মেঘ পাহাড়ের মেঘালয়



এটিএম মোসলেহ উদ্দিন জাবেদ
মেঘ পাহাড়ের মেঘালয়

মেঘ পাহাড়ের মেঘালয়

  • Font increase
  • Font Decrease

বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা বলেছিলেন, ভ্রমণ প্রথমে তোমাকে নির্বাক করে দেবে তারপর তোমাকে গল্প বলতে বাধ্য করবে। ভ্রমণ প্রিয় মানুষ আমি, সময় সুযোগ পেলে বেরিয়ে পড়ি পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে ও অজানাকে জানতে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২০ এবং ২১ তারিখ শুক্র ও শনিবার দুই দিনে আমি আমার স্কুল জীবনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু (পিপলু) ও তার একজন সহকর্মী (আজাদ) মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম মেঘালয় ঘুরতে যাবো। যেহেতু আমাদের তিন জনেরই আগে থেকেই ইন্ডিয়ান ভিসায় ডাউকি পোর্ট এড করা ছিলো। তাই মাত্র এক সপ্তাহের সিদ্ধান্ত আমরা ট্রাভেল টেক্স, ডলার এনডোর্সমেন্ট করাসহ প্রয়োজনীয় কাজকর্ম শেষ করে ভ্রমণের প্রস্তুতি নিয়েছি। এখানে উল্লেখ্য যে, আমরা আমাদের এই ভ্রমণের রির্টান পরিবহন ব্যবস্থাপনা বিশেষ করে সিলেট থেকে তামাবিল বর্ডার যাওয়া-আসার মাইক্রোবাস ও ডাউকি বর্ডার থেকে মেঘালয়ে দুই দিন বেড়ানোর প্রাইভেটকার আগে থেকেই আমাদের স্কুল জীবনের আরেক বন্ধু ও সিলেটের বাসিন্দা জুলহাসের মাধ্যমে ঠিক করে রেখেছিলাম।

পরিকল্পনামত আমরা ১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৫০ মিনিটে এনা পরিবহনের ভলবো বাসে রওনা করলাম মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে। পিপলু যেহেতু উত্তরা থাকে তাই সে উঠলো উত্তরা থেকে। আর পিপলুর সহকর্মী আজাদ অফিসের কাজে আশুগঞ্জ ছিলেন বিধায়, উনি বৃহস্পতিবার বিকেলেই সিলেট গিয়ে রাতে হোটেলে ছিলেন। আমরা ভোর ছ’টায় পৌঁছে গেলাম সিলেট বাস টার্মিনালে। সেখান থেকে একটা সিএনজিচালিত অটো যোগে আমরা চলে আসলাম নুরজাহান হোটেলে যেখানে আজাদ উঠেছে। আজাদ আগে থেকেই হোটেলে থাকায় আমার আর পিপলুর জন্য ভালোই হয়েছে, এসে ভালোভাবে ফ্রেশ হতে পারলাম। এর মধ্যে মাইক্রোবাসের ড্রাইভার সাহেব হোটেলের সামনে এসে ফোন দিয়ে জানালো তিনি হাজির। এই ড্রাইভার সাহেব আমাদের আজ তামাবিল বর্ডারে নিয়ে যাবে এবং আগামীকাল বিকেলে তামাবিল থেকে সিলেটে ফিরিয়ে আনবে। আমরা হোটেল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে সকালের নাস্তা করার জন্য চলে আসলাম সিলেটের বিখ্যাত পানসী রেস্টুরেন্টে। এই সকালে পানসীতে কানায় কানায় পূর্ণ মানুষজন। বেশির ভাগই হচ্ছে সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটক। নাস্তা সেরে আমরা রওনা করলাম তামাবিল বর্ডারের উদ্দেশ্যে। সিলেট শহর থেকে ৫৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তামাবিল বর্ডার। পথে চলতে চলতে ভোরের কোমল প্রকৃতি, চা বাগান, কাজে বের হওয়া মানষের আনাগোনা দেখতে দেখতে আমরা সোয়া নয়টার সময় পৌঁছে গেলাম তামাবিল স্থলবন্দরে। পৌঁছে দেখি মেঘালয়গামী অনেক বাংলাদেশি টুরিস্ট। এখানে উল্লেখ্য তামাবিল ও ডাউকি বর্ডারে ইমিগ্রেশন কর্ম চলে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

মেঘালয়

গাড়ি থেকে নেমে ফরম সংগ্রহ করে ইমিগ্রেশনের জন্য লাইনে দাঁড়ালাম। মিনিট পনেরোর মধ্যে ইমিগ্রেশন শেষ করে কাস্টমস ক্লিয়ারেসের জন্য আবার লাইনে দাঁড়ালাম। তামাবিল স্থলবন্দরে কাস্টমসের কার্যক্রম ম্যানুয়াল, লাইন খুব ধীরে এগুচ্ছিলো। এর মধ্যে মেঘালয়ের ড্রাইভার আলিম মজুমদার হোয়াটসঅ্যাপে কল করে জানালো সে ডাউকি ইমিগ্রেশন অফিসের পাশে গাড়ি পার্কিং করে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা কাস্টমস শেষে বিজিবি চেক শেষে পায়ে হেঁটে ডাউকি প্রবেশ করে প্রথমে বিএসএফ চেক সেরে চলে গেলাম ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিসে। সেখানকার কার্যক্রমও ম্যানুয়াল। বেশ সময় নিয়ে ইমিগ্রেশন শেষ করে আমাদের নির্ধারিত গাড়িতে উঠে রওনা করলাম। ড্রাইভার আলিম মজুমদার খুব আন্তরিক ও চমৎকার মানুষ। তার বাসা শিলং শহরে, সে বাংলা, হিন্দি, খাসিয়া, আসামীয়, ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে পারে। সে আমাদেরকে সব বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতো এবং পুরো দুদিন আন্তরিকতা ও আনন্দের সাথে ঘুরালো। আমি তার ফোন নম্বর (+৯১৯৪৮৫১৬৪৯৩৯) দিয়ে দিলাম। এখানে উল্লেখ্য, যারা শেয়ার জিপে করে ঘুরতে যান তাদের ডাউকি বর্ডার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পায়ে হেঁটে এসে জিপস্ট্যান্ড থেকে গাড়িতে উঠতে হয়।

মেঘের রাজ্য মেঘালয়। বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি প্রদেশ। এই রাজ্যের উত্তর ও পূর্ব দিকে আসাম রাজ্য এবং দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র অবস্থিত। মেঘালয় উত্তর-পূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টার রাজ্যগুলির অন্যতম। শিলং হচ্ছে তার রাজধানী। শিলংকে বলা হয় প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৪৯০৮ ফুট উচ্চতায় শিলংয়ের অবস্থান। খাসিয়া এবং গারো প্রধানত এই দুই জনগোষ্ঠীর বসবাস এই রাজ্যে। মেঘালয় ভারতের তিনটি খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যের মধ্যে একটি। রাজ্যের ৭৫% মানুষ খ্রিস্টধর্মের অনুগামী। বেশিরভাগ খ্রিস্টান হওয়ায় তারা গরু শূকর সবই খায়। খাসিয়া ভাষা ও গারো ভাষা এই রাজ্যের প্রধান দুই প্রচলিত ভাষা। তবে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ইংরেজির প্রচলনও রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল এলাকা চেরাপুঞ্জির অবস্থান এই রাজ্যে। রয়েছে এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম মাওলিননং। মেঘালয়ে অনেক নদী রয়েছে, এদের অধিকাংশই বৃষ্টি নির্ভর ও মৌসুমী। মেঘালয়ের মোট জেলার সংখ্যা ১১টি। পুরো মেঘালয় রাজ্যজুড়ে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যা ভ্রমণ পিপাসুদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। পর্বত সংকুল হওয়ায় এই রাজ্যে কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম গড়ে উঠেছে।

