প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে শুকরানা মাহফিল: জনসমাগমের রেকর্ড গড়বেন আলেমরা
আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের উদ্যোগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুকরানা মাহফিল রোববার (৪ নভেম্বর)। সকাল ১০টার এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কওমি শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তরের সমমান দেওয়ায় আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেবেন আলেম-উলামারা। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে আলেম-উলামাদের এই সংবর্ধনা বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করতে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে সংবর্ধনা বাস্তবায়ন কমিটি। এ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দক্ষিণ-পূর্বপাশে বিশালাকারের প্যান্ডেল করা হয়েছে। মঞ্চ ও বিশাল জায়গাজুড়ে সামিয়ানা টানানো হয়েছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডেকোরেশনের কর্মীরা কেউ মঞ্চের চেয়ার, ফুলদানি সাজনোর কাজে ব্যস্ত, কেউবা সামিয়ানার নিচে চেয়ার সাজাচ্ছে। কেউ আবার ব্যস্ত জায়ান্ট এলইডি পর্দা বাসানোরা ব্যবস্থা করছে। ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে আগতদের জন্য।
২০১৩ সালে যখন দেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে গণজাগরণ মঞ্চ গঠিত হয়। তখন কিছু মুক্তমনা ব্লগার ও প্রগতিশীল মানুষের লেখা ও বক্তব্য নিয়ে আপত্তি জানায় আল্লামা আহমদ শফী। এরপর গণজাগরণ মঞ্চের কাউন্টারে ঢাকার মতিঝিলে বিশাল জমায়েত করে আলেম-উলামারা। এরপরই সবমহলে আলোচিত হয়ে ওঠে হেফাজত ইসলাম। সেসময় কঠোর হাতে হেফাজত ইসলামকে সরকার দমন করলেও পরবর্তীতে সরকার ও হেফাজতের সম্পর্কে আকস্মিক ‘উষ্ণতা’ লক্ষ্য করা যায়। ধীরে ধীরে সখ্যতা গড়ে ওঠে ধর্মভিত্তিক হেফাজত ইসলামের সঙ্গে আওয়ামী লীগের। এর পেছনে রয়েছে হেফাজতে ইসলামে বেশ কিছু দাবী-দাওয়া মেনে নেওয়ার ঘটনা।
টানা দুইবারের শাসনামলে বর্তমান সরকার হেফাজতের দাবীতে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যসূচি পরিবর্তন করে, সুপ্রীম কোর্ট ভবনের সামনে থেকে গ্রীকদেবীর ভাস্কর্য সড়ানোর ব্যবস্থা করে, ফতোয়া সংক্রান্ত সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে মুফতিদের ফতোয়া প্রদানের বৈধতা, নারী উন্নয়ন নীতিমালায় ওআইসির অবজারভেশন বহাল রাখা, ধর্ম অবমাননা ইস্যুতে মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর পদত্যাগ, চলমান তাবলিগ ইস্যুতে মাওলানা সাদের ব্যাপারে আলেমসমাজের আপত্তিকে গ্রাহ্য করা ও সর্বশেষ কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি প্রদান করে। কওমি সনদের স্বীকৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী লাখ-লাখ শিক্ষার্থীর সামাজিক মর্যাদা দিয়েছেন এবং তাদের ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করার ব্যবস্থা করেছেন।
দীর্ঘদিনের এই দাবী পূরণে আলেমসমাজের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর এমন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তাদেরকে কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। আর তাই এদেশের কওমি শিক্ষার অভিভাবকরা প্রধানমন্ত্রীর ‘অনিচ্ছাসত্ত্বেও’তাকে গণ সংবর্ধনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন- শুকরানা মাহফিল নামে।
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, শুকরানা মাহফিলে জনসমাগমের নতুন রেকর্ড গড়ে ইতিহাস রচনা করতে সারাদেশের কওমি মাদরাসায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের ছয়টি কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে ছোট বড় ১৫ হাজার মাদরাসা আছে। প্রত্যেক মাদ্রাসায় সংবর্ধনার চিঠি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
আয়োজকরা আশা করছেন, কাল ঢাকার বাইরে থেকে মাদ্রারাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে কমপক্ষে ১০ হাজার বাস ঢাকায় আসবে। এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রতিটি উপজেলা থেকে কমপক্ষে দুই গাড়ি মানুষ আনার নির্দেশ দিয়েছে। ট্রেন, লঞ্চযোগে ওই দিন ভোর হতেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত হবেন সমাবেশে যোগদানকারীরা। এছাড়া ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত মাদ্রারাসাগুলোর শিক্ষার্থীদের স্বত:স্ফূর্ত উপস্থিতি আশা করা হচ্ছে।
এসব বিষয়ে নিয়ে জানতে চাইলে কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড ঢাকার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা আবু ইউসুফ বার্তা২৪.কমকে বলেন, শুকরানা মাহফিলের আমন্ত্রণ জানিয়ে আমারা সব মাদরাসায় দাওয়াতনামার চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছি। পত্রিকাতেও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বত:স্ফূর্ত সংবর্ধনা দিয়ে জনসমাগমের নতুন রেকর্ডই হবে- ইনশাল্লাহ।
ইতোমধ্যে শুকরানা মাহফিলে যোগ দিতে হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান ও হাটজাহারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী ঢাকায় পৌঁছেছেন। রাতে তিনি ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় অবস্থান করবেন। তিনি শুকরিয়া মাহফিলে সর্বশেষ যাবতীয় প্রস্তুতি বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।
শুকরানা মাহফিল উপলক্ষে রাজধানীতে যান চলাচলে কিছু নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। এর মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠানস্থল এবং এর আশপাশের এলাকা দিয়ে ভারী অথবা হালকা যানবাহনসহ আসা-যাওয়া এড়াতে বলা হয়েছে। রোববারের পাবলিক পরীক্ষাগুলো স্থগিত করা হয়েছে।