠতে হবে।

ভোর ছটায় মোবাইল এলার্মে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আমাদের ব্যাগ গোছাতে শুরু করলাম। সাড়ে ছয়টায় ড্রাইভার আলিম মজুমদার ফোন দিয়ে জানালো সে হাজির। আমরা সাতটার কিছু আগে চেকআউট করে সেন্টার পয়েন্ট মোড়ে পার্কিং করে রাখা আমাদের গাড়িতে ব্যাগগুলো রেখে রাস্তার পাশে একটা স্ট্রিট ফুডের দোকান থেকে রুটি ডাল ডিম চা দিয়ে ব্রেকফাস্ট সারলাম। সকালের ঠান্ডায় রোদে দাঁড়িয়ে ব্রেকফাস্ট করতে ভালোই লাগলো। এখন আমাদের আবার ভ্রমণ শুরুর পালা, গন্তব্য এলিফ্যান্ট ফলস। পথে যেতে যেতে আলিম মজুমদার শহরের বিভিন্ন এলাকাগুলোকে পরিচয় করিয়ে দিতে থাকলো। বিশাল বিশাল পাইন গাছের সারি দেখে মন ভুলিয়ে যায়। কৈশোরে পাইন গাছ সম্পর্কে বেশি পড়েছি সম্ভবত মাসুদরানা সিরিজে। চারপাশের প্রকৃতি দেখতে দেখতে একসময় আমাদের গাড়ি চলে আসলো এলিফ্যান্ট ফলসের পার্কিয়ে। গাড়ি থেকে নেমে জনপ্রতি ২০ রুপির এন্ট্রি টিকেট নিয়ে প্রবেশ করলাম গেট দিয়ে। এখানে অনেকখানি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে হয়। তিন ধাপে এই ফলসের তিনরকমের সৌন্দর্য দেখা যায়। সেখানে নামতে নামতে এলিফেন্ট ফলসসহ নরেন্দ্র মোদির একটা বিশাল ছবি দেখতে পেলাম। সেখানকার একজন থেকে জানলাম কিছুদিন আগে তিনি মেঘালয় সফরে এসে এলিফেন্ট ফলস দেখতে এসেছিলেন। খুবই সুন্দর চাওড়া একটা ঝর্ণা। আমরা কিছুক্ষণ সেখানে থেকে ছবি তুলে ফিরে এলাম গাড়িতে। এবারের গন্তব্য পৃথিবীর সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল স্থান চেরাপুঞ্জি।

ঝর্ণা

মেঘালয়ের পাহাড়গুলো পাথর, চুনাপাথর, জিপসাম, কয়লা ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। স্থানীয়দের বাড়িঘরগুলো খুব সুন্দর। প্রত্যেকটা লোকালয় পরিচ্ছন্ন। রাস্তার পাশ দিয়ে উঁচুনিচু পাহাড়ি পথ বেয়ে ছোট ছোট বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার দৃশ্য মনকে উৎফুল্ল করে তুলবে। বৃষ্টি হলে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা ছড়াগুলো স্বচ্ছজলে টইটুম্বর হয়ে ছুটে চলে। পথে দেখা যায় পাহাড়ি লোমশ কুকুর, সর্বত্র সাইনবোর্ডে লেখা আছে এদের বিরক্ত বা ক্ষতি না করতে, কুকুরগুলোও কারো কোন ক্ষতি করে না। চলতে চলতে আমরা এসে গেলাম ডুয়ান সিং সাইয়েম ব্রিজ যা একটি ঝুলন্ত লোহার ব্রিজ ও ডুয়ান সিং সাইয়েম ভিউ পয়েন্ট। ড্রাইভার আলিম জানালেন, ডুয়ান সিং সাইয়েম ব্রিজটি স্থানীয়দের কাছে কোরবানি ব্রিজ নামেও পরিচিত। কারণ, বলিউডের প্রয়াত অভিনেতা ফিরোজ খানের কোরবানি সিনেমাটির শুটিং হয়েছিলো এই ব্রিজে। তারপর থেকে স্থানীয়দের কাছে এটি কোরবানি ব্রিজ। এখানে বেশকয়েকটি দোকান আছে। পাশেই রয়েছে জিপ লাইন করার ব্যবস্থা। এখন থেকে মেঘালয়ের পাহাড়গুলোর সুন্দর ভিউ দেখা যায়। আমরা গাড়ি থেকে কিছুক্ষণ অবস্থান করে কয়েকটি ছবি তুলে আবার চলতে শুরু করলাম।

উঁচুনিচু পাহাড়ি পথের দুধারের মনোরম প্রকৃতি, ঝর্ণা, ছোট ছোট গ্রাম, সবুজ উপত্যকা, খন্ড খন্ড কৃষিজমি, পাইন গাছের ছায়া, নাসপাতি-কমলালেবুর বাগান, চুনাপাথরের গুহা, বৃক্ষরাজি, দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছে গেলাম চেরাপুঞ্জি। শহরে ঢোকার একটু আগেই পড়বে ওয়াকাবা ফলস। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা সরু জলধারা হারিয়ে গেছে নিচে। চারিদিক উন্মুক্ত। দূরে দেখা যায় শুধু পাহাড়ের সারি। নিচের দিকে তাকালে দেখা যায় না ঝর্নার প্রবাহপথ।

শিলং থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরে বিশ্বের সর্বাধিক বৃষ্টিপাতের স্থান চেরাপুঞ্জি। ছোট্ট শহর চেরাপুঞ্জির আরেক নাম সোহরা। চেরাপুঞ্জিতে দু-একটি অত্যাধুনিক সহ বেশিকিছু হোটেল রির্সোট গড়ে উঠেছে। বিস্ময়কর সেভেন সিস্টার্স ফলস এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় পুরো সেভেন সিস্টার্স ফলস দেখা যায়। ঝর্ণায় পানি ধারা একদম কম। ড্রাইভার আলিম জানালো, গত দুইদিন বৃষ্টি না হওয়ায় ফলে ঝর্ণার পানি কম। বৃষ্টিতে এটি পূর্ণতা পায়। একটি পাহাড়ের উপর থেকে পাশাপাশি সাতটি আলাদা ধারা। আমার দেখা আরেকটি সেভেন সিস্টার্স ফলস রয়েছে সিকিমে, সেটা অবশ্য একটা ধারা একটা পাহাড়ের উপর থেকে সাতটা ধাপে নিচে পড়ে। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে নামা এসব ঝরনার উপরেও চলে যাওয়া যায় ইকো পার্কের ভিতর দিয়ে। সেখানে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে গাছের শেকড়ে সৃষ্টি একটি ডাবল ডেকার ন্যাচারাল রুট ব্রিজ। তবে এখানে যেতে হলে অনেকটা পথ পায়ে হেঁটে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে একদিন সময় শুধু রাখতে হবে এই সেতু দেখার জন্য। যদিও আমরা সময় স্বল্পতার কারণে সেখানে যাইনি। চেরাপুঞ্জিতে রয়েছে একটি রামকৃষ্ণ মিশন ও মিশন পরিচালিত স্কুল, মন্দির ও নৃতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা। আমরা সেখানেও যায়নি। চেরাপুঞ্জিতে রয়েছে ১৮৪০ সালে স্থাপিত সুন্দর একটি প্রেসবিটারিয়ান চার্চ, এটির অবস্থান চলতি পথে রাস্তার ধারে। এটি মেঘালয়ের সবচেয়ে পুরোনো চার্চ। চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় ছাতা বা রেইনকোট সাথে রাখা ভালো। এখানে বৃষ্টি বলে কয়ে আসে না, হঠাৎ শুরু হয় যায় ঝুম বৃষ্টি।

চেরাপুঞ্জির নিকটের একটি অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হল মাউসমাই কেভ। আমাদের দেশের অনেক পর্যটক একে মৌসুমী কেভ বলে থাকেন। এটি লাইমস্টোন বা চুনাপাথর শক্ত হয়ে এবং প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট একটি গুহা। এক আরণ্যক পরিবেশে এই প্রাকৃতিক গুহায় প্রবেশের অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে রোমাঞ্চকর। এই গুহায় এন্ট্রি ফি জনপ্রতি ২০ রুপি। গুহার ভিতরে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা আছে। আগে পর্যটকেরা টর্চ ও গাইডের সাহায্যে এই গুহায় প্রবেশ করতেন। এখন আলোর ব্যবস্থা থাকায় আর সে প্রয়োজন হয় না। কখনও বসে, কখনও সরু ফাঁকের মধ্যে দিয়ে শরীরকে গলিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। গুহার ভিতরে প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা আকৃতি। গুহার এক মুখ দিয়ে প্রবেশ করে রোমাঞ্চের স্বাদ নিয়ে আর এক মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলাম। সেখানেই আমরা একটা রেস্টুরেন্টে হালকা নাস্তা করে রওনা দিলাম।

পরবর্তী গন্তব্য নোহকালিকাই ফলস। এখানে এন্ট্রি ফি ২০ রুপি। প্রায় ১০০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের মাথা থেকে অনেক নিচে সটান আছড়ে পড়ছে ঝর্ণার জল। বিশাল উন্মুুক্ত অঞ্চল। বিস্তীর্ণ স্থান জুড়ে পাহাড়ের পাথুরে শরীরটার মাথাটা সবুজ চাদরে ঢাকা। অনেক নিচে সৃষ্টি হয়েছে ছোট জলাশয়। স্নিগ্ধ নীল তার রং। হাজার সিঁড়ি বেয়ে নেমে যাওয়া যায় জলাশয়ের কাছে। বর্ষায় ঝর্ণাটি জলরাশিতে ভরপুর হয়ে ওঠে। নোহকালিকাই ফলসের কাছেই আছে বাংলাদেশ ভিউ পয়েন্ট। পরিষ্কার আবহাওয়ায় দেখা যায় বাংলাদেশ। স্বল্প সময় অবস্থান করে আবার যাত্রা শুরু। এখানে চলার পথে দূর পাহাড়ের গায়ে দেখা মেলে অসংখ্য খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী কবরস্থানের।

এবার আমরা ফিরব ডাউকির উদ্দেশ্যে, সময় পেলে আমরা সোনেঙ পেডেঙ দেখতে যাবো। আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলছে পাহাড়ি উঁচুনিচু আঁকাবাঁকা পথ ধরে। আমার দৃষ্টিতে মেঘালয় ভারতের অন্যতম পরিচ্ছন্ন একটা রাজ্য। সুন্দর প্রকৃতি এবং পরিচ্ছন্ন লোকালয়, রাস্তাঘাট সহজকথায় পর্যটনবান্ধব একটা সুন্দর পরিবেশ। ইউরোপ আমেরিকার অনেক পর্যটক সেখান বেড়াতে আসে। চলতে চলতে আমরা এসে গেলাম নংলিম নামক একটা খুব সুন্দর স্থানে। এটা মাওম্যার্সিয়াং থেকে লাইলংকট যাওয়ার একটা বাইপাস রোডের মাঝামাঝি খুব সুন্দর একটা স্থান। স্থানটির দুপাশের পাহাড়ের গায়ে সারি সারি পাইন গাছের বাগান। মাঝখান দিয়ে বেয়ে চলা একটা পাহাড়ি স্বচ্ছ পানির ছড়া। একটা জায়গায় কৃত্রিম ভাবে বাঁধ দিয়ে ছোট্ট একটা ঝর্ণার মতো তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু বোঝাই যায় না এখানে কোনো কৃত্রিমতা রয়েছে। অপূর্ব এক দৃশ্য। এই রাস্তাটির দুধারেও পাইন গাছের সমাহার। সেখান কিছুক্ষণ থেকে আমরা আমাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পুনরায় যাত্রা শুরু করলাম।

এর মধ্যে মেঘ-বৃষ্টির হানা। পাহাড়ি পথে আমাদের গাড়ির গতি কমে গেলো। সম্মুখের পথ ঠিকমতো দেখা যায় না। মেঘালয়ে এটাই আমাদের প্রথম একসাথে মেঘ-বৃষ্টির দর্শন। অনেকক্ষণ ধরে চললো মেঘ-বৃষ্টির দাপাদাপি, থামলো প্রায় ৪০ মিনিট পর। থামার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আবার রোদ। অদ্ভুদ আবহাওয়া! এর আগে মেঘ-বৃষ্টির দাপাদাপি দেখেছি আমাদের দেশের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য সাজেকে। কিন্তু এই মেঘ-বৃষ্টির দাপাদাপিতে গাড়ি ধীরে চলায় আমাদের এই ভ্রমণের শেষ ভ্রমণ স্পট সোনেঙ পেডেঙ দেখতে যাওয়া অসম্ভব করে তুলেছে। আমরা জাফলং থেকে যে নদীটা দেখি তার ভিতরের অংশ হলো সোনেঙ পেডেঙ। ওই অংশে নদীটির পানি খুবই স্বচ্ছ এবং উপর থেকে স্পষ্টভাবে নদীর তল দেখা যায়। কিন্তু সময়ের স্বল্পতার কারণে সেখানে যাওয়া হয়নি। বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে আমরা পৌছালাম ডাউকি বাজার। ডাউকি বাজার থেকে কিছু শপিং করে এবং ইন্ডিয়ান রুপিগুলো এক্সচেঞ্জ করে বাংলা টাকা নিয়ে নিলাম। চারটার দিকে ইন্ডিয়ান বর্ডারে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে সোয়া চারটার দিকে বাংলাদেশে প্রবেশ করলাম। ফিরতি পথে দুদেশের ইমিগ্রেশন অফিসেই ভিড় ছিল না।

যেহেতু আমাদের ভ্রমণ ছিল দুই দিনের, তাই সময় স্বল্পতার কারণে এ যাত্রায় দেখা হয়নি লেডি হায়দারি পার্ক, ওয়ার্ডস লেক, ডন বসকো মিউজিয়াম, চেরাপঞ্জিরইকো পার্ক, সোনেঙ পেডেঙ। যদি আরেকদিন বেড়ানো যেতো তাইলে এই স্থানগুলো ঘুরে আসতে পারতাম। ভবিষ্যতে যদি আবার যাওয়া হয় তাহলে ওই স্পটগুলো দেখে আসবো। আমাদের নেয়ার জন্য মাইক্রোবাস নিয়ে তামাবিলে হাজির ড্রাইভার। সন্ধ্যার কিছুসময় আগে আমরা চলে এলাম হযরত শাহজালাল (র.) দরগায়। সেখানে মাগরিবের নামাজ আদায় করে ও মাজার জিয়ারত করলাম। এরমধ্যে আমাদের বন্ধু জুলহাস এসে হাজির। এবার ওর সাথে আড্ডা, খাওয়াদাওয়া শেষে আমরা রাতের গাড়িতে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। বড় তাড়াতাড়িই শেষ হলো আমাদের এই ভ্রমণ। এবার ঘরে ফেরার পালা। মেঘালয়ের অনন্য সুন্দর মুহূর্তগুলোর জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ।

লেখক: ফ্রিল্যান্স কলামিস্ট ও সদস্য বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন

লেক কিভু থেকে লেক টাঙ্গানিকার বিচে: কঙ্গো-বুরুন্ডি (পর্ব ২)



হাসান মোঃ শামসুদ্দীন
কামিম্বি শহরতলী- রুয়ান্ডা

কামিম্বি শহরতলী- রুয়ান্ডা

  • Font increase
  • Font Decrease

রুসিজি, কঙ্গো-রুয়ান্ডা বর্ডার: পরদিন সকাল বেলা নাস্তা সেরে কঙ্গো রুয়ান্ডা বর্ডারে চলে এলাম। জায়গাটার নাম রুসিজি-১ দুই দেশের সীমান্ত চেক পোস্ট এখানে। ইমিগ্রেশন শেষ করে রুসিজি নদীর উপরের ব্রিজ পার হয়ে রুয়ান্ডার চেকপোস্টে গেলাম। রুয়ান্ডার দিকে রাস্তা বেশ ভাল। এই দিকে পাহাড় একটু বেশি। ছোট রুসিজি নদী দুই দেশকে আলাদা করে রেখেছে।