ডাউকি বাজারে এসে গাড়ি থামলো। ডাউকি বাজার সীমন্তবর্তী একটি ছোট বাজার, বিভিন্ন দোকানে মোটামুটি সব জিনিসের সমাগম আছে। মানি এক্সচেঞ্জ সংখ্যায় কম এবং সাধারণ মুদি দোকানেও এক্সচেঞ্জ করা যায়, এখানে বাংলা টাকার রেট ডলারের চেয়ে ভালো। আমরা দরাদরি করে টাকা এক্সচেঞ্জ করে নিয়ে কিছু প্যাকেটজাত খাবার, জুস কিনে নিয়ে রওনা হলাম। কিছুদূর এগোতেই আমরা চলে আসলাম ডাউকি ব্রিজের ধারে। যেটা আমরা জাফলং থেকে দেখতে পাই। নিচে প্রবাহমান ডাউকি নদীর স্বচ্ছ পানির উপর দুই পাহাড়ের সংযোগ স্থাপনকারী ব্রিজটি দেখতে ভালোই লাগে। এই ব্রিজ পার হয়েই সকল গাড়ি শিলং-চেরাপুঞ্জি অভিমুখে যায়। ড্রাইভার আলিম ভালো ছবি তুলতে পারে। তাকে দিয়েই আমাদের ছবি তোলার কাজ সারলাম। পাহাড়ের নিচে নদীর দুই ধারে খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন বড়শি দিয়ে মাছ ধরছে, অনেকে আবার নৌকায় করে পর্যটকদের নদীতে ঘুরাচ্ছে। কিছুক্ষণ ওখানে সময় কাটিয়ে আমরা রওনা করলাম পরবর্তী গন্তব্যে উমক্রেম ফলসের দিকে।

পাহাড়ি রাজ্য মেঘালয়

পাহাড়ি রাজ্য মেঘালয় জুড়ে দেখা মেলে অজস্র ঝর্ণা। উমক্রেম ফলস, বোরহিল ফলস, ক্রাংসুরি ফলস, নোকালিকাই ফলস, সেভেন সির্স্টাস ফলস, এলিফেন্ট ফলস, সুইট ফলস, রেংথিয়াম ফলস, স্প্রেড ঈগল ফলস, বিশপ ফলস ও বিডেন ফলস সহ অসংখ্য ঝর্ণা রয়েছে। চলতি পথে নাম না জানা অনেক ঝর্ণা চোখে পড়বে। সবগুলো ঝর্ণা দেখতে গেলে কয়েকদিন সময় লেগে যাবে। আমরা এখন পর্যায়ক্রমে এই দুই ঝর্ণা দেখতে যাবো, এই দুটির অবস্থান একই পথে। বেশ কিছু পথ পাড়ি দিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম উমক্রেম ফলসের ধারে। পাহাড়ি স্বচ্ছ জলরাশির নয়নাভিরাম একটি ঝর্ণা। কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করে ছবি তুলে এবার রওনা করলাম বোরহিল অভিমুখে। এই পুরো পথটাই বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড়ের ভাঁজে। একপাশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যেও পাহাড় অন্যপাশে বাংলাদেশের সমতলভূমি, মাঝে মাঝে কাঁটাতারের বেড়া, কিছুদূর পরপর বিএসএফ সীমান্ত ফাঁড়ি পাড়ি দিয়ে এগিয়ে চলছে আমাদের বহনকারী টাটা অল্টো মিনি কার। বেশি কিছু সময় পর আমরা এসে পড়েছি বোরহিল ফলসের কাছে, যেটা বাংলাদেশের পাংতুমাই গ্রাম থেকে দেখা যায়। গাড়ি থেকে নেমে ঝর্ণার দিকে তাকাতেই আমাদের চোখ ছানাবড়া। বিশাল বিশাল কালচে রঙের পাথরের উপর বেয়ে পড়ছে পাহাড়ি সাদা জলারাশি। দেখে মনে হচ্ছে এযেনো দুগ্ধ ধারা বেয়ে পড়ছে। একটি বেইলি ব্রিজের নিচ দিয়ে গড়িয়ে জলধারা এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের দিকে। অসাধারণ সুন্দর একটি ঝর্ণা দেখে মনে প্রশান্তি এলো। কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করে ছবি তুলে আবার আমাদের যাত্রা শুরু হলো। এবারের গন্তব্য লিভিং রুট ব্রিজ ও এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম মাওলিননং।

কিছু পথ এগিয়ে আমাদের গাড়ি বাঁক নিয়ে উঠে গেলো পাহাড়ি রাস্তা ধরে ভিতরের দিকে। দীর্ঘ পথ চলতে চলতে একসময় চোখে ঘুম এসে গেলো। ঘুম ভাঙার পর দেখি উঁচু-নিচু ছায়াঘেরা পথ ধরে এগিয়ে চলছে আমাদের বাহন। দুপাশে বৃক্ষরাজি আর পাখ-পাখালির ডাক। মাঝে মাঝে দেখা মেলে পাহাড়ি লোকালয়ের ঘরবাড়ি আর মানুষজন, স্থানীয়দের বাজার, দোকান। খুব ভালো লাগা একই বিষয় লক্ষ্য করলাম কিছু দূর পরপর রাস্তার ধারে ও মোড়ে মোড়ে দেখা মেলে বাঁশের তৈরি ময়লার ঝুঁড়ি বা ডাস্টবিন। পুরো মেঘালয় জুড়ে রাস্তার পাশে কোথাও কোনো চিপসের প্যাকেট, পানি-জুসের বোতল, ছেঁড়া কাগজ বা দৃশ্যদূষণ সৃষ্টিকারী কোনো ময়লা আবর্জনা দেখিনি। যেতে যেতে কথা হচ্ছিলো ড্রাইভার আলিম মজুমদারের সাথে জানালো, তার বাড়ি আসাম। স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকেন শিলংয়ে। তারা স্ত্রী শিলংয়ে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। বাংলাদেশের সিলেটে তাদের আত্মীয়-স্বজন আছে। তাদের সাথে যোগাযোগ ও নিয়মিত আসা-যাওয়া রয়েছে। আমাদের বন্ধু জুলহাসের সাথে কিভাবে সম্পর্ক জিজ্ঞাসা করতেই জানালো, জুলহাস ভাই অনেকবার শিলং এসেছেন, প্রথমবার পরিচয় থেকেই প্রতিবারই উনি আসলে আমাকে আগেই ফোন দিয়ে জানায়। আমি ডাউকি বর্ডারে এসে উনাকে নিয়ে ঘুরাই, যে কদিনই থাকেন সবসময় উনার সাথে আমাকে রাখেন। অন্যরকম একটা আন্তরিকতার সম্পর্ক যা আত্মীয়তার চেয়ে বেশি। জুলহাস ভাই কিছু বললে আমি ফেলতে পারি না। উনার পরিচিত যে কেউ আসলেই আমাকে আগেই ফোন করে জানিয়ে দেন। উনার কথামত আমি সবাইকে সেবা দিয়ে যাই।

পাহাড়ি পথ

গল্প করতে করতে দীর্ঘ পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম রিওয়াই গ্রামে। লিভিং রুট ব্রিজ নামে পরিচিত সেতুটি দেখার জন্য ছবির মত সাজানো গোছানো রিওয়াই গ্রামের রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে হবে। শিলং থেকে প্রায় ৯০ কিলোমটার দূরে রিওয়াই গ্রাম। গ্রামের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে রাস্তা ধরে হাঁটলেই পেয়ে যাবেন সাইনবোর্ডে লেখা নির্দেশনা। সেই অনুযায়ী হেঁটে যেতে যেতে পাহাড়ি সিঁড়ি খুঁজে পাবেন। সেই সিঁড়ি ধরে বেশ কিছু দূর ট্রেকিং করে নামার পরই চোখ আটকে যাবে আশ্চর্য এই সেতুতে। এখানকার এন্ট্রি ফি ৪০ রুপি। গ্রামের পাহাড়ি নদী থাইলং এর উপরে প্রাকৃতিক ভাবে গাছের শেকড়ে তৈরি সাঁকোটি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমান অসংখ্য পর্যটক। বিশাল দুটি গাছের শেকড় জড়াজড়ি করে আছে ঝিরির উপরে। একটু একটু করে বেড়ে প্রাকৃতিক সেতু তৈরি করেছে গাছ দুটি। সেই সেতুর উপর দিয়ে অনায়াসে পার হয়ে যেতে পারবেন। ঝিরির পাশে থাকা বিশাল পাথরের উপর বসে গাছের সঙ্গে গাছের শেকড় দিয়ে তৈরি অভূতপূর্ব এই সেতু। ব্রিজে উপর দাঁড়াতে দেওয়া হয় না এটির যথাযথ সংরক্ষণের খাতিরে। সেতুর নিচ দিয়ে কুলকুল শব্দে বয়ে চলেছে পাহাড়ি নদী থাইলং। ব্রিজের উপর দাঁড়াতে না পারলেও নদীর পাড়ে বসে কিংবা পাহাড়ের উপর থেকে এর সৌন্দর্য দেখতে পারবেন ইচ্ছেমতো। লিভিং রুট ব্রিজের নিচের পাহাড়ি নদীর হিমশীতল পানিতে পা ভিজিয়ে বেশ কিছু সময় কাটিয়ে ফিরে আসার সময় পথের পাশের স্থানীয়দের দোকান থেকে তাজা পাহাড়ি সুস্বাদু ফল আনারস, জাম্বুরা, পেঁপে কিনে তিনজনে মিলে খেলাম। এই গ্রামটি পরিষ্কার গুছানো ও সুন্দর। এখানকার সব গ্রামেই পর্যটকদের জন্য রয়েছে হোমস্টে ব্যবস্থা, কয়েক জায়গায় দেখলাম বড় বড় গাছের ডালে বাঁশ-কাঠ দিয়ে মাচাং টাইপের ঘর বানিয়ে পর্যটকদের থাকার জন্য আকৃষ্ট করা হয়, সেগুলোতে উঠার জন্যও তারা বাঁশ-কাঠ দিয়ে সিঁড়ি বানিয়ে রাখা হয়েছে। সহজ কথায় বলা যায় পরিবেশ বান্ধব পর্যটন। সেখানে ঘুরেফিরে গাড়িতে উঠলাম, এবার আমাদের মাওলিননং গ্রামে যাবার পালা।

মিনিট পাঁচেক গাড়ি চালিয়েই আমার পৌঁছে গেলাম এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন গ্রাম মাওলিননং। ৫০ রুপি জনপ্রতি এন্ট্রি ফি দিয়ে টিকেট করলাম। প্রথম দর্শনেই গ্রামটি আমাদের খুবই ভালো লেগে যায়। সবুজে সবুজে আচ্ছাদিত চারপাশ। কোথাও লতাবৃক্ষ, কোথাও পাতাবাহার, কোথাও রঙিন ফুলের গাছ। ঝকঝক করছে রাস্তাঘাট। একবিন্দু ময়লা পড়ে নেই কোথাও। এতই পরিচ্ছন্ন এখানকার রাস্তায় জুতা পায়ে হাঁটতেও মায়া লাগে। বলছিলাম এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন গ্রাম মাওলিননং এর কথা। শিলং শহর থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে খাসিয়া সম্প্রদায়ের নিবাস মাওলিননং গ্রামটি। পূর্ব খাসি পাহাড়ের এ মাওলিননং গ্রামকে বলা হয়, ‘সৃষ্টিকর্তার নিজস্ব বাগান’। ২০০৩ সালে এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করা হয় মাওলিননংকে। গ্রামের মানুষেরাই সমিতির মাধ্যমে এটিকে অনুকরনীয় গ্রামে পরিণত করেছেন, যেখানে পরিবেশবান্ধব পর্যটনের ব্যবস্থা রয়েছে। সকলের চেষ্টায় ছবির মতো গ্রামটি তৈরি সম্ভব হয়েছে। এখানকার সব বাড়িই ঘিরে রেখেছে সবুজ। কোথাও কোথাও পর্যটকদের জন্য বসেছে ছোট দোকান। এখানে স্থানীয় অধিবাসীদের হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যায়। গ্রামে পাহাড়ি শিলাখন্ডও চোখে পড়ে, যেগুলো একটির ওপর আরেকটি গায়ে গায়ে লেগে আছে। গ্রামটি পাহাড়ের ওপর থেকে ঢাল বেয়ে বেয়ে নিচে নেমে গেছে। গ্রামের পথ পাহাড় বেয়ে ওঠা-নামা করেছে। পথের ধারে বাঁশের তৈরি ডাস্টবিন রয়েছে। পাহাড় বেয়ে ওঠা-নামার সময় বাঁশের মাচায় একটু জিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। সেখানে চা’য়ে চুমুক দেওয়া যায়। সঙ্গে বিস্কুট বা হালকা নাস্তাও জুটবে। এ গ্রামে শিক্ষার হার শতভাগ। সর্বত্র রয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা। আর পর্যটকদের সেবা দিতে অভিজ্ঞ ছেলে-যুবক-বৃদ্ধ সকলেই কাজ চালিয়ে যাওয়ার মতো ইংরেজিতেও দক্ষ। আমাদের গাড়ির ড্রাইভার জানালেন, এই গ্রামে প্রতিদিনই আসেন অসংখ্য পর্যটক। মাওলিননংয়ে পর্যটকদের জন্য রয়েছে হোমস্টে সুবিধাও। সাধারণত ইউরোপীয়ানরা এখানে এসে বেশ কিছু দিন থাকে। হয়তো নিরিবিলি এ সবুজ প্রকৃতিতে একটুখানি শান্তি ও নিজেকে খুঁজে পেতে। গ্রামের একটা হোটেলে লাঞ্চ সারলাম। এবার আমাদের গন্তব্য শিলং।

মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকা

মেঘালয় ভ্রমণের অন্যতম আনন্দময় অভিজ্ঞতা হলো এখানকার সড়কপথে ভ্রমণ। মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকায় প্রবেশের সাথে সাথেই আবহাওয়ারও পরিবর্তনও লক্ষ্য করলাম। এই গরমেও তখন শীত লাগে। ঠান্ডা শীতল আবহাওয়া চলার পথের ক্লান্তি দূর করে দেয়। মেঘ আচ্ছাদিত পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ ধরে চলতে চলতে যাওয়া যায় একস্থান থেকে অন্য স্থানে। হুট করে ছুটে আসা মেঘ কখন যে জড়িয়ে ধরে টেরই পাওয়া যায় না। আবার এক হাত দূরেই গেলেই মনে হয় মেঘের লেশমাত্র নেই। চলতি পথে দেখা মেলে অসংখ্য ঝর্ণা। মেঘালয়ের পাহাড়গুলো যেনো এক একটা ঝরনার খনি। পাহাড়ের আনাচে কানাচে লুকিয়ে থাকে উন্মাতাল সব ঝর্ণা। আবার বৃষ্টির কারণেও অনেক সময় অস্থায়ী সব ঝরনার জন্ম হয় এখানে। মেঘালয়ের বিশাল সব পাহাড়ের সৌন্দর্য তো রয়েছেই। পুরো মেঘালয়টা যেন সারিসারি পাইন গাছের স্বর্গ বাগান। চলতি পথের সৌন্দর্যের কারণে আনমনে মেঘালয়কে ভালোবাসে ফেলা যায়। সে এক অন্য রকম অনুভূতি। শিলং শহরে প্রবেশের কিছু আগে রয়েছে ভারতীয় বিমান বহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সদর দফতর ও ক্যান্টনমেন্ট এরিয়া।

শেষ বিকেলে আমরা শিলং এসে পৌঁছালাম। শিলং এসে প্রথমে হোটেল ঠিক করলাম। আমাদের হোটেলের নাম হোটেল ইডেন রেসিডেন্সি, তিনটি সিঙ্গেল বেডের একটা রুমের ভাড়া চাইলো ৩০০০ রুপি ব্রেকফাস্টসহ। ওরা ব্রেকফাস্ট পরিবেশন করে সকাল ৮টার সময়, আইটেম হচ্ছে পরোটা ডিম ডাল। যেহেতু আমরা সকাল ৭টার আগেই হোটেল থেকে চেকআউট করবো তাই দরদাম করে ব্রেকফাস্ট ছাড়া ২০০০ রুপিতে ঠিক করলাম। শিলং সেন্টার পয়েন্টের ঠিক পিছনে ৫/৬টা বিল্ডিং পরে এর অবস্থান। ভালো মানের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সুন্দর পরিপাটি রুম। রুমে রয়েছে তিনজনের জন্য তিনটা টাওয়েল, ক্যাবল টিভি, ইলেক্ট্রিক কেটলি, টি-ব্যাগ, বাথরুমে গিজার, সাবান। ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। তারপর একটু ঘুরাঘুরি, কিছু শপিং ও রাতের খাবার খাওয়ার জন্য বের হলাম। কারণ রাত ৯টার মধ্যে মোটামুটি ৯৯% দোকান বন্ধ হয়ে যাবে। রাতে বেশ ঠান্ডা পড়ে এখানে। আমরা পুলিশ বাজার ঘুরে কিছু কেনাকাটা করে চলে আসলাম পুলিশ বাজার মসজিদ সংলগ্ন সাভেরা হোটেলে, এটি মূলত একটি মুসলিম রেস্টুরেন্ট। রাতের খাবার খেয়ে আরও কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে আমরা পৌনে দশটার দিকে হোটেলে ফিরলাম। কিছুক্ষণ আড্ডা-গল্প করে ঘুমিয়ে পড়লাম এগারোটার দিকে, কারণ আমাদেরকে সকাল ৬টার মধ্যে উঠতে হবে।

ভোর ছটায় মোবাইল এলার্মে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আমাদের ব্যাগ গোছাতে শুরু করলাম। সাড়ে ছয়টায় ড্রাইভার আলিম মজুমদার ফোন দিয়ে জানালো সে হাজির। আমরা সাতটার কিছু আগে চেকআউট করে সেন্টার পয়েন্ট মোড়ে পার্কিং করে রাখা আমাদের গাড়িতে ব্যাগগুলো রেখে রাস্তার পাশে একটা স্ট্রিট ফুডের দোকান থেকে রুটি ডাল ডিম চা দিয়ে ব্রেকফাস্ট সারলাম। সকালের ঠান্ডায় রোদে দাঁড়িয়ে ব্রেকফাস্ট করতে ভালোই লাগলো। এখন আমাদের আবার ভ্রমণ শুরুর পালা, গন্তব্য এলিফ্যান্ট ফলস। পথে যেতে যেতে আলিম মজুমদার শহরের বিভিন্ন এলাকাগুলোকে পরিচয় করিয়ে দিতে থাকলো। বিশাল বিশাল পাইন গাছের সারি দেখে মন ভুলিয়ে যায়। কৈশোরে পাইন গাছ সম্পর্কে বেশি পড়েছি সম্ভবত মাসুদরানা সিরিজে। চারপাশের প্রকৃতি দেখতে দেখতে একসময় আমাদের গাড়ি চলে আসলো এলিফ্যান্ট ফলসের পার্কিয়ে। গাড়ি থেকে নেমে জনপ্রতি ২০ রুপির এন্ট্রি টিকেট নিয়ে প্রবেশ করলাম গেট দিয়ে। এখানে অনেকখানি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে হয়। তিন ধাপে এই ফলসের তিনরকমের সৌন্দর্য দেখা যায়। সেখানে নামতে নামতে এলিফেন্ট ফলসসহ নরেন্দ্র মোদির একটা বিশাল ছবি দেখতে পেলাম। সেখানকার একজন থেকে জানলাম কিছুদিন আগে তিনি মেঘালয় সফরে এসে এলিফেন্ট ফলস দেখতে এসেছিলেন। খুবই সুন্দর চাওড়া একটা ঝর্ণা। আমরা কিছুক্ষণ সেখানে থেকে ছবি তুলে ফিরে এলাম গাড়িতে। এবারের গন্তব্য পৃথিবীর সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল স্থান চেরাপুঞ্জি।

ঝর্ণা

মেঘালয়ের পাহাড়গুলো পাথর, চুনাপাথর, জিপসাম, কয়লা ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। স্থানীয়দের বাড়িঘরগুলো খুব সুন্দর। প্রত্যেকটা লোকালয় পরিচ্ছন্ন। রাস্তার পাশ দিয়ে উঁচুনিচু পাহাড়ি পথ বেয়ে ছোট ছোট বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার দৃশ্য মনকে উৎফুল্ল করে তুলবে। বৃষ্টি হলে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা ছড়াগুলো স্বচ্ছজলে টইটুম্বর হয়ে ছুটে চলে। পথে দেখা যায় পাহাড়ি লোমশ কুকুর, সর্বত্র সাইনবোর্ডে লেখা আছে এদের বিরক্ত বা ক্ষতি না করতে, কুকুরগুলোও কারো কোন ক্ষতি করে না। চলতে চলতে আমরা এসে গেলাম ডুয়ান সিং সাইয়েম ব্রিজ যা একটি ঝুলন্ত লোহার ব্রিজ ও ডুয়ান সিং সাইয়েম ভিউ পয়েন্ট। ড্রাইভার আলিম জানালেন, ডুয়ান সিং সাইয়েম ব্রিজটি স্থানীয়দের কাছে কোরবানি ব্রিজ নামেও পরিচিত। কারণ, বলিউডের প্রয়াত অভিনেতা ফিরোজ খানের কোরবানি সিনেমাটির শুটিং হয়েছিলো এই ব্রিজে। তারপর থেকে স্থানীয়দের কাছে এটি কোরবানি ব্রিজ। এখানে বেশকয়েকটি দোকান আছে। পাশেই রয়েছে জিপ লাইন করার ব্যবস্থা। এখন থেকে মেঘালয়ের পাহাড়গুলোর সুন্দর ভিউ দেখা যায়। আমরা গাড়ি থেকে কিছুক্ষণ অবস্থান করে কয়েকটি ছবি তুলে আবার চলতে শুরু করলাম।

