শয়তান মুমিনকে পথভ্রষ্টের জন্য রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসে থাকে
শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সিজদা না করায় আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে ইবলিসের প্রতি ছিলো চরম অভিশাপ। যার ফলশ্রুতিতে শয়তানের মানবজাতির সঙ্গে চির শত্রুতা। শয়তান মানুষ ও জিন উভয় শ্রেণীভুক্ত।
শয়তানের নির্দিষ্ট কোনো আকার আকৃতি নেই। প্রয়োজন মোতাবেক স্বেচ্ছায় নিজেদের আকার পরিবর্তন করতে পারে। শুধুমাত্র হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আকার ধারণ করতে পারে না।
এ বিষয়ে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে আমাকে স্বপ্নে দেখে সে ঠিক আমাকেই দেখে। কারণ শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না।’ -সহিহ বোখারি: ১১০
শয়তানের ক্ষমতা নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো- যখন ইবলিস হজরত আদম (আ.)-কে সিজদা না করার কারণে বিতাড়িত শয়তানে পরিণত হয়ে গেল- তখন সে বলল, ‘আমাকে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। আল্লাহ বললেন, তোমাকে অবকাশ দেওয়া হলো। সে বলল, যে আদমের প্রতি অহঙ্কারের কারণে আপনি আমার মধ্যে পথভ্রষ্টতার সঞ্চার করেছেন, সেই আদম সন্তানদের পথভ্রষ্ট করার জন্য আমি অবশ্যই আপনার সরল পথের ওপর বসে থাকব। অতঃপর আমি অবশ্যই তাদের কাছে আসব তাদের সামনে, পেছনে, ডাইনে, বামে সবদিক থেকে। আর তখন আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।’ -সূরা আরাফ: ১৪-১৭
অবশেষে শয়তানকে এমন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যে, সে বনি আদমের শিরায় প্রবেশ করতে পারে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘স্বামীর অনুপস্থিতিতে কোনো স্ত্রীর নিকট তোমরা প্রবেশ করো না। কেননা শয়তান তোমাদের রক্তনালীতে চলমান রয়েছে। আমরা বললাম, আপনার মধ্যেও? তিনি বললেন, আমার মাঝেও। তবে আল্লাহতায়ালা আমাকে তার বিরুদ্ধে সাহায্য করেছেন। ফলে আমি নিরাপত্তা লাভ করেছি।’ -সহিহ বোখারি: ৭১৭১
শয়তান ও শয়তানের দলের লোকদের পরিচয় প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যারা অসৎ পথে থেকেও মনে করে সৎ পথে আছি, তারা মূলতঃ মিথ্যাবাদী। আর এমন মিথ্যাবাদীদের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘শয়তান তাদেরকে বশীভূত করে নিয়েছে, অতঃপর আল্লাহর স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছে। তারা শয়তানের দল। সাবধান! শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্ত।’ -সূরা মুজাদালা: ১৯
শয়তান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করার পর মুমিনকে পথভ্রষ্ট করার জন্য রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসে থাকে। এ বিষয়ে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজ হাতে একটি দাগ দিলেন, অতঃপর বললেন, এটা আল্লাহর সরল সঠিক পথ। এরপর ডানে-বামে দাগ কাটলেন এবং বললেন, এই রাস্তাগুলোর প্রত্যেকটিতে একজন শয়তান দাঁড়িয়ে আছে। যে মানুষকে তার দিকে আহবান করে থাকে। অতঃপর পাঠ করলেন, ‘এটাই আমার সরল সঠিক পথ, এরই অনুসরণ করো। অন্যান্য পথের অনুসরণ করো না, তাহলে (শয়তান) তোমাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে।’ -সূরা আনআম: ১৫৩
বর্ণিত আয়াতের মর্ম ও হাদিসের ভাষ্যে বুঝা যায়, শয়তান রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসে মানুষকে তাদের দিকে বিভ্রান্ত করার জন্য আহবান করে থাকে। শয়তানের চক্রান্ত ও কর্মকাণ্ড কোরআন-হাদিস হতে বিভিন্ন পরিভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে। যা পরিত্যাগ করা প্রতিটি মানুষের জন্য অত্যন্ত জরুরি। শয়তান মানুষকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করে বিপথগামী করে থাকে। শয়তানের সূক্ষ্মচালে পড়ে মানুষের পদস্খলন ঘটে নানাভাবে। এর অন্যতম হলো- ছলনা করা। শয়তান বিভিন্ন কায়দা-কৌশল ও ছলনা করে মানুষকে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করে। তবে শয়তানের কৌশল খুবই দুর্বল।
এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই শয়তানের কৌশল একান্তই দুর্বল।’ -সূরা আন নিসা: ৭৬
এ ছাড়া শয়তান মানুষকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও দিক-নির্দেশনা দিয়ে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করে। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করেছেন। আর সে বলেছিল যে, অবশ্যই আমি তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে একটা নির্দিষ্ট অংশকে আমার দলে টেনে নেব। আমি অবশ্যই তাদের পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দেব, তাদেরকে আদেশ দেব যেন তারা পশুর কর্ণ ছেদন করে এবং তাদেরকে আদেশ করবো যেন তারা আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন করে। বস্তুতঃ যে ব্যক্তি আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়। সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় ও মিথ্যা আশ্বাস দেয়। আর শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়, তা প্রতারণা বৈ কিছু নয়। ওদের ঠিকানা হলো- জাহান্নাম। সেখান থেকে তারা অন্যকোনো আশ্রয়স্থল পাবে না।’ –সূরা আন নিসা: ১১৮-১২১