হারাম রোজগারে শান্তি মেলে না
সদা-সর্বদা ভোগ-বিলাসের পেছনে ছুটে চলা মানুষের উদ্দেশ্যে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘ছেড়ে দাও এদেরকে। খানাপিনা করুক, আমোদ-ফুর্তি করুক এবং মিথ্যা প্রত্যাশা এদেরকে ভুলিয়ে রাখুক। অতি সত্বর তারা জেনে নেবে।’ -সূরা হিজর: ৩
কারণ এই শ্রেণির মানুষ পানাহার ও ভোগ-বিলাসে ব্যস্ত থেকে মৃত্যুকে ভুলে যায়, পরকালের পুরস্কার ও শাস্তি বিশ্বাস করে না। তাদের সমস্ত সত্তাজুড়ে থাকে বিষয়-বৈভবের দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা।
অন্যদিকে যারা আল্লাহতায়ালার হেদায়েতের আলোতে আলোকিত বান্দা, তারা পাপীদের ক্ষণস্থায়ী পার্থিব প্রাচুর্য দেখে আশ্চর্য হন না। কারণ তাদের চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ। তারা পাপীদের পরিণতির ভার আল্লাহর দয়া ও ন্যায় বিচারের ওপর ছেড়ে দেন।
ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, পৃথিবীতে শুধু শারীরিক সুখের কিছু উপকরণ দিয়ে জীবনকে তৃপ্তিময় করে পূর্ণতা দেওয়া কখনই সম্ভব নয়। জীবনের সঠিক মর্ম বুঝতে এবং জীবনকে পরিপূর্ণতা দিতে হলে, অন্তরের শান্তি অর্জন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই আসুন, জানার চেষ্টা করি- শান্তি কী এবং কিভাবে আমরা শান্তি অর্জন করতে পারি।
শান্তি হলো- নিজের যা আছে, যেভাবে আছে এবং যতটুকু আছে তা নিয়েই তৃপ্ত, সন্তুষ্ট এবং কৃতজ্ঞ থাকা। শান্তি হলো সম্পূর্ণ মানসিক বিষয়, যা দেখা যায় না; অনুভব করা যায়। মানুষের মনে যা আছে, যেভাবে আছে তার ওপর যে তৃপ্তি অনুভব করে- তার নামই শান্তি। অর্থ-প্রাচুর্যে, আরাম-আয়েশে বা ভোগ-বিলাসে শারীরিক সুখ পাওয়া গেলেও মানসিক শান্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। শান্তি জিনিসটা আমরা শুধু অর্থ দিয়ে অনুভব করতে পারি না। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্থই শান্তি নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ। আর বাহ্যিকভাবেও আমরা কাউকে দেখে বুঝতে পারি না কে কেমন শান্তিতে আছেন। অন্তরের শান্তির জন্য অনেক বেশি অর্থ-সম্পদের প্রয়োজন নেই। বরং যে ধন-সম্পদ অল্প কিন্তু বরকত বেশি, সেখানেই শান্তি বেশি। অনেকেই আছে যারা মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করেও প্রয়োজন পূর্ণ করতে পারে না, পরিবার চালাতে ধার-দেনা করতে হয়; বিভিন্ন বিপদ-আপদ লেগে থাকে।
আবার কেউ আছে মাসে সামান্য টাকা আয় করেও সুন্দর-স্বাচ্ছন্দ্যে পরিবার নিয়ে ভালো আছে, বিপদ-আপদ কম আসে। এটাই হলো- বরকত, আর বরকতেই শান্তি।
সুতরাং আত্মাকে শান্তি দিতে হলে নিজের মাঝে এবং আত্মার মাঝে কিছু বৈশিষ্ট্য স্থাপন করতে হবে। প্রথমত এটা উপলব্ধি করা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ যে, শান্তি আমাদের নিজের মধ্য থেকে আসতে হবে। নিজেকে খুশি করার জন্য আমরা শুধু আমাদের জীবনসঙ্গী, পরিবার ও আপনজনদের ওপর নির্ভর করে থাকতে পারি না। শান্তি খুঁজে পেতে হবে আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে। জীবনের সঠিক স্বাদ গ্রহণ এবং জীবনকে সুন্দর করে উপলব্ধি তথা জীবনকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য সুখের চেয়ে শান্তির গুরুত্বই সবচেয়ে বেশি।
মূলতঃ আমাদের জীবনের শান্তি নষ্ট হয় চরিত্রের এবং কর্মের খারাপ দোষাবহের কারণে। চরিত্রের সেই দোষগুলো প্রকৃতপক্ষে মানুষের জীবনের সামাজিক, আর্থিক, মানসিক, শারীরিক এমনকি আখেরাতেও কোনো ধরনের উপকারে আসে না।
যেমন ক্রোধ, অহংকার, মিথ্যা, গালমন্দ, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, কৃপণতা, ঝগড়া-বিবাদ এবং অযাচিত তর্ক-বিতর্ক ইত্যাদি মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে ক্ষতি ছাড়া কোনো ধরনের উপকারে আসে না।
তেমনিভাবে আমাদের কর্মেও এমন কিছু দোষ এবং খারাপ দিক আছে, যার দ্বারা হয়তো দুনিয়াতে ক্ষণিকের জন্য সুখ পাওয়া যায়, কিন্তু মানসিকভাবে কোনো ধরনের শান্তি অর্জন করা যায় না। যেমন, হারাম পথে আয়-রোজগার করা এবং মানুষের ওপর জুলম করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করা ইত্যাদি।
আজ পৃথিবীতে অর্থ-সম্পদে, আরাম-আয়েশে আর প্রাচুর্যের সুখে থাকা মানুষগুলো হন্য হয়ে শান্তি খোঁজে। আর অর্থ-প্রাচুর্য এবং আরাম-আয়েশহীন মানুষগুলো সুখের আশায় অর্থ-সম্পদ আর আরাম-আয়েশের জীবন খুঁজে বেড়ায়।
আসলে সুখ আর শান্তি উভয়টা অর্জন সম্ভব দৃষ্টিভঙ্গি বদলিয়ে আত্মা এবং মনোজগতকে উন্নত করার মাধ্যমে। শান্তি যেহেতু আত্মিক, তাই মানুষের আত্মিক উন্নয়ন ছাড়া শান্তি পাওয়া কখনও সম্ভব নয়।
শান্তি পেতে হলে কিছু মহৎ গুণ নিজের ভেতরে স্থান দিতে হবে। ওই গুণে গুণান্বিত হয়ে মানুষ খুব সহজে অন্তরকে প্রশান্ত করতে পারে। ওই গুণগুলো হলো- সন্তুষ্টি, ইতিবাচক চিন্তাধারা, কল্যাণকর আশা, নিখুঁত ভালোবাসা, অন্তরের উদারতা, চারিত্রিক সততা, ধৈর্যধারণ, পুণ্যতা ও জ্ঞান অর্জন।