উঁচুনিচু পাহাড়ি পথের দুধারের মনোরম প্রকৃতি, ঝর্ণা, ছোট ছোট গ্রাম, সবুজ উপত্যকা, খন্ড খন্ড কৃষিজমি, পাইন গাছের ছায়া, নাসপাতি-কমলালেবুর বাগান, চুনাপাথরের গুহা, বৃক্ষরাজি, দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছে গেলাম চেরাপুঞ্জি। শহরে ঢোকার একটু আগেই পড়বে ওয়াকাবা ফলস। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা সরু জলধারা হারিয়ে গেছে নিচে। চারিদিক উন্মুক্ত। দূরে দেখা যায় শুধু পাহাড়ের সারি। নিচের দিকে তাকালে দেখা যায় না ঝর্নার প্রবাহপথ।

শিলং থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরে বিশ্বের সর্বাধিক বৃষ্টিপাতের স্থান চেরাপুঞ্জি। ছোট্ট শহর চেরাপুঞ্জির আরেক নাম সোহরা। চেরাপুঞ্জিতে দু-একটি অত্যাধুনিক সহ বেশিকিছু হোটেল রির্সোট গড়ে উঠেছে। বিস্ময়কর সেভেন সিস্টার্স ফলস এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় পুরো সেভেন সিস্টার্স ফলস দেখা যায়। ঝর্ণায় পানি ধারা একদম কম। ড্রাইভার আলিম জানালো, গত দুইদিন বৃষ্টি না হওয়ায় ফলে ঝর্ণার পানি কম। বৃষ্টিতে এটি পূর্ণতা পায়। একটি পাহাড়ের উপর থেকে পাশাপাশি সাতটি আলাদা ধারা। আমার দেখা আরেকটি সেভেন সিস্টার্স ফলস রয়েছে সিকিমে, সেটা অবশ্য একটা ধারা একটা পাহাড়ের উপর থেকে সাতটা ধাপে নিচে পড়ে। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে নামা এসব ঝরনার উপরেও চলে যাওয়া যায় ইকো পার্কের ভিতর দিয়ে। সেখানে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে গাছের শেকড়ে সৃষ্টি একটি ডাবল ডেকার ন্যাচারাল রুট ব্রিজ। তবে এখানে যেতে হলে অনেকটা পথ পায়ে হেঁটে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে একদিন সময় শুধু রাখতে হবে এই সেতু দেখার জন্য। যদিও আমরা সময় স্বল্পতার কারণে সেখানে যাইনি। চেরাপুঞ্জিতে রয়েছে একটি রামকৃষ্ণ মিশন ও মিশন পরিচালিত স্কুল, মন্দির ও নৃতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা। আমরা সেখানেও যায়নি। চেরাপুঞ্জিতে রয়েছে ১৮৪০ সালে স্থাপিত সুন্দর একটি প্রেসবিটারিয়ান চার্চ, এটির অবস্থান চলতি পথে রাস্তার ধারে। এটি মেঘালয়ের সবচেয়ে পুরোনো চার্চ। চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় ছাতা বা রেইনকোট সাথে রাখা ভালো। এখানে বৃষ্টি বলে কয়ে আসে না, হঠাৎ শুরু হয় যায় ঝুম বৃষ্টি।

চেরাপুঞ্জির নিকটের একটি অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হল মাউসমাই কেভ। আমাদের দেশের অনেক পর্যটক একে মৌসুমী কেভ বলে থাকেন। এটি লাইমস্টোন বা চুনাপাথর শক্ত হয়ে এবং প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট একটি গুহা। এক আরণ্যক পরিবেশে এই প্রাকৃতিক গুহায় প্রবেশের অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে রোমাঞ্চকর। এই গুহায় এন্ট্রি ফি জনপ্রতি ২০ রুপি। গুহার ভিতরে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা আছে। আগে পর্যটকেরা টর্চ ও গাইডের সাহায্যে এই গুহায় প্রবেশ করতেন। এখন আলোর ব্যবস্থা থাকায় আর সে প্রয়োজন হয় না। কখনও বসে, কখনও সরু ফাঁকের মধ্যে দিয়ে শরীরকে গলিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। গুহার ভিতরে প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা আকৃতি। গুহার এক মুখ দিয়ে প্রবেশ করে রোমাঞ্চের স্বাদ নিয়ে আর এক মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলাম। সেখানেই আমরা একটা রেস্টুরেন্টে হালকা নাস্তা করে রওনা দিলাম।

পরবর্তী গন্তব্য নোহকালিকাই ফলস। এখানে এন্ট্রি ফি ২০ রুপি। প্রায় ১০০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের মাথা থেকে অনেক নিচে সটান আছড়ে পড়ছে ঝর্ণার জল। বিশাল উন্মুুক্ত অঞ্চল। বিস্তীর্ণ স্থান জুড়ে পাহাড়ের পাথুরে শরীরটার মাথাটা সবুজ চাদরে ঢাকা। অনেক নিচে সৃষ্টি হয়েছে ছোট জলাশয়। স্নিগ্ধ নীল তার রং। হাজার সিঁড়ি বেয়ে নেমে যাওয়া যায় জলাশয়ের কাছে। বর্ষায় ঝর্ণাটি জলরাশিতে ভরপুর হয়ে ওঠে। নোহকালিকাই ফলসের কাছেই আছে বাংলাদেশ ভিউ পয়েন্ট। পরিষ্কার আবহাওয়ায় দেখা যায় বাংলাদেশ। স্বল্প সময় অবস্থান করে আবার যাত্রা শুরু। এখানে চলার পথে দূর পাহাড়ের গায়ে দেখা মেলে অসংখ্য খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী কবরস্থানের।