ইমিগ্রেশন অফিস রুসিজি

রুসিজি একটা ছোট পাহাড়ি নদী, নদী না বলে এটাকে একটা খাল কিংবা নালা ও বলা যেতে পারে। এই নদী লেক কিভুর পানি নিয়ে লেক টাঙ্গানিকার দিকে বয়ে চলছে। লেক কিভু সাগর সমতল থেকে প্রায় পনের’শ মিটার উঁচুতে আর লেক টাঙ্গানিকা সাগর সমতল থেকে প্রায় সাতশত পঞ্চাশ মিটার উপরে। গোমা এলাকার আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ফলে এত উঁচুতে এই মিষ্টি পানির লেকগুলো সৃষ্টি হয়েছে। এই অঞ্চলে এখনও জীবন্ত আগ্নেয়গিরি আছে।

রুসিজি সীমান্ত- রুয়ান্ডার ভেতরে

বুকাভু থেকে রুয়ান্ডা কঙ্গো সীমান্ত রুসিজি-১ ও রুসিজি-২ চেক পয়েন্টে পনের বিশ মিনিটে যাওয়া যায়। তাই বুকাভুর বেশির ভাগ মানুষ রুয়ান্ডার কামিম্বি বিমানবন্দর দিয়ে দেশের বাহিরে যাতায়াত করে। ব্যবসায়ীক দৃষ্টিকোণ থেকে রুয়ান্ডা সীমান্তের কাছে এই বিমানবন্দর বানিয়েছে। এখান থেকে রুয়ান্ডা এয়ার যাত্রীদেরকে কিগালি নিয়ে যায়, সেখান থেকে সারা পৃথিবীর যে কোন গন্তব্যে যাওয়া যায়।

রুসিজি বর্ডার-রুয়ান্ডার রাস্তা

রুয়ান্ডার এই অংশের কাছেই কামিম্বি শহর। এটা একটা ছোট সীমান্ত জনপদ। বিমানবন্দর থাকার কারণে এখানে অনেক বিদেশীর আনাগোনা আছে। কঙ্গোর ভেতরে বুকাভু শহর ও তার আশেপাশে অনেক বিদেশী এন জি ও কাজ করে। তারা নিজদেশে যাতায়াতের জন্য কামিম্বি বিমানবন্দর ব্যবহার করে। বুরুন্ডির রাজধানী বুজুম্বুরার উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য আমরা একটা ট্যাক্সি ঠিক করলাম। ট্যাক্সি ড্রাইভারের বাড়ি কামিম্বি শহরে। আমরা ট্যাক্সিতে করে বুজুম্বুরা যাব একরাত সেখানে থেকে পরদিন আবার রুসিজি -১ চেকপোস্টে ফিরে আসব। যাওয়ার পথে একটু ঘুরে রুয়ান্ডার কামিম্বি শহরেটা দেখে যাব।

ইমিগ্রেশন ফর্মালিটিজ শেষ করে ট্যাক্সিতে করে রওয়ানা হলাম। পাহাড়ি পথে আমরা চলছি। পাহাড়ের গা বেয়ে আঁকাবাঁকা পথ পাহাড়ের চূড়ার দিকে উঠে গেছে। পাহাড়ের পর পাহাড় ডিঙ্গিয়ে এই রাস্তা বুরুন্ডির দিকে চলে গেছে । দশ মিনিট চলার পর আমরা কামিম্বি শহরে পৌঁছালাম। যে কোন সাধারণ মফস্বল শহরের মত শহর। ব্যাংক, দোকানপাট সবই আছে এখানে। বিদেশী জিনিসপত্র পাওয়া যায় এখানে। রুয়ান্ডা এখন ফ্রেঞ্চ ভাষা বাদ দিয়ে ইংরেজির দিকে জোর দিয়েছে। আমাদের ড্রাইভার কিন্তু ইংরেজি বোঝে না। অল্প অল্প ফ্রেঞ্চ ভাষা জানা থাকাতে তার সাথে মাঝে মাঝে কিছু কথা বলা যায়।

রুয়ান্ডার এই অঞ্চলে বেশ কয়েকটা মসজিদ দেখলাম, আমাদের ড্রাইভার ও মুসলিম, সে এখানকার অনেক মানুষকে চেনে। কামিম্বি শহরে দেখার কিছু নেই। শহরে প্রাণকেন্দ্রে রাস্তার মোড়ের আইল্যান্ডে একটা বড় ঘড়ি সময় জানিয়ে দিচ্ছে। এখানে ট্রাক, বাস ট্যাক্সি সবই পাওয়া যায়। বিমান বন্দরের কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই শহরটাতে বেশ প্রাণ চাঞ্চল্য দেখা যায়। এখানে কিছুক্ষণ থেকে আবার আমরা বুজুম্বুরার পথে রওয়ানা হলাম। রুসিজি ১ থেকে বুজম্বুরা প্রায় ১২৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৪০ কিলোমিটার রুয়ান্ডাতে আর বাকী পথ বুরুন্ডির ভেতরে। রুয়ান্ডার ভেতর রাস্তা পাহাড়ি হলেও বেশ সুন্দর এবং উন্নত।

রুয়ান্ডা থেকে বুরুন্ডির পথে যেতে

রাস্তা থেকে নীচে পাহাড়ের উপত্যকাতে মাঝে মাঝে ঘরবাড়ী দেখা যায়। পাহাড়ের মাঝের পথ দিয়ে রুসিজি নদী একে বেঁকে লেক তাঙ্গানিকার দিকে চলছে। এদিকে গ্রাম অঞ্চল, মানুষজন মাঠে কাজ করছে কেউবা ঘরে ফিরছে। হাঁটা কিংবা সাইকেলেই তাদের যাতায়াত। আনায়াসে পাহাড়ি পথে তারা তাদের গন্তব্যে চলছে। মাঝে মাঝে কয়েকজন হাত দিয়ে ট্যাক্সিতে লিফট নিতে চাইছে এরা ট্যাক্সি কিংবা মাইক্রোতে করে আশেপাশের জনপদে যাবে। বুরুন্ডি সীমান্তের কিছু আগে ড্রাই ভার একটা ছোট শহরের মানি এক্সচেঞ্জে গাড়ি থামাল। আমরা নেমে একটু হাঁটাহাঁটি করলাম। মানুষজন বেশ বন্ধুভাবাপন্ন, ভালই লাগল। এক ঘণ্টা চলার পর আমরা রুয়ান্ডা বুরুন্ডির সীমান্ত জনপদ রুয়া বর্ডারে পৌঁছে গেলাম।

রুয়া এলাকায় রুয়ান্ডা সরকার নিজ খরচে সুন্দর বর্ডার চেকপয়েন্ট বানিয়েছে। এখানে রুয়ান্ডা আর বুরুন্ডির পতাকা বাতাসে খেলা করছে। দুদেশের কাস্টম ও ইমিগ্রেসান অফিসারদের জন্য পাশাপাশি ডেস্ক, কাঁচের পার্টি শান দিয়ে আলাদা। ব্যাঙ্কের জন্য ও জায়গা করা আছে। ফর্ম ফিলাপ করার জন্য চেয়ার টেবিল আছে। হাত মুখ ভিজিয়ে নেয়ার জন্য পরিস্কার টয়লেট আছে দুইদিকেই। একটু দূরে কাস্টম ও ইমিগ্রেসান অফিসারদের জন্য বাংলো বানানো হয়েছে। এই কমপ্লেক্সে সব ধরনের সুবিধা আছে। এলাকাটা চারিদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা। দুই দিকে সীমান্তের প্রহরাতে পুলিস আছে।

