বাংলাদেশের তুলনায় অর্ধেক খরচে হজ করেন নেপালিরা

  • জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নেপাল হজ কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শোয়েব, ছবি: বার্তা২৪

নেপাল হজ কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শোয়েব, ছবি: বার্তা২৪

মক্কা মোকাররমা (সৌদি আরব) থেকে: বাংলাদেশের তুলনায় অর্ধেক খরচে হজ করেন নেপালের হাজীরা। অবিশ্বাস্য হলে এটাই সত্যি। বাংলাদেশি মুদ্রার মানে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয়ে চলতি বছর হজ করেছেন নেপালের ১২শ’ হাজী। বার্তা২৪.কমের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এমন তথ্যই জানালেন নেপাল হজ কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শোয়েব (৬৮)।

‘বাংলাদেশ আমার প্রিয় দেশ। দেশটি আমার সন্তানকে চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা’- বলছিলেন মোহাম্মদ শোয়েব।

বিজ্ঞাপন

তিনি জানান, আমাদের হাজীরা শান্তশিষ্ট। তারা সব সময় সংঘবদ্ধভাবে চলেন। তাদের চাহিদা কম। সবচেয়ে বড় কথা, তারা টিম লিডারদের কথা মেনে চলেন।

এবারো সৌদি সরকার মুসলমান জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে আমাদের ১২শ’ হাজীর কোটা বেঁধে দিয়েছে। সেই কোটা পরিপূর্ণ করেই আমরা চলতি মৌসুমে হজ পালন করেছি।

বিজ্ঞাপন

আমাদের হজ প্যাকেজ দুই লাখ ১৫ হাজার নেপালি রুপি। মানের প্রশ্নে নেপালি রুপির দর বাংলাদেশের টাকার চাইতে কম। প্রতি একশ’ নেপালি রূপিতে পাওয়া যায় বাংলাদেশের ৭২ টাকা। সে হিসেবে হজে জনপ্রতি আমাদের সবকিছু মিলিয়ে খরচ পড়ে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৯৪ টাকা।

এই অর্থে হাজীদের খরচের বিষয়টি নিশ্চিত করে নেপাল হজ কমিটির সমন্বয়কারী ও মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইসহাক (৩১) জানান, আমাদের এবার হাজীদের পরিবহনে এয়ার এরাবিয়ায় জনপ্রতি ভাড়া গুনতে হয়েছে ৮৭ হাজার ৬শ’ রুপি। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৩ হাজার টাকার মতো। অথচ বাংলাদেশি হাজীদের পরিবহনে গুনতে হয় প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

দিন যাচ্ছে, সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার খরচ বাড়ছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ-১ এর আওতায় হজে যেতে এবার খরচ ছিলো- ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯২৯ টাকা, যা গত বছর ছিল ৩ লাখ ৮১ হাজার ৫০৮ টাকা। সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ-২ এর আওতায় এবার ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৯ টাকা খরচ হয়েছে। যা গত বছর ছিলো- ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৫৫ টাকা। এই হিসেবে সরকারিভাবে গতবারের থেকে এবার প্যাকেজ অনুযায়ী ১৬ হাজার ৪২১ টাকা থেকে খরচ বেড়েছে ১২ হাজার চার টাকা।

নেপালের তুলনায় বাংলাদেশের হাজীদের খরচের এই পার্থক্যে হতবাক অনেকেই। খরচ বেড়ে যাওয়ায় সামর্থ্যে কুলিয়ে উঠতে পারেন না অনেকে। যে কারণে অনেকের শেষ পর্যন্ত হজে আসার স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়।

এর কারণ কি? প্রশ্ন করেছিলাম হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিমকে।

উত্তরে তিনি বলেন, ‘মূল কারণ হচ্ছে পরিবহন ভাড়া। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্স বর্তমানে হজযাত্রী বহন করছে। দিন যাচ্ছে বিমান ভাড়া বাড়িয়েই চলছে তারা। সৌদি এয়ারলাইন্সও অনুসরণ করছে বিমানকে।

বহু ফোরামে এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করে অন্যের বিরাগভাজন হয়েছি। আমি বলতে চাই, কাল যদি দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের কথা ভেবে বিমান ভাড়া কমিয়ে দেয়, তবে সৌদি এয়ারলাইন্স ভাড়া কমিয়ে দেবে। দু’টি বিমান সংস্থার মধ্যে কোনো প্রতিযোগিতা না থাকায় এর মাশুল গুনছে জনগণ।

আমাকে বলা হয়েছে, বিমান এই রেটে যাত্রী পরিবহন না করলে আরো ডুববে। আমার প্রশ্ন বিমানের ব্যবস্থাপনাগত অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে লোকসানের বোঝা হাজীরা কেন টানবেন?

এজন্য এই মনোপোলি মার্কেট থেকে বেড়িয়ে আসতে আমরা বরাবরই দাবী করছি থার্ড ক্যারিয়ার হিসেবে অন্য বিমান সংস্থাকে প্রতিযোগিতায় আনতে। তখন হজের খরচ কমার পাশাপাশি দেড় মাস সৌদিতে থাকতে হবে না হাজীদের। খরচও কমবে হজপালনে।