রাসূলুল্লাহ সা.-এর জীবন ছিল অপূর্ব ভারসাম্যপূর্ণ
হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন মহান চরিত্রের অধিকারী ও আদর্শের জীবন্ত প্রতীক। জন্মের পর থেকেই তার মাঝে বিরাজ করছিলো- সর্বোত্তম চরিত্র মাধুরী, সর্বোত্তম আদর্শ, সর্বোত্তম মহৎ মানুষ ও সর্বোত্তম প্রতিবেশী ইত্যাকার মহত্তম গুণ। বাল্যকাল থেকেই তার স্বভাব ছিলো কলুষতা, কাঠিন্য, কর্কশতা ও অহমিকামুক্ত। অনুক্ষণ তিনি ছিলেন দায়শীল, শ্রদ্ধাশীল সহানুভূতিশীল ও ঔদার্যশীল এবং নিষ্কলুষ নির্ভেজাল সোনা। তাইতো অতি অল্প বয়েসেই ‘আল-আমিন’ উপাধিতে বিভূষিত হন। অধিকন্তু পরনিন্দা, অশ্লীল ও অশিষ্ট বাক্য কখনই তার পবিত্র মুখ হতে নিঃসৃত হয়নি। এক কথায় তিনি হলেন, সকল গুণের আধার। বিশ্ববাসী সকলের নিমিত্ত নমুনা ও মহান আদর্শ।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সর্বজনীন কল্যাণমুখী আচরণ ও কর্মকাণ্ড মানবিক একাত্মতার সর্বোচ্চ উদাহরণ হিসেবে নন্দিত হয়েছে। শ্রেষ্ঠ রাসূলরূপে অনুপম চরিত্র মাহাত্ম্য ছিলো- তার মহিমার ভূষণ। এ জন্য আর্দশিক কারণে তার শত্রু বা ভিন্ন মতাবলম্বীরাও তাকে বিশ্বস্ততার শ্রেষ্ঠ, অতুলনীয় প্রতীক হিসেবে সম্মান জানিয়েছে তার সময়ে এবং পরবর্তী সময়ে দেশ-বিদেশে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)- এর আগমন যে গোটা মানবজাতির তথা সৃষ্টি জগতের জন্য কল্যাণবহ, এ কথাটি ভিন্ন মতের তাত্ত্বিক কিংবা মূল্যায়নকারীরা কোনো না কোনো পর্যায়ে বলতে বাধ্য হয়েছেন। এ এক অনিবার্য অর্জন, বিজয়।
ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো- রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রদর্শিত জীবন ব্যবস্থা ইসলাম ভারসাম্যের জন্য অনন্য। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন ছিল অপূর্ব ভারসাম্যপূর্ণ।
জীবনের সকল দিক দিয়েই তিনি ভারসাম্য রক্ষা করেছিলেন। যদি আমরা পরিবেশের দিকে দেখি, তাহলে দেখতে পাব রাসূলুল্লাহ (সা.) পরিবেশের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যদি জানো যে আগামীকাল কেয়ামত নিশ্চিত। তবু আজ একটি গাছ লাগাও। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জীবজন্তুর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তাই রাসূল (সা.) নির্বিচারে জীবজন্তু হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, তোমরা পৃথিবীর মাটিকে দয়া কর তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনিও তোমাদের দয়া করবেন। সামাজিক পরিবেশের ব্যাপারে রাসূল (সা.) যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা সবার জন্য অনুকরণীয়।
ব্যক্তি জীবনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বগুণে গুণান্বিত ছিলেন। তিনি সদা প্রফুল্লচিত্ত, কোমল চরিত্রের অধিকারী ও সরল হৃদয়বান ছিলেন। তিনি রূঢ় স্বভাবের ছিলেন না, নির্দয় প্রকৃতিরও ছিলেন না, নির্লজ্জ, গিবতকারী ও বিদ্রুপকারী ছিলেন না। অতিরিক্ত গুণকীর্তনকারী ছিলেন না, মনে চায় না- এমন বস্তু থেকে বিমুখ থাকতেন, কিন্তু কাউকে তা থেকে নিরাশ করতেন না। কেউ ডাকলে সাড়া দিতেন, কেউ উপহার দিলে গ্রহণ করতেন- যদিও তা ছাগলের খুর হত এবং তার উত্তম প্রতিদান দিতেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোনো সাহাবি বা পরিবারের সদস্য ডাকলে লাব্বাইক বলে সাড়া দিতেন। তিনি সাহাবাদের সঙ্গে রসিকতা করতেন। তাদের সন্তানদের সঙ্গে খেলা করতেন এবং নিজের কোলে বসাতেন। মদিনার দূর প্রান্তে বসবাসকারী কেউ অসুস্থ হলে তারও খোঁজ-খবর নিতেন। আবেদনকারীর আবেদন গ্রহণ করতেন।
আমরা জানি, বিনয় উঁচু মাপের এক চারিত্রিক গুণ। এগুণের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বোচ্চ উদাহরণ। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কাপড় নিজে সেলাই করতেন। নিজ হাতে ছাগলের দুধ দোহন করতেন। নিজের জুতা নিজে সেলাই করতেন। নিজের সেবা নিজে করতেন, নিজের ঘর নিজে পরিস্কার করতেন। নিজের উট নিজে বাঁধতেন, নিজের উটকে নিজে ঘাস খাওয়াতেন। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিজে বহন করে বাজারে নিতেন।
এক কথায়, যত সুন্দর ও কল্যাণময় গুণাবলী রয়েছে, তার নিখুঁত নিখাদ ও পরিপূর্ণ চিত্রায়ন ঘটেছিলো রাসূল (সা.)-এর জীবনাদর্শে।
মানব সমাজের উন্নতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আর্থিক ও চারিত্রিক সবক্ষেত্রে গৌরবময় উত্তরণের পথই হলো- তার অনুসরণীয় আদর্শ। মনে রাখতে হবে, আদর্শহীন কোনো জনগোষ্ঠী পৃথিবীতে সমাদৃত হতে পারেনি আর পারবেও না। তাই আজকের এই অবক্ষয় মুহূর্তেও যদি মুসলিম উম্মাহ ফিরে পেতে চায় তাদের হারানো অতীত, তাহলে তাদের অনুসরণ করতে হবে প্রিয়নবী (সা.)-এর পবিত্র জীবনাদর্শ। সুতরাং সেই আদর্শের পথেই হোক আমাদের নবযাত্রা। আদর্শিক প্রত্যয়ে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠুক আমাদের সমাজ জীবন। এটাই হোক এবারের রবিউল আউয়ালের শপথ।