ভ্রমণ জ্ঞানের দরজা খুলে দেয়

  • মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ভ্রমণ জ্ঞানের দরজা খুলে দেয়, ছবি: সংগৃহীত

ভ্রমণ জ্ঞানের দরজা খুলে দেয়, ছবি: সংগৃহীত

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশ তাই দেশি-বিদেশি পর্যটক ও দর্শণার্থীদের নিকট সমান জনপ্রিয় এবং সমাদৃত। ১৯৮০ সাল থেকে প্রতি বছর ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘পর্যটন শিল্পের বিকাশে তথ্যপ্রযুক্তি।’

বাংলাদেশেও দিন দিন পর্যটন বিকশিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে এটা জাতীয় আয়ের অন্যতম মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। এক হিসেবে দেখে গেছে, বিগত অর্থবছরে দেশের জাতীয় আয়ে ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের প্রত্যক্ষ অবদান ছিলো- ৪ হাজার ২শ’ ৭৫ কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

পর্যটনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের ভ্রমণকারীদের সঙ্গে সর্ম্পক গড়ে উঠে। এর ফলে পারস্পরিক সহনশীলতা, সামাজিক রীতি-নীতি, সাংস্কৃতিক ভাব, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং অর্থনৈতিক চিন্তাধারার উপযোগীতাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া যায়।

ইসলাম ধর্মেও ভ্রমণের নির্দেশনা রয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিকোণে ভ্রমণ হতে পারে ইবাদত, বিনোদন কিংবা ব্যবসার উদ্দেশ্যে। আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি বিস্ময়কর। তিনি কত রূপে, কত আঙ্গিকে এই সুন্দর পৃথিবীকে সৃষ্টি ও সুসজ্জিত করেছেন এর বর্ণনা দেওয়া দুরূহ। তার অপরূপ সৃষ্টিকে স্বচক্ষে দেখার জন্য তিনি মানুষকে ভ্রমণের আদেশ দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আপনি বলুন, (হে প্রিয় হাবিব) তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং দেখ, কীভাবে সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। তারপর আল্লাহ পুনরায় সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।’ -সূরা আনকাবুত: ২০

এ ছাড়া পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে ভ্রমণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে বলা হয়েছে। আল্লাহতায়ালার প্রত্যক্ষ নির্দেশের কারণেই ‘ভ্রমণ’ একটি স্বয়ংক্রিয় ইবাদতে পরিণত হয়েছে। বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় ভ্রমণকালীন ইসলামের বিশেষ কিছু বিধানের দিকে তাকালে। আল্লাহতায়ালা ভ্রমণের সময় নামাজ এবং রোজার ব্যাপারে বিশেষ ছাড় দিয়েছেন। চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজে দুই রাকাত মাফ করেছেন এবং সুন্নত নামাজ ইচ্ছাধীন করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যখন তোমরা ভ্রমণে থাক, তখন নামাজ সংক্ষেপ করলে কোনো দোষ নেই।’ -সূরা নিসা: ১০১

ভ্রমণকে বলা হয় জ্ঞানসমুদ্রের সন্ধান। হাজার কর্মব্যস্ততার মাঝে শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য এবং জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে, ছোট-বড়, ধনী-গরিব, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে দেশভ্রমণ প্রতিটি মানুষের জন্য প্রয়োজন।

ভ্রমণের কারণে রমজানের রোজা অন্য সময়ে রাখার অনুমতি দিয়েছে ইসলাম। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হয় অথবা ভ্রমণে থাকে, তাহলে সে যেন অন্য সময় রোজাগুলো পূর্ণ করে নেয়।’ -সূরা বাকারা: ১৮৪

ভ্রমণের সময় অবশ্যই আল্লাহ এবং বান্দার হকের ব্যাপারে সর্বাধিক সজাগ থাকতে হবে। ভ্রমণে সহযাত্রী ও পথচারীদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখার ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। কোনোভাবেই যেন ভ্রমণসঙ্গী কিংবা পথচারীর সঙ্গে অযাচিত আচরণ প্রকাশ না হয়ে যায়। পথচারীদের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করা কোরআনের নির্দেশ।

হজ ও ওমরা পালনের জন্য সম্পাদিত ভ্রমণকে সর্বোত্তম ভ্রমণ বলে অভিহিত করা হয় ইসলামে। এরপর ইসলামের দাওয়াত, ইলমে দীন শিক্ষা, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা ও দীনি ভাইদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ইত্যাদির উদ্দেশে সফর করাকেও সওয়াবের কাজ বলা হয়েছে।

তবে কোনো খারাপ উদ্দেশে সফর করার অনুমতি ইসলামি শরিয়ত প্রদান করেনি। যেমন হারাম কিংবা নিষিদ্ধ ব্যবসার উদ্দেশ্যে সফরসহ কোনো অসৎ কাজ, অশ্লীল বিনোদন ও ফাসাদ সৃষ্টি ইত্যাদির উদ্দেশে ভ্রমণ করা নিষিদ্ধ।

ভূমণ্ডল ও নভোমণ্ডলের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালাকে জানতে ও বুঝতে হলে ভ্রমণ করতে হবে। ভ্রমণ জ্ঞানের দরজা খুলে দেয়, মনের সঙ্কীর্ণতা দূর করে, মনে প্রশান্তি আনে।

মহান আল্লাহর বিশাল সৃষ্টি দর্শন, উপার্জন, জ্ঞান আহরণ, রোগ নিরাময় এবং আত্মশুদ্ধির জন্য ভ্রমণ করার নির্দেশ রয়েছে ইসলামে। কেউ যদি সওয়াবের নিয়তে ভ্রমণ করে পুরো ভ্রমণই তার সওয়াব অর্জন হবে। জ্ঞানার্জনের জন্য স্বামী-স্ত্রী সপরিবারে বা দলবদ্ধভাবে ভ্রমণে বা পর্যটনে যাওয়ায় কল্যাণ নিহিত রয়েছে।