ইমিগ্রেশন অফিস রুয়া-রুয়ান্ডা বুরুন্ডি বর্ডার

আমাদের পাসপোর্ট চেক করে দেখল রুয়ান্ডার পুলিশ। তারপর পারকিং লটে গাড়ি পার্ক কাস্টম ও ইমিগ্রেসান অফিসের ভেতরে গেলাম। মানুষজন তেমন নেই। দু একটা গাড়ি আছে, সেগুলোর মানুষজন ফর্ম ফিলাপ করে কাউনটারে জমা দিচ্ছে। আমাদের পাসপোর্টে রুয়ান্ডার এক্সিট সিল দিয়ে পাশের বুরুন্ডির অফিসারকে এগিয়ে দিল। অফিসার পাসপোর্ট দেখে আবার বুরুন্ডির এন্ট্রি সিল দিয়ে দিল। কাজ শেষে আবার আমরা পথে নামলাম। এখান থেকে বুরুন্ডি ৮০ কিলোমিটার।বুরুন্ডির রাস্তা উপত্যকার মধ্যে, দূরে অনেক উঁচু পাহাড়ের সারি যেন মেঘের সাথে মিশে আছে।দুপাশে ফাঁকা তৃণভূমি, মাঝে মাঝে ঝোপ গাছ। কিছু কিছু চাষ হয় এই মাঠে।

বুজুম্বুরার পথে – বুরুন্ডি

পথের এক জায়গাতে তুলার ক্ষেত, অনেক এলাকা নিয়ে সাদা হয়ে আছে সারা মাথ।মানুষজন মাঠে কাজ করছে, সাইকেল এখানকার অন্যতম বাহন, মাঝে মাঝে মোটর সাইকেল ও গাড়ি দেখা যায়। রাস্তার অবস্থা বেশী ভাল না তবে চলাচল করা যায়।পথের পাশে হঠাৎ এক জায়গাতে অনেক এলাকা জুড়ে বিশাল ক্যাকটাসের বন। রুয়ান্ডার পথে এধরনের দৃশ্য দেখা যায়নি। রাস্তা মাঝে মাঝে চড়াই উৎরাই পেরিয়ে চলছে। নীচে রুসিজি নদী মাঝে মাঝে এঁকে বেঁকে চলছে দেখলাম। কিছু জায়গাতে বেশ স্রোত ও আছে এই ছোট নদীতে।

এরপর রাস্তার দুপাশে অনেক অর্ধসমাপ্ত ঘরবাড়ী দেখলাম ।বাড়ীগুলো বানানো প্রায় শেষ কিন্তু জানালা দরজা লাগানো হয়নি, কেউ সেখানে থাকে না। এর থেকে একটু দূরে ছোট গ্রামের কুঁড়ে ঘর দেখা যায়, হয়ত ভবিষ্যতে গ্রামের মানুষ এসব ঘরে থাকবে। রাস্তার পাশে ছোট ছোট জনপদ আছে। খুব সাধারণ মানের ঘরবাড়ী, মানুষ জন সরল জীবন যাপনেই অভ্যস্ত। মসজিদ দেখলাম কয়েকটা, সীমান্তের এই দিকে মুসলিম জনবসতি আছে বেশ কিছু।

বুজুম্বুরার কাছে রাস্তার মান একটু ভাল, প্রায় ঘন্টা খানেক আমরা খারাপ রাস্তায় চলেছি। শহরের বাহিরে বুজুম্বুরা বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দর দিয়ে ও বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মী এবং এন জি ও কর্মীরা আশেপাশের দেশে যাতায়াত করে। আমরা শহরের ভেতরে ঢুকে গেলাম। রাস্তা বেশ খোলামেলা, ট্রাফিক জ্যাম তেমন নেই শহরের এই অংশে। শহরের ভেতরের রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে আমরা ডাউন টাউনে চলে এলাম। এর পাশেই মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা। আমাদের ড্রাইভার ও রুয়ান্ডিজ মুসলিম। শহরে মোটামুটি ট্রাফিক জ্যাম আছে। দুপুর হয়ে গেছে, আমরা একটা হোটেলে এলাম। মোটামুটি থাকা যায়। হোটেলে ব্যাগ রেখে আবার পথে বের হলাম।

ডাউন টাউন বুজুম্বুরা

বুজুম্বুরা শহরে অনেক মানি এক্সচেইঞ্জ আছে, হোটেল থেকে বের হয়ে বেশ জ্যামে পড়লাম। তারপর বড় একটা বাজার এলাকাতে এলাম। এখানে প্রচুর ফল ও তাজা সবজি পাওয়া যায়। গাড়ি পার্ক করে আমরা টাকা বদলে নিলাম। ডলারের বিনিময়ে প্রায় ১৬৫০ ফ্রা পাওয়া গেল। মোটামুটি জমজমাট শহর। মানুষজন তাদের নিত্য দিনের কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত। আমরাও দেরি না করে টাঙ্গানিকা লেকের উদ্দেশে রওয়ানা হলাম।

চলবে......

 

;

লেক কিভু থেকে লেক টাঙ্গানিকার বিচে: কঙ্গো-বুরুন্ডি (পর্ব ১)



হাসান মোঃ শামসুদ্দীন
লেক কিভু থেকে লেক টাঙ্গানিকার বীচে: কঙ্গো থেকে বুরুন্ডি

লেক কিভু থেকে লেক টাঙ্গানিকার বীচে: কঙ্গো থেকে বুরুন্ডি

  • Font increase
  • Font Decrease

উগান্ডার এন্টেবি বিমানবন্দর থেকে দুইটার সময় সাব-৩৪০ বিমানে করে কঙ্গোর কাভুমু বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওয়ানা হলাম। ফ্লাইট টাইম এক ঘণ্টা বিশ মিনিট। আকাশ মেঘে ঢাকা থাকায় বিমান মেঘের উপর দিয়ে চলছিল, নিচে তাই সাদা মেঘের সাগর ছাড়া আর কিছুই দেখা যায়নি। মেঘের উপর ঝকঝকে সোনালি আলোতে ডানা মেলে উড়ছিল আমাদের বাহন। কাভুমু বিমানবন্দর সাউথ কিভু প্রদেশে এবং বুকাভু এই বিমানবন্দরের কাছের বড় শহর।ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো সেন্ট্রাল আফ্রিকার গ্রেট লেক রিজিওনের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্র। এটা আফ্রিকা মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ এবং সারা পৃথিবীতে আয়তনে ১১ তম। প্রায় ৭৫ মিলিয়ন জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই দেশ আফ্রিকার মধ্যে চতুর্থ জনবহুল দেশ।

কঙ্গোর সাথে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, উগান্ডা, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি,জাম্বিয়া, এঙ্গোলা, কঙ্গো ব্রাজাভিলের সীমান্ত আছে। লেক টাংগানিকা কঙ্গোকে তাঞ্জানিয়ার থেকে আলাদা করে রেখেছে। পশ্চিমে ৪০ কিলোমিটার করিডোর দিয়ে কঙ্গো আটলান্টিক মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত। নানা ঘাত প্রতিঘাত, যুদ্ধ বিগ্রহ করে কঙ্গো বেলজিয়াম থেকে স্বাধীনতা লাভ করলেও দেশটাতে এখনও গৃহযুদ্ধ চলছে। এই দেশের মাটির নিচের সম্পদের লোভে হানাহানি আর রক্তপাত লেগেই আছে। এই বিশাল দেশটাতে কবে শান্তি আসবে তা কেউ জানে না। এক অনিশ্চিত জীবন নিয়েই এদেশের মানুষ তাদের দিন কাটাচ্ছে। এই ক্রান্তিকালেই আমার এদেশে আসা হল।

স্থানীয় সময় দুইটা ত্রিশ মিনিটে আমাদের বিমান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর সাউথ কিভু প্রদেশের কাভুমু বিমানবন্দরে ল্যান্ড করল। আকাশ একটু মেঘলা থাকলেও বেশ আলো ছিল চারিদিকে। বিমানবন্দর একটা পাহাড়ের উপর এবং আসেপাশে সব পাহাড়ি এলাকা। ইমিগ্রেশানে একজন অফিসার বসে আছে, পাসপোর্ট নিয়ে এন্ট্রি সিল দিয়ে দিলেন।সব ফরমালিটিজ শেষ করে কাভুমু থেকে বুকাভুর দিকে রওয়ানা হলাম।

