স্বাগতম নতুন হিজরি সন ১৪৪০

  • মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নতুন বছর ও মাস হলো- নবজীবনের প্রতীক

নতুন বছর ও মাস হলো- নবজীবনের প্রতীক

বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হবে হিজরি নতুন বছর। আজ হিজরি ১৪৩৯ সালের শেষ দিন। বুধবারের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হবে ১৪৪০ হিজরি সন। হিজরি নতুন বছরকে জানাই খোশ আমদেদ। সেই সঙ্গে বার্তা২৪.কম-এর অগণিত পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি রইল নতুন হিজরি বছরের শুভেচ্ছা। নতুন বছর বয়ে আনুক সবার জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি।

বাংলাদেশে হিজরি তারিখ ব্যবহার হয় সীমিতভাবে। যদিও হিজরি সনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগির নানা বিষয়।

বিজ্ঞাপন

ধর্মীয় বিধি-নিষেধের কারণে হিজরি সনকে কেন্দ্র করে তেমন কোনো আয়োজন পরিলক্ষিত হয় না- এটা সত্য। কিন্তু হিজরি তারিখ ব্যবহারের অনীহা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

আমরা জানি, হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের আসমানে গমনের পর থেকে খ্রিস্টাব্দ সাল গণনা করা হয়। আর শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের দিন অর্থাৎ ৬২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে হিজরি সন গণনা করা হয়। হিজরি সন নবী করিম (সা.)-এর সময় থেকে প্রচলিত ছিল না। তার ইন্তেকালের সাত বছর পর দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে ১৭ হিজরি থেকে হিজরি সনের প্রচলন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

হজরত ওমর (রা.) অর্ধ পৃথিবীর শাসনকর্তা ছিলেন। শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি, শাসনাধীন এলাকায় চিঠিপত্র প্রেরণসহ নানাক্ষেত্রে প্রশাসনিক জটিলতা এড়াতে তিনি সমসাময়িক সাহাবাদের পরামর্শক্রমে হিজরি সন প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন।

মুসলিম মানসে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে হিজরি সন। কারণ, মুসলমানদের সব ইবাদত-বন্দেগির সঙ্গে হিজরি সনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাই বিশ্বের মুসলমানরা হিজরি সনকে অন্য সালের তুলনায় অনন্য মর্যাদায় সমাসীন করে থাকেন।

ইসলামি চিন্তাবিদরা মনে করেন, সত্যিকারের আত্মসংশোধন ও আত্মউন্নয়ন ছাড়া নববর্ষ উদযাপন, স্মরণ ও সম্মান প্রদর্শন সার্থক নয়। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও চিন্তার বটে। হিজরি সন মানবাত্মাকে পরিশীলিত ও সংস্কারের মহাসুযোগ বয়ে আনে। এই সুযোগ হলো- আল্লাহতায়ালার স্মরণের মাধ্যমে হৃদয়কে সজীব করার সুযোগ। তাই এই সুযোগকে সর্বোচ্চমাত্রায় কাজে লাগানো উচিত।

হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। এ মাসে পৃথিবীর ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। মহররম মাসের ১০ তারিখেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। তাই মহররম মাসকে উপলক্ষ করে আল্লাহতায়ালার সামনে মানুষের দাসত্ব ও বিনম্রতা প্রকাশ করা বেশি জরুরি। একই সঙ্গে দুনিয়ার সব সৃষ্টির সঙ্গে উত্তম আচরণ, ভালোবাসা প্রদর্শন, আত্মীয়-স্বজন-বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতজনসহ প্রত্যেকের সঙ্গে আন্তরিকতা বৃদ্ধি ও হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে শান্তিময় সমাজ গড়া দরকার।

মহররম মাসে অনন্য মর্যাদায় আসীন কিছু নফল ইবাদতের মোক্ষম সুযোগ ঘটে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মুসলমানরা আল্লাহতায়ালার দিকে মনোযোগ জোরদার করেন। মহররমের ১০ তারিখ আশুরার দিন দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে খাবার প্রদানসহ তাদের খোঁজখবর নিয়ে থাকেন। এর মাধ্যমে পরস্পরে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়, সামাজিক বন্ধন গভীর থেকে গভীরতর হয়।

ইসলামের বিধান মতে, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা এবং বিশেষ করে রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ যোগাযোগ রক্ষা করে চলা সওয়াবের কাজ। এ কাজ মানুষের আয়ু বৃদ্ধির মাধ্যমও বটে।

মানুষ হিসেবে আমরা এটা মানি ও জানি যে, জীবনচলার পথে সামান্য হলেও কিছু বিরতি দরকার। যাতে জীবনের একঘেয়েমিপনা কেটে যায়। কারণ, একঘেয়ে মানুষ জীবনে সৃষ্টিশীল কিছু উপহার দিতে পারে না। সে হিসেবে বলা যায়, নতুন বছর ও মাস হলো- নবজীবনের প্রতীক। নতুন চিন্তা, কাজ ও দৃষ্টিভঙ্গির উন্মোচক। আর এভাবেই হিজরি নববর্ষ হয়ে উঠতে পারে আমাদের জীবনে সৃষ্টিশীলতা জন্ম থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মাধ্যম। নতুন বছরের সূচনালগ্নে আমরা এই প্রত্যাশা করি।