এবার আমরা ফিরব ডাউকির উদ্দেশ্যে, সময় পেলে আমরা সোনেঙ পেডেঙ দেখতে যাবো। আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলছে পাহাড়ি উঁচুনিচু আঁকাবাঁকা পথ ধরে। আমার দৃষ্টিতে মেঘালয় ভারতের অন্যতম পরিচ্ছন্ন একটা রাজ্য। সুন্দর প্রকৃতি এবং পরিচ্ছন্ন লোকালয়, রাস্তাঘাট সহজকথায় পর্যটনবান্ধব একটা সুন্দর পরিবেশ। ইউরোপ আমেরিকার অনেক পর্যটক সেখান বেড়াতে আসে। চলতে চলতে আমরা এসে গেলাম নংলিম নামক একটা খুব সুন্দর স্থানে। এটা মাওম্যার্সিয়াং থেকে লাইলংকট যাওয়ার একটা বাইপাস রোডের মাঝামাঝি খুব সুন্দর একটা স্থান। স্থানটির দুপাশের পাহাড়ের গায়ে সারি সারি পাইন গাছের বাগান। মাঝখান দিয়ে বেয়ে চলা একটা পাহাড়ি স্বচ্ছ পানির ছড়া। একটা জায়গায় কৃত্রিম ভাবে বাঁধ দিয়ে ছোট্ট একটা ঝর্ণার মতো তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু বোঝাই যায় না এখানে কোনো কৃত্রিমতা রয়েছে। অপূর্ব এক দৃশ্য। এই রাস্তাটির দুধারেও পাইন গাছের সমাহার। সেখান কিছুক্ষণ থেকে আমরা আমাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পুনরায় যাত্রা শুরু করলাম।

এর মধ্যে মেঘ-বৃষ্টির হানা। পাহাড়ি পথে আমাদের গাড়ির গতি কমে গেলো। সম্মুখের পথ ঠিকমতো দেখা যায় না। মেঘালয়ে এটাই আমাদের প্রথম একসাথে মেঘ-বৃষ্টির দর্শন। অনেকক্ষণ ধরে চললো মেঘ-বৃষ্টির দাপাদাপি, থামলো প্রায় ৪০ মিনিট পর। থামার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আবার রোদ। অদ্ভুদ আবহাওয়া! এর আগে মেঘ-বৃষ্টির দাপাদাপি দেখেছি আমাদের দেশের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য সাজেকে। কিন্তু এই মেঘ-বৃষ্টির দাপাদাপিতে গাড়ি ধীরে চলায় আমাদের এই ভ্রমণের শেষ ভ্রমণ স্পট সোনেঙ পেডেঙ দেখতে যাওয়া অসম্ভব করে তুলেছে। আমরা জাফলং থেকে যে নদীটা দেখি তার ভিতরের অংশ হলো সোনেঙ পেডেঙ। ওই অংশে নদীটির পানি খুবই স্বচ্ছ এবং উপর থেকে স্পষ্টভাবে নদীর তল দেখা যায়। কিন্তু সময়ের স্বল্পতার কারণে সেখানে যাওয়া হয়নি। বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে আমরা পৌছালাম ডাউকি বাজার। ডাউকি বাজার থেকে কিছু শপিং করে এবং ইন্ডিয়ান রুপিগুলো এক্সচেঞ্জ করে বাংলা টাকা নিয়ে নিলাম। চারটার দিকে ইন্ডিয়ান বর্ডারে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে সোয়া চারটার দিকে বাংলাদেশে প্রবেশ করলাম। ফিরতি পথে দুদেশের ইমিগ্রেশন অফিসেই ভিড় ছিল না।

যেহেতু আমাদের ভ্রমণ ছিল দুই দিনের, তাই সময় স্বল্পতার কারণে এ যাত্রায় দেখা হয়নি লেডি হায়দারি পার্ক, ওয়ার্ডস লেক, ডন বসকো মিউজিয়াম, চেরাপঞ্জিরইকো পার্ক, সোনেঙ পেডেঙ। যদি আরেকদিন বেড়ানো যেতো তাইলে এই স্থানগুলো ঘুরে আসতে পারতাম। ভবিষ্যতে যদি আবার যাওয়া হয় তাহলে ওই স্পটগুলো দেখে আসবো। আমাদের নেয়ার জন্য মাইক্রোবাস নিয়ে তামাবিলে হাজির ড্রাইভার। সন্ধ্যার কিছুসময় আগে আমরা চলে এলাম হযরত শাহজালাল (র.) দরগায়। সেখানে মাগরিবের নামাজ আদায় করে ও মাজার জিয়ারত করলাম। এরমধ্যে আমাদের বন্ধু জুলহাস এসে হাজির। এবার ওর সাথে আড্ডা, খাওয়াদাওয়া শেষে আমরা রাতের গাড়িতে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। বড় তাড়াতাড়িই শেষ হলো আমাদের এই ভ্রমণ। এবার ঘরে ফেরার পালা। মেঘালয়ের অনন্য সুন্দর মুহূর্তগুলোর জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ।

লেখক: ফ্রিল্যান্স কলামিস্ট ও সদস্য বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন

   

ইন-ফ্লাইট সার্ভিস ক্যাটাগরিতে গোল্ড পুরস্কার পেলো এয়ার এ্যাস্ট্রা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
গোল্ড পুরস্কার নিচ্ছেন এয়ার এ্যাস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফ। ছবি : সংগৃহীত

গোল্ড পুরস্কার নিচ্ছেন এয়ার এ্যাস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফ। ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘মনিটর এয়ারলাইন অব দ্য ইয়ার ২০২৩’- এর বেস্ট ইন-ফ্লাইট সার্ভিস ক্যাটাগরিতে সেরা হয়েছে এয়ার এ্যাস্ট্রা।

রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে বাংলাদেশ মনিটর আয়োজিত গালা অ্যাওয়ার্ড নাইটে এয়ার এ্যাস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফের হাতে বেস্ট ইন-ফ্লাইট সার্ভিস ক্যাটাগরির গোল্ড পুরস্কার তুলে দেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, এমপি।

যাত্রী সন্তুষ্টির প্রতিশ্রুতির জন্য পরিচিত এয়ার এ্যাস্ট্রা ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে বর্তমানে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর এবং সিলেটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

এয়ার এ্যাস্ট্রা’র বহরে বর্তমানে তিনটি এটিআর ৭২-৬০০ এয়ারক্রাফট রয়েছে, যা ফ্রান্সে নির্মিত সর্বাধুনিক প্রযুক্তির টার্বোপ্রপ এয়ারক্রাফট এবং ৭০ জন যাত্রী বহন করতে সক্ষম।

বাংলাদেশ মনিটর তাদের বাৎসরিক কার্যক্রম হিসেবে ২০০৭ সালে বাংলাদেশে ‘এয়ারলাইন অব দ্য ইয়ার’ প্রবর্তন করে। এভিয়েশন ও পর্যটন বিষয়ক প্রকাশনা ‘বাংলাদেশ মনিটর’-এর জরিপের ভিত্তিতে বিজয়ীদের নির্বাচিত করা হয়।

বিগত এক বছরে যারা কমপক্ষে তিনবার আকাশপথে ভ্রমণ করেছেন, তারা অনলাইনে নিজের পছন্দের এয়ারলাইন্সকে ভোট দিতে পেরেছেন।

;

সিলেটে একসঙ্গে ঘুরে দেখা যাবে ২৩টি পর্যটন স্পট



মশাহিদ আলী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট। সিলেটের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে উঁকি দিয়ে ডাকছে প্রকৃতির সৌন্দর্য। আর সেই সৌন্দর্য উপভোগের জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসুরা। প্রতিদিন সিলেটে বেড়াতে আসেন হাজার হাজার পর্যটকরা।

কিন্তু পর্যটন স্পটগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব একটা ভালো না থাকায় বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয় ঘুরতে আসা পর্যটকদের। তবে এবার পর্যটক ও এই অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে নেয়া হয়েছে উদ্যোগ। দুই দিনে এক সঙ্গে ২৩টি স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন ভ্রমণপিপাসুরা।

জানা যায়, সিলেটের ৪ আসনের সংসদ সদস্য এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপির দিক নির্দেশনায় সিলেটের জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশনার প্রেরিত ২০২৩ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর হয়ে জাফলং পর্যন্ত একটি সড়ক তৈরির প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। আর সেই প্রস্তাবনা শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে প্রাথমিক জরিপ সম্পন্ন করেছে সিলেট সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত এই তিনদিন সিলেটে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি থাকে। কারণ শুক্রবার ও শনিবার সরকারি বন্ধ থাকায় চাকরিজীবিরা আসা যাওয়া করেন। তাদের অনেকেই একদিনে প্রাকৃতিক সৌন্দের্যের লীলাভূমি জাফলং ও পাথর সাম্রাজ্য সাদাপাথর ঘুরে দেখতে চান। কিন্তু সময় ও ভোগান্তির কারণে তা আর একদিনে ঘুরে বেড়ানো যায় না। কারণ যেখানে মাত্র ত্রিশ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিলে জাফলং থেকে সাদাপাথর যাওয়া সম্ভব সেখানে পাড়ি দিতে হয় ১২০ কিলোমিটার। আর এই ১২০ কিলোমিটারে পাড়ি দিতে গিয়ে হাতছাড়া হয়ে যায় আর ৫টি পর্যটন স্পট। জাফলং থেকে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর প্রতিমধ্যে পান্তুমাই, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, শ্রীপুর, শাপলা বিল, লাক্কাতুড়া চা বাগানসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা যাবে।

সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটক দর্শনার্থীদের ভ্রমণকে সহজতর এবং আরামদায়ক করণে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত সড়কটি বাস্তবে রূপান্তরিত হলে এখানে আসা পর্যটকরা একটি সড়কে যাতায়াত করে ২ দিনে ২৩টি পর্যটন স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন। সড়কটি নির্মাণ করা হলে সিলেটের পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে। সেই সাথে পর্যটন শিল্পে সরকারি এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও এই অঞ্চলের মানুষের কর্মস্থানের বিশাল সুযোগ তৈরি হবে।

জাফলং-কোম্পানিগঞ্জের সাদাপাথর পর্যন্ত সড়ক তৈরির বিষয়ে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরকে নির্দেশনা দিয়ে পত্র পাঠানো হয়। ইতোমধ্যে প্রাথমিক জরিপের কাজ শেষ করেছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সিলেট।

এব্যাপারে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে তারা প্রাথমিক জরিপ কাজ শেষ করেছেন। এই প্রকল্পটির আশপাশে আরও কয়েকটি চলমান প্রকল্প থাকায় এই সড়ক নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর।

আর গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় জাফলং থেকে সাদাপাথর বা সাদাপাথর থেকে জাফলং যেতে হলে ভিন্ন সড়ক ব্যবহার করতে হয়।এতে করে সময় খরচ দুটিই বাড়ে।গোয়াইনঘাটের জাফলং থেকে কোম্পানিগঞ্জের সাদাপাথর পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণে সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। সড়কটি বাস্তবায়িত হলে এক সড়ক দিয়েই অনেকগুলো স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন পর্যটক দর্শনার্থীরা।

;

থাইল্যান্ড ভ্রমণে তাপ ও বৃষ্টি থেকে সাবধান!



মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, সাউথ ইস্ট এশিয়া, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

তিন ঋতুর দেশ থাইল্যান্ড। বর্তমানে চলছে বর্ষাকাল। তবে বৃষ্টি যখন থাকে না তখন প্রচণ্ড রোদের তাপ। অন্তত গত এক সপ্তাহ ধরে প্রায়ই বিকেলের দিকে বৃষ্টি হচ্ছে এবং দিনের বেলায় গরমে অতিষ্ঠ হচ্ছে মানুষ।

এরই মধ্যে থাইল্যান্ডের আবহাওয়া অধিদফতর প্রয়োজন না হলে জনগণকে রোদে বের না হওয়ার জন্য এবং বৃষ্টিতে ভিজলে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছে। 

এমন গরম আবহাওয়ায় স্থানীয় থাই জনগোষ্ঠীর পছন্দের বেড়ানো বা সময় কাটানোর জায়গা হচ্ছে বড় শপিংমলগুলো। তবে পর্যটকদের শুধু শপিং মলে ঘুরে পোষাবে না। তাই ছাতা, ক্যাপ এবং সঙ্গে পানি রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।


শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে ব্যাংককের তামপাত্রা ৩২ ডিগ্রী ফারেনহাইট। তবে সেটা ৪০ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত অনুভূত হচ্ছে। এমন গরমে বিশেষত শিশুদের বারবার পানি পান করানো এবং ছায়াযুক্ত স্থানে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

জুন মাসের পর থেকে থাইল্যান্ডে পুরোপুরি বর্ষা। তবে বর্ষাতেও বৃষ্টি ছাড়াও রোদের তাপ থাকে প্রচুর। থাইল্যান্ডে বর্ষা চলবে অক্টোবর পর্যন্ত। এরপরে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আর্দ্র এবং শীতল। এ সময়টায় চিয়াং মাই বা চিয়াং রাইয়ের মতো উত্তর থাইল্যান্ডে পুরোপুরি শীত অনুভূত হয়। তবে গালফ অব থাইল্যান্ড এবং আন্দামানের তীরের ভূমিতে শীত কখনোই অনুভুত হয় না। বরং গরমই থাকে।

যেহেতু বাংলাদেশের পর্যটকরা বেশিরভাগই সাগর তীরবর্তী অঞ্চলে বেড়াতে যান, তাই সবসময় হালকা এবং উজ্জ্বল রংয়ের কাপড় পড়ার পরামর্শ থাকবে। কারণ এই অঞ্চলগুলোতে এবং দ্বীপগুলোতে বেশিরভাগ সময় গরমই থাকে।

এসব স্থানে ভ্রমণের সময় শিশু ও বয়স্কদের গরম থেকে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকতে পারে। তাই ছায়ায় থাকা, পানি পান করা, ভিটামিন সি গ্রহণ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তবে ব্যাংকক, উত্তর, উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে এখন বৃষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি। ব্যাংককে বিকেল নাগাদ ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। তাই এসময় নাইট মার্কেট বা খোলা স্থানে যাওয়ার সময় সঙ্গে ছাতা বা রেইনকোট রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর এখানে সেভেন ইলেভেনের মতো সুপারশপগুলোতে একবার ব্যবহারের জন্য ছাতা এবং রেইনকোট পাওয়া যায়।

তবে বৃষ্টিতে ভিজে গেলে পরবর্তীতে গোসল করার পরামর্শ দিয়েছে শহর কর্তৃপক্ষ।

;

থাইল্যান্ডের খাও খিও ওপেন জু'তে এক বেলা



মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, থাইল্যান্ড
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ব্যাংকক আর পাতায়ার মাঝামাঝি চনবুড়ির আমফুর শ্রী রাচা শহর। তাই পাতায়া থেকে ব্যাংককে ফেরার সময়ই এখানকার 'খাও খিও ওপেন জু' ঘুরে আসতে পারেন পর্যটকরা।

থাইল্যান্ডে ঘুরতে আসা বাংলাদেশি ও ভারতীয় পর্যটকদের পছন্দের জায়গা ব্যাংককের সাফারি পার্ক। সেখানে ডলফিন, হাতি, ওরাং ওটাং, শুশুক, কাউবয়, সাই-ফাই এমন শোগুলো শিশুরা খুবই উপভোগ করে। তবে খরচ কিছুটা বেশি এবং প্রায় পুরো একদিন সময় ব্যয় করতে হয় সেখানে। এছাড়াও বন্য প্রাণিকে প্রদর্শনের স্থানটিও অনেক বেশি কৃত্রিম।

তাই কোলাহল এড়িয়ে যারা মুক্ত চিড়িয়াখানা বা ওপেন জু ঘুরতে চান, তাদের জন্য উপযুক্ত খাও খিও।

মুক্তভাবে ঘুরে বেরাচ্ছে হরিণের পাল

গত রোববার (২০ আগস্ট) আমরা গিয়েছিলাম খাও খিও ওপেন জু দেখতে। বিদেশিদের জন্য ২২০ বাথে প্রবেশের টিকেট মেলে। সাফারি পার্কের মতো হট্টগোল নেই এখানে। আর পরিবেশটাও অনেকটা শান্ত। চিড়িয়াখানায় ঢুকতেই আমাদের স্বাগত জানালো হরিণের দল। একেবারেই মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করছে এই হরিণেরা। সব বয়সের মানুষেরা উপভোগ করছেন তাদের সান্নিধ্য। ২০ বাথে দীর্ঘাকার ঘাস কিনে হরিণদের গায়ে হাত বুলিয়ে খাওয়ানো যায়। শিশুদের জন্য হরিণের সঙ্গে খেলা করাটা খুবই উপভোগ্য। শিশুরা হয়তো এতো বেশি খাওয়াচ্ছিল যে হরিণের পেটে আর জায়গা নেই। অবশ্য শিশুদের সঙ্গে খেলায় মেতে উঠতে কোন কার্পণ্য নেই ওদের।

এখানে সকাল ১০টায় পেঙ্গুইন প্যারেড দেখতে যাই আমরা। সারি বেঁধে পেঙ্গুইনরা এসে জলাশয়ের ধারে দাঁড়ায়। এরপর ফ্যাশনোর মতো করে আবার হাঁটা দেয়। পেঙ্গুইনদের খেলা উপভোগ করে সকলে। একসঙ্গে প্রায় ১০০ জন এই প্যারেড উপভোগ করতে পারেন। এরপর সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব। মাত্র ৫০ বাথে ছোট মাছ কিনে খাওয়ানো যায় পেঙ্গুইনদের। আমাদের হাতের মাছগুলো ছিনিয়ে নিতে পেছন পেছন হাঁটা দেয়। এটা সত্যিই অপূর্ব দৃশ্য৷ এরপর পেঙ্গুইনদের ঝাঁকে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার সুযোগতো পাওয়া যাবেই।

থাইল্যান্ডের খাও খিও ওপেন জু

খাও খিও ওপেন জু শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য নয়। বরং মানুষকে বন্য প্রাণির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া, বন্ধুত্ব স্থাপনের জন্য কাজ করে। তাই চিড়িয়াখানার মূল ৪টি বৈশিষ্ট্য হিসেবে বলা হয়েছে, জ্ঞান, বন্য প্রাণি সংরক্ষণ, প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন ও বিনোদন।

এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় ফ্লেমিঙ্গো পাখির প্যারেড দেখতে যাই আমরা। দুধ রাঙ্গা শরীরে ওপর আবছা লাল ডানার পাখিগুলোকে প্রথমে বক ভেবে ভুল করি আমি। তবে সৌন্দর্যে এরা বককে তো ছাড়িয়ে গেছে। সবুজ ঘাসের ওপর ফ্লেমিঙ্গোর প্যারেড শিশুরা উপভোগ করে। এরপর সেখানে ফ্লেমিঙ্গোদের লাইনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার আকর্ষণীয় পর্ব।

পেঙ্গুইনের প্যারেড শো

প্রায় ২ হাজার একরের ওপর স্থাপিত এই চিড়িয়াখানা দেখতে হলে গলফ কার্ট ভাড়া নেওয়া যায়। ২০০ বাথে ৪ ঘণ্টার জন্য গলফ কার্ট ভাড়া নিয়ে নিজেরাই চালানো শুরু করলাম। না হলে পা ব্যথা হয়ে যাবে। ইউরোপিয়ান পর্যটকদের বড় কয়েকটি দল ট্রেন কার্ট নিয়ে ঘুরছিল। এক একটা কার্টে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন যাত্রী বসতে পারেন।

সকাল ১১টায় রয়েছে এলিফ্যান্ট শাওয়ার শো। গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে বিশালকার কাঁচের একুরিয়ামে হাতির গোসল আর খেলা উপভোগ করা যায়। এসময় উপস্থাপিকা জানান, এটাই হাতির স্বাভাবিক গোসল প্রক্রিয়া। এর জন্য হাতিকে কোন জোরপূর্বক প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। তবে এই কথার পুরোটা বিশ্বাস হয়নি আমাদের।

আমরা মাটির নিচ থেকে উপভোগ করলাম হাতির প্রদর্শনী। পুকুরের সমান গভীর আর বিস্তৃত একুরিয়ামে যখন হাতি নামলো এবং পরে এপাশ ওপাশ করে সাঁতারনো শুরু করলো, শিশুরা চিৎকার করে আনন্দ প্রকাশ করলো।

এখানে হাতির সঙ্গে ছবি তোলা এবং পরে হাতিদের খাওয়ানোর ব্যবস্থাও রয়েছে। যা সব বয়সীরা উপভোগ করছিল।

বিশালকার কাঁচের একুরিয়ামে হাতির গোসল

সাফারির সঙ্গে এই প্রাকৃতিক চিড়িয়াখানার বড় একটি পার্থক্য হচ্ছে এখানে অ্যালকোহল পান নিষিদ্ধ এবং উচ্চ স্বরের গান বাজনা নেই। তাই শান্ত পরিবেশে বেড়ানো যায়। শিশু ও বয়স্কদের জন্য খুবই উপযোগী।

সকাল সাড়ে ১১টায় এখানে রয়েছে শুশুকের প্রদর্শনী। বল এবং রিং নিয়ে নানা খেলা প্রদর্শন করে শুশুক।

প্রদর্শনীগুলো শেষ করে আমরা গেলাম অন্য প্রাণিদের দেখতে। এর মধ্যে জিরাফ এবং হিপ্পোকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা আছে। পানি থেকে বিশাল হা করে ছুড়ে দেওয়া সবজি গিলে নিচ্ছিল হিপ্পোরা৷

খাও খিও ওপেন জু'তে প্রায় ৮ হাজার বন্য প্রাণি রয়েছে। নানা জাতের বাঘ, ভালুক, পাখি, বানর, দেখে দুপুর নাগাদ আমরা বের হলাম চিড়িয়াখানা থেকে।

ব্যক্তিগত এবং দলগতভাবে ভ্রমণ করা যায় ষাট বছরের পুরনো এই চিড়িয়াখানায়। দলীয় ভ্রমণের ক্ষেত্রে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে পূর্বে অবহিত করলে বিশেষ ডিসকাউন্ট এবং ট্রেন কার্টের সুবিধা উপভোগ করা যায়।

;