কাভুমু বিমানবন্দর বুকাভু থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে, প্রায় এক ঘণ্টার পাহাড়ি পথ, এই পথ বুকাভু থেকে লেক কিভুর পাড় ঘেঁসে অনেকদুর গিয়ে পাহাড়ের ভেতরে চলে গেছে। পাহাড়ের উপর এই বিমানবন্দর। এর পাশেই কঙ্গোর সামরিক বাহিনীর বিশাল ঘাঁটি। অনেক উঁচুতে বলে এখানকার আবহাওয়া বেশ ঠাণ্ডা, চারিদিকে পাহাড় হলেও মাঝে বেশ ফাঁকা থাকার কারনে খোলামেলা পরিবেশ ও বাতাস চলাচল স্বাভাবিক।

কাভুমু থেকে বুকাভুর পথে

যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ হিসেবে রাস্তাগুলো বেশ ভাল। পাহাড়ি পথে আমরা বিমানবন্দর থেকে কাভুমু শহরের দিকে চলছি। ছোট জনপদ, শহরের মাঝে একটা মোড় আছে, সেখানে কিছু দোকানপাট, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস এসব দোকানে পাওয়া যায়। মোটর সাইকেল, সাইকেল ও মাইক্রবাসে সাধারণ মানুষ চলাচল করে। ঘরবাড়ি বেশিরভাগ ইটের দালান, টিনের চালা। মানুষজন আছে, মোটামুটি প্রাণচঞ্চল জনপদ। পাহাড়ের উঁচুনিচু পথে চলেছি, পাহাড়ি রোলিং কান্ট্রি সাইড বলা চলে এই এলাকাকে।

পথের ছোট জনপদ, বনপথ

পাহাড়ের মাঝ দিয়ে এঁকে বেঁকে রাস্তা চলে গেছে। এখানে মাঝে মাঝে ঘন বন আছে। রাস্তা দিয়ে লোক চলাচল আছে, পাহাড় থেকে নিচে এবং দূরে মাঝে মাঝে জনপদ দেখা যায়। অনেক কলার বাগান আছে পাহাড়ের ঢালে। ছোট ছোট জনপদে পাকা ঘরবাড়ীও আছে, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র এখানে পাওয়া যায়। সাউথ কিভু প্রদেশের সিকিউরিটি সিচুয়েসান তুলনামুলক ভাবে ভাল। মানুষের যানমালের কিছুটা নিরাপত্তা এখানে আছে। আলোকিত দিন, চমৎকার আবহাওয়া, আমরা গল্প করতে করতে চলছি। রাস্তা দিয়ে মাঝে মাঝে সাইকেল আরোহী দেখা যায়। এই পাহাড়ি পথে তারা বেশ কষ্ট করে সাইকেল দিয়ে যাত্রী ও মালপত্র পারাপার করে।

চলার পথের জনপদ

পাহাড়গুলো বেশ উঁচু এবং পাথুরে, চলার পথে অনেক পাহাড় থেকে পাথর সংগ্রহ করে ট্রাকে তোলা হচ্ছে দেখতে পেলাম। আমাদের যাত্রাপথ এক ঘণ্টা, বেশ কিছুক্ষণ চলার পর আমরা পাহাড়ের নিচে লেক কিভুর অস্তিত্ব টের পেলাম। লেকের পাশ দিয়েই চলছে এই পাহাড়ি রাস্তা। লেক কিভুর শান্ত নীল পানি দেখে বেশ ভাল লাগল। আমরা এই লেক দেখব বলেই এত দূর থেকে এদেশে এসেছি। লেকের একপাশে রুয়ান্ডার জনপদ। দূর থেকে তা দেখা যায়। পথে একটা বেশ বড় চার্চ দেখলাম। অনেক এলাকা নিয়ে এর সীমানা।

পাহাড়ের নিচে কৃত্রিম লেক তার পাশে বাঁশবন, লেকের পানিতে পাহাড়ের উপর থেকে আসা সূর্যের আলো আর বাতাসে বাঁশপাতার মিলিয়ে বেশ সুন্দর আবহ এখানে। আশেপাশের পরিবেশ থেকে এই এলাকার আলাদা পরিবেশ নজরে পড়ে।

পাহাড়ি রাস্তা থেকে নীচে বামে লেক কিভু, দূরে বুকাভু শহর

লেকের পাশ দিয়ে চলতে চলতে আমরা বুকাভু শহরের কাছাকাছি চলে এসেছি। দূর থেকে পাহাড়ের উপর গড়ে উঠা এই শহর দেখা যাচ্ছে। বিকেলের সূর্যের আলো এখন শহরের উপর পড়ছে। বুকাভু শহরটা ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর সাউথ কিভু প্রদেশের রাজধানী, সাউথ কিভু প্রদেশের আয়তন বাংলাদেশের দ্বিগুণ। পাশের প্রদেশ নর্থ কিভুর রাজধানী গোমা, লেক কিভু বুকাভু থেকে গোমা পর্যন্ত বিস্তৃত। ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো একটা বিশাল দেশ, দেশটা আয়তনে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ষোল গুণ বড়। ফরাসি এদেশের সরকারি ভাষা এর পাশাপাশি লোকজন স্থানীয় ভাষার ভাবের আদান প্রদান করে। সোহেলি ভাষা এবং রুয়ান্ডার ভাষা এরা বুঝে।

দূরে রুয়ান্ডার জনপদ

বুকাভু শহরের ভেতর জলপথে লেকে চলাচলের জন্য বন্দর আছে। এই বন্দর থেকে মালপত্র ও যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ও ছোট জাহাজ গোমা ও রুয়ান্ডার কিছু গন্তব্যে চলাচল করে। পুরো লেকটাই পাহাড়ের উপত্যকায়। এই লেকের গভীরতা কোন কোন জায়গাতে চারশত পঞ্চাশ মিটার। বেশ খাড়া পাড় বলে এখানে কোন প্রাকৃতিক বিচ বা বিনোদনের জায়গা নেই।


ব্যস্ত বুকাভুশহরের রাস্তা

শহরের দিকে যতই এগিয়ে যাচ্ছি ততই বাড়ছে ভিড় ও ট্রাফিক জ্যাম। রাস্তা একটু খারাপ শহরের মধ্যে। মোটর সাইকেল কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে চলে, তাই বেশ সাবধানে গাড়ি চালাতে হয়। আমাদের জেলা কিংবা মফস্বল শহরের মত এই বুকাভু শহর। সাধারনের চলাচলের জন্য মোটরসাইকেল, সাইকেল আর মাইক্রবাস আছে। ভিড় এবং যাত্রী তোলার ধরন আমাদের দেশের লোকাল বাসের মতই। মানুষ গাদাগাদি করেই চলছে। অনেক নতুন মডেলের গাড়িও আছে এখানে। এই দেশে দুটো শ্রেণীর মানুষ আছে, উচ্চবিত্ত আর নিম্নবিত্ত। মধ্যবিত্ত প্রায় নেই বললেই চলে।

শহরের শেষ প্রান্তে আমাদের থাকার জায়গা, পুরো শহরটা তাই দেখতে দেখতে চলেছি। কিভু লেকের কোন না কোন অংশ শহরের প্রায় সব জায়গা থেকেই দেখা যায়। পাহাড়ি চড়াই উতরাই ভেঙ্গে উঁচু নিচু পথ নানা দিকে চলে গেছে। শহরের একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হল স্বাধীনতা চত্তর। এখানে একটা বিশাল বৃত্তাকার আইল্যান্ড আছে। সেখানে স্বাধীনতার স্মারক ভাস্কর্য মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে আর কঙ্গোর পতাকা বাতাসে পতপত করে উড়ছে। এই জায়গাতেই সব ধরনের মিটিং মিছিল আর গণ্ডগোল শুরু হয় তারপর তা অন্যান্য জায়গাতে ছড়িয়ে যায়। চত্বরটা বেশি বড় হওয়াতে রাস্তা সরু হয়ে গেছে বলে এখানে ট্রাফিক জ্যাম লেগেই আছে, একটা বাসস্ট্যান্ডও এখানকার ভিড় আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

