গুলশানে ভ্রামণিকদের ব্রেকফাস্ট আড্ডা
ভ্রামণিক ও ভ্রমণ লেখকদের এক নিয়মিত ‘ব্রেকফাস্ট আড্ডা’য় অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, ভ্রামণিকরা বিদেশে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক দূত। মাতৃভূমির ইতিবাচক দিক তুলে ধরা এবং দেশকে সমৃদ্ধ করতে বিদেশ থেকে নিয়ে আসতে হবে সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য।
আড্ডাপ্রিয়রা বলেন, এই আড্ডাকে কেন্দ্র করে ভ্রমণ আন্দোলন এককালে ভ্রমণ ও সাহিত্যের ইতিহাসে জায়গা করে নেবে। আড্ডায় মাহমুদ হাফিজ সম্পাদিত ‘ভ্রমণগদ্য’ কাগজের প্রশংসা করে বলা হয়, ভ্রমণকেন্দ্রিক এই কাগজ ভ্রমণ-সাহিত্যকে বিকশিত করার ক্ষেত্রে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।
বৃহস্পতিবার (০৫ ডিসেম্বর) গুলশানের লেকউড রেসিডেন্সি হোটেলে আয়োজিত আড্ডায় অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় অবস্থানরত উজবেকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মসয়ূদ মান্নান। সঞ্চালনা করেন আড্ডার তিন উদ্যোক্তার অন্যতম ভ্রমণ লেখক ও সাংবাদিক মাহমুদ হাফিজ।
আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন আড্ডার অন্যতম উদ্যোক্তা ভ্রামণিক সৈয়দ জাফর ও ভ্রমণ লেখক কামরুল হাসান। ভ্রামণিক ও ভ্রমণ লেখকদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন আবাম ছালাউদ্দিন, নুরুল করিম নাসিম, ফারুক হাসান, মঞ্জুরুল ইসলাম, আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল, এলিজা বিনতে এলাহী প্রমুখ।
আড্ডায় রাষ্ট্রদূত মসয়ূদ মান্নান বলেন, ভ্রমণ আড্ডা ও ভ্রমণগদ্য প্রকাশ দুটোই ব্যতিক্রমী একটা বিষয়। এই আড্ডা ও কাগজ দেশের ভ্রমণকে বিকশিত করবে এবং একসময় ভ্রমণ-সাহিত্যের ইতিহাসে জায়গা করে নেবে।
ফারুক হাসান জানান, তার লেখা ‘পশ্চিমে যাও হে যুবক’ ভ্রমণগদ্য একসময় সাড়া ফেলেছিল। বয়সের কারণে ভ্রমণ কমিয়ে দিলেও ভ্রমণ, ঐতিহ্য ও পরিবেশ নিয়ে লেখালেখি অব্যাহত রেখেছেন তিনি।
কবিতা ও গান দিয়ে নিজের লেখালেখি শুরু বলে জানান আবাম ছালাহউদ্দিন। তবে চায়না আন্তর্জাতিক বেতারে কাজ করতে গিয়ে প্রচুর ভ্রমণ করেছেন এবং বেতারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা।
নুরুল করিম নাসিম বলেন, ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে আমার পড়াশুনা, কাজকর্ম। আমি কথাসাহিত্য নিয়ে কাজ করি। ভ্রমণসাহিত্যও আমার পছন্দের বিষয়।
মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, আমি গত কয়েকবছর ধরে ঢাকা-ভ্যাঙ্কুভার করছি। লেখালেখি না করলেও ভ্রমণ ভালো লাগে।
কামরুল হাসান জানান, কবিতা ও গল্প দিয়ে লেখালেখি শুরু করলেও ভ্রমণ আগ্রহ থেকে তিনি ভ্রমণরচনা শুরু করেন এবং ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া ও উজবেকিস্তানের ওপর তিনটি বই লিখেছেন তিনি।
‘গাইতে গাইতে গায়েন’ বলে নিজেকে উল্লেখ করেন সৈয়দ আবু জাফর। এলাকায় বইয়ের পাঠাগার করতে গিয়ে প্রচুর বই কিনতেন। কেনা থেকে পড়া। পড়া থেকে ভ্রমণ। এখন রীতিমতো ভ্রমণ ও প্রকাশনার ব্যবসায়ে নিয়োজিত হয়েছেন তিনি।
মাহমুদ হাফিজ বলেন, সমালোচনা সাহিত্যে ভ্রমণসাহিত্য কিছুটা উপেক্ষিত বলে বাঁকবদলের বিষয়টি এখনও চিহ্নিত হয়নি। আজ ভ্রমণ যেমন হচ্ছে, ভ্র্রমণসাহিত্যও নতুন মোড় নিয়েছে। আমাদের এই আড্ডা ভ্রমণ এবং ভ্রমণ থেকে সৃজিত সাহিত্য কেন্দ্র। এই আড্ডা বা ভ্রমণগদ্য মুক্ত আলোচনা ও লেখালেখির প্ল্যাটফর্ম।
আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল জানান, ভ্রমণ নিয়ে তার সর্বশেষ উদ্যোগ—‘দুইবাংলার ভ্রমণকথা’ নামে বই প্রকাশনা। ভ্রমণ নিয়ে বহু কাজ হয়েছে, তবে এই কাজটি এখনও হয়নি।
এলিজা বিনতে এলাহী বলেন, আমি ফুলটাইম ট্রাভেলার, পার্টটাইম শিক্ষক। ‘হেরিটেজ ট্যুরিজম’কে বিকশিত করার লক্ষ্যে তাঁর ভ্রমণের শুরু উল্লেখ করে বলেন, দেশে প্রচুর হেরিটেজ স্পট থাকলেও পর্যটন বিকাশের ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত অপ্রতুলতা আছে।
আড্ডার এ পর্বের আয়োজক কবি-ভ্রামণিক আবদুর রব বলেন, সাংবাদিকতা দিয়ে শুরু করলেও, কনসালটেন্সি পেশার সূত্রে দেশে বিদেশে প্রচুর ঘুরতে হয়েছে তাকে। এ নিয়ে লিখেছেনও। সাইপ্রাস নিয়ে লেখা তার ভ্রমণগদ্য বেশ আলোচিত হয়।
উল্লেখ্য, সৈয়দ আবু জাফর, কামরুল হাসান ও মাহমুদ হাফিজের উদ্যোগে ভ্রমণ আড্ডাটি এক বা দুইমাস অন্তর আয়োজন করা হয়। রাজধানীর বিভিন্ন রেস্তোরায় প্রাতঃরাশের সময় ভ্রামণিকরা সমবেত হন এবং একেকদিন একেকজন প্রাতঃরাশ স্পন্সর করে থাকেন।