ডিমের দাম বাড়তি
ঢাকা: রাজধানীতে কয়েক সপ্তাহ থেকে বাজারে ফার্মের ডিমের দাম ঊর্ধ্বমুখী। বর্তমানে প্রতি হালি (লাল) ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা, যা বছরের শুরুতে ছিল ২৫ থেকে ২৬ টাকা। পরে কিছুটা বেড়ে ২৮ থেকে ৩০ টাকায় দীর্ঘদিন অবস্থান করছিল।
মূলত রোজার ঈদের পরেই ডিমের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। ফলে উৎপাদন, পাইকারি এবং খুচরা বাজার এক যোগে দাম বাড়তে থাকে। এসময় বাজারে প্রতি হালি হাঁসের ডিম ৪৫ এবং দেশি মুরগির ডিম প্রতি হালি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে বর্তমান বাজার মূল্যের তুলনা করে দেখা গেছে, আট বছরে প্রতি হালি ডিমে দাম বেড়েছে যথাক্রমে ফার্ম লাল এবং সাদা ১০ থেকে ১১ টাকা, দেশি ১৯ থেকে ২০ টাকা এবং হাঁসের ডিমে বেড়েছে ১৫ থেকে ১৬ টাকা পর্যন্ত।
ডিমের বাজার দর বৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিআইএ) সভাপতি মসিউর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, “গত বছর এবং এবছরের শুরুতে খামারিরা ব্যবসায় লস দিয়েছে। সেই সময় উৎপাদন পর্যায়ে প্রতি হালি বিক্রি হয়েছে ১৯ টাকা ২০ টাকায়। বর্তমান যে বাজার তা বেশি বলা ঠিক হবে না। বাজার স্বাভাবিক রয়েছে। হাঠাৎ ডিমের দাম কমে যাওয়া এখন মনে হচ্ছে দাম বেড়েছে।”
তিনি জানান, “খামারি পর্যায়ে প্রতি হালি লাল এবং সাদা ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা, যা পাইকারি পর্যায়ে ৩০.৫০ টাকা থেকে ৩১ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আর খুচরা পর্যায়ে যে দাম, তা ব্যবসায়ীদের বিষয়। তবে অতিরিক্ত দাম অধিক মুনাফার পক্ষে বিপিআইএ সমর্থন করেনা।”
নিত্যপণ্যের অন্যতম ডিমের মূল্য বৃদ্ধিতে ভোক্তা পর্যায়ে সমালোচনা হচ্ছে। মোরশেদ আলম বেসরকারি চাকরিজীবী, সোমবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর কাওরান বাজার থেকে অন্যান্য নিত্যপণ্যের সঙ্গে এক ডজন (১২টি) ফার্মের লাল ডিম কিনেছেন। এর দাম ১০৫ টাকা পড়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে হালি হিসেবে ৩৬ টাকা। তিনি বলেন, “দুই সপ্তাহ আগেও প্রতি হালি ডিমের দামছিল সর্বোচ্চ ৩২ টাকা, তা এখন বেড়ে হয়েছে ৩৬ টাকা। যে কোন পণ্যের দাম বাড়লে আমাদের ঋণ করতে হয়। দোকানিরা যেভাবে দাম বাড়াচ্ছে সেভাবে চাকরি বা কর্মজীবীদের বেতন বাড়ছে না।”
একই চিত্র দেখা গেছে, রাজধানীর মুগদা, শান্তিনগর, ফকিরাপুল রামপুরা বাজারে। তবে ভিন্ন মূল্য দেখা গেছে পাড়া-মহল্লা বা রাস্তার পাশের মুদির দোকনে। তারা প্রতি হালি লাল-সাদা ডিম বিক্রি করছে ৩৮ টাকায়।
মগবাজার এলাকার মুদির দোকানকার মোরশদ আলম বলেন, “বাজার থেকে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে ডিম আনা হয় শুধুমাত্র গ্রাহকের চাহিদার কথা বিবেচনা করে। লাভের বিষয় তেমন একটা থাকেনা। ডিমের মধ্যে ভাঙা ও পাঁচ পরে। এর লস পাইকার দিবেনা। তাই বাজার থেকে হালিতে ১ বা দুই টাকা বেশি দামে বিক্র করতে হয়। দোকানে রাখা হয় ক্রেতা ডিমের জন্য এসে অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে থাকেন। ”
(২০১০ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত প্রতি হালি প্রতি বছরে গড় হিসেবে ডিমের বাজার মূল্য) ২০১৭ সালে ফার্মের লাল এবং সাদা ডিম ৩২.০২ টাকা, দেশি ৫৪.৫৪ টাকা, হাঁসের ডিম ৪৯.০২ টাকা। ২০১৬ সালে লাল এবং সাদা ডিম ৩৪.২২ টাকা, দেশি ডিম ৪৯.৯৬ টাকা এবং হাঁসের ডিম ৪৪.৫৬ টাকা।
২০১৫ সালে লাল-সাদা ৩৪.০৫ টাকা, দেশি ৪৮.৭৫ টাকা এবং হাঁসের ডিম ৪৩.৪৬ টাকা। ২০১৪ সালে লাল-সাদা ডিম ৩০.০৭ টাকা,দেশি ৪১.৬০ টাকা এবং হাসের ডিম ৩৮.৮১ টাকা।
২০১৩ সালে লাল-সাদা ৩৪.৩৮ টাকা, দেশি ৪২.৮৮ টাকা হাসের ডিম ৩৯.৯৭ টাকা। ২০১২ সালে প্রতি হালি লাল-সাদা ডিম ৩৬.২১, দেশি ৩৯.৬৭ টাকা, হাঁসের ডিম ৪১ টাকা।
২০১১ সালে প্রতি হালি লাল ডিম ২৪.৯৬ টাকা, সাদা ২৪.৮৩ টাকা, দেশি ৩১ টাকা এবং হাঁসের ডিম ৩০.৮৩ টাকা। ২০১০ সালে প্রতি হালি লাল-সাদা ২৫.৩৩ টাকা,দেশি ৩০.৩৩ টাকা এবং হাঁসের ডিম ২৯.৮৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে।