বিনামূল্যেও নিচ্ছে না ‘মাথার চামড়া’
হেমায়েতপুর চামড়া শিল্পনগরী, সাভার ঘুরে: দেশে চামড়াজাত পণ্য তৈরিতে অবদান রাখছে পশুর মাথার চামড়া। কোরবানির মৌসুমে অনেকেই মাথার চামড়া প্রক্রিয়ার কাজ করেন। বিগত বছরগুলোতে এই চামড়ার ভালো চাহিদা ছিল। কিন্তু এ বছর অনেক জায়গায় বিনামূল্যে দিতে চাইলেও এ চামড়া নিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার (২৪ আগস্ট) সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্প এলাকায় ১২শ' পিস গরুর চামড়া বিক্রি করতে এসেছেন গাজীপুর আল জামিয়া দারুল উলুম মাদরাসা হারিণাল এর শিক্ষকরা। গরুর চামড়াগুলো নিলেও মাথার চামড়া বিনামূল্যেও রাখতে চাইছেন না ট্যানারি কর্তৃপক্ষ। এমনকি সেখানকার শ্রমিকরাও সেই চামড়ার দায়িত্ব নিচ্ছেন না। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন চামড়া বিক্রি করতে আসা মানুষরা।
তারা বলছেন, বিগত বছর গরুর মাথার চামড়া ৪০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন তারা। কিন্তু এ বছর কেউ কিনতে তো চাচ্ছেই না, এমনকি বিনামূল্যেও এসব চামড়া রাখছেন না।
চামড়া বিক্রি করতে আসা মাজিদুল ইসলামও একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, গরুর মাথার চামড়া এখন বোঝা মনে হচ্ছে। টাকা দিয়েও এগুলো লেবার দিয়ে ফেলা যাচ্ছে না। কেউ এই ঝামেলা নিতে চায়না।
দেশে জুতা, ব্যাগসহ ছোট ও মাঝারি আকারের বিভিন্ন চামড়াজাত পণ্যের, একটি অংশ তৈরি হয়ে থাকে পশুর মাথার চামড়া দিয়ে। সারাবছর জবাইকৃত পশুর পাশাপাশি, কোরবানি ঈদে এসব চামড়ার বড় একটি অংশ সংগ্রহ করে থাকেন ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ীরা। শুধু চামড়াই নয়, বিক্রি হয়ে থাকে পশুর লেজের চুল। এসব দিয়েও অনেক ধরনের পণ্য তৈরি হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদে অন্যান্য কারখানা ছুটিতে থাকায়, বাড়তি আয়ের জন্য এসব চামড়া প্রক্রিয়ার কাজে যোগ দেন বিভিন্ন পেশার মানুষ।
জানা গেছে, হাজারীবাগে পশুর মাথার চামড়া ও লেজ প্রক্রিয়াজাতের বেশকিছু কারখানা ছিল। কিন্তু সেসব ছোট ট্যানারিগুলো সাভারে এখনও প্লট বরাদ্দ পায়নি। ফলে ট্যানারিগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে গেছে। তাই মাথার চামড়া প্রক্রিয়াজাতের কোন আলাদা ট্যানারি এখানে নেই।
পশুর মাথার চামড়া কেন রাখা হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্যানারির সুপারভাইজার বলেন, গরুর মাথার চামড়াগুলো আলাদাভাবে প্রক্রিয়াজাত করতে হয়। সেগুলোর জন্য আলাদা কিছু ছোট ট্যানারি রয়েছে, কিন্তু এখানে সেগুলো প্লট বরাদ্দ পায়নি, তাই এগুলো কেউ রাখতে চাইছে না। এই মাথার চামড়া রাখাও অনেকটা ঝামেলার। কারণ নির্দিষ্ট সময় প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলে এগুলো ফেলে দিতে হয়, সেই ঝামেলা কেউ নিতে চায়না।
এদিকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চামড়ার প্রতিটি অংশের পরিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে এ খাত সংশ্লিষ্টরা তৎপর থাকলেও, দেশের বাহির থেকে চামড়াজাত পণ্য আমদানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। এ শিল্পের উন্নয়নে সরকারের বিশেষভাবে নজর দেয়ার দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।