মামলার এজাহার বদল

পুঠিয়া থানার ওসির বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর পুঠিয়া থানার ওসি শাকিল উদ্দিন আহমেদ বাপ্পির বিরুদ্ধে মামলার এজাহার বদলে দেওয়ার অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে চিফ জুডিশিয়াল তদন্ত শেষ করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

একই সঙ্গে ওসি শাকিল উদ্দিন আহমেদ বাপ্পিকে কেন সাময়িক বরখাস্ত করা হবে না এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার আবু বকর সিদ্দিক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত।

বিজ্ঞাপন

গত ১১ জুন পুঠিয়ার কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার একটি ইটভাটা থেকে পুঠিয়া উপজেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর ১৮ জুন জেলা পুলিশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, নুরুল ইসলামের সমকামিতার অভ্যাস ছিল। এলাকার এক কিশোরকে তিনি এ কাজে বাধ্য করতেন। ১০ জুন রাতেও নুরুল ইসলাম ওই কিশোরের সঙ্গে সমকামিতায় লিপ্ত হন। একপর্যায়ে ওই কিশোর তাকে ইটের আঘাতে হত্যা করে। তাই ওই কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

অন্যদিকে নিহতের পরিবার বিষয়টিকে ভিত্তিহীন দাবি করে। পরিবারের ভাষ্যমতে, গত ২৪ এপ্রিল উপজেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে নুরুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ নির্বাচনে পুঠিয়া থানার ওসি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নুরুলকে পরাজিত করান। ফলে সাধারণ সম্পাদক হন আবদুর রহমান পটল। এ ফলাফলের বিরুদ্ধে নুরুল ইসলামসহ পরাজিত তিন প্রার্থী আটজনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। আদালত শ্রমিক ইউনিয়নের সব কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। নুরুল ইসলাম যে রাতে খুন হন সেদিনই আদালতের জারিকারক উপজেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে গিয়ে আদালতের এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তার সঙ্গে নুরুল ইসলামও ছিলেন। তখন আসামিদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর রাত সাড়ে ৮টা থেকে নুরুল ইসলামের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন সকালে ইটভাটায় নুরুল ইসলামের মরদেহ পাওয়া যায়।

পরে নিহতের মেয়ে নিগার সুলতানা পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে পুঠিয়া থানায় একটি হত্যার এজাহার জমা দেন। ওসি সেটি সংশোধন করতে বলেন। নিগার সুলতানা ওসির কথামতো সংশোধন করে ওই পাঁচজনকে সরাসরি আসামি না করে 'সন্দেহজনক' হিসেবে তাদের নাম উল্লেখ করেন।

এরপর সেটা ওসিকে দিলে তিনি 'দেখছি' বলে নিগারকে বাসায় চলে যেতে বলেন। কিন্তু নিগার সুলতানার এজাহার মামলা হিসেবে রেকর্ড করেননি ওসি।

পরিবারের দাবি, ওসি শাকিল উদ্দিন আহমেদ নিগার সুলতানার কাছ থেকে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে রেখেছিলেন। ওই সাদা কাগজেই পরবর্তীতে মামলার এজাহার করা হয়। সেই মামলাটিই এখন তদন্ত করছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। মামলাটিতে এক কিশোরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

গত ৮ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন নিহতের মেয়ে নিগার সুলতানা। রিটে এ বিষয়ে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়। ওই রিটের শুনানি শেষে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিলেন হাইকোর্ট।