স্বাধীনতা চত্তর- বুকাভু, কঙ্গো

শহরে আসতে আসতে প্রায় চারটা বেজে গেল, এই সময় সব অফিস আদালত ছুটি হয় বলে বেশ ভিড় থাকে শহরে। আমরা শহরটা একটু ঘুরে দেখতে দেখতে চললাম। অফিস পাড়ার দিকটা এখন প্রায় খালি হয়ে এসেছে। এখানে রাস্তাগুলো একটু চওড়া এবং তুলনামুলকভাবে ভাল। প্রাদেশিক দপ্তর, আইন মন্ত্রণালয় এবং কিছু প্রাশাসনিক ভবন দেখে আমরা গন্তব্যের পথে যাত্রা করলাম। এখানে উন্নয়নের কাজ চলছে, একটা চত্তরে ভাস্কর্য স্থাপনের কাজ হচ্ছে। এখানকার বাড়ি ঘরগুলোর শেষ তালার ছাদ টিনের চালা কিংবা টালি দিয়ে বানানো এবং উজ্জ্বল রঙ করা।

শহরে কিছু অংশ দেখে লেক কিভুর পেনিনসুলা এলাকায় এলাম। এখানেই আমাদের থাকার জায়গা। এখানে পাহাড়ের উঁচু থেকে লেকের দৃশ্য দেখা যায়, পড়ন্ত বিকেলের আলো শহর ছাড়িয়ে লেক ও তার আশ পাশ আলোকিত করছে। দূরের রুয়ান্ডার জনপদ ও এই আলোর ছটায় আলোকিত। এখানে সন্ধ্যার পর সাধারণত বাহিরে চলাচল কমে যায়। প্রায় বিদ্যুৎ থাকে না, যাদের সাধ্য আছে তারা জেনারেটর চালায়। মাঝে মাঝে পানির ও সমস্যা হয়। নিচে লেকে এত পানি তবুও বিদ্যুতের অভাবে পানি পেতে সমস্যা হয় এখানে।রাতে বিশ্ব কাপের খেলা দেখে ঘুমিয়ে গেলাম।

চলবে......

;

ঢাকা থেকে নীলডুমুর: সুন্দরবনে কিছুক্ষণ



হাসান মোঃ শামসুদ্দীন
ঘোলাপেটুয়া নদী - সূর্যাস্ত

ঘোলাপেটুয়া নদী - সূর্যাস্ত

  • Font increase
  • Font Decrease

এপ্রিলের আবহাওয়া বেড়ানোর জন্য তেমন আদর্শ না হলেও সুযোগ যেহেতু পেয়ে গেলাম তাই ঢাকা থেকে খুলনা যাবার প্ল্যান করলাম, এবার বাসে না গিয়ে ট্রেনে যাব ঠিক করলাম। ঢাকা থেকে খুলনা এসি বাস আছে এবং টিকিটও সহজেই পাওয়া যায়। আমরা ট্রেনে যাব তাই ঢাকা-খুলনা সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে করে যাওয়া ঠিক হলো। এসি ফোরবার্থের টিকিট পেয়ে গেলাম। আমার দুটো পরিবার এবার ভ্রমণে বের হয়েছি। সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ছয়টা বিশ মিনিটে কমলাপুর থেকে ছাড়ে। বাচ্চাদের অত ভোরে উঠতে অসুবিধা হবে তাই আগের রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে পাঠালাম। গাড়িতে খাবার জন্য নাস্তা ওদের মা বেশ সুন্দর ভাবে গুছিয়ে নিল। সময় মত স্টেশনে গিয়ে জানলাম ট্রেন আরো ঘণ্টা দেড়েক পরে আসবে। এসি ওয়েটিং রুমে বসে রইলাম, এর রক্ষণাবেক্ষণ অতি সাধারণ মানের অথচ একটু দেশপ্রেম কিংবা আন্তরিকতা হলেই অনেক উন্নত মানের ভ্রমণ উপহার দিতে পারে দেশবাসীকে কিংবা বাংলাদেশ দেখতে আসা পর্যটকদেরকে ।

অবশেষে ট্রেন আসল। কুলি ঠিক করা ছিল। জিনিস পত্র আমাদের কমপার্টমেন্টে এনে দিল। এসি কমপার্টমেন্ট, একসময় এগুলো ঝকঝক করত এখন একটা সুইপার ফিনাইল দিয়ে টয়লেট পরিষ্কার করে কোনমতে রুমে একটু ভেজাপাটের ঝাড়ু দিয়ে গেল। সোফা গুলোতে ময়লা রয়ে গেছে, যাক নিজেরা পরিস্কার করে বসলাম। এই বগিতে যাত্রীদের জন্য এটেনডেন্ট আছে, এই ট্রেনের একটা দিক ভাল যে রুমের সাথে এটাচড বাথরুম, সেখানে টয়লেট পেপারও আছে। তবে গোটা বগিতে তিনটার মতো কামরাতে যাত্রী, বাকীগুলো খালি, অথচ টিকিট নেওয়ার সময় জানতাম সবটিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। ইঞ্জিন লাগার পর এসি চালো হলো। ঠান্ডা বাতাসের আমেজে দু ঘণ্টা লেইট ও অন্যান্য কষ্ট গুলো আস্তে আস্তে কমে গেল।

সাড়ে আটটার দিকে ট্রেন ছাড়লো। গরমের দিন হলেও সূর্যের আলোতে তখনও গরমভাব আসেনি, এসির মধ্যে এ আলোটাই ভাল লাগলো। কমলাপুর রেল স্টেশনে ট্রেনের দুপাশের সেই পরিচিত দৃশ্য, আরো নান্দনিক এলাকা বানানো যেত এই জায়গাগুলোকে। কে খেয়াল রাখে। লাইনের দুপাশে ধুলি উড়িয়ে সুন্দরবন এক্সপ্রেস সুন্দরবনের নগর খুলনার উদ্দেশ্যে ছুটে চলল। এয়ারপোট ও জয়দেবপুর স্টেশন পর্যন্তসেই পুরানো সব দৃশ্য, জয়দেবপুর থেকে নতুন লাইন টাঙ্গাইল হয়ে বঙ্গবন্ধু যমুনা ব্রীজ পর্যন্ত চলে গেছে। এই লাইন দিয়ে ব্রডগেজ ও মিটার গেজ উভয় ট্রেন চলতে পারে। নতুন বড় স্টেশন হয়েছে টাঙ্গাইলে তাছাড়া মৌচাক ও অন্যান্য কয়েকটা স্টেশন ও আছে। এখানে মাঝে মাঝে ট্রেন থেমে একটা দুটো আপ বা ডাউন ট্রেনকে পাস দিল।

বঙ্গবন্ধু যমুনা ব্রিজ

বিজেএমবিতে উঠে ট্রেনের গতি কমে গেল। কোথায় সেই প্রমত্তা যমুনা, ব্রিজের নীচে চিকন খালের মত যমুনার অংশ তার পাশেই চর। চরের বালি ঢেউ খেলানো যেন নদীর ঢেউ বালিতে তার ছাপ রেখে গেছে। চরে শনের ক্ষেত, অসমতল ভূমি দেখতে দেখতে এগিয়ে যাচ্ছে ট্রেন লাইনের পাশে ট্রেন। পাশ দিয়ে উত্তর বঙ্গগামী বাস ট্রাক চলছে। আবার একচিলতে যমুনা তারপর ব্রিজটা উত্তর বঙ্গে গিয়ে শেষ । দুপাশের প্রকৃতি এখন একটু অন্য রকম। ট্রেনের দুধারে যেন ফাঁকা ধানের মাঠ, সবুজ ধান ফসল আসবে আসবে। দুরের গ্রামগুলো গাছ পালায় ছায়াঢাকা। কৃষক ধানক্ষেতের পাশে বিশ্রাম নিচ্ছে, কেউ কাজ করছে। পানি এখন উঠে পাম্প মেশিনে, পানি দেয়া হয়েছে ক্ষেত গুলোতে। সিরাজগঞ্জ, পাবনার পাকশি তারপর ট্রেন চলবে দক্ষিন বাংলার দিকে, পথে উত্তর বাংলার অনেক ট্রেন স্টেশন।

 হার্ডিঞ্জ ব্রিজ

পাকশি স্টেশন পার হয়ে ট্রেন বিখ্যাত হার্ডিঞ্জ ব্রিজের উপর, নীচে একসময় ছিল প্রমতা পদ্মা। এখন তার কিছুই নেই। যেন চকচক করে বালু কোথাও নাই কাঁদা। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের প্রায় সমান্তরালে চলে গেছে লালন শাহ ব্রিজ। ব্রিজ দিয়ে বাস ট্রাক চলছে নিজ নিজ গন্তব্যে। ব্রিজ পার হয়ে ভেড়ামারা স্টেশন, আমরা দক্ষিণ বাংলায় ঢুকে গেছি। দর্শনা, চুয়াডাংগা, কোট চাঁদপুর হয়ে যশোর স্টেশন। ট্রেন থামলেই বাচ্চারা জানতে চায় কোন স্টেশন, কি আছে এখানে। নতুন অভিজ্ঞতা বাচ্চাদের জন্য। খুলনা আর ঘণ্টা দেড়েকের পথ । যশোর স্টেশনে ট্রেন কিছুক্ষণ থামল, তারপর আবার পথচলা । খুলনার কাছাকাছি আসতেই বেলা শেষ। মাগরিবের আজানের সময় খুলনা স্টেশনে ট্রেন থামল, স্টেশন থেকে বাহিরে এসে মসজিদে নামাজ পড়লাম। একটু ঝড়ো বাতাস ছিল তখন। এই দুদিনে যদি আবহাওয়া ভাল না থাকে তাহলে এই ভ্রমণটা মাটি হবে। অনেক আশা নিয়ে এসেছি এবং ইনশাআল্লাহ আবহাওয়া ভাল থাকবে।

রাতে খুলনা শহর দেখতে বের হলাম, খোলামেলা শহর জানজট মুক্ত নির্মল, ভাল লেগে গেল প্রথমবারেই। ঢাকার দুঃসহ জট এখানে স্বপ্নের মত। খুলনায় থাকার জন্য অনেক হোটেল আছে। স্টেশনের পাশে সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য কতগুলো বেসরকারি পর্যটন সংস্থার অফিস। এখানে হোটেলের খোজ পাওয়া যায়। ট্যাক্সি কিংবা রিক্সায় হোটেলে যাওয়া যায়। দামও সাধ্যের মধ্যে। পরদিন সকাল বেলা নাস্তা খেয়ে সাতক্ষিরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। সাতক্ষীরা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা লাগে এবং সেখান থেকে নীলডুমুর আরো ঘণ্টা দেড়েকের পথ। বাসে আসলে অবশ্য সময় আরো বেশি লাগে। নীলডুমুরের স্থানীয় নাম বুড়ি গোয়ালিনী, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ পর্যন্ত অনেক বাস যায় যেখান থেকে স্থানীয় বাহনে বুড়ি গোয়ালিনী যাওয়া যায়। নীলডুমুরের দিকে যতই এগিয়ে যাচ্ছি রাস্তার দু পাশে ফনিমনসার ঝোপ দেখা যাচ্ছে। বাড়িঘরের কাছেও এ ধরনের ঝোপ যা বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকায় দেখা যায় না ।নীলডুমুর এলাকায় ঢোকার সাথে সাথেই প্রকৃতি একটু অন্যরকম। দূরে শাখা নদী, নদীর অন্যপাড় সুন্দরবনের অংশ। রাস্তার দুপার্শ্বে জলমগ্ন এলাকা, চিংড়ি চাষে লেগে গেছে । লবণাক্ততা চাষাবাদের জন্য অনুপযোগী হলেও এই লবনপানির জলাবদ্ধতা চিংড়ি চাষের উপযুক্ত জায়গা । এখানেও বাড়ীঘর ও রাস্তার পাশে ফনীমনসার ঝোপ দেখলাম ।

পর্যটনের জন্য স্থানীয় এনজিও বর্ষা মোটেল বানাচ্ছে। তাছাড়া শাখা নদীর পাড়ে ছোট ছোট গোলঘর বানানো আছে। যেখানে বসে থেকে এক দৃষ্টিতে সুন্দর বনের সোভা দেখা যায় দিন রাত। এছাড়াও তাদের আছে ছোট ছোট বোট/লঞ্চ। এসব লঞ্চে সুন্দর বনের ভিতরে ভ্রমনের ব্যবস্থা করে থাকে। মোটামুটি এসময় পর্যটকের ভিড় না থাকলেও সুন্দরবনের টানে অনেক পর্যটক এখানে বেড়াতে আসে।

ঘোলাপেটুয়া নদী

দুপুরে রোদের প্রচন্ড তাপে বাইরে যাওয়ার কথা চিন্তাও করিনি ।বিকেল বেলা সুন্দরবন দেখার পালা। ঘোলাপেটুয়া নদীর ঘাট থেকে রওয়ানা হলাম সুন্দরবন দেখতে। নদীর দুপাশ থেকে অসংখ্য শাখা শিরা উপশিরার মত ছড়িয়ে গেছে । ভাটার সময় বলে এগুলোতে পানি ছিল না তবে জোয়ারের সময়ে এগুলোতে পানি থাকে। ভেজা দুইকুল দেখেই তা বোঝা যায়, নদীপথে ৪৫ মিনিট চলার পর বন বিভাগের টহল ফাঁড়ির জোট দেখা গেল। যাত্রা পথে বুড়ি গোয়ালিনী বাজার দেখলাম। এই বাজারের ঘাট থেকে যন্ত্রচালিত নৌকায় সৌখিন পর্যটকরা সুন্দরবনে ঘুরতে যায়। ঘাটে এ রকম কতগুলো নৌকা বাঁধা আছে। কলাগাছিয়া টহলফাঁড়ি এবং ইকো টুরিজম কেন্দ্রে বোট ভিড়ালাম। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে ব্রিজের মত পাটাতনের উপর দিয়ে হেঁটে ফরেস্ট অফিসে যেতে হয় ।

কলাগাছিয়া টহলফাঁড়ি এবং ইকো টুটিজম কেন্দ্র

বনবিভাগের লোকজন এখানে থাকে। নামমাত্র দাম দিয়ে টিকিট করে এখানে বেড়ানোর ব্যবস্থা আছে। ইনচার্জ আমাদেরকে জানালো বাঘ ও এখানে মাঝে মাঝে আছে এবং হরিনের অভয়ারণ্য এটা, মাটিতে অনেক হরিণের পায়ের ছাপ দেখলাম। বাচ্চারা গোলপাতা গাছ দেখার জন্য উৎসুক, নারকেল পাতার মত পাতার নাম কেন গোলপাতা এটাই তারা ভেবে পায়না। সুন্দরী, কেওড়া ইত্যাদি নানা ধরনের গাছ এখানে আছে। বনবিভাগ পর্যটনের জন্য সুন্দর ওয়াকওয়ে বানিয়ে দিয়েছে। ধন্যবাদ জানাই দুরদর্শী সেই বন কর্মকর্তাকে।

ওয়াকওয়ে কলাগাছিয়া টহলফাঁড়ি এবং ইকো টুরিজম কেন্দ্র

ওয়াকওয়ের একদিক দিয়ে যাত্রা শুরু করলে সুন্দরবনের গাছপালা, হরিণের পায়ের ছাপ, জোয়ার ভাটার চিহ্ন, কৃত্রিমভাবে বানানো মিষ্টি পানির আঁধার এগুলো সব দেখতে দেখতে আবার নিজ অবস্থানে ফিরে আসা যায়। ওয়াকওয়ের নীচে জোয়ারের পানি আসে, ভাটার সময় পানি নেমে যায়। মিষ্টি পানি খেতে বনের অন্যান্য প্রানী আসে। বাঘ মামারা পানির টানে চলে আসে এখানে। এই নির্জন এলাকায় বন বিভাগের লোকজন মুরগী পালে এবং কাছের বাজার থেকে তাদের প্রয়োজনীয় জীবন উপকরন সংগ্রহ করে আনে। চোরাকারবারি বা বনদস্যুদের হটাতে তাদের ইঞ্জিন চালিত বোট আছে। তবে এটা দিয়ে দ্রুতগামী দস্যুর বোট ধাওয়া করা বেশ কষ্টকর। সন্ধ্যা হয় হয় করছে, সূর্য পশ্চিমে ঢলে পরছে। সুন্দরবনের জালের মতো বিছানো ছোট ছোট খাল ও বনের গাছপালায় ফাঁক দিয়ে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে বোটে চড়লাম। আলো থাকতে থাকতে বুড়ি গোয়ালিনী ঘাটের দিকে রওয়ানা দিলাম। বাচ্চারা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক লীলাভূমি সুন্দরবন দেখে মুগ্ধ হলো। এটা এক নতুন অভিজ্ঞতা।

বুড়ি গোয়ালিনী এলাকা, সাতক্ষীরা

সন্ধ্যায় ফেরত এসে আবার নদীর ঘাটে গেলাম জোয়ার দেখার জন্য, আকাশে হালকা চাঁদের আলো, নদীর ঘাটে সোঁ সোঁ শব্দে বাতাস বয়ে যাচ্ছে। নদীতে জোয়ারের পানির ছলাত ছলাত শব্দ। জোয়ারের সময় কিভাবে পানি বাড়ে তাদের বিশ্বাস হচ্ছে না, তাই তারা ঘাটের সিঁড়ির দিকে খেয়াল করছে বেশ মনোযোগ দিয়ে। একটু একটু করে পানি বেড়ে সিঁড়িগুলো ডুবিয়ে দিচ্ছে আর তাদের আগ্রহ আরও বাড়ছে, একসময় অনেক কাছে জোয়ারের পানি এসে গেল, নদীর এই জোয়ার ভাটার অভিজ্ঞতাও তাদের কাছে নতুন, যদিও কক্সবাজারের সমুদ্রতীরে তারা দেখেছে। রাত বাড়ছে তাই রেস্ট হাউজে ফিরে এলাম। পরদিন সকালে খুলনার উদ্দেশ্যে ফিরতি যাত্রা, সাতক্ষিরা হয়ে রওয়ানা দিলাম ।

বুড়ি গোয়ালিনী এলাকা, সাতক্ষীরা

খুলনা শহরের সাতক্ষীরার ঘোষের মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে নতুন নতুন নাম ও ডিজাইনের মিষ্টি কেনা হলো, একটা মিষ্টির নাম ইলিশ এটা বেশ হিট হলো, বাচ্চাদের এটা বেশ পছন্দ। সন্ধ্যায় রুপসা ব্রিজ দেখতে বের হলাম, প্রথমে লঞ্চ ঘাটে এলাম, লঞ্চঘাট খুলনা স্টেশনের পাশেই ।

রাত হওয়াতে যাত্রী নেই, সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য রুপসা নামের পর্যটক ভর্তি দুটো লঞ্চ ঘাটে অপেক্ষা করছে। এরা প্রাইভেট পর্যটন সংস্থার মাধ্যমে প্যাকেজ ট্যুরে সুন্দরবন যাচ্ছে। একটা লঞ্চে অনুমতি নিয়ে উঠলাম, ঢুকতেই খাবার ঘর, রাতে বিরিয়ানী খাচ্ছিল যাত্রীরা । দোতালায় উঠে কেবিনগুলো দেখলাম, পর্যটকরা তাদের রুমে আরাম করছে, সকাল নাগাদ লঞ্চ ছেড়ে যাবে । এটা কটকা ও হিরন পয়েন্ট হয়ে আবার এখানেই ফিরে আসবে ।

রাতের রুপসা ব্রিজ

লঞ্চ ঘাট থেকে রুপসা ব্রিজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম, রাস্তা প্রায় ফাঁকা, ব্রিজের উঠার রোড চমৎকার। সুন্দর ও নান্দনিক ব্রিজ এলাকা, আলো জ্বলজ্বল করছে। টোল প্লাজার ওপারে না গিয়ে এপারেই গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম, নিচে নদী বয়ে চলছে। নদীতে সেই চিরপরিচিত নৌকায় টিমটিম করে আলো জ্বলছে, যন্ত্রচালিত নৌকা শব্দ করে রাতের আঁধারে নদীর বুক চিরে গন্তব্যে যাচ্ছে। ব্রিজের উপর সুন্দর বাতাস কিছুক্ষণ থেকে ফিরে চললাম। ঢাকা থেকে খুলনা হয়ে সুন্দরবন দেখার চমৎকার অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে আসলাম। সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল বলে সুন্দরবন ভ্রমণ এখন তেমন কষ্টসাধ্য নয়। একটা ছোট গ্রুপে বেশ মজা করে প্যাকেজ প্রোগ্রামের আওতায় সুন্দরবন দেখা যায়। দেশকে দেখুন, আমাদের দেশ অনেক সুন্দর। আসুন আমরা তাকে আরও সুন্দর করি।

ব্রি জেনারেল (অবঃ) হাসান মোঃ শামসুদ্দীন
লেখক সদস্য বাংলাদেশ ট্র্যাভেল রাইটার্স এসোসিয়েশন

 

;

ভ্রমণ উৎসাহে শেয়ারট্রিপ ‘নাদিরস ফ্যান মিট’



সাব্বিন হাসান, কনসালটেন্ট এডিটর
ভ্রমণ উৎসাহে শেয়ারট্রিপ ‘নাদিরস ফ্যান মিট’

ভ্রমণ উৎসাহে শেয়ারট্রিপ ‘নাদিরস ফ্যান মিট’

  • Font increase
  • Font Decrease

নাদির অন দ্য গো আয়োজন করল প্রথম মিটআপ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাজারো নাদির ভক্ত। যারা সরাসরি নাদিরের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সরাসরি সুযোগ পেয়েছেন। অনুষ্ঠানটি সৌজন্য করে শেয়ারট্রিপ। আয়োজক ছিল দ্য মার্বেল বি ইউ।

‘নাদির অন দ্য গো’ সুপরিচিত পুরস্কার প্রাপ্ত কনটেন্ট নির্মাতা। দেশে-বিদেশে লাখের বেশি ফলোয়ার প্রতিদিন তার কনটেন্ট উপভোগ করছেন।

নাদির মার্বেল অব টুমরো, বাংলাদেশের অন্যতম ইনফ্লুয়েন্সার প্ল্যাটফর্মের ট্রাভেল ক্যাটাগরিতে পুরস্কার বিজয়ী। নাদির ও ভ্রমণ ভক্তরা তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। শুধু তাই নয়, তার থেকে অনুপ্রেরণাও নিয়েছেন।

কনটেন্ট সহযোগী হিসেবে আয়োজনকে উজ্জীবিত করেছে ডিজিটাল ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর অরিজিনালস’। তা ছাড়া সার্ভিস সহযোগিতায় ছিল ‘ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স’। কমিউনিটি এনগেজমেন্টে কাজ করেছে ‘কলোনি অব আর্টস’।

নাদির জানালেন, দারুণ একটি দিন ছিল। ভক্তদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা আর দেখা করতে পারা সত্যিই আনন্দের। মার্বেল বি ইউ আর শেয়ারট্রিপ যৌথভাবে দারুণ আয়োজন করেছে।

শেয়ারট্রিপ মার্কেটিং অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার সামিউর রহমান জানালেন, যখন ভ্রমণের বিষয় আসে, নাদির তখন লাখো ভক্তের অনুপ্রেরণা। শুধু নাদিরের জন্য নয়, ভ্রমণ উদ্যোগে উৎসাহ দিতে শেয়ারট্রিপ সবসময়ই কনটেন্ট নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করবে।

দেশি-বিদেশি ভ্রমণকে উৎসাহ ও তথ্যবহুল করতে ভবিষ্যতে আরও অভিনব সব উদ্যোগ নিয়ে কাজ করবে ‘দ্য মার্বেল বি ইউ’।

;